Recent Posts

6/recent/ticker-posts

দেব-দেবীগণ কাহাকেও মুক্ত করিতে পারেন না, কারন তাহারাই মুক্ত নন।

 



দেব-দেবীগণ কাহাকেও মুক্ত করিতে পারেন না, কারন তাহারাই মুক্ত নন।

*#দেবতা : প্রকৃতির শক্তি (Cosmic principles): ইন্দ্র, অগ্নি, বরুণ, লক্ষ্মী, দুর্গা ইত্যাদি প্রকৃতির বিশেষ দিক বা শক্তির প্রতীক। তাঁরা বিশ্ব-পরিচালনার দায়িত্বে নিযুক্ত। তাই তাঁদের ধ্যান ও পূজা পার্থিব ও আধ্যাত্মিক কল্যাণে সহায়ক, কিন্তু চূড়ান্ত মুক্তির পথ নয়।

তাঁরা নিজে ব্রহ্মজ্ঞ নন: যতক্ষণ না পর্যন্ত দেবতাও আত্মজ্ঞানপ্রাপ্ত হন, তাঁরা "মুক্ত" নন। উপনিষদে বলা হয়েছে—শুধু ব্রহ্মজ্ঞ ব্যক্তি মুক্ত। দেবতা, যদি তাঁরা ব্রহ্মজ্ঞ হন (যেমন, নারায়ণ বা শিবের নির্গুণ রূপে), তবেই তাঁরা মুক্তি দিতে পারেন।

তাঁদের শক্তি ভক্তির উপর নির্ভরশীল: অনেক পুরাণেই দেখা যায় যে দেবতা পূজা ও যজ্ঞ না পেলে দুর্বল হয়ে যান (যেমন, দেবাসুর সংগ্রামে দেবতাদের পরাজয়)। এতে বোঝা যায় তাঁদের শক্তি "পরম" নয়, নির্ভরশীল।

*#উপনিষদের বক্তব্যঃ

মুন্ডক উপনিষদ (১.২.৭):

"ন তমে বেদা বা ন তমে দে঵া, ন গন্ধর্বা ন মানুষ্যঃ।"

অর্থ: "তাঁকে (পরমাত্মা বা ব্রহ্মকে) দেবতা, গন্ধর্ব, বা মানুষ কেউই জানে না।"

এখানে বোঝানো হয়েছে যে দেবতারাও পরমব্রহ্মকে পুরোপুরি জানেন না। তাঁরা নিজস্ব স্তরে স্থিত, নির্দিষ্ট শক্তি ও কর্মের দ্বারা বাঁধা।

*#কঠ উপনিষদ (২.১.২):

"নায়ম্‌ আত্মা প্রবচনেন লাভ্যো, ন মেধয়া, ন বহুনা শ্রুতেন।"

অর্থ: "এই আত্মা (ব্রহ্ম) প্রাবচন, মেধা বা শ্রবণ দ্বারা প্রাপ্ত হয় না, সে কেবল তাঁকেই লাভ করে যাকে আত্মা নিজেকে দেয়।"

এখানে ইঙ্গিত রয়েছে যে মুক্তি (মোক্ষ) একান্ত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, যা দেবতার কৃপায় নয়, আত্মজ্ঞানেই অর্জন হয়।

*#গীতার বক্তব্যঃ

ভগবদ্ গীতা (৭.২০-২৩):

"কমৈস্তৈস্তৈর্ হৃতজ্ঞানা: প্রপদ্যন্তেন্যদেবতা:।"

অর্থ: "যাঁরা কামনায় অন্ধ হয়েছেন, তাঁরা অন্য দেবতাদের পূজা করেন।"

"অন্তবৎ তু ফলং তেষাং তদ্ভবত্যল্পমেধসাম্।"

অর্থ: "তাঁদের (দেবতাদের) দেওয়া ফল ক্ষণস্থায়ী, কারণ তাঁরা চূড়ান্ত নয়।"

এখানে স্পষ্টভাবে বলা হচ্ছে যে দেবতা পূজার মাধ্যমে পার্থিব বা সীমিত ফল মিললেও মুক্তি (মোক্ষ) তাদের মাধ্যমে হয় না।

*#গীতা (১৮.৬৬):

"সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ।"

অর্থ: "সব ধর্ম (প্রথাগত পূজা) ত্যাগ করে শুধু আমার (পরমেশ্বর) শরণ নাও।"

এখানে ভগবান নিজেই বলছেন যে পরম আশ্রয় শুধু পরমেশ্বর—নির্গুণ, নিরাকার ব্রহ্ম।

*#ব্রহ্মসূত্রের দৃষ্টিকোণঃ

ব্রহ্মসূত্র (১.১.৪):

"তত্তু সম্মন্বয়াৎ"

অর্থ: “ব্রহ্মই সর্বশ্রেষ্ঠ কারণ, কারণ সব শাস্ত্রই তার সঙ্গেই একমত।”

এখানে সূচীত হয় যে সব দেবতা, রূপ, শক্তি—সবই ব্রহ্ম থেকে উদ্ভূত ও সেই ব্রহ্মেই বিলীন হয়। সুতরাং চূড়ান্ত গন্তব্য ব্রহ্ম, দেবতা নয়।

*#পুরাণীয় ব্যাখ্যাঃ

শ্রীমদ্ভাগবতম্ (২.৩.১০):

"আকামঃ সর্বকমো বা মোক্ষকম উদারধীঃ।

তীব্রেণ ভক্তিযোগেন যজেত পুরুষং পরম্॥"

অর্থ: "যে কামনাবিহীন, বা সকল কামনায় পূর্ণ, এমনকি মোক্ষকামী—সেও পরম পুরুষ (ব্রহ্ম) কে ভক্তিযোগে আরাধনা করুক।"

এখানে পুরাণও দেবতা নয়, পরম পুরুষ—নারায়ণ বা ব্রহ্মনিষ্ঠ সত্তাকেই উদ্দেশ্য করেছে।

দেবতা পূজা মানুষের কল্যাণে হয়, কিন্তু মুক্তি দেবার অধিকার শুধু ব্রহ্মজ্ঞানের, কারণ দেবতারাও পরমেশ্বরের ধ্যান করেন। মুক্তি (মোক্ষ) কোনো রূপবিশিষ্ট দেবতার কৃপায় নয়, আত্মজ্ঞান ও ব্রহ্মজ্ঞানের মাধ্যমে অর্জিত হয়।

তাই গীতার শিক্ষা ও উপনিষদের নির্দেশ—নিজের অন্তরেই সেই ব্রহ্মকে খোঁজো, কারণ সেই জ্ঞানই মুক্তির একমাত্র পথ।

✍️ রতন কর্মকার

( লেখার গভীরতা না বুঝিয়ে অযথা অবান্তর মন্তব্য করিবেন না। আপনার দ্বিধা দূর করিতে প্রয়োজনে এই নম্বরে ফোনালাপ করা যাইতে পারে : +8801715982155 )

Post a Comment

0 Comments