Recent Posts

6/recent/ticker-posts

যোগ সাধনায় পরমাত্মা প্রাপ্তি M P 2

 



*#দ্রৌপদীর_বস্ত্রহরণ_ও_সমর্পণ 


বস্ত্রহরণ করে সভাস্থ সকলের সমক্ষে রাজকুলবধূ পুরনারী দ্রৌপদীকে এবং তাঁর পঞ্চস্বামীকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করার মানসেই অহংমদমত্ত দুর্যোধনের আদেশক্রমে তাঁর প্রিয় ভ্রাতা দুঃশাসন সভাস্থলে দ্রৌপদীকে এনে উপস্থিত করলেন । দুঃশাসন দ্রৌপদীর বস্ত্রকর্ষণ করছেন আর দ্রৌপদী নিজের লজ্জাশরম বাঁচাবার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন , যাতে দুরাত্মা দুঃশাসন কিছুতেই কৃতকাৰ্য হতে না পারেন । কিন্তু পুরুষের বলের বিরুদ্ধে স্ত্রীলােকের শক্তি কতক্ষণ বাধা দিতে পারে ?


*#যখন দ্রৌপদী বুঝলেন এভাবে দুঃশাসনকে প্রতিনিবৃত্ত করা যাবে না এবং তাঁর একার শক্তির দ্বারা দুঃশাসনের শক্তিকে রােধ করা সম্ভব নয় , তখন তিনি শ্রী ভগবানের শরণ গ্রহণ করলেন । কিন্তু শ্রী ভগবানের শরণ গ্রহণ করলেও তখনও পর্যন্ত দ্রৌপদীর নিজের শক্তির উপর বিশ্বাস ছিল আর ছিল কিছুটা আত্মনির্ভরতা । যেহেতু লজ্জা নিবারণ মানসে সচেষ্ট হয়ে তখনও পর্যন্ত তিনি তার বাহু যুগল বক্ষোপরি স্থাপন করে করজোড়ে উর্ধ্বমুখী হয়ে ভগবানকে ডাকছিলেন কিন্তু ভাগবানের উপর পূর্ণ নির্ভরতা না আসাতে সে ডাক শুনেও ভগবান নীরব রইলেন , তাঁকে রক্ষা করতে এলেন না ।


*#কিন্তু এভাবেও দ্রৌপদী আর বেশীক্ষণ বাধা দিতে পারলেন না , কারণ দুঃশাসনের বলপ্রয়ােগে ও প্রবল আকর্ষণে তাঁর ডান হাতটি বক্ষের উপর হতে স্থলিত হয়ে পড়ল । সেই স্থলিত ডান হাত অঙ্গের বস্ত্রাবরণ ও বক্ষোপরি ন্যস্ত বাম বাহুর দ্বারা রক্ষা করতে তিনি তখনও যত্নশীল । তখনও তিনি নারায়ণকে স্মরণ করছেন বটে কিন্তু সে কাতর আহ্বান শুনেও নারায়ণ তাঁকে রক্ষা করতে এলেন না । কারণ তখনও দ্রৌপদী ভগবানের উপর পূর্ণ নির্ভরশীলা হতে পারেন নি । তখনও তাঁর মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও আত্মনির্ভরতার ক্ষীণতম ভাব বর্তমান ছিল । কিন্তু ওটুকু আত্মবিশ্বাস ও আত্মনির্ভরতা থাকতে তাঁকে পাওয়া যায় না । তাঁকে পেতে হলে তাঁর রাতুল চরণে পরিপূর্ণরূপে সঁপে দিতে হবে , একমাত্র তাঁকেই আশ্রয় করতে হবে, নচেৎ তিনি ব্যতীত অপর কোনও ব্যক্তির অভিনিবেশ থাকলে তিনি আসবেন কেন ?

কেন না তাঁর চরণে তাে সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করা হল না , তাই তিনি আসতেও পারেন না ।


*#এভাবে দ্রৌপদী অধিকক্ষণ বাঁধাদানে অসমর্থ হয়ে যখন বুঝলেন তাঁর সকল চেষ্টা , সকল যত্ন ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে , আর কোনও উপায় নেই , এখনি সভাস্থলে সর্বসমক্ষে নারীর শেষ সম্মান , শেষ লজ্জা হতে সম্পূর্ণ বিচ্যুত হবার অন্তিম অবস্থা উপস্থিত , আত্মরক্ষার আর কোনও উপায় নেই , তখন তিনি সকল চেষ্টা , সকল যত্ন , সকল প্রয়াস ত্যাগ করে আত্মাভিমান শূন্য হয়ে ঊর্ধ্বমুখে ঊর্ধ্ববাহু সহকারে করজোড়ে সেই একমাত্র অনুপায়ের উপায় , অগতির গতি , শরণীয় সেই বিশ্বস্বামী বিশ্বেশ্বরের উদ্দেশ্যে নিতান্ত ভয়ার্ত চিত্তে দীনভাবে শরণাগত হয়ে প্রার্থনা করলেন । সেই কাতর প্রার্থনা শুনে ভগবান আর স্থির থাকতে পারলেন না । তাঁর চিত্ত বিচলিত হল , তিনি আর থাকতে না পেরে তখনই দ্রৌপদীর সম্মান ও লাজ্জা রক্ষাকল্পে অনন্ত বস্ত্ররূপে এক অপরূপ লীলার বিকাশ করলেন । 


*#অতএব, এক বিন্দুও অহংজ্ঞান থাকতে তাঁকে সম্পূর্ণরূপে পাওয়া যাবে না। তাঁকে পেতে হলে সম্পূর্ণ অহংমুক্ত হতে হবে , অর্থাৎ তাঁকে ভিন্ন অন্যের উপর নির্ভরশীলতা  সম্পূর্ণ বিনাশ করতে হবে। সম্পূর্ণরুপে তাঁর চরণে নিজেকে সমর্পণ করে দিতে হবে।


Please join the

*#সাত_পাকের_রহস্য


*#দূর্গামা সহ যেকোনো প্রতিমাকে বিসর্জন অর্থাৎ জলে ডুবিয়ে দেওয়ার সময় সেই প্রতিমাকে সাত পাক ঘোরানো হয়; এছাড়াও হিন্দুদের বিয়ের সময়ও বরের চারপাশে কনেকে সাত পাক ঘোরানো হয়।


*#এর কারণ অনেক হিন্দুই জানে না বা বলা যায় ৯৯% হিন্দুই জানে না। কিন্তু এর পেছনে রয়েছে গণিতের এক অসাধারণ তত্ত্ব, তত্ত্বটি জানলে আপনি যে অবাক হবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সেই সাথে আরও অবাক হবেন, এই তত্ত্বের আবিষ্কারক ও প্রচলক আমাদের মুনি ঋষিদের জ্ঞানের পরিধি ও এ সম্পর্কে তাদের দূরদর্শিতাকে উপলব্ধি করলে।


*#যা হোক, রহস্য না বাড়িয়ে ভেঙ্গেই দিই তত্ত্বটি। কোনো বিন্দুকে কেন্দ্র করে যখন তার চারপাশে একবার বা একপাক ঘোরা হয়, তখন ৩৬০ ডিগ্রী অতিক্রম করা হয়। 


*#এই ৩৬০ কে ১,২,৩,৪,৫,৬,৮ এবং ৯ দ্বারা নিঃশেষে ভাগ করা যায়, অর্থাৎ ৩৬০ কে ৭ ছাড়া ১ থেকে ৯ এর মধ্যে যেকোনো সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে কোনো অবশিষ্ট থাকে না।


*#কিন্তু ৭ দ্বারা ভাগ করলে ভাগফল ৫১ এর পরে ৩ অবশিষ্ট থাকে এবং ৫১ এর পর দশমিক নিলেও এই ভাগ অনন্তকাল ধরে চলতে থাকে অর্থাৎ ৭ দ্বারা ৩৬০ কে ভাগ করলে ভাগফল কখনোই শেষ হয় না, এককথায় ৭ দ্বারা ৩৬০ কে ভাগ করা যায় না অর্থাৎ ৭ দ্বারা ৩৬০ অবিভাজ্য।


*#প্রতিমাকে বিসর্জনের সময় ৭ পাক ঘোরানো হয়, মানে সেই প্রতিমা এবং তার ভক্তদের মাঝে একটি অবিভাজ্য সম্পর্ক তৈরি করা হয়, যে সম্পর্ক কখনো ভাগ বা বিভক্ত হয় না বা হবে না।


*#এভাবে দেব-দেবীদের সাথে হিন্দুদের একটি চিরকালীন সম্পর্কের কল্পনা করা হয়েছে।

এই একই ভাবনা কাজ করে হিন্দুদের বিয়ের সময়। বরের চারপাশে কনেকে সাত পাক ঘুরিয়ে বা বর কনে একসাথে সাত পাক ঘুরে এতে করে বরের সাথে কনের অর্থাৎ স্বামীর সাথে স্ত্রীর একটি অবিভাজ্য সম্পর্কের বন্ধন তৈরি করা হয়, যে সম্পর্ক কখনো বিভাজ্য বা ভাগ হয় না অর্থাৎ শেষ হয় না। তাই হিন্দুত্বে তেমন অহরহ তালাক বা ডিভোর্স নেই এবং এ কারণেই হিন্দু মেয়েদের সাংসারিক জীবন নিশ্চিন্ত।


*#তাই অহরহ তালাক বা স্বামী পরিত্যক্তা হয়ে বাপের বাড়ি বা রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ানোর সংখ্যা ২% ও নেই। আর স্বর্ণের খাদ থাকার মত কিছু ত থাকেই যেগুলো নগন্য মাত্র। 


*#আর এখানেই হিন্দুধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব। কষ্ট হয় যখন প্রায় প্রতিনিয়ত শুনি হিন্দু ভাই/বোনেরা ধর্ম, মাতা পিতা ত্যাগ করে। অবশ্য তার কারন আমরা নিজেরাই আমাদের ধর্মের মাহাত্ম গুলো তাদের মাঝে প্রকাশ করাতে পারি না।


*#তাই আসুন আমাদের ধর্ম সম্পর্কে আমরা নিজেরা প্রথম জেনে নেই।


Please join the group 🙏🙏🙏

#আসন_সম্পর্কে_কিছূ_কথা


.....'যোগ' ও 'যোগব্যায়াম' শব্দ দুটি অনেক সময় প্রায় একই অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু মনে রাখতে হবে 'যোগ' একটি বিরাট বিষয়, 'যোগব্যায়াম' বা 'যোগাসন' তার একটি শাখা মাত্র।যোগাসন হল শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা  বজায় রাখার ও আধ্যাত্মিক উন্নতির একটি বিশেষ প্রক্রিয়া মাত্র' এটি কোনও ব্যায়াম নয়। সাধারনভাবে,শরীরচর্চা পদ্ধতি মাত্রকেই আমরা ব্যায়াম নামে অভিহিত করে থাকি ,তাই আসন বা যোগাসনের মাধ্যমে শরীরচর্চা পদ্ধতিটি যোগব্যায়াম নামেই অধিক পরিচিতি লাভ করেছে। যোগশাস্ত্রের অন্তর্গত যে সকল দৈহিক প্রক্রিয়ার (যেমন-আসন,প্রাণায়াম,মুদ্রা,বন্ধ,নেতী ধৌতি  প্রভৃতি নিয়মিত অভ্যাসের ফলে দৈহিক ও মানসিক উন্নতি সাধিত হয়, ব্যাপক অর্থে তাকেই বলা হয় যোগব্যায়াম। 


সংস্কৃত 'আস' (To Sit, বসা) ধাতু থেকে 'আসন' শব্দটি এসেছে। সাধারনভাবে,আসন কথাটির  হলো উপবেশন বা স্থিতি। একটি বিশেষ ভঙ্গিমায় মনঃসংযোগ সহকারে কিছু সময়ের জন্য স্থিরভাবে সুখকর অবস্থানকেই বলা হয় আসন বা যোগাসন।


পাতঞ্জল যোগসূত্রে আসনের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে , স্থিরভাবে সুখকর অবস্থানই আসন -'স্থিরসুখাসনম'.এই সূত্র অনুযায়ী, আসন অভ্যাসের সময় দৈহিক স্থিরতার সাথে মানসিক সুখানুভূতি থাকা একান্ত প্রয়োজন।এই ভাবে কিছুক্ষন থাকার পর মানসিক স্থিরতা ও একাগ্রতা বাড়বে এবং মনে একটা শান্তভাব আসবে। নড়াচড়া করলে ,কাঁপলে বা খুব কষ্টকরভাবে থাকলে তাকে আসন বলা যাবেনা।  


#আসনের_প্রচলন_কবে_থেকে ?


আসনের প্রচলন বহু প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। তবে আসনের প্রাচীনত্ব বা বয়সকাল নিরূপণ করা অতন্ত্য দুরূহ ব্যাপার। বিভিন্ন শাস্ত্র ও পৌরাণিক কাহিনীতে পদ্মাসনের ভঙ্গিমায় ধ্যানরত মুনি-ঋষিদের বর্ণনা পাওয়া যায়। আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে জ্ঞানযোগী গৌতমবুদ্ধকে আমরা পদ্মাসনের ভঙ্গিতেই দেখতে পাই।  মহেঞ্জোদারোতে পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো সিন্ধু-সভ্যতার ধ্বংসাবশেষে আসনের নিদর্শন পাওয়া গেছে। সেখানে আবিষ্কৃত একটি মূর্তিকে 'যোগাসনস্থ শিব' বলে অনুমান করা হয়। আজ থেকে  চোদ্দ হাজার বছর আগেও আসনের প্রচলন ছিল বলে জানা যায়।


#আসনের_সংখ্যা :


বিভিন্ন প্রাচীন যোগ-প্রবক্তাগন তাঁদের গ্রন্থে সাধারণ মানুষের উপযোগী নিৰ্দিষ্ট কিছূ আসনের বর্ননা  দিয়ে গেছেন;এর থেকে আমরা সীমিত সংখ্যক আসন সম্বন্ধে জানতে পারি। বর্তমানে বিভিন্ন যোগাচার্যগন আসনের বিভিন্ন নিত্যনতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করে চলেছেন ' ফলে প্রচলিত আসনের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে ; কাজেই আসনের সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করা একটি দুরূহ ব্যাপার। ঘেরণ্ড সংহিতায় উল্লিখিত হয়েছে - 


"আসনানি সমস্তানি যাবন্তো জীবজন্তুব।

চতুরশীতি লক্ষ্যনি শিবেন কথিতম পুরা"। 


অর্থাৎ,যতরকম জীবজন্তু আছে আসনের সংখ্যাও তত। পুরাকালে শিব ৮৪ লক্ষ আসনের কথা বলেছেন।অবশ্য,এই ৮৪ লক্ষ আসনের নাম বা বিস্তারিত বর্ণনা আজ পর্যন্ত পাওয়া  যায়নি। শাস্ত্র প্রণেতাদের মতে যোগের সৃষ্টিকর্তা মহাদেবই একমাত্র এই সব আসনের সাথে পরিচিত। 


ঘেরণ্ড সংহিতায় আরও বলা হয়েছে ,এর মধ্যে ৩২ টি আসন সাধারনের অভ্যাসের পক্ষে উপযোগী 'যেমন সিদ্ধাসন,পদ্মাসন,বজ্রাসন,সিংহাসন,গোমুখাসন,বীরাসন,ধনুরাসন,মৎস্যাসন,ময়ূরাসন ....ইত্যাদি। এই আসনগুলির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ট হলো সিদ্ধাসন। যোগে সিদ্ধিলাভের পথে নিয়মিত সিদ্ধাসন বিশেষ ভাবে সহায়ক।  


Continue-18

#আসনের_শ্রেণীবিভাগ :


দৈহিক ও মানসিক প্রভাব অনুযায়ী বিভিন্ন আসনকে প্রধানত তিনভাগে ভাগ করা যায়। 


১. ধ্যানাসন : যে আসন অভ্যাসের সময় মেরুদণ্ড সোজাভাবে থাকে এবং দীর্ঘসময় অবস্থান করা যায় ,সেই আসনকে ধ্যানাসন বলা হয়। মানসিক একাগ্রতা বৃদ্ধির পক্ষে আসনগুলি বিশেষ কার্যকরী এবং ধ্যান- ধারণা পূজা পাঠের পক্ষে উপযোগী। যেমন -সিদ্ধাসন,পদ্মাসন,বজ্রাসন,গোমুখাসন প্রভৃতি। 


২. স্বাস্থ্যাসন : যে সব আসন অভ্যাসের  মাধ্যমে সাধারণ স্বাস্থ্যের উন্নতির সাথে সাথে দেহ সুস্থ ,সবল ও নীরোগ রাখা সম্ভব ' সেইসব আসনকে স্বাস্থ্যাসন বলা হয়। যেমন-চক্রাসন,ভূজঙ্গাসন, শলভাসন ,ময়ূরাসন প্রভিতি।ধ্যানাসনের তুলনায় স্বাস্থ্যাসন অপেক্ষাকৃত কষ্টসাধ্য। দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গকে নানাভাবে বাঁকিয়ে এই আসনগুলি করা হয় রোগ আরোগ্যের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যাসনের ভূমিকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য।  


৩. বিশ্রামাসন : যে আসনে অবস্থানের সময় সমস্ত দেহ পুরোপুরি শিথিল অবস্থায় থাকে এবং দেহের কোথাও কোনো টান বা চাপ পড়ে না 'তাকে বলা হয় বিশ্রামাসন। যেমন শবাসন,মকরাসন,ষষ্ঠী আসন প্রভিতি। দৈহিক ক্লান্তি ও মানসিক অবসাদ দূর করতে এই আসন বিশেষ সহায়ক।


Please-join-the-g

*#গৈরিক_রঙের_তাৎপর্য 


***#যোগীগণ সূর্যে সংযম দ্বারা ভুবনজ্ঞান লাভ করেছেন। ভুবনজ্ঞানের প্রথম কথাই হল সৃষ্টির জ্ঞান। সৃষ্টির জ্ঞান বলতে সৃষ্টি কোথা থেকে হল, কিভাবে ধারণ ও লয় হবে এসব রহস্যের সমাধান যোগীগণ সূর্য সংযম দ্বারা লাভ করেছেন।


***#সূর্যোদয়ের মুহুর্তে যে রক্তাভরশ্মি সেটা চরাচর সৃষ্টি করে। অস্তাচলগত সূর্যরশ্মি লয় করে সৃষ্টিকে। সূর্যরশ্মি বিশ্লেষণ করে যোগীগণ যোগনেত্রে দেখেছেন অস্তায়মান সূর্যরশ্মির রঙ গেরুয়া। সেজন্য সংসারে প্রকৃত বীতরাগ সাধুসন্ন্যাসীরা গেরুয়া বস্ত্র পরিধান করেন।


***#তাদের ভাবনা মুক্তির, সৃষ্টির নয়। ভববন্ধনের লয় চাই। ‘গৈরিক’ – সৃষ্টি চাই না, এই শাশ্বত বাণী ও ভাবনার প্রতীক। গেরুয়া বস্ত্র সাধুসন্ন্যাসীগণের ভাবনাকে সৃষ্টিলয়ের ধ্যানধারণায় উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করে। গঙ্গা জলের রঙও গৈরিক মিশ্রিত। তাই এই জলে স্নান করলে মোক্ষের প্রতীক ‘গৈরিক’ দিয়ে সমস্ত দেহ অনুলিপ্ত করা হয়। যার জন্য তো গঙ্গা মুক্তিদায়িনী ও স্নানে ভববন্ধন লয়ের সহায়ক হয়।


***#এই রংয়ের অর্থ এক দিকে যেমন ক্ষমতা বা শক্তি, অন্যদিকে তা ত্যাগেরও প্রতীক। কিন্তু, পৃথিবীতে এতো রং থাকা সত্ত্বেও সাধুরা কেনো এই গেরুয়া রং পছন্দ করেন? গেরুয়া অনেকটাই কমলা রংয়ের কাছাকাছি। তাই একে অনেকেই কমলা রংয়ের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন।


***#কমলা বা গেরুয়া রংয়ের সঙ্গে নাকি যোগ রয়েছে পুরাণের। রয়েছে আধ্যাত্মিক যোগও। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় গেরুয়া বা কমলা রঙের আধিক্য দেখা যায়। অগ্নিদেবের রংও গৈরিক।


***#সাধুরা জানান, শরীরের প্রথম চক্র মূলাধার, লাল রংয়ের সঙ্গে যুক্ত। দ্বিতীয় চক্র হল স্বাধিষ্ঠান, যার সঙ্গে যোগ রয়েছে কমলা রংয়ের। কমলা বা গেরুয়া রংয়ের সঙ্গে শরীরের বেশ কয়েকটি অঙ্গের যোগ রয়েছে। যেমন, কিডনি, মলাশয়, মূত্রথলি ও প্রজননতন্ত্র। শারীরিক সুস্থ-অসুস্থতার বিষয়ের সঙ্গেও গেরুয়া রংয়ের সম্পর্ক রয়েছে। শুধু শারীরিক নয়, মানসিক ভারসাম্যও ঠিক থাকে এই রংয়ের প্রভাবে।


***#প্রসঙ্গত, কেবল হিন্দু ধর্মে নয়, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাও গেরুয়া রংয়ে প্রভাবিত। তারা মনে করেন, গেরুয়া রং আসলে সুখের। কারণ, লাল ও হলুদের মিশেলে এই রং পাওয়া যায়। শরীরে স্যাফ্রন চক্রের অবস্থানও লাল ও হলুদ চক্রের ঠিক মাঝখানেই।


"যোগ সাধনায় পরমাত্মা প্রাপ্তি" এ

***#গয়া


*#গয়া নামটি এসেছে গয়াসুরের নাম থেকে। পুরাকালে গয়া সুর নামে এক অসুর বিষ্ণুর উপাসনা শুরু করে। তার উদ্দেশ্য ছিল অমরত্ব লাভ করা এবং স্বর্গ দখল করা। সে এইজন্য তপস্যা শুরু করে।


*#তপস্যা এমনভাবে করতে থাকে যে বিষ্ণু আর স্থির থাকতে পারেন না- তিনি ছুটে যান গয় এর কাছে। গয় বিষ্ণুর কাছে বর চান যেন অমর হতে পারেন। তখন বিষ্ণু বলেন- " হে গয়- আমার অবতার গন ও জন্ম নেয় এবং এই পৃথিবী তেই তাদের মৃত্যু হয়। তুমি অন্য কোন বর চাও।এই পৃথিবীর সৃষ্টির কারন আমি। আমি তোমাকে পৃথিবীর নিয়মের ব্যাতিক্রম কোন বর দিতে পারবোনা। তুমি অন্য কিছু চাও।"

তখন গয় মহা চিন্তায় পড়ে যায়। শেষে সে বলে-

" হে পরম বিষ্ণু- আমাকে এমন এক দেহ দান করুন যেন আমার দেহ স্পর্শ না করে এই পৃথিবীর কারো স্বর্গ লোক প্রাপ্তি না হয়।"

তখন ভগবান বিষ্ণু বললেন-

"এ জন্য আমাকে যজ্ঞ করতে হবে- এবং তোমাকে মৃত্যু বরন করে দেহ খানা দিতে হবে।" 

এ শুনে সদা হাস্য ময় গয় নিজের দেহ দান করতে প্রস্তুত হল। কিন্তু সে এত বিরাট ছিল যে বিষ্ণু কোথাও দাড়াতে পারছিলেন না। তখন গয় নিজের মাথা পেতে দেয়- ভগবান বিষ্ণু সেই মাথায় পা দিয়ে অত্র এলাকাকে মহা পবিত্র করে দেন। এবং বর দেন যে এই খানে পিন্ড দান না করে কোন দেব দানব বা মানুষের আত্মা স্বর্গ লোকে প্রবেশ করবেনা।


*#ফল্গু নদীর তীরে অবস্থিত এই মন্দির। রামায়নে লেখা আছে এই ফল্গু নদী পূর্বে প্রবাহ মান ছিল। রাজা দশরথের মৃত্যুর পর এখানে শ্রী শ্রী রামের অনুপস্থিতিতে সীতাদেবী দশরথের পিন্ড দেন। এখানে এই পিন্ড দানের সাক্ষী ছিল এই ফল্গু নদী, অক্ষয় বট, ও তুলসী কে সাক্ষী মানেন। 

শ্রী রাম ফিরে এলে সীতা দেবী পিন্ড দানের কথা জানান। এবং বলেন যে এর সাক্ষী ও আছে। এই সময় অক্ষয় বট সত্য স্বীকার করেন। কিন্তু ফল্গু নদী ও তুলসী রামের পায়ের স্পর্শ পাবার আশায় মিথ্যে সাক্ষী দেন। এতে সীতা দেবী অভিশাপ দেন। এর পর থেকে এই ফল্গু নদীর জল যায় শুকিয়ে। আর তুলসী যেখানে সেখানে জন্মায়। এমন কি কুকুর প্রস্রাব করলেও সেখানে জন্মায়। এই ফল্গু নদী এখনও শুকনো। এখানে মাটির দুই হাত খুঁড়লেই জল বের হয়।


*#যেখানে ভগবান বিষ্ণু পা দিয়ে প্রথম যজ্ঞ স্থান নির্ধারন করেন সেখানে ভগবানের ডান পায়ের একটা ছাপ পড়ে যায়। সেই ছাপে এখন পিণ্ড দেয়া হয়। এখানে পিন্ড না দিলে মানব আত্মা মুক্ত হয়না।


*#বর্তমান বিষ্ণুপদ মন্দিরটি ইন্দোরের রানী অহল্যা বাই হোলকার ১৭৬৬ সালে তৈরি করেন। এখানে বিষ্ণুর পদচিহ্ন আছে যা কালো কষ্টি পাথরে সংরক্ষিত। ভগবানের এই পায়ের ছাপের জন্য এখানকার মন্দিরের নাম হয় বিষ্ণুপদ মন্দির। এ মন্দিরে রামানুচারজ, মাধবাচারজ , শঙ্করদেবা, শ্রীচৈতন্যের মত মহর্ষিরা পরিদর্শন করেছেন। 


(সংগৃহীত)


Please join this group:

*#প্রাচীন_ভারতীয়_ধর্ম_সাধনা     

(১ম পর্ব)


*#প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতির ক্ষেত্রে দুটি মূল ধারা প্রবাহিত হতে দেখা যায়– একটি বৈদিক ধারা ও অপরটি বেদ-পূর্ব বা অবৈদিক ধারা। বৈদিক ধারাটি সুস্পষ্টভাবেই আর্যকেন্দ্রিক। আর যে অবৈদিক উপাদানগুলি তাদের স্বকীয় সত্তা নিয়ে কালক্রমে ভারতীয় সংস্কৃতির বিশেষত্বে ভিন্নমাত্রায় একাকার হয়ে আছে, তা হলো প্রাচীন সিন্ধু-সভ্যতা কেন্দ্রিক ধ্যান-ধারণা। ভারতীয় সংস্কৃতির উৎসধারা বলতে এককালে প্রাচীন বৈদিক ধ্যান-ধারণাকেই বুঝাতো, যা বৈদিক সাহিত্যের বিপুল সম্ভারের মধ্যে মূর্ত হয়ে আছে। কিন্তু ১৯২২ সালে শ্রীযুক্ত রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক ভারতবর্ষের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে (বর্তমান পাকিস্তানের অন্তর্গত)


*#সিন্ধু-উপত্যকায় মহেঞ্জোদারোর ধ্বংসস্তুপের মধ্যে এক সুপ্রাচীন প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতার সাক্ষ্য আবিষ্কারের মাধ্যমে সেই সাবেকী ধারণার আমূল পরিবর্তন ঘটে ভারতীয় ইতিহাসের প্রাচীনত্ব হঠাৎ আরো কয়েক হাজার বছর বেড়ে যায়। সিন্ধু অঞ্চলে ১৯২২-২৭ সালের প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যে প্রাপ্ত প্রাগৈতিহাসিক নমুনা বিশ্লেষণ করে নিঃসংশয়ে প্রমাণিত হলো যে, এই সভ্যতাকে অন্তত পাঁচ হাজার বছরের পুরানো বলতে হবে, এবং স্বীকার করতে হবে যে, সুমের আক্কাদ ব্যবিলন মিশর ও অ্যাসিরিয়ার মতো ভারতবর্ষও পৃথিবীতে প্রথম-সভ্যতার ইমারত গড়ে তুলতে অগ্রসর হয়েছিলো। এমনকি এটাও দেখা গেলো যে, কোন কোন দিক থেকে ভারতবর্ষের ওই প্রাচীন সভ্যতা সমসাময়িক মেসোপটেমিয়া এবং মিশরের তুলনায় উন্নততর ছিলো এবং পরিধির দিক থেকেও তা অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতার চেয়ে ঢের বড়ো ছিলো। এবং সর্বশেষ গবেষণালব্ধ ফলাফল থেকে ইদানিং কেউ কেউ বলছেন যে, এই সভ্যতা ন্যুনতম আট হাজার বছরেরও প্রাচীন।

প্রাক-বৈদিক সিন্ধু-সভ্যতার পরিচয় ও তার ধ্যান-ধারণা বিষয়ে বর্তমান লেখকের ’চার্বাকের খোঁজে ভারতীয় দর্শন’ গ্রন্থে বিস্তৃত আলোচনা করা হয়েছে। তবে প্রাক্-আর্য ধর্মবিশ্বাস প্রসঙ্গে বিষয়গত কিছু আলোচনা প্রাসঙ্গিকভাবেই উত্থাপনের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি। ভারতবর্ষীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পক্ষ থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত মহেঞ্জোদারোর খননকাজ পরিচালনা করেন স্যার জন মার্শাল, ১৯৩১ সালে তাঁর বিবরণী প্রকাশিত হয়। এই বিবরণীর ভূমিকায় তিনি যে মন্তব্য করেন তার সংক্ষিপ্তসারটুকু দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের তর্জমায় উদ্ধৃত করা প্রাসঙ্গিক হবে।


*#স্যার জন বলছেন–

‘এতদিন পর্যন্ত সাধারণত ধরে নেওয়া হতো, বিজয়ী আর্যদের তুলনায় ভারতবর্ষের প্রাক্-আর্য অধিবাসীরা সভ্যতার একেবারে নিম্নস্তরে পড়েছিল। স্পার্টানদের তুলনায় হেলটদের বা বাইজান্টাইন প্রভুদের তুলনায় স্লাভদের যে-দশা, বিজয়ী আর্যদের তুলনায় আর্য-পূর্বদের দশাও বুঝি সেই রকমই– সে-অবস্থা এমনই হীন ও পদানত যে তারা ‘দাস’ বলেই উল্লিখিত হয়েছে। ঋগ্বেদ-মন্ত্র থেকে তাদের নেহাতই এক কৃষ্ণচর্ম খর্বনাসা বর্বরের চিত্র সংগ্রহ করা হতো– ভাষা ও ধর্মবিশ্বাসের মতোই শারীরিক বৈশিষ্ট্যেও তারা সুপুরুষ আর্যদের তুলনায় অনেক নিকৃষ্ট। অবশ্যই মাঝে মাঝে স্পষ্ট বোঝা গিয়েছে, তারা গো-সম্পদে সমৃদ্ধ এবং যুদ্ধে পারদর্শী ছিল এবং তাদের অনেক ‘পুর’ ছিল। কিন্তু বেদ-বিদেরা এই ‘পুর’ বলতে কোনো একরকম সাময়িক আশ্রয়স্থলই বুঝতেন– অর্থাৎ, সাদামাটা মাটির তৈরি কোনো ব্যবস্থা, হয়তো বা বেড়া দিয়ে কিংবা পাথরের কোনো রকম আদিম পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। কেননা আর্যদেরই তখনও গ্রাম্যাবস্থা, তাদের সমাজ-সংগঠনও সেই অনুপাতে আদিম। অতএব এ কথা কল্পনা করা কঠিন যে আর্যদের চেয়েও প্রাচীন ভারতবাসীরা– ওই ঘৃণ্য ও নীচ দাসেরা– সুগঠিত নগর বা দুর্গে বাস করতে পারে, বা অন্য কোনো দিক থেকে সভ্যতার উচ্চতর স্তরে উপনীত হতে পারে। বিজেতাদের তুলনায় তাদের মানসিক, দৈহিক, সামাজিক ও ধর্মমূলক নিকৃষ্টতার কথাই স্বতঃসিদ্ধ ছিল এবং ভারতীয় সভ্যতায় তাদের বিশেষ কোনো অবদান স্বীকার করা সম্ভব হয়নি। এ কথা মুহূর্তের জন্যও কল্পনায় আসেনি যে, পাঁচ হাজার বছর আগে– এমনকি আর্যদের নাম পর্যন্ত যখনও শোনা যায় নি– ভারতবর্ষের আর কোথাও হোক-আর-নাই-হোক অন্তত পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশে এক উন্নত ও একান্ত স্বকীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। তার সঙ্গে মেসোপটেমিয়া এবং মিশর সভ্যতার সাদৃশ্য অত্যন্ত নিকট, যদিও কোনো কোনো দিক থেকে তা মেসোপটেমিয়া এবং মিশরের তুলনায় উন্নততর। কিন্তু হরপ্পা ও মোহেঞ্জোদাড়োর আবিষ্কার তর্কাতীতভাবে এই কথাই প্রমাণ করেছে। তার ফলে বোঝা গিয়েছে, যীশু খ্রিস্টের তিন হাজার বছর আগেও সিন্ধু-উপত্যকার অধিবাসীরা এক সু-উন্নত সভ্যতার বাহক ছিল এবং সে-সভ্যতার মধ্যে ইন্দো-আর্য সংস্কৃতির চিহ্নমাত্র নেই। এ সভ্যতায় সমাজ-জীবন ছিল নগর-কেন্দ্রিক এবং কৃষিকাজ ও বাণিজ্যই তার ঐশ্বর্যের প্রধান উৎস। এই বাণিজ্যের ক্ষেত্র নানা দিকে এবং বহুদূর পর্যন্ত প্রসারিত। 


*#এসব দিক থেকে সিন্ধু-সভ্যতার সঙ্গে পশ্চিম এশিয়া ও মিশরের তাম্র-প্রস্তর সভ্যতার সাধারণ সাদৃশ্য আছে। কিন্তু অন্যান্য দিক থেকে সিন্ধ-সভ্যতা ছিল পাঞ্জাব ও সিন্ধুর নিজস্ব বিশিষ্ট সভ্যতা। —দু-একটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা যায়। —চারুশিল্প এবং ধর্ম-বিশ্বাসের দিক থেকেও সিন্ধু-সভ্যতার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য স্বীকারযোগ্য। —অবশ্য সিন্ধ-অধিবাসীদের ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে অন্যান্য দেশবাসীর বিশ্বাসে নানা সাদৃশ্যও দেখা যায়। কিন্তু সামগ্রিকভাবে তাদের ধর্মবিশ্বাস এমন একান্তভাবেই ভারতবর্ষীয় যে এমন কি আজকের দিনের হিন্দুধর্মের সঙ্গে– অন্তত বর্তমান হিন্দুধর্মের সর্বপ্রাণবাদ শৈবধর্ম ও শাক্তধর্মের সঙ্গে– সিন্ধু-সভ্যতার ধর্মবিশ্বাসের বিশেষ কোনো পার্থক্য নির্ণয় করা যায় না।


*#সাধারণের মধ্যে প্রচলিত ধর্মবিশ্বাস বলতে আজও ওই শিব-উপাসনা এবং মাতৃ-উপাসনাই প্রধান।’- (ভারতীয় দর্শন, পৃষ্ঠা-৪৪-৪৫)

জন মার্শালের এই মন্তব্য থেকে দেবীপ্রসাদ তিনটি মূল বিষয় চিহ্নিত করেছেন। তা হলো–


*#একঃ সিন্ধু-সভ্যতা শুধু সুপ্রাচীন নয়, সু-উন্নতও ছিলো– বৈদিক সাহিত্যের চেয়ে অনেক প্রাচীন এবং বৈদিক-সাহিত্যে প্রতিফলিত মানব-উন্নতির চেয়ে অনেক বেশি উন্নতির পরিচায়ক।


*#দুইঃ যারা বেদ রচনা করেছিলেন তাঁরা এ-সভ্যতা গড়ে তোলেন নি। সিন্ধু-সভ্যতা একান্তই আর্য-পূর্ব। স্বভাবতই এ সভ্যতার স্মারকগুলির মধ্যে বৈদিক প্রভাবের বা আর্য অবদানের চিহ্ন নেই।


*#তিনঃ উত্তরকালের ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে– বিশেষত জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে– সিন্ধু-যুগের ধ্যানধারণা ও পূজা-উপাসনার সাদৃশ্য অত্যন্ত নিকট।


অতএব অনুমান হয়, ভারতীয় সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সুদূর সিন্ধু-যুগ থেকে একটি মূল ধারা প্রায় অবিচ্ছিন্নভাবে প্রবাহিত হয়ে এসেছে এবং তার উপর বৈদিক সংস্কৃতির উল্লেখযোগ্য প্রভাব নেই।


*#সিন্ধু সভ্যতার পরিকল্পিত নাগরিক জীবন থেকে প্রমাণ হয় এখানে একটি দক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিলো। আবিষ্কৃত সীলগুলো প্রমাণ করে রাজ্য পরিচালনায় শাসক রাজা ছিলেন প্রধান। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননে মন্দির বা উপাসনা গৃহের অনুপস্থিতি, লিপি পাঠোদ্ধার না হওয়ায় সিন্ধু সভ্যতার ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে নির্দিষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না। তবে সিন্ধু লিপি পাঠোদ্ধার না হলেও আবিষ্কৃত সীল, পোড়ামাটির এবং পাথরের কিছু মূর্তি ও অন্যান্য প্রত্ন-নিদর্শন থেকে সে যুগের অধিবাসীদের ধর্মীয় ধারণা সম্পর্কে বেশ কিছু সাক্ষ্য পাওয়া যায়। এখানে উল্লেখ্য–

‘সিন্ধু-সভ্যতার যে নিদর্শনগুলিকে সাধারণত সীল বলে উল্লেখ করা হয় সেগুলি যে সত্যিই ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজে শীলমোহর হিসেবে ব্যবহৃত হতো তার কোনো নিশ্চিত প্রমাণ নেই। অর্থাৎ, সীল শব্দের ব্যবহার নেহাতই প্রথাগত।’ ‘বরং অধিকাংশ সীলের পিছনে সুতা পরাবার ব্যবস্থা থেকে অনুমান হয় তখনকার লোকেরা এগুলি তাবিজ হিসেবেই অঙ্গে ধারণ করত। অতএব প্রস্তাব হয়েছে, সীল না বলে এগুলিকে সীল-তাবিজ বলাই বাঞ্ছনীয়।’ ‘অন্তত এ-বিষয়ে সন্দেহ নেই যে সীলগুলির সঙ্গে ধর্মবিশ্বাসের সম্পর্ক ছিল। অধিকাংশ সীলের উপরেই কোনো-না-কোনো চিত্র এবং কিছু লেখা আছে। লেখাটুকু মন্ত্র ধরণের কিছু হতে পারে’, ‘যদিও লিপি-পাঠের অভাবে কোনো কথাই খুব বেশি জোর করে বলা যায় না। অতএব এই তথাকথিত সীলগুলির সঙ্গে সেকালের ধর্মবিশ্বাসের সম্পর্ক অনুমিত হলেও সে-ধর্মবিশ্বাসের বৈশিষ্ট্য অনুমান করবার পক্ষে সীলের উপর অঙ্কিত চিত্রাবলীর উপরই নির্ভর করা সম্ভব। স্বভাবতই শুধুমাত্র এই ছবিগুলি বিচার করে সিন্ধু-ধর্মের কোনো পূর্ণাঙ্গ ও নির্ভরযোগ্য ধারণায় উপনীত হওয়া সম্ভব নয় : অজস্র সীলের উপর অজস্র ছবি, সেগুলিকে অবলম্বন করে অজস্র কথা কল্পনা করা যায়। তবুও সিন্ধু-ধর্মের সূত্র হিসেবে সীলগুলি মূল্যবান। কেননা অন্যান্য নিদর্শনের ভিত্তিতে সিন্ধু-ধর্ম সংক্রান্ত যে-কথা সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় তার উপর এই চিত্রাবলী মূল্যবান আলোকপাত করতে পারে। একথা স্বীকার করলে মানতে হবে, আমাদের জ্ঞানের বর্তমান পরিস্থিতিতে অত অজস্র সীলের মধ্যে মাত্র কয়েকটি নির্বাচিত সীলই সিন্ধু-ধর্মের পরিচায়ক হিসেবে প্রাসঙ্গিক হবে। অপরপর সীলের চিত্রাবলীতে হয়তো সেকালে নানা রকম পৌরাণিক কাহিনী আঁকা আছে; কিন্তু এখনো তা আমাদের কাছে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত।’- (দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়/ ভারতীয় দর্শন, পৃষ্ঠা-৬০)


*#বলা বাহুল্য, ভারতীয় ধর্মের ইতিহাসে প্রাক্-বৈদিক ও অবৈদিক ধারাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মোটামুটি তিনটি সূত্র থেকে এই ধারাটিকে চিহ্নিত করা যায়– প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সাক্ষ্য, প্রাচীন সাহিত্য উপাদান এবং এখনও টিকে থাকা উপজাতিদের ধর্মব্যবস্থার মধ্যে নৃতাত্ত্বিকদের অনুসন্ধানের মাধ্যমে অবৈদিক ধারাটিকে সনাক্ত করা। এ প্রেক্ষিতে অধ্যাপক নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন,–

‘প্রাক্-বৈদিক ধর্মব্যবস্থা সম্পর্কে যেটুকু তথ্য আমাদের হাতে আছে তা একান্তই প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান নির্ভর। আজকের দিনের ভারতবর্ষে টিকে থাকা উপজাতিদের ধর্মব্যবস্থার যে পরিচয় নৃতত্ত্ববিদদের অনুসন্ধানের ফলে পাওয়া যায় তা থেকে অবৈদিক ধারাটিকে সনাক্ত করা সম্ভব, যদিও তা অবিমিশ্র নয় এবং সেখানে বৈদিক ধ্যানধারণার প্রভাব বর্তমান। কিন্তু প্রাক্-বৈদিক ও অবৈদিক ধারাটিকে বিশদভাবে জানার সবচেয়ে কার্যকর সূত্র হল ভারতীয় ধর্মীয় সাহিত্য ও নানা ধর্মব্যবস্থার আভ্যন্তরীণ সাক্ষ্য। যে পদ্ধতিকে পণ্ডিতেরা সংস্কৃতকরণ আখ্যা দেন, সেটির একটি বড় বৈশিষ্ট্য হল যে তা কখনও একমুখী নয়। এই পদ্ধতির দ্বারা উচ্চতর সংস্কৃতির নানা দিক যেমন নিম্নতর ও উপজাতীয় সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অনুপ্রবিষ্ট হয়েছে, তেমনই ওই সকল সংস্কৃতির অনেক বিষয়কেই উচ্চতর সংস্কৃতি আত্মসাৎ করে নিয়েছে। পাঞ্চরাত্র, পাশুপত প্রভৃতি সম্প্রদায় বেদবাহ্য বলে ঘোষিত হলেও পরে সেগুলি বৈদিক ঐতিহ্যের অন্তর্গত হয়ে যায়। একথা তন্ত্রের ক্ষেত্রেও সত্য। সাংখ্যদর্শন শঙ্করাচার্য কর্তৃক ‘বেদবিরোধী’ এবং ‘বেদানুসারী মনুবচনের বিরোধী’ বলে ঘোষিত হওয়া সত্ত্বেও তা শাস্ত্রের মর্যাদা পেয়েছে।’

‘এই গ্রহণ-বর্জনের ক্ষেত্রে সর্বযুগেই ব্রাহ্মণদের একটা বড় ভূমিকা ছিল। ভারতীয় ধর্মের ইতিহাসে ব্রাহ্মণ্যধর্ম বলে কোন ধর্ম কোনদিনই ছিল না, কিন্তু সকল ধর্মের ক্ষেত্রেই ব্রাহ্মণদের প্রভাব ছিল অপরিসীম, কেননা আধুনিক ইংরাজীতে যাকে বলা হয় একসপার্টাইজ, যে কোন ধর্মের তত্ত্বগত ও প্রয়োগমূলক দিকের ক্ষেত্রে সেটি ব্রাহ্মণদের বরাবরই ছিল। তাই আমরা দেখি যে এমনকি বেদপ্রামাণ্যবিরোধী বৌদ্ধ ও জৈনধর্মের ক্ষেত্রেও নেতৃত্ব ব্রাহ্মণদের হাতেই স্বাভাবিকভাবে চলে এসেছিল।


চলবে.......

সংযোগেঃ 

রতন কর্মকার


Continue-19

Please join this group:

"যোগ সাধনায় পরমাত্মা প্রাপ্তি" 

https://www.facebook.com/groups/353473076140599/?ref=share

*#প্রাচীন_ভারতীয়_ধর্ম_সাধনা

(২য় পর্ব)


*#বুদ্ধের ‘সিংহগর্জনকারীদের’ মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন ব্রাহ্মণ, বৌদ্ধ আচার্যগণও ছিলেন প্রধানত ব্রাহ্মণ, বৌদ্ধধর্মের তত্ত্ব ও দর্শনের বিকাশ প্রকৃতপক্ষে ব্রাহ্মণদের হাতেই হয়েছিল। এই কারণেই বৌদ্ধ ও জৈনধর্মের ব্যাখ্যামূলক ও দার্শনিক সাহিত্য কালক্রমে পালি ও প্রাকৃতের পরিবর্তে সংস্কৃতভাষাতেই রচিত হয়। অবৈদিক, উপজাতীয় ও লৌকিক বিষয়াবলীর সংস্কৃতকরণের ক্ষেত্রে চারটি পর্যায় ও মাত্রাভেদ ছিল, যথা- পূর্ণ, অংশ, কলা ও কলাংশ। ভিন্ন সংস্কৃতির যতটা যে মাত্রায়– অর্থাৎ সমগ্রভাবে, অথবা আংশিকভাবে, অথবা ভগ্নাংশে অথবা আরও স্বল্পতর মাত্রায়– গৃহীত হত, সামাজিক স্তরবিন্যাসে সেই সংস্কৃতিভুক্ত মানুষদের মর্যাদার স্থান সেই অনুপাতে নির্ণীত হত; অর্থাৎ ব্রাহ্মণ্যসংস্কৃতির যারা যত নিকটে তাদের সামাজিক মর্যাদা অর্থাৎ জাতিকাঠামোর সোপানে তাদের অবস্থান তত উপরের দিকে এবং যারা যত দূরবর্তী তাদের অবস্থান তত নীচের দিকে। এই পদ্ধতির কিন্তু আজও বিরাম নেই।’- (ধর্ম ও সংস্কৃতি, প্রাচীন ভারতীয় প্রেক্ষাপট)


*#প্রাসঙ্গিকভাবে এখানে যে বিষয়টি মনে রাখা আবশ্যক তা হলো, রাজনৈতিক ঘটনাবলির গতিপ্রকৃতির মতোই, ধর্মব্যবস্থা ও সামাজিক মূল্যবোধের বিবর্তন, এমনকি শিল্পকলা ও সাহিত্যের ভঙ্গি ও পদ্ধতিসমূহ, সবকিছুই উৎপাদন-ব্যবস্থা ও উৎপাদন-সম্পর্কসমূহের বিকাশের ভিত্তিতেই গড়ে ওঠে। এতদঞ্চলে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী বিভিন্ন মানের সংস্কৃতির সীমায় আবদ্ধ থাকার দরুন এবং সেগুলির পারস্পরিক সম্পর্ক ক্ষীণ হবার কারণেই, যাদের সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা ও বিবর্তনকে ভারতীয় সংস্কৃতি বলে চালানো হয়, তারা মূলতঃ উচ্চবর্ণের মানুষ, সর্বস্তরের মানুষ নয়। উৎপাদন-ব্যবস্থার উন্নততর কলাকৌশলের সঙ্গে অর্ধোন্নত ও একান্ত অনুন্নত কলাকৌশল ও তার সম্পৃক্ত জনগোষ্ঠীর সহাবস্থান এখনকার মতোই প্রাচীন ভারতবর্ষের বৈশিষ্ট্য ছিল এবং তার বহু বাস্তব চিত্র অতীত যুগের রচনাবলি থেকে পাওয়া যায়। প্রাচীন গ্রন্থগুলিতে আমরা দেখি–

‘ঋগ্বেদে উল্লিখিত ‘পঞ্চকৃষ্টি’র ব্যাখ্যা যাস্ক করেছেন ‘পঞ্চমনুষ্যজাতানি’ বলে যার অর্থ চাতুর্বর্ণ্যসহ পঞ্চম বর্ণ নিষাদ। যজুর্বেদের রুদ্রাধ্যায়ে নিষাদ হিসাবে আট জাতের মানুষকে উল্লেখ করা হয়েছে যাদের মধ্যে ব্রাত্য, পুঞ্জিষ্ঠ, স্বনিন্ এবং মৃগায়ু শিকারজীবী বলে কথিত। পদ্মপুরাণে (২/২৭/৪২-৪৩) নিষাদদের বংশধর হিসাবে কিরাত, ভিল্ল, নাহলক, ভ্রামর ও পুলিন্দদের কথা বলা হয়েছে। শবরেরা ঐতরেয় ব্রাহ্মণে (৭/১৮) শিকারজীবী জাতি বলে উল্লিখিত হয়েছে। পুরাণসমূহের জনপদতালিকায় তাদের বিন্ধ্যপর্বতের দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দা বলা হয়েছে।… শবরদের মতো পুলিন্দরাও শিকারজীবী উপজাতি ছিল যাদের কথা অশোকের লিপিতে বলা হয়েছে। বৃহৎসংহিতায় (৪/২২ ইত্যাদি) তাদের ‘গণ’ বা উপজাতি বলা হয়েছে। পুলিন্দদের তিনটি শাখা ছিল– একটি পশ্চিমী শাখা, একটি হিমালয় অঞ্চলীয় শাখা যা কিরাত ও তঙ্গনদের সঙ্গে সম্পর্কিত, এবং একটি দক্ষিণী শাখা। বাজসনেয় সংহিতায় (৩০/১৬) কিরাতদের হিমালয়ের অধিবাসী বলা হয়েছে। নিষাদদের মত কিরাত নামটিও একটি ব্যাপক অর্থে প্রযুক্ত হত। এছাড়া অন্ধ্র, পুণ্ড্র প্রভৃতি আরও বহু শিকারজীবী উপজাতি প্রাচীন সাহিত্যে বর্ণিত হয়েছে।’

প্রাচীন গ্রন্থসূহের সাক্ষ্য থেকে এই সব উপজাতিদের ধর্ম সম্বন্ধে যা জানা যায় তা হচ্ছে, তারা মূলত জগৎ ও জীবনের উৎস হিসেবে মাতৃকাদেবীর উপাসক ছিল। যেমন–

‘দেবীর বর্ণনাপ্রসঙ্গে হরিবংশে (৪৮অ) সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে তিনি শবর, বর্বর ও পুলিন্দদের দ্বারা বিশেষভাবে পূজিতা হন (শবরৈর্বর্বরৈশ্চৈব-পুলিন্দৈশ্চ পুপূজিতা)। মহাভারতের দুর্গাস্তোত্রে (৪/৬) দেবীকে বিন্ধ্যপর্বত অঞ্চলের নিবাসিনী বলা হয়েছে; শুধু তাই নয় তিনি মদ্য-মাংস-পশু-প্রিয়া রূপে কল্পিতা হয়েছেন, যা থেকে স্পষ্টই সে যুগের উপজাতীয় শিকারজীবী মানুষদের সঙ্গে দেবীর সম্পর্ক প্রমাণিত হয়। মহাভারতের কিরাতপর্বাধ্যায়ে শিব ও দেবী যথাক্রমে কিরাত ও কিরাতিনীর ছদ্মবেশেই অর্জুনের সামনে হাজির হয়েছিলেন। ‘বরাহপুরাণে’ (২৮/৩৪) দেবীকে কিরাতিনী আখ্যা দেওয়া হয়েছে। বাক্পতির গৌড়বহো নামক প্রাকৃত কাব্যে (শ্লোক ৩০৫) দেবীকে শবরী বলা হয়েছে। বৌদ্ধদেবী পর্ণশবরী আদিতে বৃহৎসংহিতা কথিত পর্ণশবর উপজাতির দেবী ছিলেন। দুর্গাপূজার একটি বিশিষ্ট অঙ্গের নাম শাবরোৎসব বা শবরদের উৎসব যা অনুষ্ঠিত হত বিজয়াদশমীর দিনে।


*#জীমূতবাহনের কালবিবেক গ্রন্থে এই শাবরোৎসবের বিশদ বর্ণনা আছে। বাক্পতির পূর্বোক্ত গ্রন্থে (শ্লোক ২৮৫-৩৪৭) বিন্ধ্যবাসিনী দেবীকে কালী ও পার্বতীর সঙ্গে অভিন্ন ঘোষণা করা হয়েছে এবং সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে এই দেবী কোল ও শবরদের দ্বারা পূজিতা হন এবং এঁর সামনে নরবলি দেওয়া হয়। বাণভট্টের কাদম্বরীতে (পূর্বভাগ/কথামুখ) দেবীর সম্মুখে নরবলি দিয়ে শবরদের পূজা পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে। সুবন্ধুর বাসবদত্তায় শবরদের উপাসিতা রক্তপিপাসু দেবী কাত্যায়নী বা ভগবতীর উল্লেখ আছে। ভবভূতির মালতীমাধবেও এই ধরনের দেবীর পরিচয় পাওয়া যায়।’- (ধর্ম ও সংস্কৃতি, প্রাচীন ভারতীয় প্রেক্ষাপট)


*#ধর্মব্যবস্থায় যেহেতু এতদঞ্চলের আধুনিক পরিস্থিতিতেও প্রাচীন অবস্থার অনেক কিছু টিকে আছে, তাই প্রাচীন অবস্থাকে বোঝার জন্য আধুনিক অবস্থায় নিম্নতর পর্যায়গুলিতে আটকে থাকা পরিস্থিতির যথাযথ পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন হয় নৃতত্ত্ব ও প্রাচীন সাহিত্য যে সকল তথ্য হাজির করে সেগুলিকে প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্যাবলির আলোয় বিচার করা, কেননা প্রাচীন মানুষ যা ‘করেছিল’ তারই নিদর্শন প্রত্নতত্ত্ব আমাদের সামনে হাজির করে। ‘ভারতীয় ধর্মের ইতিহাস’ গ্রন্থের ‘ঐতিহাসিক পটভূমি : প্রাক্-বৈদিক যুগ’ অধ্যায়ে অধ্যাপক নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এ বিষয়ে বিভিন্ন উৎস থেকে আহরিত কিছু নৃতাত্ত্বিক সমীক্ষা উপস্থাপন করেছেন। এ পর্যায়ে আমরা প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলির সহায়তা নিতে পারি।

নৃতাত্ত্বিক সমীক্ষায় পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে পিছিয়ে-পড়ে-থাকা ট্রাইবগুলিকে, তাদের খাদ্য সংস্থান পদ্ধতির ভিত্তিতে মূলতঃ তিন ভাগে ভাগ করা হয়– শিকারী (নিম্ন ও উচ্চ), পশুপালক (নিম্ন ও উচ্চ) এবং কৃষিজীবী (নিম্ন, মধ্য ও উচ্চ)।


*#উচ্চ শিকারজীবী পর্যায়ে কিছুটা উন্নত ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার, হাঁড়িকুড়ি তৈরি, কাপড় বোনা এবং পশুকে পোষ মানানোর কিছু কিছু নিদর্শন পাওয়া গেলেও, এই সমাজে কোন পেশাদার শ্রেণীর সৃষ্টি হয় না। নিম্ন পশুপালক পর্যায় নিছকই পশুপালন নির্ভর, যেখানে শিকারের ভূমিকা থাকলেও কৃষি অনুপস্থিত। অনুরূপভাবে নিম্ন ও মধ্য কৃষিজীবী পর্যায়ে, ভক্ষ্য হিসেবে পশুর স্থান থাকলেও উৎপাদন-ব্যবস্থায় তার কোন ভূমিকা নেই। কিন্তু উচ্চ-পশুপালক পর্যায়ে পশু পালনের সঙ্গে কৃষি যুক্ত হওয়ায় এবং উচ্চ-কৃষিজীবী পর্যায়ে কৃষির সঙ্গে পশুপালন যুক্ত হওয়ায়, উৎপাদন ব্যবস্থার গুণগত রূপান্তর ঘটে। তাই পশুপালক ও কৃষিজীবী পর্যায়স্তরের উচ্চতর স্তরগুলিতে কারিগরি বিদ্যা, স্থায়ী আবাস স্থাপন ও ধাতুর ব্যবহার বহুলাংশে বেড়ে যায়, পেশাদার শ্রেণিসমূহের উদ্ভব ঘটে। উৎপাদন ব্যবস্থায় উদ্বৃত্তের সৃষ্টি হয় এবং এই উদ্বৃত্তভোগী একটি সুবিধাভোগী শ্রেণির উদয় হয়। পরিণামে সাম্যমূলক জ্ঞাতিভিত্তিক ট্রাইবাল ব্যবস্থায় ভাঙন ধরে এবং রাষ্ট্র-ব্যবস্থার লক্ষণগুলি প্রকটিত হয়।


*#শিকারজীবী পর্যায়ের ধর্মবিশ্বাসের ক্ষেত্রে খাদ্য গ্রহণ সম্পর্কিত কিছু আচার-অনুষ্ঠান লক্ষ্য করা যায়। ভক্ষ্য পশুগুলির উপর কিছুটা পবিত্রতা আরোপ করা হয় এবং সমবেত নৃত্যগীতমূলক আচার-অনুষ্ঠান সহকারে সেগুলিকে নিহত ও ভক্ষণ করা হয়। পরবর্তীকালের যাগযজ্ঞে শিকারজীবী পর্যায়ের এই আচার-অনুষ্ঠানগুলির পল্লবিত রূপ লক্ষ্য করা যায়। এই পর্যায়ে জাদু-বিশ্বাস (magic), প্রাথমিক ধরনের আত্মার ধারণা (animism), অচেতন বস্তুর শুভাশুভ বিষয়ক ক্ষমতায় বিশ্বাস (animatism) প্রভৃতি কিছু কিছু ধারণার উন্মেষ দেখা যায়। আরও দেখা যায় মাতৃকা দেবীর (Mother Goddess) প্রাথমিক কল্পনা। মাটি, পাথর বা হাড়ের তৈরি যে সকল প্রাচীন মাতৃকা মূর্তি পাওয়া গেছে, সেগুলির গঠন দেখেই অনুমিত হয় যে এই মূর্তিগুলি মাতৃত্ব, গর্ভধারণ প্রভৃতির প্রতীক হিসেবেই পূজিত হতো। মাতৃকাপূজার ব্যাপকতার আরও একটি কারণ ছিল আদিম সমাজের স্বাভাবিক মাতৃপ্রাধান্য। জন্মদানের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা থাকলেও মানবসমাজের প্রাথমিক পর্যায়ে নারীর ভূমিকাই ছিল স্বাভাবিকভাবে স্বীকৃত, কেননা তার মাতৃত্বমূলক কাজের ক্ষেত্রে কোন সংশয়ের অবকাশ নেই। তার পুরুষ সঙ্গীর ভূমিকা গৌণ, কেননা, জন্মদানের ক্ষেত্রে তার গুরুত্বের উপলব্ধি ঘটতে সময় লেগেছিল অনেককাল। আদিম সমাজে পিতৃত্বের ব্যাপারে অনিশ্চয়তা ছিল। তাই নারীই ছিল জীবনদাত্রী, তার মাতৃত্বমূলক অঙ্গপ্রত্যঙ্গসমূহ জীবনদায়িকা শক্তির প্রতীক হিসেবে সর্বত্রই গড়ে উঠেছিল।


চলবে.......


Please join the group 🙏🙏🙏

"যোগ সাধনায় পরমাত্মা প্রাপ্তি" 

https://www.facebook.com/groups/353473076140599/?ref=share

*#প্রাচীন_ভারতীয়_ধর্ম_সাধনা (পর্ব-০৩)


*#পশুপালক পর্যায়ে পিতার গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার সূচনা দেখা যায় উচ্চ শিকারজীবী পর্যায় থেকেই। পশুপালন মূলত পুরুষালি কাজ, সেই হিসেবে এই সমাজে পুরুষপ্রাধান্য কিছুটা অনিবার্য। উচ্চ-পশুপালক সমাজে পশু শুধু জীবনধারণেরই উপকরণ নয়, সম্পত্তিও বটে, যা রক্ষা করা যায়, লুণ্ঠন ও অপহরণের দ্বারা বর্ধিত করা যায়। শিকারজীবী সমাজে সম্পত্তিবোধ থাকে না, কৃষিজীবী সমাজের প্রাথমিক পর্যায়গুলিতেও এই বোধ তীব্র নয়। সম্পত্তিই সুবিধাভোগী শ্রেণির সৃষ্টি করে, এই কারণেই পশুপালক সমাজে রাষ্ট্রশক্তির আবির্ভাব হয় তাড়াতাড়ি। সম্পদের এই প্রেরণাই পশুপালক সমাজকে যুদ্ধপরায়ণ করে তোলে, কেননা যুদ্ধের দ্বারাই অপরের সম্পদ অধিকার করা যায়।


*#সম্পত্তির সঙ্গে উত্তরাধিকারের প্রশ্নও জড়িত, এই কারণেই পশুপালক সমাজ পিতৃতান্ত্রিক, যেখানে দাবি করা হয় স্ত্রী বা স্ত্রীরা সর্বদাই স্বামীর অনুগত থাকবে। পশুপালক সমাজের এই বৈশিষ্ট্যগুলি তাদের ধর্মে প্রতিফলিত হয়েছে। প্রাকৃতিক শক্তিগুলি এখানে দেবতারূপে কল্পিত। দেবমণ্ডলীতে দেবীদের স্থান স্বাভাবিকভাবেই গৌণ। প্রধান দেবতা যুদ্ধবাজ দলনেতারই প্রতিচ্ছবি। তাদের পুরাণাদি যুদ্ধের কাহিনীতে ভরপুর। আচার-অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে তাদের শিকারজীবী ঐতিহ্যের প্রতিফলন সুস্পষ্ট, পুরাতন আমলের জাদুবিশ্বাসমূলক অনুষ্ঠানগুলি যাগযজ্ঞ ও পশুবলিতে আরও পল্লবিত।


*#পক্ষান্তরে কৃষিজীবী সমাজের ধর্মব্যবস্থায় আরও সুদূর অতীতের মাতৃপ্রাধান্যের একটি নবরূপের প্রকাশ দেখতে পাওয়া যায়। কৃষিকাজ মেয়েদের আবিষ্কার ও মেয়েদের দ্বারাই বর্ধিত। তাই কৃষিজীবী সমাজজীবনের প্রাথমিক পর্যায়গুলিতে, অন্তত পশুবাহিত লাঙল প্রবর্তিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত, নারীপ্রাধান্য কিছুটা অবারিত ছিল। ধর্মের ক্ষেত্রেও স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়েছে। আদি কৃষিজীবীদের কল্পনায় জীবনদায়িনী মানবী মাতা ও শস্যদায়িনী পৃথিবী বা বসুমাতা একাকার হয়ে গেছে। মানবিক ও প্রাকৃতিক ফলপ্রসূতা এই সূত্রে বাঁধা পড়েছে। মাতৃত্বের দেবী শস্যের দেবীতে রূপান্তরিতা হয়েছেন। আচার-অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে উর্বরতামূলক জাদুবিশ্বাসের প্রভাব পড়েছে। 


*#প্রাকৃতিক ও মানবিক ফলপ্রসূতা একই রহস্যের দুই দিক। মানবিক প্রজননের অনুকরণ তাই প্রাকৃতিক ফলপ্রসূতার পক্ষেও অপরিহার্য মনে হয়েছে। এ কারণেই লিঙ্গ ও যোনি পূজা এবং কামমূলক আচার-অনুষ্ঠানের ব্যাপকতা আদিম কৃষিজীবী সমাজে লক্ষ্য করা যায়– তান্ত্রিক যৌনাচারসমূহে যেগুলির নিদর্শন আজও টিকে আছে। এগুলির পেছনকার মূল বিশ্বাস– নারী ও প্রকৃতি অভিন্না। নারী ক্ষেত্রস্বরূপা, পুরুষ বীজস্বরূপ, যে কারণে মনু বলেছেন– ‘ক্ষেত্রভূতা স্মৃতা নারী বীজভূতঃ স্মৃতঃ পুমান্। ক্ষেত্রবীজসমাযোগাৎ সম্ভবঃ সর্বদেহিনাম্ ।।’ (মনুসংহিতা-৯/৩৩) (অর্থাৎ, নারী শস্যক্ষেতের মতো, আর পুরুষ শস্যের বীজস্বরূপ। এই ক্ষেত্র ও বীজের সংযোগে সকল প্রাণীর উৎপত্তি)। এই দ্বৈতবাদ কালক্রমে ভারতীয় চেতনায় প্রকৃতি ও পুরুষের ধারণায় রূপান্তরিত হয়েছে।


*#নারী ও পুরুষের মিলনে যেভাবে সন্তানের সৃষ্টি হয়, বিশ্বসৃষ্টির মূলেও অনুরূপভাবে প্রকৃতি (Female Principle) এবং পুরুষের (Male Principle) মিলন ক্রিয়াশীল, কিন্তু প্রাধান্য প্রকৃতিরই। ঐতিহাসিক পটভূমিকায় বিষয়টিকে দেখতে গেলে প্রতীয়মান হয় যে, আদিম চেতনায় নারী কেবল উৎপাদনেরই প্রতীক ছিল না, সত্যকারের জীবনদায়িনীর ভূমিকাই তার ছিল। তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এবং গুণাবলী ওই জীবনদায়িনী শক্তিরই পরিচায়ক। সামাজিক বিবর্তনের প্রাথমিক স্তরগুলিতে তাই এই মাতৃত্বেরই ভূমিকা ছিল প্রধান, জীবনদায়িনী মাতৃদেবীই তাই ছিলেন ধর্মের কেন্দ্রবস্তু। উন্নততর কৃষি এবং পশুপালন প্রচলিত হওয়ার পর থেকে, অর্থাৎ সমাজবিকাশের কিছুটা উন্নততর পর্যায়ে, জন্মদানের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা একটু একটু করে স্বীকৃত হতে শুরু করে।


*#সৃষ্টিতত্ত্বের এই পুরুষ উপাদানটি প্রথম পরিচিত হয় মাতৃদেবীর তাৎপর্যহীন প্রেমিক হিসেবে, কালক্রমে উভয়ের মর্যাদা সমান হয়, এবং অবশেষে পুরুষ উপাদানটিই প্রধান হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু যেখানে প্রাচীন কৃষিজীবী সমাজ দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে, সেখানে এই রূপান্তর খুব দ্রুত হয়নি। আদিম যুগের জীবনদায়িনী মাতার ভূমিকা শস্য ও উদ্ভিদ-জগতে পরিব্যাপ্ত হয়েছে, সমগ্র বিশ্বপ্রকৃতিই মাতৃদেবীরূপে কল্পিতা হয়েছেন। কালক্রমে পিতৃপ্রধান ধর্মের প্রতিষ্ঠা হলেও পুরাতন মাতৃদেবীকে স্থানচ্যুত করা সম্ভবপর হয়নি, বিশেষ করে ভারতবর্ষে, যেখানকার সমাজজীবন আজও বহুলাংশে কৃষিভিত্তিক।


*#এই বিষয়গুলি মাথায় রেখেই আমরা এযাবৎ প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক সাক্ষ্য ও যথাযথ সাহিত্য নিদর্শনের আলোকে প্রাচীন ভারতীয় ধর্ম-সাধনায় আদিম প্রজননভিত্তিক উর্বরতামূলক বিশ্বাস তথা শাক্ত-উপাদানের অনিবার্য উপস্থিতি ও তার প্রয়োজনীয় বিশ্লেষণের চেষ্টা করতে পারি।


(সমাপ্ত)


সংযোগেঃ 

রতন কর্মকার

*#মুক্তির_প্রকার_ভেদ


কয় প্রকারের মুক্তি শাস্ত্রে আছে তা আমাদের জেনে রাখা দরকার।


(০১) সালােক্য 

(০২) সারূপ্য 

(০৩) সাযুজ্য 

(০৪) সাষ্টি ও

(০৫) কৈবল্য


*#মুক্তি এই পঞ্চপ্রকার । কেউ কেউ সাযুজ্য ও সারূপ্য মুক্তি মুলতঃ এক প্রকার ভাবাপন্ন বলে মনে করায় সারূপ্যকে বাদ দিয়ে সালােক্য ভাবেরই অন্তর্ভুক্ত সামীপ্য নামে আর একটি মুক্তির উল্লেখ করেছেন । 


*#ভগবৎ লোক প্রাপ্তির নাম সালােক্য , তাঁর সমীপে বাস করার নাম সামীপ্য । তৎ স্বরূপে অবস্থান করার নাম সাযুজ্য , ব্রহ্মের কোন প্রকার মুর্তি বিশেষে মনের লয় করার নাম সাষ্টি । এই চারিপ্রকার মুক্তি । এরপর প্রাণায়াম রূপ আত্মকর্মের পর অবস্থার পরাবস্থায় যে মুক্তি লাভ হয় তাকে কৈবল্য অবস্থা বা নির্বাণ মুক্তি বলা হয় । যাঁদের ঐরূপ মুক্তি লাভ হয় তাঁরা ব্যতীত আমাদের মত সাধারণ লােকের ধারণা করতে যাওয়া বাতুলতা মাত্র ।Please join the group 🙏🙏🙏

"যোগ সাধনায় পরমাত্মা প্রাপ্তি" 

https://www.facebook.com/groups/353473076140599/?ref=share

Continue-20

***#ছিন্নমস্তা


*#পরিবর্তনশীল জগতের অধিপতি হচ্ছেন কবন্ধ আর কবন্ধের শক্তি হলেন ছিন্নমস্তা। বিশ্বের হ্রাস-বৃদ্ধি তাে সর্বদা হয়েই চলেছে। হ্রাসের মাত্রা যখন কম এবং বিকাশের মাত্রা যখন বেশী হয় তখন ভুবনেশ্বরীর আর্বিভাব

হয়। এর বিপরীত প্রক্রিয়ায় অর্থাৎ নিগম বেশী এবং আগম কম হলে ছিন্নমস্তার প্রাবল্য হয়।


*#দেবী ছিন্নমস্তার স্বরূপ অত্যন্তই গুহ্য। এটি কোনও অধিকারী সাধকই জানতে পারে। মহাবিদ্যাদের মধ্যে এর স্থান তৃতীয়। এর প্রাদুর্ভাবের কাহিনী হল একবার দেবী ভবানী তার সহচরী জয়া ও বিজয়াকে নিয়ে

মন্দাকিনীতে স্নান করতে গিয়েছিলেন। স্নানান্তে ক্ষুধায় কাতর হয়ে তিনি কৃষ্ণবর্ণা হয়ে গেলেন। তার সহচরীরাও তার কাছে খাবার চাইল। দেবী তাদের একটু প্রতীক্ষা করতে বললেন। কিছুক্ষণ প্রতীক্ষা করার পর সহচরীরা যখন আবার খেতে চাইল তখন দেবী পুনরায় তাদের একটু অপেক্ষা করতে বললেন।

সহচরীরা বিনীতভাবে দেবীকে বলল— “ মা তাে নিজের শিশুদের ক্ষুধা পেলে অবিলম্বে খেতে দেয়। আপনি আমাদের কেন উপেক্ষা করছেন?” নিজের সখীদের বিনীত আবেদন শুনে কৃপাময়ী দেবী নিজের খড়্গ দিয়ে নিজের মুণ্ড কেটে ফেললেন। কাটা মুণ্ডটি দেবীর বাঁ হাতে এসে পড়ল এবং তার কবন্ধের রক্তপ্রবাহ তিনটি ধারায় প্রবাহিত হল। দুই সখীর দিকে তিনি রক্তের দুটি ধারা ঘুরিয়ে দিলেন আর সেই রক্ত পান করে সখীরা খুশী হল। তৃতীয় ধারার রক্ত দেবী নিজেই পান করতে লাগলেন। সেই থেকেই দেবী ছিন্নমস্তা নামে প্রসিদ্ধ হলেন।


*#এইরকম বিধান আছে যে অৰ্দ্ধরাত্রে অর্থাৎ চতুর্থসন্ধ্যাকালে (ছয় ঘন্টার অন্তর দিন রাত্রির সন্ধিক্ষণকে সন্ধ্যা বলে) ছিন্নমস্তার উপাসনা করলে সাধক সরস্বতী-সিদ্ধ হয়। শত্ৰুবিজয়, সম্পূর্ণ-স্তম্ভন, রাজ্য প্রাপ্তি এবং দুর্লভ মােক্ষপ্রাপ্তির উদ্দেশ্যে ছিন্নমস্তার পূজা অমােঘ ফলদায়ী।


*#ছিন্নমস্তার আধ্যাত্মিক স্বরূপ অত্যন্ত মাহাত্ম্যপূর্ণ। ছিন্ন যজ্ঞশীর্ষের প্রতীক এই দেবী শ্বেতপদ্মের উপর দণ্ডায়মানা। চতুর্দিক তার বসন, তার নাভিদেশে যােনিচক্র অধিষ্ঠান। কৃষ্ণ (তমঃ) এবং রক্ত (রজঃ) গুণের দেবী দুজন তার সখী। তিনি নিজের মাথা কেটে ফেলেও জীবিত থাকেন। এটি নিজেতেই নিজের অন্তরমুখী সাধনার পরিচয় প্রদান করে। পণ্ডিতেরা এটির দ্বারা সিদ্ধির চরমপ্রাপ্তি জ্ঞান করেন। যােগশাস্ত্রে তিনটি গ্রন্থির উল্লেখ আছে, সেই

গ্রন্থিগুলির সম্পূর্ণ ভেদনে সাধকের পূর্ণ সিদ্ধিপ্রাপ্তি হয়। এই তিন গ্রন্থির নাম ব্রহ্মগ্রন্থি, বিষ্ণুগ্রন্থি ও রুদ্রগ্রন্থি।

মূলাধারে ব্রহ্মগ্রন্থি, মণিপুরে বিষ্ণুগ্রন্থি এবং আজ্ঞাচক্রে রুদ্রগ্রন্থির অধিষ্ঠান। এই তিনটি গ্রন্তিভেদ হবার পরেই অদ্বৈতানন্দ প্রাপ্তি হয়। যােগীদের মতে মনিপুর চক্রের নীচের নাড়ীতেই কাম এবং রতির মূল, তার উপরেই ছিন্না মহাশক্তি আরূঢ়া আছেন, এই মহাশক্তির উদ্ধপ্রবাহ হলেই রুদ্রগ্রন্থি ভেদ হয়।


*#ছিন্নমস্তার বজ্র বৈরােচনী নামটি শাক্ত, বৌদ্ধ তথা জৈন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সমানভাবে প্রচলিত। দেবীর দুই সখী তমােগুন ও রজোগুণের প্রতীক, পদ্মফুল হচ্ছে বিশ্বপ্রপঞ্চ আর কামরতি হল চিদানন্দের স্থলবৃত্তি।

বৃহদারন্যকের অশ্বশির-বিদ্যা, শাক্তের গ্রীব-বিদ্যা এবং গানপত্যদের ছিন্ন শীর্ষ গনপতি রহস্যও ছিন্নমস্তারই সম্পর্কিত। হিরন্যকশিপু, বৈরােচন প্রভৃতি সকলে ছিন্নমস্তারই উপাসক ছিল। এইজন্য এঁকে বজ্র বৈরােচনী নাম দেওয়া হয়েছে। বৈরােচন বলা হয় অগ্নিকে। অগ্নির অধিষ্ঠানস্থান মনিপুরে ছিন্নমস্তার ধ্যান করা হয় এবং বজ্রনাড়ীতে এর প্রবাহ হলে এঁকে বজ্ৰ বৈরােচনী বলা হয়।


*#শ্রীভৈরবতন্ত্রে বলা হয়েছে যে এঁর আরাধনাতে সাধক জীবভাব থেকে মুক্ত হয়ে শিবভাব লাভ করে।


*#Please_Join_this_Group:

"যোগ সাধনায় পরমাত্মা প্রাপ্তি"

https://www.facebook.com/groups/353473076140599/?ref=share

*#সদগুরু_ও_মৃত্যুভয়


মানুষের সমস্ত ভয়ের উৎস হচ্ছে মৃত্যুভয়। জন্ম জীবনকাল মৃত্যু, এটাই ক্রম, অর্থাৎ যার উৎপত্তি হয়েছে তা প্রবৃদ্ধি-রূপান্তর ইত্যাদির মাধ্যমে একসময় লয় প্রাপ্ত হবেই। এটা চিরন্তন, এটা সত্য ! তবুও মানুষ একটা অবস্থাকেই আঁকড়ে ধরে স্থির থাকতে চায় – তাই ভয়। সেই অবস্থাটাকে হারাবার ভয় ! মানুষের চিত্তে যে কামনা-বাসনার প্রাসাদ তৈরি হয়েছে – তা ভেঙে যাবার ভয় ! মানুষ যে সেইগুলিকে আঁকড়ে ধরেই বেঁচে থাকতে চায়, সেগুলিকে হারাতে চায় না ! সে নিজের মৃত্যু অবশ্যাম্ভাবী জেনেও, তাকে মেনে নিতে পারে না – এইজন্যেই সদাসর্বদাই ভয় পায় ! 


***#সদ্গুরুর কাছে যখন মানুষ আসে, তখন তিনি প্রথমেই মানুষের চিত্তের এই যে শক্ত বাঁধন তার ফাঁস কাটতে শুরু করে দেন। কারণ তিনি যে জগতের সব রহস্যই জানেন। তিনি জানেন যে, মানুষের ফাঁস জোর করে না কাটলে আবহমানকাল ধরে, কল্প থেকে কল্পান্তরেও মানুষের মুক্তি ঘটবে না। সে ওই বিরাট ভুলের প্রাসাদকে আঁকড়ে ধরে পড়ে থাকবে, আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হবে, রক্তাক্ত হবে, ক্লিষ্ট হবে – তবু কামনা-বাসনা ত্যাগ করতে পারবে না। তাই সদগুরু লাভ হবার পরে, গুরু যেই দু-একটা ঐরকম ফাঁস কাটতে শুরু করেন_অমনি মানুষের অন্তরে একটা ভয় জন্মায়।


*#মানুষ সদ্গুরুকে ভাবেটা কি ? তার কামনা বাসনা মেটানোর agent ? যেমন ধরো, কোনো পরিবারে ছেলেটির চাকরি হোচ্ছে না - মেয়েটার বিয়ে হোচ্ছে না, তারপর গৃহকর্তা একটা agent বা দালালকে ধরে কিছু টাকা পয়সায় রফা করে নিল আর ছেলের চাকরিটা বাগিয়ে নিল অথবা মেয়েটির ভালোস্থানে বিয়ে দিয়ে দিল--গুরুও ওইরকম কেউ একজন নাকি ? এখানেও দেখি তো__অনেকেই এমন আসে, যাদের  সংসারে কোনো ঝামেলা চলছে, হয়তো প্রতিবেশী বা অন্য কারো সাথে মামলা-মোকদ্দমা চলছে, অথবা মেয়েকে নিয়ে - ছেলেকে নিয়ে অশান্তি, স্বামী-স্ত্রীতে ঝগড়া চলছে বাড়িতে – এবার আশ্রমে এসে পকেট থেকে হাজার টাকা বের করে দিয়ে, গুরুর চরণে প্রণাম করে সংসারের সেই ঝামেলা মেটানোর আশা করবে!  সদ্গুরুরা সেই সব কাজ সম্পন্ন করার জন্য আসেন না ! 


*#সদ্গুরু হচ্ছেন মানব জীবনের 'ধ্রুবতারা'--জীবনের লক্ষ্য ! যে লক্ষ্যকে নির্দিষ্ট করে এগিয়ে চললে মানব তার জীবনে পূর্ণতা লাভ করতে পারে। অন্যভাবে বলা যায়-- সদগুরু হচ্ছেন 'দরজা'– যা দিয়ে প্রবেশ করা যায় আধ্যাত্মিক জগতে। আগে সদ্গুরু সম্বন্ধে ধারণা তৈরি করতে হবে ; তারপর তো সদ্গুরু লাভের উপযোগিতা বুঝতে পারবে।

*#দেবী_কমলা


শ্রীমদভাগবতার অষ্টম স্কন্ধের অষ্টম অধ্যায়ে কমলার উদ্ভবের বিস্তৃত বর্ণনা আছে। দেবতা ও অসুরদের দ্বারা অমৃত লাভের উদ্দেশ্যে সমুদ্র মন্থনের ফলস্বরূপ তার আবির্ভাব। ভগবান বিষ্ণুকে ইনি পতিত্বে বরণ করেছিলেন।


*#মহাবিদ্যাদের মধ্যে ইনি দশম স্থানাধিকারিণী। ভগবতী কমলা হলেন বৈষবী শক্তি আবার

ভগবান বিষ্ণুর লীলাসহচরী; তাই এঁর পূজা জগতাধার-শক্তির পূজা। ইনি একরূপে সমস্ত ভৌতিক ও প্রাকৃতিক সম্পদের অধিষ্ঠাত্রী দেবী আবার আর এক রূপে সচ্চিদানন্দময়ী লক্ষ্মী — যিনি ভগবান বিষ্ণুর থেকে

অভিন্ন।


*#দেবতা, মানব ও দানব — সকলেই এর কৃপা ছাড়া পঙ্গু। এইজন্য আগম ও নিগম দুই শাস্ত্রেই এর পূজা সমরূপে বর্ণিত। সমস্ত দেবতা, রাক্ষস, মানুষ, সিদ্ধ ও গন্ধর্ব এর কৃপা প্রসাদ পাওয়ার জন্য উদগ্রীব থাকে।


*#মহাবিদ্যা কমলার ধ্যানমন্ত্রে বলা আছে যে ইনি সুবর্ণকান্তি। হিমালয় সদৃশ শ্বেতবর্ণ চারটা হাতি তাদের শুড়ে চারটে সুবর্ণ কলস নিয়ে এঁকে স্নান করাচ্ছে। তার দুই হাতে বর ও অভয় মুদ্রা এবং অন্য দুইটা হাতে দুটি পদ্মফুল নিয়ে আছেন। এঁর মাথায় সুন্দর মুকুট এবং পরিধানে রেশমীবস্ত্র সুশােভিত। ইনি কমলাসনে আসীনা।


*#সমৃদ্ধির প্রতীক মহাবিদ্যা কমলার পূজা স্থিরলক্ষ্মী প্রাপ্তি ও স্ত্রীপুত্রাদি সুখের জন্য করা হয়। কমলাকে লক্ষ্মী এবং ষােড়শীও বলা হয়। ভাগবদের দ্বারা পূজিত হওয়ার জন্য এর আর এক নাম ভাগবী।


*#এঁর কৃপায় সসাগরা ধরনীর আধিপত্য ও পুরুষােত্তম-ভাব এই দুইয়ের প্রাপ্তি হয়। ভগবান আদি

শঙ্করাচার্য বিরচিত কনকধারাস্তোত্র ও শ্রীসূক্তের পাঠ, পদ্মবীজের মালায় শ্রীমন্ত্রের জপ, বিল্বপত্র ও বিশ্বফলের দ্বারা যজ্ঞ করলে কমলার বিশেষ কৃপা লাভ হয়। স্বতন্ত্রতন্ত্রে কোলাসুরকে বধের উদ্দেশ্যে এর আবির্ভাব হয় বলে বলা হয়েছে। বারাহীতন্ত্রমতে পুরাকালে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর দ্বারা পূজিত হওয়াতে কমলার এক নাম ত্রিপুরারূপেও প্রসিদ্ধ। কালিকাপুরাণে বলা হয়েছে যে ত্রিপুৱশিবের পত্নী হওয়াতে এঁকে ত্রিপুরা বলা হয়। শিব স্বেচ্ছায় ত্রিধাবিভক্ত হয়ে যান। তার উৰ্দ্ধভাগ গৌরবর্ণ, চার হাত, চতুর্মুখ ব্রহ্মরূপে পরিচিত। মধ্যভাগ নীলবর্ণ একমুখ ও চতুর্ভুজ। তাকে বিষ্ণু বলা হয়। আর অধােভাগ ম্যাটিক বর্ণ, পঞ্চমুখ ও চতুর্ভুজ — এঁকে শিব বলা হয়। এই তিন দেহে যুক্ত হয়ে শিব হলেন ত্রিপুর আর তার শক্তি হলেন ত্রিপুরা এরকম বলা হয়েছে। চিন্তামনি গৃহে এঁর নিবাস। 


*#ভৈরব্যামল তথা শক্তিলহরীতে এর রূপ ও পূজাপদ্ধতির বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। এঁর পূজায় সমস্ত রকম সিদ্ধি

সহজে লাভ করা যায়। পুরুষসূক্তে ‘ শ্রীশ্চ তে লক্ষ্মী পত্না ’ বলে কমলাকে পরম পুরুষ ভগবান বিষ্ণুর পত্নীরূপে উল্লেখ করা

হয়েছে। অশ্ব, রথ, হস্তীর সাথে তার সম্বন্ধ রাজ্য-বৈভবের সূচক, পদ্মাসীনা ও পদ্মাবর্ণা হওয়ার কথাও শ্রুতিতে আছে।


*#ভগবৎ শক্তি কমলার পাঁচটী কর্ম — তিরােভাব, সৃষ্টি, স্থিতি, সংহার ও অনুগ্রহ। ভগবতী

কমলা নিজে বলেছেন যে নিত্য নির্দোষ পরমাত্মা নারায়নের সব কাজ আমি নিজে করি। এইভাবে কালী থেকে কমলা পর্যন্ত দশমহাবিদ্যা সৃষ্টি ও ব্যষ্টি, গতি, স্থিতি, বিস্তার, ভরণ-পােষণ,

নিয়ন্ত্রণ, জন্ম-মরণ, উন্নতি-অবনতি, বন্ধন ও মােক্ষ অবস্থার প্রতীক। এরা বিভিন্ন রূপে দেখা গেলেও বস্তুতঃ পরমাত্মার একই শক্তি।

***#মা_তারা


ভগবতী কালীকেই নীলবরণা হওয়ায় তারাও বলা হয়। আবার কোনও মতে তারা নামের রহস্য এই যে ইনি সর্বদা মােক্ষদায়িনী, তারিনী, তাই তাকে তারা নামে ডাকা হয়। মহাবিদ্যার মধ্যে এর স্থান দ্বিতীয়।


*#বিনা আয়াসেই বাকশক্তি প্রদানে সমর্থ্যা, এইজন্য এঁকে নীলসরস্বতীও বলা হয়। ভয়ানক বিপদ থেকে ভক্তকে রক্ষা করেন এইজন্য তিনি উগ্রতারা।


*#বৃহন্নীল-তন্ত্রাদি শাস্ত্রে ভগবতী তারার স্বরূপের বিশদ আলােচনা

আছে। হয়গ্রীবকে বধ করার জন্য ইনি নীল বিগ্রহ ধারণ করেছিলেন। শবরূপ শিবের উপর ইনি প্রত্যালীঢ় মুদ্রায় দণ্ডায়মান। দেবী তারা নীলবরনা, নীলকমলের মত তিনটী নেত্রযুক্তা এবং হাতে কাচি, করােটি, পদ্মফুল ও খড়গ ধারণ করে রয়েছেন। ইনি ব্যাঘ্রাম্বরা এবং কণ্ঠে মুণ্ডমালাধারিণী।


*#শত্রুনিধন, বাক-শক্তি সিদ্ধি এবং ভােগ-মােক্ষপ্রাপ্তির উদ্দেশ্যে তারা বা উগ্রতারার সাধনা করা হয়। রাত্রিদেবীর স্বরূপ শক্তি তারাকে মহাবিদ্যাদের মধ্যে অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং সিদ্ধির অধিষ্ঠাত্রী দেবী বলা

হয়।


*#তারা দেবীর তিন রূপ — তারা, একজটা ও নীলসরস্বতী। এই তিনরূপের রহস্য, কার্যকলাপ ও ধ্যান ভিন্ন ভিন্ন, কিন্তু এই বিভিন্নতা সত্ত্বেও প্রত্যেকেরই শক্তি সমান ও একই। তারাদেবীর উপাসনা মুখ্যরূপে তান্ত্রিক পদ্ধতিতে হয় যাকে আগমােক্ত পদ্ধতিও বলা হয়। এর উপাসনায় সামান্য ব্যক্তিও বৃহস্পতির সমান

বিদ্বান হয়ে যান।


*#ভারতবর্ষে বশিষ্ঠমুনি সর্বপ্রথম তারাদেবীর আরাধনা করেন। এইজন্য তারাদেবীকে বশিষ্ঠারাধিতা তারাও বলা হয়। মহর্ষি বশিষ্ঠ প্রথমে বৈদিক পদ্ধতিতে তারাদেবীর উপাসনা আরম্ভ করেছিলেন, কিন্তু তা সফল হয়নি। অদৃশ্যশক্তির থেকে তিনি আদেশ পান যে তিনি যেন তান্ত্রিক পদ্ধতি, যাকে ‘ চীনাচারা ’ বলা হয়, তার দ্বারা যেন পূজা করেন। বশিষ্ঠ যখন তান্ত্রিক পদ্ধতি গ্রহণ করেন তখনই তার সিদ্ধিলাভ হয়। এই কাহিনী

‘ আচার ’ তন্ত্রে বশিষ্ঠমুনির আরাধনা উপাখ্যানে বর্ণিত আছে। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে পূর্বে চীন, তিব্বত, লাদাখ প্রভৃতি স্থানে তারাদেবীর উপাসনার প্রচলন ছিল।


*#তারাদেবীর আবির্ভাব সুমেরু পর্বতের পশ্চিমভাগে ‘ চোলনা ’ নামে নদীর ধারে অথবা চোলৎ সরােবরের তীরে হয়েছিল, যেমন স্বতন্ত্রতন্ত্রে বর্ণনা আছে—

মেরােঃ পশ্চিমকূলে নু চোত্রখ্যো হ্রদো মহান্।

তত্র জয়ে স্বয়ং তারা দেবী নীলসরস্বতী।

মহাকাল সংহিতার কাম-কলাখণ্ডে তারা-রহস্য বর্ণিত আছে, যাতে তারারাত্রিতে তারা উপাসনার

বিশেষ তাৎপর্য বলা আছে। চৈত্র-শুক্ল নবমীর রাত্রিকে ‘ তারারাত্রি ’ বলা হয়—

চৈত্রে মাসি নবম্যাং তু শুক্লপক্ষে তু ভূপতে।

ক্রোধরাত্রির্মহেশানি তারারূপা ভবিষ্যতি ।।

(পুরশ্চানব ভাগ -৩)

বিহার প্রদেশের সহর্সা জেলার প্রসিদ্ধ ‘ মহিষী ’ গ্রামে উগ্রতারার সিদ্ধপীঠ আছে। সেখানে তারা,

একজটা ও নীলসরস্বতীর তিনমূর্তি একসাথে রয়েছে। মাঝখানে একটি বড় আর দুদিকে ছােট মূর্তি। কথিত আছে, মহর্ষি বশিষ্ঠ এখানেই তারা দেবীর উপাসনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। তন্ত্রশাস্ত্রের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘ মহাকাল-সংহিতা’র গুহ্যকালী খণ্ডে মহাবিদ্যার উপাসনার বিস্তৃত বিবরণ আছে। সেই বিবরণে তারা রহস্য অতিশয় চমকপ্রদ।


*#Please_Join_this_Group:

"যোগ সাধনায় পরমাত্মা প্রাপ্তি"

https://www.facebook.com/groups/353473076140599/?ref=share

***#আত্মজ্ঞান 


*#হাজার হাজার শাস্ত্র গ্রন্হ প্রণেতা ঈশ্বরের অস্তিত্বকে প্রমাণ করতে গিয়ে নিজেদেরই হারিয়ে ফেলেছেন, শুধু হাজার হাজার পুঁথি-গ্রন্হই লিখা হয়েছে কিন্তু ঈশ্বরের স্বরূপকে কেউ বর্ণনা করতে পারেনি। ঈশ্বর অধরাই রয়ে গেছেন। কোন গ্রন্হ, কোন বিদ্যা, কোন জ্ঞান, কোন বাহ্য-ভক্তি-আচারই কখনও ঈশ্বরের প্রমান দিতে পারেনি, ঈশ্বরের বোধের প্রমাণ পেতে হলে স্ব-বোধে জানতে হবে। নিজেকে জানতে হবে, নিজের ভিতরে নিজেকে ডুব দিতে হবে, নিজের ভিতরে প্রাণবায়ুই প্রবেশ করতে পারে; যতক্ষণ প্রাণ আছে ততক্ষণই আয়ু, ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথেই এই প্রাণবায়ুই ঈশ্বরীয় আত্ম-সম্পদরূপে পেয়েছেন, তাঁর ক্রিয়া-ই অগ্রে করতে হবে।


*#Please_Join_this_Group:

"যোগ সাধনায় পরমাত্মা প্রাপ্তি"

https://www.facebook.com/groups/353473076140599/?ref=share

Continue-21

***#মা_বগলামুখী


*#ব্যাষ্টিরূপে শত্রুনাশের ইচ্ছাযুক্তা এবং সমষ্টিরূপে পরমাত্মার সংহারশক্তিই হলেন বগলা। পীতাম্বরাবিদ্যা নামে বিখ্যাত বগলামুখীর সাধনা প্রায়শই শত্রুভয়মুক্তি ও বাকসিদ্ধি লাভের জন্য করা হয়।


*#বগলামুখী মায়ের পূজায় হরিদ্রামালা, পীতপুষ্প এবং পীতবস্ত্রের বিধান আছে। মহাবিদ্যাগণের মধ্যে এঁর স্থান অষ্টম।


*#এঁর ধ্যানে বলা হয় যে সুধাসমুদ্রের মধ্যে অবস্থিত মনিময় মণ্ডপে রত্নময় সিংহাসনে তিনি বিরাজ করেন। তিনি পীতবর্ণ বস্ত্র, পীত আভূষন এবং হলুদ ফুলের মালা পরিধান করেন। এঁর এক হাতে শত্রুর জিহ্বা এবং অন্য

হাতে মুগুর রয়েছে।


*#স্বতন্ত্রতন্ত্র মতে ভগবতী বগলামুখীর আবির্ভাবের কাহিনীটা এইরকম—

সত্যযুগে সমগ্র বিশ্ব ধ্বংস করার জন্য এক ভীষন ঝড় ওঠে। প্রাণীসমূহের জীবনে আগত সংকট দেখে ভগবান মহাবিষ্ণু চিন্তান্বিত হলেন। তিনি সৌরাষ্ট্র দেশে হরিদ্রা সরােবরে গিয়ে ভগবতীকে প্রসন্ন করার জন্য

তপস্যা করতে লাগলেন। শ্রীবিদ্যা ওই সরােবরে বগলামুখীরূপে আবির্ভূতা হয়ে তাকে দর্শন দেন এবং বিশ্বধ্বংসকারী ঝড়কে তৎক্ষণাৎ রােধ করে দিলেন। বগলামুখী মহাবিদ্যা ভগবান বিষ্ণুর তেজের সঙ্গে মিলিত হওয়াতে তিনি বৈষ্ণবী। মঙ্গলবার চতুর্দশীর মধ্যরাত্রে তিনি আবির্ভূতা হন।


*#বগলামুখী মায়ের পূজনের উদ্দেশ্য হল দৈবী প্রকোপ শান্তি, ধনধান্য লাভের জন্য নির্দিষ্ট কর্ম এবং আভিচারিক কর্ম ইত্যাদি। এই সব

আপাতপ্রভেদ শুধুমাত্র উদ্দেশ্যের ভিন্নতার জন্য; নতুবা এঁর পূজা-উপাসনা ভােগ এবং মােক্ষ লাভ উভয়ের জন্যই করা হয়।


*#যজুর্বেদের কাঠকসংহিতানুসারে দশদিক প্রকাশিনী, সুন্দর স্বরূপধারিনী ‘ বিষ্ণুপত্নী’কে ত্রিলােকের ঈশ্বরীরূপে মানা হয়। স্তম্ভনকারিনী শক্তি ব্যক্ত ও অব্যক্ত সমস্ত পদার্থের স্থিতির আধার পৃথিবীরূপে শক্তি। বগলা সেই স্তম্ভনশক্তির অধিষ্ঠাত্রী দেবী। শক্তিরূপিনী বগলার স্তম্ভন শক্তিতে দ্যুলােক বৃষ্টি বর্ষন করে। তার দ্বারাই আদিত্যমণ্ডলের অবস্থান এবং তাঁহাতেই স্বর্গলােকও স্তম্ভিত রয়েছে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণও গীতায়-

‘ বিষ্টভ্যাহমিদং কৃৎস্নমেকাংশেন ছিততা জগৎ ’ বলে সেই শক্তির সমর্থন করেছেন। তন্ত্রে সেই

স্তম্ভনশক্তিকে বগলামুখী নামে বলা হয়েছে।


*#শ্রীবগলামুখীকে ‘ ব্রহ্মাস্ত্র ’ নামেও বলা হয়। ঐহিক বা পারলৌকিক, দেশ অথবা সমাজে দুঃখদায়ী

অরিষ্টাদিকে দমন এবং শত্রুনাশে বগলামুখীর মত আর কোনও মন্ত্র নেই। সাধকেরা চিরকাল এই মহাদেবীর আশ্রয় নিয়ে আসছেন।


*#এর পাঁচটী মন্ত্রপ্রভেদ — বড়বামুখী, জাতবেদমুখী, উল্কামুখী, জ্বালামুখী ও

বৃহভানুমুখী। কুণ্ডিকাতন্ত্রে বগলামুখী জপের বিধানের ওপর বিশেষ আলােকপাত করা হয়েছে।

মুণ্ডমালাতন্ত্রে তাে এও বলা হয়েছে যে, এঁর সিদ্ধিলাভের জন্য নক্ষত্রাদি বিচার ও কালশােধনেরও প্রয়ােজন নেই।


*#বগলা মহাবিদ্যা উদ্ধান্নায় অনুসারেই উপাস্য। আম্রায়ে শক্তি কেবল পূজ্য বলে মনে করা হয়, ভােগ্য নয়। শ্রীকুলের সমস্ত মহাবিদ্যার উপাসনা সফলতা অর্জন না করা পর্যন্ত সতর্কভাবে গুরুর সান্নিধ্যে থেকে করে যাওয়া উচিত। ব্রহ্মচর্য পালন এবং অন্তর ও বাহিরের শুচিতা অতীব আবশ্যক।


*#ব্রহ্মাই সর্বপ্রথম বগলা মহাবিদ্যার উপাসনা করেন। ব্রহ্মা এই বিদ্যার উপদেশ দেন সনকাদি মুনিদের, সনৎকুমার দেবর্ষি নারদকে এবং নারদ সাংখ্যায়ন নামক পরমহংসকে এই জ্ঞানের উপদেশ দেন, সংখ্যায়ন ছত্রিশ খণ্ডে উপনিবদ্ধ বগলাতন্ত্র রচনা করেন। বগলামুখীর দ্বিতীয় উপাসক ভগবান বিষ্ণু এবং তৃতীয় উপাসক পরশুরাম এবং পরশুরাম এই বিদ্যা আচার্য দ্রোণকে উপদেশ করেন।

*#শিবতত্ত্ব 

  (১ম পর্ব)


শাস্ত্র বলেন-

            "যতঃ সর্ব্বং সমুৎপন্নং নির্গুনাৎ পরমাত্মনঃ।

            তদেব শিব সংজ্ঞং হি বেদ বেদান্তিনো বিদুঃ।।"


অর্থাৎ, " যে নির্গুন পরমাত্মা হতে এই সমস্ত জগত উৎপন্ন হয়েছে তাই শিবতত্ত্ব। বেদ বেদান্ত বিদগণ একথা বলেন।"


            "ন যস্মাদধিকং কিঞ্চিৎ তত্তত্ত্বং বিদ্ধি শাঙ্করম্।।"


অর্থাৎ, " যা অপেক্ষা অধিক আর কিছু নাই, তাই শিবতত্ত্ব।"


শিব কেবল দেবতামাত্র নন, বরং বেদান্ত প্রতিপাদিত ব্রহ্ম। সুতরাং তিনি সবার প্রভু। বেদান্ত বলেন-


            "সর্বস্য প্রভুমীশানং সর্বস্য শরণং বৃহৎ।।"

                               -শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ।


*#বৈদিক আলোচনার প্রথমে জানতে হবে- বেদ শব্দের ধাতুগত অর্থ জ্ঞান বা বিদ্যা। বিদ্যা দুই রকম। পরমতত্ত্ব বিষয়ক জ্ঞান হচ্ছে- পরা বিদ্যা। আর জাগতিক লৌকিক জ্ঞান হচ্ছে- অপরা বিদ্যা। বেদে কিন্তু দুই বিদ্যাই স্থান পেয়েছে। কিন্তু পরা বিদ্যা হল শ্রেষ্ঠ বিদ্যা। 

            " দ্বৈ বিদ্যে বেদিতব্যে ইতি হ স্ম 

                  যদ্ব্রহ্মবিদো বদন্তি পরা চৈবাপরা চ।।"

                            

 - মুণ্ডক উপনিষদ।


বেদ নিষ্ঠা আবার দুই ভাগে বিভক্ত। যথা- ১. কর্ম কাণ্ড ২. জ্ঞান কাণ্ড।

কর্ম কাণ্ড হল জাগতিক তথা প্রবৃত্তি মার্গ আর জ্ঞান কাণ্ড পারমার্থিক তথা নিবৃত্তি মার্গ।  এই জ্ঞান কাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত হল উপনিষদ। উপনিষদ শিরোভাগ। সমস্ত বেদজ্ঞানের সার।  বেদের সর্বোচ্চ এবং সর্বশেষ জ্ঞান। তাই উপনিষদের আরেক নাম বেদান্ত। আর উপনিষদ বেদের সংহিতা এবং ব্রাহ্মণ দুই ভাগ থেকেই এসেছে। উপনিষদের সংখ্যা অনেক।  তবে মৌলিক উপনিষদ হিসেবে ১২ খানাকে গ্রহণ করা হয়। যথা-

১। ঈশ -শুক্ল যজুর্বেদ।

২। বৃহদারণ্যক 

৩। তৈত্তিরীয় - কৃষ্ণ যজুর্বেদ।

৪। কঠ 

৫। শ্বেতাশ্বতর

৬। ঐতরেয় -ঋক্‌বেদ।

৭। কৌষিতকী 

৮। কেন - সামবেদ ।

৯। ছান্দোগ্য 

১০। প্রশ্ন - অথর্ববেদ।

১১। মুণ্ডক 

১২। মাণ্ডুক্য 


*#সত্য তথা প্রভু এক, জ্ঞানীরা তাকে বিভিন্ন নামে ডাকেন। তাঁর অনেক নামের মধ্যে প্রসিদ্ধ অষ্টনাম হল-

              " শিবো মহেশ্বরশ্চৈব রুদ্রো বিষ্ণুঃ পিতামহঃ।

               সংসার বৈদ্যঃ সর্বজ্ঞঃ পরমাত্মেতি মুখ্যতঃ।।

               নামাষ্টকমিদং নিত্যং শিবস্য প্রতিপাদকম্।।"


" সর্বদা পরমশিবের প্রতিপাদক আটটি নাম হল - শিব, মহেশ্বর, রুদ্র, বিষ্ণু, ব্রহ্মা, সংসার বৈদ্য (তারকব্রহ্ম), সর্বজ্ঞ (ব্রহ্ম) এবং পরমাত্মা। "


সুতরাং একই পরম সত্ত্বা বহুরূপে বিরাজমান। 


             "সোহকাময়ত অহং বহুস্যাং প্রজায়েয়।"


তাহলে বিশ্বজগৎ সৃষ্টির পূর্বে কী ছিল? উত্তরে বেদান্ত বলেন-


            " যদাহতমস্তন্ন দিবা ন রাত্রিঃ ন সন্ন চাসঞ্ছিব এব কেবলঃ।

              তদক্ষরং তৎসবিতুর্বরেণ্যং প্রজ্ঞা চ তস্মাৎ প্রসৃতা পুরাণী।।"


Continue-22

- শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ।


" যখন জ্ঞানের প্রকাশ হয় তখন - দিনও ছিল না, রাত্রিও ছিল না, সৎও ছিল না, অসৎও ছিল না। তখন শুধুমাত্র শিবই ছিলেন। তিনি আদিত্য মণ্ডলেরও বরণীয়। তাঁর থেকেই অনাদি জ্ঞান বিস্তারিত হয়েছে।"


*#শিব পরমেশ্বর। এই অনন্ত বিশ্বজগতের যিনি স্রষ্টা, অধীশ্বর, তিনি নির্বিকার, নিরঞ্জন। কিন্তু সর্বশক্তিমান তিনি অবলীলায় নাম রূপ ধারন করেন। শিব নাম দিয়ে সেই পরমসত্বাকে বুঝানো হয়। কিন্তু অজ্ঞ ও সঙ্কীর্ণচিত্ত বৈষ্ণবরা (যারা বিশুদ্ধ বৈষ্ণব নয়) শিব নামের তাৎপর্য অনুধাবন করতে না পেরে শিব ও শৈবদের অবজ্ঞা করেন। আজকাল বিশুদ্ধ বৈষ্ণব খুব একটা দেখা যায় না। তবে আছেন। তাদের শ্রদ্ধা জানাই। কিন্তু অজ্ঞরা শিবকে শ্রীকৃষ্ণের দাসে পরিনত করেছে। আর শৈবরা নাকি দাসের দাস! তামসিক! শিবকে পরমেশ্বর বললে তাদের নাকি অসহ্য লাগে! কত বড় অজ্ঞতা!

শৈবদের তো তাদের চোখেই লাগে না। হিংসার, প্রতিশোধের বীজ হৃদয়ে নিয়েও নিজেকে বৈষ্ণব ভাবে। কি আশ্চর্য! তারা ৩য় শিক্ষাষ্টকে শ্রীচৈতন্যদেব কি বলেছেন সেটা ধারণ করেন না। বৈষ্ণব তথা কৃষ্ণভক্ত হতে হলে শিক্ষাষ্টক মানলে আর কিছুই লাগে না। সেখানে আছে প্রেমের কথা। কোনো বিদ্বেষ মনোভাব নেই। আর এটা চৈতন্যদেবের মতবাদ হিসেবে সবচেয়ে বিশুদ্ধ বলা যায়। শিবকে বৈষ্ণব বলে মানতে হলে, এখানে তিনি তা বলে দিতেন। কিন্তু এগুলো বাহ্যিক বিষয়। তাই তিনি যা পালনীয়, সেটাই আটটি শ্লোকে বলেছেন। 

আবার আমি দেখেছি অনেক অজ্ঞ ব্যক্তি প্রভু বিষ্ণু ও শ্রীকৃষ্ণকে নিয়েও ঝগড়া করে। যেমন কেউ বলে শ্রীকৃষ্ণ হলেন বিষ্ণুর অবতার, আবার কেউ বলেন বিষ্ণু হলেন শ্রীকৃষ্ণের অবতার। আবার কেউ বলেন বিষ্ণু শ্রীকৃষ্ণের অংশ প্রকাশ।  যদিও বেদ-বেদান্তে ভাগবতের বাসুদেব, প্রদ্যুম্ন, সংকর্ষণ, অনিরুদ্ধ এমন চতুর্ব্যূহের বিশেষ কিছু উল্লেখ নেই। চতুর্ব্যূহের প্রধান বাসুদেবই ব্রহ্ম। যথা-


    "পরম কারণাত্ পরব্রহ্মভূতাত্ বাসুদেবাত্ সংকর্ষণী নাম জীব জায়তে, সংকর্ষণাত্ প্রদ্যুম্নসংজ্ঞা মনো জায়তে তস্মাদ্ অনিরুদ্ধ সংজ্ঞাতোহংকারা জায়তে।।"


অর্থাৎ- বাসুদেব, সংকর্ষণ, প্রদ্যুম্ন, অনিরুদ্ধ হচ্ছে ব্রহ্ম, জীব, মন ও অহংকারেরই নামান্তর। ব্রহ্ম থেকে জীব (সংকর্ষণ) উৎপন্ন হয়, তা থেকে মন ও মন থেকে অহংকার। অবশ্য এটার আরও অনেক ব্যাখ্যা আছে। সুতরাং বাসুদেব পরব্রহ্মের একটি নাম হতে পারে। উপনিষদে বলা হয়েছে -


            সর্বভূতাধিবাসং যদ্ ভুতেষু চ বসত্যপি।

          সর্বানুগ্রাহকত্বেন তদস্ম্যহং বাসুদেবঃ ইতি।।

                                      - অমৃতবিন্দু উপনিষদ।


*#অতএব বুঝা যাচ্ছে- পরমাত্মা সর্বভূতের মধ্যে বাস করেন তাই তিনি বাসুদেব। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হলো- শ্রীকৃষ্ণ কিন্তু ভগবদ গীতায় ভক্তির কথা বললেও চতুর্ব্যূহের উল্লেখ করেন নি। 

সুতরাং স্পষ্টভাবে বলা যায়- ভগবদ গীতা একটি ভাগবতীয় ভক্তি শাস্ত্র নয়। বরং যোগশাস্ত্র।  এবং ভগবদ গীতার প্রতিপাদ্য বিষয় হল ব্রহ্মবিদ্যা।


*#ভগবদগীতার প্রতিটি অধ্যায়ের নামের সাথেই যোগ শব্দ যুক্ত রয়েছে। আর প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে রয়েছে-


 "ইতি মহাভারতে শ্রীমদ্ভগদগীতাসুপনিষদসু ব্রহ্মবিদ্যায়াং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুন সংবাদে--------যোগ নাম------ অধ্যায়ঃ।।"


সুতরাং শ্রীকৃষ্ণ যোগযুক্ত চিত্তে ব্রহ্মভূমিতে গিয়েই ব্রহ্মবিদ্যা দান করেছেন। কারন বেদান্ত বলেন-

"ব্রহ্মবেদ ব্রহ্মৈব ভবতি"। 


নিজের আরাধ্যকে পরমেশ্বর সাজাতে গিয়ে অন্য মতের অথবা ধর্মের আরাধ্যকে ছোট করতে যাওয়া হিংসা পরায়ন মন অথবা অজ্ঞানতার পরিচায়ক।


*#কেউ কেউ শ্রীবিষ্ণুকে পরমেশ্বর রূপে উপস্থাপন করতে গিয়ে বলেন শিব শব্দটি বেদবেদান্তে এসেছে একটি গুন হিসাবে। অর্থাৎ শিব অর্থ মঙ্গল। তাই দেবদেবীকে মঙ্গল না বলে শিব বলা হয়েছে, অথবা তাঁদের নামের সাথে শিব শব্দটি জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং বেদান্তে যত জায়গায় শিব শব্দটি আছে, তত জায়গায় কৌশলে এরা প্রমাণ করতে চান শিব অর্থে মঙ্গল বুঝানো হয়েছে।  আর শৈবদের হুংকার দিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, প্রমাণ করো- "শিব একজন পৃথক দেবতা।"

কিন্তু শিবকে আমি কখনই পৃথক দেবতা বলব না। তিনি একমাত্র সত্বা পরম ব্রহ্ম, নির্বিকার, নিরঞ্জন। তিনি কখনই পৃথক নন। কিন্তু তাঁর ভিন্ন ভিন্ন নাম রূপ রয়েছে। কারন তিনি সর্বশক্তিমান। রুদ্র তাঁর বৈদিক আদি দেব রূপ। আবার পরম শিবকে ঈশ, ঈশান, মহেশ্বর, ভূতেশ্বর, নীলকণ্ঠ, শূলপাণি, গিরিশন্ত,সোম, হর প্রভৃতি নামেও আখ্যায়িত করা হয়। এগুলো শিবের নাম নয়- এটা বলা হাস্যকর। আর যারা বলেন শিব একটি গুণ মাত্র- কোনো সত্বার নাম নয়, তখন অবাক হই। কারন তারা যুক্তি দেখান বেদ বেদান্তে শিব হল বিশেষণ। আবার প্রশ্ন রাখেন- "শৈবদের কি বিশেষ্য বিশেষণ জ্ঞান আছে?

এমন অজ্ঞোচিত প্রশ্ন শুনে পিলে চমকে যেতে হয়। কারন বেদ জানতে হলে আগে বেদাঙ্গ জানতে হয়। আর ষড়ঙ্গ বেদের একটি হল ব্যাকরণ।  তাহলে প্রশ্নেরই কোনো প্রাসঙ্গিকতা থাকে না। অতএব প্রশ্ন কর্তাই বিশেষ্য বিশেষণ এর প্রকার ভেদ জানেন না। বিশেষ্য এর প্রকার ভেদ এর মধ্যে যে একটা - গুণবাচক বিশেষ্য; আর বিশেষণের প্রকারভেদের মধ্যে একটা- নাম বিশেষণ আছে, সেটা হয়ত তিনি জানেন না। যদিও শিব ব্রহ্ম এবং এই শব্দ কোন ব্যাকরণ গত ব্যাখ্যার জন্য নয়। তারপরও যদি ব্যাকরণ করা হয় তবে তা অস্তিত্বই প্রকাশ করে, শুধু গুণ নয়। আর শ্রেষ্ঠকে অনেক ক্ষেত্রে উপমা হিসেবে প্রয়োগ করা হয়। যেমন "চাঁদবদন"। এখানে চাঁদ শুধু গুণ নয়, বরং নাম। চাঁদের অস্তিত্ব আছে। তিনি সুন্দর। তাই "চাঁদবদন'' মানে হল চাঁদের মত বদন যার। অর্থাৎ সুন্দর মুখমণ্ডল। এখানে চাঁদের সাথে তুলনা করা হয়েছে। সুতরাং শিব শব্দ শুধু গুণ বুঝায় বললে তা ঠিক নয়। যেমন বেদান্তে বলা হয়েছে --

              যদাহতমস্তন্ন দিবা ন রাত্রিঃ ন সন্ন চাসঞ্ছিব এব কেবলঃ।

              তদক্ষরং তৎসবিতুর্বরেণ্যং প্রজ্ঞা চ তস্মাৎ প্রসৃতা পুরাণী।।"

                              - শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ।


*#এই যে এখানে বলা হলো "শিব এব কেবলঃ"। অর্থাৎ শুধু শিব ছিলেন। এটা অবশ্যই নাম। এবং পরম সত্বাকেই নির্দেশ করছে, তার গুণকে নয়। কারন যদি "শিব" শুধু বিশেষণ হয় অর্থাৎ শিব অর্থ "মঙ্গল" হয়, তাহলে অর্থ দাঁড়ায়- শুধু মঙ্গল ছিলেন অথবা কল্যান ছিলেন। এই অর্থটা রীতিমত হাস্যকর। এর অর্থ শুধু মঙ্গল ছিলেন তো নয়ই বরং মঙ্গলময় শিব ছিলেন বলা উচিৎ।

যেহেতু শিব পরম ব্রহ্ম। আর পরম ব্রহ্মকে লাভ করার অনেক উপায় থাকতে পারে। তাই শৈবরা কোন আধ্যাত্মিক পন্থাকেই অস্বীকার করেন না। তাছাড়া সত্য লাভের জন্য যারা বিভিন্ন মার্গের অনুসারী, তাদেরও অপমান করেন না। বরং শ্রদ্ধা এবং সম্মান করেন।

যথা-

     ত্রয়ী সাংখ্যং যোগঃ পশুপতিমতং বৈষ্ণবমমিতি

        প্রভিন্নে প্রস্থানে পরমিদমদঃ পথ্যমিতি চ।

     রুচিনাং বৈচিত্র‍্যাদৃজু কুটিল নানা পথ জুষাং

        নৃনামেক গম্যস্ত্বমসি পয়সামর্ণব ইব।।

                      -শিবমহিম্নঃ স্তোত্র।


অর্থাৎ বেদত্রয়, সাংখ্য, যোগ, পশুপতিমত ও বৈষ্ণব প্রভৃতি বিভিন্ন শাস্ত্র বিষয়ে "ইহাই শ্রেষ্ঠ এবং উহাই শ্রেষ্ঠ" এরূপ বুদ্ধি আছে বলেই লোকে নিজ নিজ রুচি বৈচিত্র‍্য হেতু সরল কিংবা বক্র নানাপথ অবলম্বন করে। তথাপি হে শিব, নদীসমূহের যেমন সমুদ্রই একমাত্র গতি, তেমনি তুমিই সকলের একমাত্র গম্যস্থান।


*#সচ্চিদানন্দঘন সদাশিব পরম নিয়ন্তা।  তিনি অদ্বিতীয় পরম সত্বা। কিন্তু অজ্ঞ ব্যক্তিরা তা মানতে চায় না।  বিশেষ করে কিছু অল্প বুদ্ধি সম্পন্ন বৈষ্ণব নামধারী ব্যক্তিই এমন করেন।  মনে রাখতে হবে, বিশুদ্ধ বৈষ্ণব বিষ্ণুর আরাধনায় নিযুক্ত থাকেন। তিনি সমস্ত কামনা - বাসনাহীন।  তাই শিবকে ছোট করার জন্য তাঁকে কোনো কৌশল অবলম্বন করতে হয় না।  তিনি জানেন হরি-হর এক এবং অভিন্ন।


***#চলবে......

*#শিব_তত্ত্ব 

  (২য় পর্ব)


*#বৈষ্ণব নামধারী অবৈষ্ণবের কান্ড দেখে রীতিমত গোলক ধাঁধায় পড়তে হয়। আবার এদের দেখে আসল নকল চেনা যায় না। শুধু কার্য দেখলেই পার্থক্য বুঝা যায়।  তবে এটি সত্য যে বিশুদ্ধ বৈষ্ণব খুবই অল্প সংখ্যক আছেন। তাই ভক্তদের ভক্তির বন্যায় এদের আর চোখে পড়ে না। তারা প্রভুর আরাধনায়ই সর্বদা নিমগ্ন থাকেন। তাই এদের অনেক সময় চেনাও যায় না। 


*#এই লেখায় শুধু শিব বিদ্বেষী বহুরূপী বৈষ্ণবের কার্য তুলে ধরেছি। লক্ষ্য একটাই - শৈব সংস্কৃতির মহিমা এবং শিব ভক্তের শ্রদ্ধা-বিশ্বাস রক্ষা করা।  শিব বিদ্বেষীরা শাস্ত্র বাক্যের মর্মার্থ বুঝতে না পেরে, কিছু মাত্র শ্লোকের অবতারণা করে শিব ও শৈব সংস্কৃতির অপমান করে। এমন কি প্রভু বিষ্ণুর মহিমা সূচক শ্লোকের উল্লেখ করেও শিবকে ছোট করতে চেষ্টা করে। সুতরাং এদের মুক্তি কিভাবে সম্ভব?


  "চন্ডাচন্ড বিচন্ড জল্পক মহাভেদা সদা বৈষ্ণবাঃ।  

  সর্বে বৈ প্রপতান্তি দুঃসহ তরে সত্যং ন মোক্ষঃ পর।।"


*#অর্থাৎ "বৈষ্ণবরা সর্বদা বাদ- বিসম্বাদ প্রিয় এবং স্বমত স্থাপন করতে গিয়ে সর্বদা পরমত খন্ডন করার ইচ্ছা করেন এবং ভেদবুদ্ধি ধারী।  এরা সকলে দুঃসহ নিরয়ে নিপতিত হয়ে নানা দুঃখ ভোগ করেন। এতএব এদের মোক্ষ কোথায় ? " 


অজ্ঞরা শিবকে ছোট করার জন্য, নানা ধরনের কৌশল অবলম্বন করেছে। এরা এই কৌশলের আশ্রয় করে শিবকে বিষ্ণুর দাস বলে পরিচয় দেয়।  এদের কিছু সংখ্যক শ্লোক আছে।  যে গুলোর তাৎপর্য এরা জানে না।  আর এগুলোর মাধ্যমে মোহজাল বিস্তার করে শৈবদের হেয় করার চেষ্টা করে।  যাদের সাথে এরা কথায় পারে না,  তাদেরকেই মায়াবাদী আখ্যা দিয়ে নিজের পরাজয় ঢেকে রাখতে চেষ্টা করে। আবার অনেক সময় অযৌক্তিক ও অপ্রাসঙ্গিক কথা বলতে শুরু করে। আর কৌশলে কেটে পড়ে। 

এদের আক্রমণাত্মক সব গুলো কৌশল এখানে ব্যাখ্যা করার সুযোগ নাই। তবুও দু’একটি উদাহরণ দিতে হবে। কারণ আগের পর্বের লেখায় সে রকম কিছু কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে।

এদের একটি কৌশল  হল- এরা তাদের অনুসারীদের শাস্ত্র অধ্যয়ন করতে নিষেধ করে। কারণ এরা জানে শাস্ত্র অধ্যয়ন করলে শিব তত্ত্ব স্পষ্ট হয়ে যাবে।  আবার শাস্ত্র অধ্যয়ন করলেও - তাদের নিজস্ব  ব্যাখ্যাযুক্ত কয়েকটি গ্রন্থ ছাড়া বাকি সবগুলো শাস্ত্র অধ্যয়ন করতে নিষেধ করে। 


*#সুতরাং এদের বিদ্যার দৌড় কতটুকু, তা সহজেই অনুমান করা যায়। এমনকি তারা নিজের স্বার্থে তাদের নিজস্ব মনোনীত শাস্ত্র ছাড়া বাকি সবগুলোকে অস্বীকার করতে পর্যন্ত দ্বিধাবোধ করে না। এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা বলে, শাস্ত্র অধ্যয়নে নাকি ভক্তির ব্যাঘাত ঘটে। কি আশ্চর্য!  কাউকে সত্য থেকে বঞ্চিত রাখলে কি ভক্তির বিকাশ ঘটে? কাউকে অজ্ঞ রাখলে ভক্তির বিকাশ নয়, বরং অন্ধভক্তির বিকাশ ঘটে। হচ্ছেও তাই।" 


*#আরেকটি কৌশল হল- তাদের দ্বারা প্রচারিত ব্রহ্ম সংহিতার কয়েকটি শ্লোক। এর মধ্যে দুগ্ধ দধির উপমাটি তাদের বড়ই প্রিয়। শৈবদের আক্রমণ করতে তারা এটাকে ব্রহ্মাস্ত্র হিসেবে প্রয়োগ করে। শ্লোকটি হল- 

          "ক্ষীরং যথা দধি বিকার বিশেষ যোগাৎ

          সঞ্জায়তে ন হি ততঃ পৃথগস্তি হেতোঃ।

          যঃ শম্ভুতামপি তথা সমুপৈতি কার্যাদ

          গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি।।"


অর্থাৎ, "দুগ্ধ যেমন বিকার- বিশেষ যোগে দধিতে পরিনত হয়, যা কারণরূপ দুগ্ধ হতে পৃথক নয়। সেরূপ যিনি কার্যবশত "শম্ভুতা" প্রাপ্ত হন, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি।" 


*#লক্ষনীয় বিষয় হল এই শ্লোকে কিন্তু "শিব" শব্দটি বলা হয়নি। তাছাড়া বিষ্ণু "শম্ভু" হন- তাও বলা হয় নি। এখানে বলা হয়েছে - গোবিন্দ "শম্ভুতা" প্রাপ্ত হন। শম্ভুতা প্রাপ্ত হওয়া মানে হল - "শম্ভুর" মত অবস্থা লাভ করা। ভগবান শিব আনন্দদায়ক, তাই তিনি শম্ভু। তিনি এই রূপে শ্রীবিষ্ণুর মাহাত্ম্য এবং কৃষি বিদ্যা ব্যাখ্যা করেন। তথা ক্ষেত্র কিভাবে জয় করতে হয় সেই শিক্ষা দেন। যেহেতু প্রভু শিব সমস্ত বিদ্যার অধীশ্বর। 

ঋগবেদ -৭ম মণ্ডলে স্পষ্ট উচ্চারন করেন -


          "ক্ষেত্রস্য পতিরস্তু শম্ভুঃ।"

               

আরো লক্ষণীয় বিষয় হল -

আলোচ্য শ্লোকে উল্লেখিত "কারণ" দুগ্ধ যদি "কার্য" দধিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়, তাহলে কারণরূপ দুগ্ধ আর থাকে না। যেহেতু তা দধিতে পরিনত হয়ে গেছে। আবার দধি যেহেতু দুগ্ধে পরিণত হতে পারেনা, তাহলে বিষ্ণু কিভাবে "শম্ভুতা" স্বরূপ থেকে বিষ্ণু স্বরূপে ফিরে আসেন? আর যদি কেউ বলে বিষ্ণু ফিরে আসতে পারেন তাহলে প্রমাণিত হয়ে যাবে উপমাটি  যথার্থ হল না। 


*#আবার বিষ্ণু যদি নির্বিকার হন তবে দুগ্ধ দধির বিকারের মত, তিনিও কিভাবে বিকারগ্রস্ত হলেন? 


কিন্তু আমরা জানি শিব নির্বিকার। প্রভু শিবের ভিন্ন রূপ হলেন শ্রী বিষ্ণু। তারপরও যদি কেউ প্রসঙ্গটি তোলে অর্থাৎ উপমাটি প্রয়োগ করে তাহলে বলবো, দুগ্ধের মধ্যে বিরাজিত সার পদার্থ মাখন যেমন সবাই দেখতে পায় না, তেমনি বিষ্ণু তত্ত্বের গভীরে বিরাজিত পরমাত্মা শিবকে কেউ উপলব্ধি করতে পারে না। শিবই বিষ্ণুর অস্তিত্ব। কিন্তু সাধন সিদ্ধ যোগী ছাড়া, পন্ডিতমন্য অন্য কেউ এই তত্ত্ব বুঝতে পারে না।


শাস্ত্র বলেন-


        "মথিত্বা চতুরোবেদান্ সর্ব্ব শাস্ত্রানি চৈব হি।

        সারস্তু যোগিভিঃ পীতস্তক্রং পিবন্তি পন্ডিতাঃ।।"

                -জ্ঞান সংকলনী তন্ত্র ।


অর্থাৎ, "বেদ চতুষ্ঠয় ও সমস্ত শাস্ত্র মন্থন করে, তার মাখন স্বরূপ সারভাগ যোগীগন পান করেছেন আর অসার ভাগ ঘোলই পন্ডিতগণ পান করেছেন। " 


গোরক্ষ পদাবলীতে বলা হয়েছে- 

          আকাশ মন্ডল মধ্যে গাভী বিয়াইল।

          তার দুগ্ধ দধি করি কাগজে লিখিল।।

          পন্ডিতে ছানিয়া ছাঁচ করিল ভক্ষন।

          সিদ্ধারা খাইল যাহা আসল  মাখন।।"


*#আমরা শৈব যোগী। সর্ব তত্ত্বের সার শিবতত্ত্ব রূপ মাখন পান করে আমরা পরিতৃপ্ত হই। 

যাই হোক, দুটি মাত্র কৌশলের উল্লেখ করে উত্তর দিলাম। 


আমরা বেদান্তের গভীরে প্রবেশ করব। চলুন!   


ভগবান শিব তাই শ্রীরামচন্দ্রকে বলেছেন -


          "রাম বিশ্বরূপশ্চাহং পুরানশ্চ সনাতনঃ।

          আত্মরূপেণ ভূতেষু তিষ্ঠামি রঘুনন্দন।।"

                           - শিবগীতা।


অর্থাৎ, "হে রঘুনন্দন রামচন্দ্র! আমি বিশ্বরূপ, পুরাতন পুরুষ এবং সনাতন। আমি আত্মারূপে সর্বভূতে অবস্থান করি।"


শিব নিত্য,শাশ্বত। তিনি সবকিছুর প্রতিষ্ঠা তথা অস্তিত্ব।  তিনি ব্যক্ত ও অব্যক্তেরও কারণ। সাকার তথা নিরাকারের উৎস।  শিবের উপস্থিতিতেই- সর্বভূত অস্তিত্বশীল হয়। তাই তিনি মঙ্গল স্বরূপ। আর সেজন্যই সমস্ত বেদ বিভিন্ন দেবদেবীর নাম- রূপের গভীরে একই পরম সত্বার মাহাত্ম্য প্রকাশ করেছেন। সে কারনেই বেদে প্রায় প্রত্যেক দেব-দেবীকে সর্বশক্তি সম্পন্ন রূপে উপস্থাপন করা হয়েছে। সমস্ত জগৎ ব্রহ্মময়।

           "সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম। "


*#এই যে শ্রুতি বাক্য- "সোহকাময়ত অহং বহু স্যাং প্রজায়েয়"- এর মানে হল, এক পরমসত্বা যখন মায়াকে আশ্রয় করে বহু হলেন তখন মূলতঃ তিনি বহু "নাম-রূপে" প্রতিভাত হলেন। বহু নাম, বহু রূপে, বহু মহিমা প্রকাশ করলেন। অর্থাৎ এক একটি রূপে, এক একটি বিশেষ মহিমা প্রকাশ করলেন। যদিও তিনি নির্গুণ, নির্বিকার, অদ্বিতীয় পরম সত্বা।

তাই প্রত্যেক বেদ বিভিন্ন দেবদেবীর মাধ্যমে সেই পরম সত্বারই মহিমা প্রকাশ করেন। আর দেবদেবীর প্রার্থনা স্তবের মাধ্যমে পরমাত্মা সদাশিবের উদ্দেশ্যেই আমাদের যাত্রা শুরু হয়। কারন সর্ব দেবদেবীর নাম-রূপের গভীরে পরম শিবই বিরাজিত। তাই আমাদের গন্তব্য হলেন মঙ্গলময় পরম শিব। আর এই আধ্যাত্মিক অমৃত লোকের যাত্রা সমাপ্ত হয় শিব প্রাপ্তির মধ্য দিয়েই। যেহেতু শিব প্রাপ্তিতেই যাত্রার পরিসমাপ্তি ঘটে, তাই শিব হলেন মঙ্গলময়। আর শিব শব্দটিও তাই মঙ্গল সূচক। 

যেহেতু শিব প্রাপ্তির উদ্দেশ্যেই যাত্রা শুরু হয় এবং শিব প্রাপ্তিতেই যাত্রার সমাপ্তি ঘটে, সেহেতু সবার ভাবনা তথা সংকল্প শিবযুক্ত হওয়া উচিত। 

যজুর্বেদ বলেন-


যজ্জাগ্রতো দূরমুদৈতি দৈবং তদু সুপ্তস্য তথৈবৈতি।

দূরঙ্গমং জ্যোতিষাং জ্যোতিরেকং তন্মে মনঃ শিব-সংকল্পমস্তু।।          -যজুর্বেদ ৩৪/১


অর্থাৎ দিব্য শক্তি সম্পন্ন যে মন জাগ্রত ও নিদ্রিত উভয় অবস্থায়ই দূর দূর ধাবিত হয়, এবং যা জ্যোতি সমূহের মধ্যে অন্যতম জ্যোতি, আমার সেই মন সঙ্কল্পে শিবযুক্ত হোক।


যেন কর্মাণ্যপসো মনীষিণো যজ্ঞে কৃণ্বন্তি  বিদথেষু ধীরাঃ।

যদপূর্বং যক্ষমন্তঃ প্রজানাং তন্মে মনঃ শিব-সঙ্কল্পমস্তু।। 

             - যজুর্বেদ ৩৪/২


কর্মনিষ্ঠ ধীর ও বিদ্বানেরা শুভ কর্মে এবং জীবন যুদ্ধে যার মাধ্যমে সমস্ত কর্ম সম্পাদন করে থাকেন এবং যা প্রজাদের সমস্ত শক্তি, আমার সেই মনের সমস্ত সংকল্প শিব যুক্ত হোক। 


*#চলবে.......


*#Please_Join_this_Group:

"যোগ সাধনায় পরমাত্মা প্রাপ্তি"

https://www.facebook.com/groups/353473076140599/?ref=share

*#গণেশ_চতুর্থী 


***#অসীম ক্ষমতা এবং সর্বসৌভাগ্যের লক্ষ্যে আজ গণেশের পূজা করে অর্ঘ্য দিন চাঁদকেও, জেনে নিন কখন কী ভাবে। জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থী তিথিতে যে ব্রত পালন করা হয়, তাকে বলা হয় একদন্ত সঙ্কষ্টী গণেশ চতুর্থী হিন্দু শাস্ত্রে যে কোনও শুভ কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে চাঁদের হ্রাস এবং বৃদ্ধির উপরে নির্ভর করে, সেই মতো মাসের ১৫টি দিন নির্দিষ্ট করা হয় কৃষ্ণপক্ষ রূপে এবং বাকি ১৫টি দিন পরিচিতি পায় শুক্লপক্ষ হিসেবে। এই হিসেবে মাসে দু'টি চতুর্থী তিথি পাওয়া যায়। একটি শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথি এবং অন্যটি কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থী তিথি। এর মধ্যে কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থী তিথিটি সঙ্কষ্টী চতুর্থী নামে পরিচিত। আর শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথি বিনায়ক চতুর্থী বা গণেশ চতুর্থী নামে প্রসিদ্ধ।


*#এই হিসাবে দেখলে বছরের বারোটি মাসেই একটি করে সঙ্কষ্টী চতুর্থী তিথি উদযাপিত হয়ে থাকে। গজাননের একেকটি নামের উপরে ভিত্তি করে এদের শ্রেণীবিভাগ করা হয়। এর মধ্যে জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থী তিথিতে যে ব্রত পালন করা হয়, তাকে বলা হয় একদন্ত সঙ্কষ্টী গণেশ চতুর্থী।


*#সাধারণ ভাবে শুক্লপক্ষের গণেশ চতুর্থীতে চাঁদ দেখা বারণ। কেন না, এক পুরাণ মতে চাঁদের জন্যই একদন্ত হয়েছিলেন গজানন। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের গণেশ খণ্ড বলে, একদা শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথিতেই গণেশ কুবেরের ভবন থেকে একটু বেশিই ভোজ খেয়ে মূষিক বাহনে চড়ে ফিরছিলেন কৈলাসে। পথে একটা সাপ তাঁর সামনে দিয়ে রাস্তা পেরিয়ে গেলে বাহনটি ভয় পেয়ে এক দৌড় দেয় গণেশকে পিঠ থেকে ফেলে দিয়ে! 


*#আকাশ থেকে এই ঘটনা দেখে চন্দ্র অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন, তাঁর কলা হাসির চোটে বিক্ষিপ্ত হয়। তখন আর ক্রোধ সম্বরণ করতে না পেরে গণেশ নিজের একটা দাঁত ভেঙে নিয়ে ছুঁড়ে মারেন তাঁর দিকে। সঙ্গে এই অভিশাপও দেন- চন্দ্র কোনো দিনই আর পূর্ণ রূপে বিরাজ করতে পারবেন না। সেই থেকেই প্রতি পক্ষে চন্দ্রকলার হ্রাস এবং বৃদ্ধি হয়ে থাকে।


*#কিন্তু পরে চন্দ্রদেব তাঁর কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হলে তাঁকে ক্ষমা করে দেন গজানন। সেই উপলক্ষ্যে কৃষ্ণপক্ষের এই বিশেষ গণেশ চতুর্থীতে তাঁর পাশাপাশি চাঁদকেও অর্ঘ্য নিবেদন করতে হয়। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের গণেশ খণ্ডে স্বয়ং বিষ্ণু একদন্ত নামটির ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর মতে এক অর্থ প্রধান আর দন্ত অর্থ বল! তাই যিনি প্রধান বলের উৎস এবং যিনি প্রধান বলে আমাদের বলীয়ান করে জীবনযাপনে সাহায্য করেন, তিনিই একদন্ত! তাই এই চতুর্থীতে গণেশের আরাধনায় বিপুল ক্ষমতা এবং সৌভাগ্যের অধিকারী হয় মানুষ।


*#পঞ্জিকা মতে আজ সারা দিন চতু্র্থী তিথি রয়েছে। তাই নিয়ম মতে সন্ধ্যাকালে গণেশের পূজা বিধেয়। হলুদ বা লাল রঙের বস্ত্র পরে, শুদ্ধ চিত্তে লাল ফুল, দূর্বা, সিঁদুর, মিষ্টান্ন অর্পণ করতে হবে গণেশকে। এর পর তাঁর সামনে জ্বেলে দিতে হবে ঘিয়ে প্রদীপ এবং ধূপ। ওম গং গণপতয়ে নমঃ- এই বীজমন্ত্র জপ করতে হবে। পরে দুধের মধ্যে মধু, চন্দন, সিঁদুর মিশিয়ে তা নিবেদন করতে হবে চন্দ্রদেবের উদ্দেশে। 


*#স্কন্দপুরাণ বলছে যে ভাদ্রমাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন গণেশ।


*#আবার, বাকি সব পুরাণ, বিশেষ করে ব্রহ্মবৈবর্তের মত- মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথিটিকেই সাব্যস্ত করতে হবে গণেশের জন্মদিন রূপে। স্কন্দপুরাণ যেহেতু দাক্ষিণাত্য এবং মহারাষ্ট্রে জনপ্রিয়, সেহেতু দেশের ওই সব অঞ্চলে গণেশ চতুর্থী উদযাপিত হয় ভাদ্র মাসে।


*#অন্যদিকে, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের রচনাস্থল এবং জনপ্রিয়তা বঙ্গদেশ, তাই এখানে মাঘ মাসের শুক্লপক্ষেই গণেশ চতুর্থী উদযাপনের প্রথা প্রচলিত।


*#তবে জন্মতিথি সংক্রান্ত মাসটি নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও উপাসনার নিয়মে কোনও বিরোধ নেই। গণেশের গাত্রবর্ণ লাল, তাই এই রং তাঁর বিশেষ প্রিয় বলে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। বলা হয়ে থাকে যে ৫ সংখ্যাটিও তাঁর অতীব প্রিয়। তাই এই দিন পাঁচটি লালরঙের ফুল, পাঁচটি লালরঙের মিষ্টি, পাঁচটি প্রদীপ সিদ্ধিদাতার উদ্দেশে নিবেদনের রেওয়াজ আছে।


*#পুজো করা হয় মহারাষ্ট্র, গুজরাট, কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশ সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পালিত হয় গণেশ চতুর্থী উত্‍সব। এই উত্‍সবে গৃহস্থের বাড়িতে গণেশের মূর্তি নিয়ে এসে পুজো করা হয়।

গণেশ চতুর্থীর শেষ দিনকে বলা হয়, 'অনন্ত চতুর্দশী'। ওই দিন ভক্তরা গণেশের কাছে প্রার্থনা করেন, আগামী বছর যেন আবার তিনি ফিরে আসেন। অনেকে এই উত্‍সবটিকে দুই দিনের জন্য উদযাপন করেন। কেউ কেউ এটি পুরো দশ দিন ধরে উদযাপন করেন। একে গণেশ মহোত্‍সব বলা হয়। তবে ভাদ্র মাসের গণেশ চতুর্দশী বাংলায় ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে।


*#Please_Join_this_Group:

Continue-23

"যোগ সাধনায় পরমাত্মা প্রাপ্তি"

https://www.facebook.com/groups/353473076140599/?ref=share

*#বিজ্ঞান_ও_ধর্মের_মেলবন্ধন


*#বিস্ময়কর বলে মনে হলেও বিজ্ঞানসম্মত কিছু তথ্য, যেখানে ধর্ম আর বিজ্ঞান পরস্পরের মেলবন্ধনে একত্রে মিলেমিশে সব একাকার হয়ে গেছে । তাই ঋষিযুগীয় সংস্কৃতি ও সৃষ্টি তা সে সাহিত্য, বিজ্ঞান, দর্শন, গণিত, রসায়ন ও চিকিৎসা যাই হোক না কেন, সমস্ত কিছুরই চরম বিকাশ ঘটেছিল যা আজ সারা বিশ্বের গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে । এবার নিচের মন্দিরগুলির দিকে *#খেয়াল_করুন:


১। কেদারনাথ, উত্তরাখন্ড।

২। কালহস্তী, অন্ধ্রপ্রদেশ।

৩। একাম্বরনাথ, কাঞ্চি।

৪। থিরুবনমালী।

৫। থিরুবনইকবাল।

৬। চিদাম্বরম নটরাজ।

৭। রামেশ্বরম।

৮। কালেশ্বরম, তেলেঙ্গানা, উত্তর ভারত।


কোন সম্পর্ক খুঁজে পেলেন কি ? কোন সম্পর্ক এদের মধ্যে আদৌ আছে কিনা, ধারনা করতে পারেন ? একটা সম্পর্ক হল এগুলো সবই শিব মন্দির। আর কোন সম্পর্ক এদের মধ্যে নেই ?


*#তাহলে আসুন দেখা যাক এসব মন্দিরের মধ্যে আর কোন সম্পর্ক আছে কিনা ! আশ্চর্যজনক ভাবে সত্যি এটাই যে, এই মন্দিরগুলি সবই একই ৭৯° দ্রাঘিমা রেখায় অবস্থিত। বিস্ময়কর হল, কোন প্রকার স্যাটেলাইট প্রযুক্তি, জিএসপি বা অনুরূপ কৌশল ছাড়াই তখনকার স্থপতিরা শত শত কিলোমিটার দূরবর্তী এতগুলো মন্দিরকে একই দ্রাঘিমারেখায় কিভাবে স্থাপন করেছিলেন ! প্রত্যেকটি মন্দিরের পৃথক দ্রাঘিমাংশের দিকে

*#খেয়াল_করুন:


১। কেদারনাথ: ৭৯.০৬৬৯°।

২। কলহস্তী: ৭৯.৭০৩৭°।

৩। একাম্বরনাথ: ৭৯.৭০৩৬°।

৪। তিরুবনমালী: ৭৯.০৭৪৭°।

৫। থিরুবনইকবাল: ৭৮.৭১০৮।

৬। চিদাম্বরম নটরাজ: ৭৯.৬৯৫৪°।

৭। রামেশ্বরম: ৭৯.৩১২৯°।

৮। কালেশ্বরম: ৭৯.৯০৬৭°।


নিচের ছবিটি দেখুন। সবগুলো মন্দিরই একটি সরলরেখায় অবস্থিত। আশ্চর্যজনক হল, তখনকার স্থপতিরা কত উন্নত মানের প্রযুক্তির অনুশীলন করতেন, যা এই যুগেও আমাদের কাছে সহজবোধ্য নয়।


*#আরো আশ্চর্যজনক হল, এই সবগুলো মন্দিরই প্রকৃতির ৫টি চিরন্তনী বিষয়কে উপস্থাপন করে, যাদের একত্রে " পঞ্চতত্ব" বা "পঞ্চভূত" বলা হয়। এগুলো হল ভূ বা পৃথিবী, বারি বা জল, পাবক বা আগুন, পবন বা বায়ূ এবং ভূত বা স্থান বা মহাশূন্য। এই পাঁচটি বিষয় দ্বারা উপরের আটটির মধ্যে পাঁচটি শিব মন্দিরকে এইভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে -


১। তিরুবনমালী মন্দিরকে জল দ্বারা,

২। থিরুবনইকবাল মন্দিরকে অগ্নি দ্বারা,

৩। কলহস্তী মন্দিরকে বায়ূ দ্বারা, 

৪। একাম্বরনাথ মন্দিরকে পৃথিবী দ্বারা এবং

৫। চিদাম্বরম মন্দিরকে মহাশূন্য দ্বারা উপস্থাপন করা হয়েছে। এই পাঁচটি মন্দির একত্রে বাস্তু, বিজ্ঞান এবং বেদ এর মহামিলনকে উপস্থাপন করে।


*#এই মন্দিরগুলোর মধ্যে আরো কিছু ভূতাত্ত্বিক বিশেষত্ব আছে। এই পাঁচটি মন্দির আসলে যোগ বিজ্ঞানের সাহায্যে পরস্পরের প্রতি এক বিশেষ ভৌগলিক অবস্থানে নির্মিত, যার সাথে বিজ্ঞান এবং মানবশরীরবৃত্তীয় বিষয়াদির সাথে সম্পর্ক রয়েছে।


এই মন্দিরগুলো আজ থেকে অন্তত চার হাজার বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল। সে সময় এসব স্থানের অক্ষাংশ বা দ্রাঘিমাংশ মাপার মত কোন স্যাটেলাইট প্রযুক্তি বা জিপিএস ছিলনা। সেই সময়ে এতগুলি মন্দির এত নির্ভুলভাবে একটি সরলরেখায় কিভাবে স্থাপন করা হয়েছিল তা ঈশ্বরই জানেন।


এই সরলরেখাটিকে বলা হচ্ছে "শিবশক্তি অক্ষ রেখা"। এই রেখাটির ৮১.৩১১৯° পূর্ব অক্ষাংশে রেখে কৈলাশের সবগুলো শিব মন্দির নির্মিত হয়েছে। কেন তা ঈশ্বর জানেন।


*#মহাকালের সাথে শিবজ্যোতির্লিঙ্গম এর আরো বিশেষ কিছু সম্পর্ক রয়েছে ! সনাতন ধর্মে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার জন্য উজ্জয়ীনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। এই উজ্জয়ীনি থেকে বিভিন্ন জ্যোতির্লিঙ্গম সমূহের মধ্যবর্তী দূরত্বওগুলি দেখুন কতটা চমকপ্রদ -

উজ্জয়ীনি থেকে সোমনাথ ৭৭৭ কিলোমিটার।

উজ্জয়ীনি থেকে ওঙ্কারেশ্বর ১১১ কিলোমিটার।

উজ্জয়ীনি থেকে ভীমাশঙ্কর ৬৬৬ কিলোমিটার।

উজ্জয়ীনি থেকে কাশী বিশ্বনাথ ৯৯৯ কিলোমিটার।

উজ্জয়ীনি থেকে মল্লিকার্জুন ৯৯৯ কিলোমিটার।

উজ্জয়ীনি থেকে কেদারনাথ ৮৮৮ কিলোমিটার।

উজ্জয়ীনি থেকে ত্র্যম্বকেশ্বর ৫৫৫ কিলোমিটার।

উজ্জয়ীনি থেকে বৈজুনাথ ৯৯৯ কিলোমিটার।

উজ্জয়ীনি থেকে রামেশ্বরম ১৯৯৯ কিলোমিটার। 

উজ্জয়ীনি থেকে নৌশেশ্বর ৫৫৫ কিলোমিটার।


*#সনাতন ধর্মতত্বে কোন কিছুই অপ্রয়োজনীয় ছিল না এবং বিনা কারনে কোন কিছুই করা হয়নি। অতীতে সনাতন ধর্মে উজ্জয়ীনিকে বিবেচনা করা হত বিশ্বের (ভূ-গোলকের) কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে। সেই হিসেবে এখানে প্রায় ২০৫০ বছর পূর্বে ভূ-তত্ব, সূর্য এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের সনাতন ধর্মীয় বিভিন্ন পরিমাপের জন্য হস্তচালিত কিছু যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে, আনুমানিক ১০০ বছর আগে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা যখন ভূ-গোলকের মাঝামাঝি একটি কাল্পনিক রেখা টানেন, তখনও এর কেন্দ্রীয় এলাকা ছিল ঐ উজ্জয়ীনি । বর্তমান সময়েও বিশ্বের অধিকাংশ বিজ্ঞানী সূর্য ও মহাকাশ নিয়ে গবেষণার কাজ করতে উজ্জয়ীনিতেই আসেন।

Continue-24

#কালীঘাটের_মায়ের_মূর্তি।

🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺


*#কালীঘাট কালীমন্দিরের কষ্টিপাথরের কালীমূর্তিটি অভিনব রীতিতে নির্মিত। মায়ের মাথা সোনার মুকুটে শোভিত। রয়েছে সোনার তৈরি লম্বা জিভ যেটি গড়িয়ে দিয়েছিলেন পাইক পাড়ার রাজা ইন্দ্র চন্দ্র সিংহ এবং রুপোর তৈরি চারটি হাত যা তৈরি করে দিয়েছিলেন খিদিরপুরের গোকুল চন্দ্ৰ ঘোষাল। সেই হাত পরে সোনার করে দিয়েছিলেন কালী চরণ মল্লিক। ১০৮ সোনার মুন্ড মালা দান করেছিলেন ১৭৬৫ সালে পাতিয়ালার মহারাজ রাজা নবকৃষ্ণ। এছাড়া দেবীর মাথার উপরের সোনার ছাতা দান করেছিলেন নেপালের সেনাপতি জঙ্গ বাহাদুর। এছাড়াও আরও কয়েকটি সোনার ও রূপার ছাতা রয়েছে। চারহাতের চারগাছি সুবর্ণ কঙ্কণ চড়কডাঙা নিবাসী কালীমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতামহ রামজয় বন্দ্যোপাধ্যায় প্রদান করেন। মায়ের পদতলে রয়েছেন ১ মন ওজনের রূপার শিব। পেছনে রয়েছে ২৫ কেজি রূপার তৈরি নকশা করা চালচিত্র। উপরের বাম হাতে আছে ২ কেজি ওজনের সোনার খড়্গ। নিচের বাম হাতে আছে ১টি সোনার মুন্ড। ডান দিকের২ হাতে রয়েছে বর ও অভয় মুদ্রা। এইরূপ বহু স্বর্ণালংকার বহু ধনাঢ্য লোকের দ্বারা প্রদানকৃত। ১টি সিন্দুকে সতীর প্রস্তরীভূত অঙ্গটি রক্ষিত আছে; এটি কারোর সম্মুখে বের করা হয় না আর এটি ব্রহ্মবেদীর নিচে রয়েছে।

🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺

#ঋণ_স্বীকারঃ #আঁটপুরের_মহারাজ

#স্বামী_সুভাষ_মহারাজ ।।।

🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺

*#আত্মার_পঞ্চমুন্ডির_আসন


ক্ষিতি , অপ , তেজ , মরুৎ , ব্যোম এই পঞ্চ ভূতের পঞ্চতত্ত্বের পঞ্চমুন্ড হলো পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় । চক্ষু , কর্ণ , নাসিকা , জিহ্বা ও ত্বক এই পঞ্চমুন্ডই হল আত্মার আসন । এই অবিনশ্বর আত্মায় মন স্থাপন করাই হল পঞ্চমুন্ডির আসনে উপবেশন ।


১. ক্ষিতি : মূলাধার চক্র

২. অপ : স্বাধিষ্ঠান চক্র

৩. তেজ : মণিপুর চক্র 

৪. মরুৎ : অনাহত চক্র

৫. ব্যোম : বিশুদ্ধ চক্র


*#এই পঞ্চ চক্রের উপর আজ্ঞা চক্র । উপরােক্ত পঞ্চভূতময় ভাবকে অতিক্রম করে আজ্ঞাচক্রে আত্মার অচল আসন স্থাপন করতে হবে । এটি বহু প্রাণায়াম ও স্থির বায়ব ক্রিয়ার মাধ্যমে সম্ভব । একেই আধ্যাত্মিক মতে শ্মশানে কালী সাধন বলা হয় , অর্থাৎ সাধকের চিদাকাশে স্থিতি ।

***#সব_তীর্থ_বারবার, ***#গঙ্গাসাগর_একবার


*#গঙ্গা_ও_বঙ্গোপসাগরের_মিলনস্থান_তীর্থভূমি_গঙ্গাসাগর। গঙ্গাসাগরের খ্যাতি কেন? তীর্থভূমি বলে, না কি মেলাভূমি বলে। কিন্তু গঙ্গাসাগরের বেলাভূমিটি কম আকর্ষণীয় নয়।


*#ছোটবড় ৫১টি দ্বীপ নিয়ে ৫৮০ বর্গ কিমি জুড়ে সাগরদ্বীপ। গঙ্গার মর্ত্যে আসা ও সগর রাজার পুত্রদের জীবনদানের লোকগাথাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এই তীর্থভূমি। কপিল মুনির মূল আশ্রমটি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গেলেও পরবর্তীকালে গড়ে ওঠা কপিল মুনির মন্দিরটিকে কেন্দ্র করে ভক্ত সমাগম হয়। মকর সংক্রান্তির পুণ্য তিথিতে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় জমে এই সঙ্গমে।


*#মেলার সময়টুকু বাদ দিলে গঙ্গাসাগর নিরালা, নির্জন। মন্দিরের সামনে থেকে নির্জন বালিয়াড়িটি সোজা গিয়ে মিশেছে সমুদ্রে। এখানে সমুদ্র ঢেউ ভাঙে না। তির তির করে এগিয়ে এসে পা ভিজিয়ে যায়। হাঁটতে হাঁটতে চলে যাওয়া যায় সমুদ্রের ভিতরে। পায়ের পাতা ভেজানো জল থেকে হাঁটু জলে। প্রয়োজনে স্নান করে নেয়া যায়। সমুদ্রতটে অবাধে খেলে বেড়ায় লাল কাঁকড়া। কারো আগমন টের পেলেই সেঁধিয়ে যায় গর্তে। দূরে, দিগন্তরেখায়, একটা, দু’টো, তিনটে….অনেক অনেক নৌকা, নাকি ট্রলার। মাছ ধরতে গেছে গভীর সমুদ্রে।


*#ভ্যানরিকশায় চেপে বেরিয়ে পড়া যায় দ্বীপ দর্শনে। মঠ–মন্দির-আশ্রমের এই সাগরসঙ্গমে। ঘুরে দেখা যায় মনসাদ্বীপে রামকৃষ্ণ মিশনের আশ্রম আর লাইটহাউস। বিকেলে আর একবার চলে যাওয়া যায় সাগর কিনারায়। তবে ভিন্ন পথে। যে পথ সেচবাংলো থেকে সমুদ্রে গেছে সেই পথে। এই পথে ঝাউয়ের জঙ্গল পাওয়া যায়। এখনও অক্ষত। সন্ধ্যায় ঘরে বসে বড়োদের কাছে শুনে নেয়া যায় ভগীরথের গঙ্গাকে মর্ত্যে আনার কাহিনি।


*#নিকটতম বড় শহর কলকাতা। রেলস্টেশন কাকদ্বীপ ও নামখানা। কলকাতা থেকে বাসে ঘণ্টা তিনেকের যাত্রায় পৌঁছনো যায় হারউড পয়েন্ট ৮ নম্বর লঞ্চ ঘাটে। শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে কাকদ্বীপ বা নামখানা পৌঁছেও বাসে বা রিকশায় হারউড পয়েন্ট ৮ নম্বর লঞ্চ ঘাটে পৌঁছনো যায়। সেখান থেকে ফেরি ভেসেলে গঙ্গা পেরিয়ে কচুবেড়িয়া। কচুবেড়িয়া থেকে বাসে বা ট্রেকারে ৩০ কিমি দূরে সাগর। মেলার সময় যাতায়াতের আরও বিশেষ ব্যবস্থা থাকে। গঙ্গাসাগরে থাকার জন্য নানান ধর্মশালা ও পান্থনিবাস আছে। এ ছাড়া পি ডব্লু ডি, সেচ দফতরের ও পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বাংলো ও পঞ্চায়েতের যাত্রীনিবাস আছে। 


*#মকরসংক্রান্তি শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগেই গঙ্গাসাগরে আসতে শুরু করে দেশের নানান প্রান্তের যাত্রীরা। সাধুরাও আসতে শুরু করে দেন। গঙ্গাসাগরে কপিল মুনির আশ্রম। 

বঙ্গোপসাগরের উপকূলে সুন্দরবনাঞ্চলের এই দ্বীপটিরই পৌরাণিক নাম শ্বেতদ্বীপ। এরই দক্ষিণাংশে গঙ্গা যেখানে সাগরের সঙ্গে মিলেছে, সেই স্থানটি গঙ্গাসাগর নামে খ্যাত। সামনে আদিগন্ত সমুদ্র, পেছনে শ্যামল বনানী আর বালুকাময় বেলাভূমির মাঝখানে মহর্ষি কপিলের মন্দির। হিন্দু-মানসে গঙ্গাসাগর একটি মহাতীর্থ হিসেবে গণ্য।


*#সাগরতীরের সার কথা মকর-সংক্রান্তিতে সাগর সঙ্গমে পুণ্যস্নান। তাই যুগ যুগ ধরে সাধুসন্ত ও মোক্ষকামী মানুষের এত ভিড়। এককালে সাগরদ্বীপ ছিল ১৭০ বর্গ মাইলের এক সমৃদ্ধ জনপদ। ১৬৮৮ খ্রিস্টাব্দে সামুদ্রিক ঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসে সাগরদ্বীপের প্রায় দু’লক্ষ মানুষ সমুদ্রের টানে ভেসে যায়। সেই থেকে দ্বীপটি বহুকাল জনহীন এবং শ্রীহীন হয়ে পড়েছিল। সপ্তদশ শতাব্দে বিদেশি বণিক এবং ইংরেজরা সাগরদ্বীপকে পরিত্যক্ত অবস্থায় আবিষ্কার করেন। হবসন জবসন অভিধানে এই দ্বীপের উল্লেখ আছে। জেমস প্রাইস নামে এক ইংরেজের লেখায় দেখা যায়, সাগরদ্বীপের নাম গঙ্গাসাগর। ১৬৮৩ খ্রিস্টাব্দে হেজেস এখানে একটি হিন্দুমন্দির দেখতে পান। এখানকার রাজা নাকি বছরে দু’লাখ টাকা তীর্থকর আদায় করতেন। পরে লুইল্লিয়ার নামে আর এক সাহেব সাগরদ্বীপে দুই সাধুকে দেখেছিলেন। ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দে আলেকজেণ্ডার হ্যামিলটনের বিবরণ থেকে জানা যায়, সাগরদ্বীপ হিন্দুদের কাছে খুবই পবিত্র তীর্থস্থান। প্রতি বছর শীতে বহু সাধু ও তীর্থযাত্রী এখানে স্নান করতেন এবং পুজো দিতেন।


*#পলাশির যুদ্ধের পর ইংরেজ বণিকরা বাণিজ্যের উন্নয়নের জন্য বেছে নিয়েছিলেন সুন্দরবনের খাড়ি আর সাগরসঙ্গমের দ্বীপগুলি। বলতে গেলে ইংরেজরাই সাগরের পুনরুজ্জীবন ঘটান। তাঁরাই যে জঙ্গালাকীর্ণ সাগরদ্বীপে ফের বসতি গড়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তার সমর্থন পাওয়া যায় ১৮১১ খ্রিস্টাব্দের (৩০ কার্তিক, ১২২৫) ‘সমাচার দর্পন’-এ। ওই বছর ১৪ নভেম্বর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘যাহারা গঙ্গাসাগর উপদ্বীপে বসতি করাইবার উদ্যোগ করিতেছে, তাহারা কলিকাতার এক্সচেঞ্জে অর্থাৎ ক্রয়বিক্রয়ের ঘরে গত বুধবার একত্র হইল এবং দশ জন সাহেব ও দুই এতদ্দেশীয় লোককে সেই কর্ম সম্পন্ন করিবার নিমিত্ত নিযুক্ত করিল…।’’ ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে মাত্র চার আনা খাজনায় সাগরদ্বীপের ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু সাগরমেলার বর্তমান বাড়বাড়ন্তের নেপথ্যে ইংরেজদের অবদান থাকলেও সাগর উন্নয়নে সেই সময় তাঁদের প্রচেষ্টা খুব যে ফলপ্রসূ হতে পারেনি তার অন্যতম কারণ উপর্যুপরি সামুদ্রিক ঝড়ঝঞ্ঝা ও জলপ্লাবন। ১৮৩৩ ও ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দের সাইক্লোন সাগরদ্বীপকে তচতচ করে দেয়। শুধুমাত্র ১৮৬৪-র ঝড়ে পাঁচ হাজার জনের মৃত্যু। এর ফলে দ্বীপের লোকসংখ্যা অনেক কমে যায়। তা হলেও দ্বীপোন্নয়নের কাজ থেমে থাকেনি। বনাঞ্চল মুক্ত করে সেখানে চাষাবাদ, হাটবাজার এবং মহাজনের গোলা স্থাপনের ব্যবস্থা হয়েছে। সেই সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা।


*#ইতিহাসের পাতাতেই নয়, মৎস্য, বায়ু এবং পদ্মপুরাণ শাস্ত্রেরও সাগরতীর্থ সম্পর্কে নানা কথা আছে। কালিদাসের ‘রঘুবংশ’ এবং মধ্যযুগের কয়েকটি মঙ্গলকাব্যেও ছড়িয়ে আছে গঙ্গাসাগর প্রসঙ্গ। ‘মহাভারতে’-এর বনপর্বে দেখা যায়, স্বয়ং যুধিষ্ঠির সাগরসঙ্গমে এসেছিলেন মেগাস্থিনিস, হিউয়েন সাঙের বিবরণেও গঙ্গাসাগর স্থান পেয়েছে।


*#মুক্তিতীর্থ গঙ্গাসাগর নিয়ে প্রচলিত আছে এক পুরান কাহিনী। অযোধ্যার সূর্যবংশের পরাক্রান্ত রাজা সগর নিরানব্বুই অশ্বমেধ যজ্ঞ সমাপনান্তে ব্যস্ত হয়ে উঠলেন শততম যজ্ঞে। এই যজ্ঞ সম্পূর্ণ করতে পারলে তিনি স্বর্গরাজ ইন্দ্রের সমপর্যায়ে উন্নিত হবেন। ইন্দ্র সগররাজের শততম যজ্ঞ পণ্ড করতে যজ্ঞের ঘোড়াটি অপহারণ করে লুকিয়ে রাখলেন। সগরের ষাট হাজার পুত্র বহু অন্বেষণের পর যজ্ঞাশ্বের সন্ধান পেলেন মহর্ষি কপিলের নির্জন সাধনক্ষেত্রে, যেখানে মহামুনি গভীর ধ্যানে মগ্ন। এই চৌর্যকর্মটি কপিলদেবের মনে করে রাজপুত্ররা তাঁর দেহে আঘাত করে বসলেন। ঘটনার এই আকস্মিকতায় মহর্ষির কোপানলে পড়ে মুহূর্তেই তাঁরা ভস্মীভুত হলেন। তারপর সগররাজের পৌত্র ভগীরথ কঠোর তপস্যায় গঙ্গাকে মর্তে নিয়ে এলেন। তাঁর পুণ্য সলিলের স্পর্শে পাপমুক্ত হলেন সগরনন্দনরা। সাগরের সঙ্গমস্থল পরিণত হল তীর্থক্ষেত্র গঙ্গাসাগরে। সেখানে একদিন প্রতিষ্ঠিত হল কপিলমুনির আশ্রম।


*#খ্রীস্টিয় ৪৩৭ অব্দে ওখানে একটি প্রচীন মন্দিরের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। কিন্তু নদীর পথ পরিবর্তনের ফলে সে মন্দির সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এর পরেও দু’বার মন্দির নির্মিত হয়েছে। কিন্তু সমুদ্রগ্রাসে কোনওটাই স্থায়ী হয়নি। বর্তমান মন্দিরটি আদি মন্দির স্থল থেকে প্রায় দুই কিমি দূরে অবস্থিত। ১৩৮০-৮১ (ইং ১৯৭৩-৭৪) বঙ্গাব্দে লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে এটি তৈরি করেন অযোধ্যার হনুমানগড়ি মঠের মোহন্ত রামদাসজি মহারাজ। ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে উইলসন সাহেবের বর্ণনানুযায়ী মন্দির চত্বরে ছিল প্রকাণ্ড এক বটবৃক্ষ, যার পাদদেশেই ছিল শ্রীরাম ও হনুমানের মূর্তি।


*#মন্দিরাভ্যন্তরে আজও বিরাজমান লালসিঁদুরে পরিলিপ্ত শিলাময় কতিপয় বিগ্রহ। প্রথমেই চোখে পড়ে পদ্মাসনে যোগারুঢ়, জটাশ্মশ্রুমণ্ডিত মহাযোগী কপিল, যাঁর বামহস্তে কমণ্ডুল, ঊর্ধে উত্থোলিত দক্ষিণ-করে জপমালা। শিরোদেশে পঞ্চনাগ-ছত্র। ডানপাশে চতুর্ভুজা মকর বাহিনী গঙ্গাদেবী, যাঁর অঙ্কে মহাতাপস ভগীরথ। স্বল্পদূরে গদা ও গন্ধমাদন পর্বত হস্তে মহাবীর হনুমান। কপিল বিগ্রহের বাঁয়ে ষাট সহস্র সন্তান বিয়োগ বেদনায় মুহ্যমান নগররাজ, যিনি মহর্ষি কপিলের করুণায় বীতশোক। রাজমূর্তির বাঁয়ে অষ্টভুজ সিংহবাহিনী বিশালাক্ষীদেবী। সর্ব বাঁয়ে অশ্বের বল্গাহস্তে ইন্দ্রদেব। মন্দিরের আশেপাশে রয়েছে কিছু দেবস্থান ও আশ্রম। যথা—স্বামী কপিলানন্দ মহারাজের আশ্রম, চিন্তাহরণেশ্বরের মন্দির, সীতারাম ওঙ্কারনাথের যোগেন্দ্রমঠ, মহানির্বাণ আশ্রম, ভারতসেবাশ্রম সঙ্ঘের ধর্মশালা, সেচবিভাগের ডাকবাংলো এবং বেগুয়াখালির হাওয়া অফিস। কপিলমুনি আশ্রমের পরম্পরাগত পুরোহিত অযোধ্যার যাজনিক ব্রাহ্মণেরা প্রত্যহ মন্দিরে পাঁচবার পূজারতি করেন—রাত দ্বিপ্রহরে ভোগারতি, সায়াহ্নে সন্ধ্যারতি এবং রাত ন’ঘটিকায় শয়নারতি।

গঙ্গাসাগরকে নিয়ে প্রচলিত আছে এক বিখ্যাত প্রবচন: ‘‘সব তীর্থ বার বার, গঙ্গাসাগর একবার।’’ কথাটার যথার্থ ব্যাখ্যা মেলে ‘খনার বচনে’। খনা বলেছেন, ‘‘সারা বছর যাঁরা শয়ন একাদশী, ভৈমী একাদশী, উত্থান একাদশী, পার্শ্ব একাদশী, জন্মাষ্টমী, রামনবমী, শিব চতুর্দশী বা দুর্গার মহাষ্টমীর মতো শাস্ত্রীয় আচারের একটিও পালন করতে পারবেন না, তাঁরা যদি পৌষ সংক্রান্তির দিন শুধু একবার সাগরসঙ্গমে স্নান করেন, তা হলে সর্বতীর্থের পুণ্য অর্জন করবেন।’’ তারই অমোঘ আকর্ষণে প্রতি বছর দেশের নানা প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী এবং সাধুসন্ত তীর্থ ও মুক্তির আশঙ্কায় এখানে ছুটে আসেন, এমনকী বিদেশ থেকেও। সাগরদ্বীপ পরিণত হয় মানুষের মিলনমেলায়। সেই সঙ্গে বিস্তীর্ণ বেলাভূমি জুড়ে বসে নানা পণ্য পসারের এক বিশালমেলা। শস্ত্রীয় স্নানপর্ব একদিনের হলেও গঙ্গাসাগর মেলা চলে পক্ষকাল। শীতের হিমেল হাওয়ায় বালিয়াড়ির উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সঙ্গমে সূর্যোদয় অথবা সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে পুণ্যার্থীরা আদিগন্ত জলসীমায় পৌঁছে যান। সাধারণ তীর্থযাত্রীদের কাছে সাগরমেলার প্রধান আকর্ষণ নাগাসন্নাসী আর হিমালয়ের সাধুসন্তরা। কিন্তু ইদানীং বড়মাপের যোগী মহাত্মাদের বড় একটা দেখা যায় না। তবু কিছু ভবঘুরে হটযোগী মাধুকরী বৃত্তিধারী সাধু এবং গৈরিকবসনধারী পরিব্রাজক সাগরমেলা জমিয়ে তোলেন। বিচিত্র কামনাবাসনা নিয়েও একদল মানুষ আসেন, যাঁরা স্নানান্তে প্রার্থনা জানিয়ে সন্তানের স্বাস্থ্য ও অর্থের জন্য মানত করেন। একদা গঙ্গাসাগরে সন্তান বিসর্জন প্রথা ছিল। সন্তানহীনরা এই মর্মে মানত করতেন যে, তাঁদের সন্তান হলে প্রথমটিকে সাগরে অর্ঘ দেবেন। ১৮০১ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ওয়েলেসলি এসে দেখলেন, ওই বছরেই তেইশটি শিশু সন্তান বিসর্জনের ঘটনা ঘটেছে। পরে আইন করে এই নির্মম প্রথা তিনি নিষিদ্ধ করে দেন। রবীন্দ্রনাথের ‘দেবতার গ্রাস’ কবিতায় সাগরসঙ্গমে সন্তান বিসর্জনের করুণ কাহিনী তো সকলেরই জানা।


কলমে-

রতন কর্মকার

Continue-25

***#মায়া 


*#যার দ্বারা একক বহু রূপে দৃষ্ট হয় সৃষ্টির সেই প্রপঞ্চনাময় শক্তিই হল মায়া ।


*#মায়া হল আপেক্ষিকতাবাদ , উৎক্রমণ , বৈপরীত্য , দ্বৈতবাদ এবং প্রতিকূল অবস্থার মূল কারণ।


*#শ্ৰী শ্ৰী যােগানন্দজী লিখেছেন, “ সংস্কৃত ভাষায় ‘ মায়া ’ শব্দের অর্থ ‘ পরিমাপক ’ ; এটা হল সৃষ্টির এমনই এক যাদুকরী শক্তি

যার দ্বারা আপতদৃষ্টিতে অপরিমেয় ও অবিচ্ছেদ্যকে সসীম ও খণ্ড বলে অনুভূত হয় ।


*#মায়া- ই হােল প্রকৃতি - এই দৃশ্যজগত যা ঐশ্বরিক অপরিবর্তনশীলতার প্রতিপক্ষ রূপে পরিবর্তনশীলতার চিরপ্রবাহে বিদ্যমান । “ ঈশ্বরের পরিকল্পনা এবং খেলায় ( লীলা ) মায়ার কাজই হােল মানুষকে আত্মা থেকে বস্তু এবং সত্য থেকে অসত্যের পানে চালিত করা ।


*#মানুষের নিজস্ব ‘ কুটস্থ চৈতন্যর ’ প্রকাশ যা সহজেই প্রপঞ্চ বা মায়ার ক্রিয়াকে ধ্বংস করতে পারে । ‘ মায়া ’ হল প্রকৃতির পরিবর্তনশীলতার ওড়না বিশেষ সৃষ্টির অবিরাম মনােহর রূপ । সেই পর্দা , যার পশ্চাস্তস্থ সৃষ্টি কর্তার অপরিবর্তনশীল চিরস্থায়ী সত্ত্বার উপলব্ধি অনুভব করার জন্য , প্রত্যেক মানুষেরই সচেষ্ট হওয়া কর্তব্য ।

*#গোপনীয়_বীর_সাধনা


*#বীর_সাধন বা চিতা সাধন হল, শক্তি বা তন্ত্র সাধনার এক চরম পর্যায় ও অবশ্যই এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

তবে এই সাধনার অধিকারী কারা? কিভাবে হয়? এর ভয়াবহতা কি আদৌ আছে নাকি থাকলে তা কতটা? আর এর ফলাফলই বা কি? 


*#এই বীর সাধন হল তন্ত্রের এক গুপ্ত ও সর্বজন অপ্রকাশ্য এক রোমাঞ্চকর বিদ্যা। এটি কেবল গুরু পরম্পরাতে জানা যায়।  তাই আমি আপনাদের সবিস্তারে কিছু বলবো না।  


বীর সাধন হল তন্ত্রসাধনার এক অঙ্গ। হঠাৎ এই বীর সাধন নামকরণ দেওয়ারই বা প্রাসঙ্গিকতা এল কেন? অন্য কোন নামও তো দেওয়া যেতে পারত।

এই বীর সাধন নামকরণ হয়েছে, তার কারণ হল, শক্তি আরাধনা করতে গেলে মন্ত্রসিদ্ধি ও ইষ্টদর্শন বা কোন অবিদ্যাকে অর্জন করতে গেলে এই বীর সাধনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু এক সাধারণ ব্যাক্তির পক্ষে তো পরা বিদ্যা বা অপরা বিদ্যাদের অনুগ্রহ লাভ করা এত সহজ নয়। শক্তির অনুগ্রহ পেতে গেলে নিজেকেও আগে বলশালী, শক্তিমান করতে হবে। ভীরু, কাপুরুষ, সন্ত্রস্ত্র ব্যাক্তিদ্বারা বীর সাধন সম্ভব নয়। তাই শ্মশানে চিতায় বসতে গেলে শরীরের কাম ক্রোধ অহংকার ঈর্ষা ভয়-ভীতি মনের কুটিলতা ইত্যাদি ত্যাগ করতে হয় ও অন্তর যেন সচ্চিদানন্দময় থাকে। তাই এমন সাধক বীর তুল্য যে নিজের মৃত্যুকে ভয় পায়না। এমতাবস্থায় যে কোন প্রকার সিদ্ধিলাভ হতে পারে। তাই এই সাধনাকে বীর সাধনা নাম দেওয়া হয়েছে।


*#এই ঘোর কলিতে জীব অল্পায়ু। এই খুব কম সময়ে সমস্ত কাম্যকর্ম করে বিদায় নিতে হয় সবাইকে। তাই এই অল্প সময়ে সহজে মুক্তিসাধনের পথ তন্ত্র মার্গদর্শন করায়। অনেকে বলেন, কলিতে একমাত্র তন্ত্রাচার ব্যাতীত অন্য কোন পূজা প্রশস্ত নহে এবং এই ঘোর কলিতে বৈদিক পূজার কোন ফললাভ হয়না।


তন্ত্রের সবিস্তারে বর্ণনা দেওয়ার ক্ষমতা আমার নাই।  কিন্তু ছোট করেই দুই লাইন লিখি। কিছু  মানুষ তন্ত্র মার্গ বা তন্ত্রপূজা মানে ভাবে উগ্রভাবাপন্ন, জীব বলিদান, ষটকর্ম, বাণ মারা, মড়ার খুলি, অস্থি নিয়ে পূজা, মদ মাংস দিয়ে পূজা.. তাই তাদের উদ্দেশ্য বলি.. তন্ত্র মানেই কিন্তু এসকল নয়.. তন্ত্রের ব্যাপকতা বিশাল.. সহজ বাংলা কথায় যদি বলি, তবে তনুকে বা আমাদের শরীরকে যে পূজা পদ্ধতি বা সাধন মার্গ ত্রাণ বা মুক্তি দিতে পারে সেটাই হল তন্ত্র। তনুর মধ্যে অন্ত্র বা নাড়িকে বোঝা। নিজের আত্মউপলব্ধি করা, নিজেকে জানতে পারা, তাই হল তন্ত্র। তনুর মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণুর অস্তিত্ব কে খুঁজে বের করার নাম বা পদ্ধতি হল তন্ত্র.। তাই তন্ত্র নিয়ে অযথা ভয়ের উদ্রেক হওয়ার কোন কারণ নেই। তন্ত্রের ব্যাখ্যা কিন্তু এটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়।  যুগ যুগ ধরেও একে জানতে সময় চলে যায়।এই বীর সাধন সম্পর্কে ভাবচূড়ামনি তন্ত্রে বলা হয়েছে- 

        "অষ্টম্যাঞ্চচতুর্দশ্যাং পক্ষয়োরুভয়োরপি|

          ভৌমবারে তমিস্রায়াং সাধয়েৎ সিদ্ধিমুত্তমাম্।"


এর বাংলা অর্থ হল অষ্টমী বা চতুর্দশী উভয় পক্ষের অর্থাৎ কৃষ্ণ বা শুক্লের ভৌমবার মানে মঙ্গলবারে তমিস্রায়াং মানে রাত্রিকালে সাধনা করলে উত্তমরুপে সিদ্ধিলাভ করতে সক্ষম হয়।

 

*#শ্রী শ্রী তারাপীঠ ভৈরব ক্ষ্যাপাবাবার কৃপাধন্য নিগমানন্দ পরমহংসদেব বলেছেন যে --"দীক্ষা গ্রহণ করিয়া সাধক নিত্যনৈমিত্তিক কর্মের অনুষ্ঠান করিতে করিতে ক্রমে যখন, সুদৃঢ় ও কর্মষ্ঠ হইয়া উঠিবে তখন কাম্যকর্মের অনুষ্ঠান করিবে।


*#সাধনার উচ্চস্তরে আরোহন করতে হলে তান্ত্রিক গুরুর নিকট অধিকার স্বরুপ সংস্কার নিতে হয়। নাহলে সাধনা অনুরূপ ফল পাওয়া যায় না। কলিকালে তন্ত্রোক্ত কাম্য কর্মকাণ্ড গুলির মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো বীর সাধন যা শ্রেষ্ঠ ও সদ্য ফলপ্রদ। তার মধ্যে যোগিনী, ভৈরবী, বেতাল, চিতা ও শবসাধনা উৎকৃষ্ট। কিন্তু আমরা অপরা বিদ্যা রপ্ত করলেও আমাদের লক্ষ্য হবে মহাবিদ্যা সাধনা। পূর্ণাভিষেক ও ক্রম দীক্ষা গ্রহণ করে বীর সাধনা করতে হয়।


যারা বলশালী, বুদ্ধিমান, সরলচিত্ত, সাহসী, দয়াবান ও পরের মঙ্গলসাধনে রত, তারাই একমাত্র এই সাধনার অধিকারী।


*#এবার জানব কি করে এই সাধনা করতে হয়। এই সাধনা করাকালীন ভয় পেলে চলে না ও সাধনা শেষ না হওয়া অব্দি আসন ত্যাগ করে ওঠা যায় না। রাত্রির অর্ধ প্রহর গত হলে সাধক আমিষ অন্ন, ছাগ, গুড়, নানাবিধ ফল, ফুল, নৈবেদ্য, সুরা, পায়েস, পিঠে ও যে সাধক যে দেবতার আরাধনা করে সেই দেবতার প্রয়োজনীয় পূজা সামগ্রী নিয়ে শ্মশানে প্রবেশ করবে।


*#বীর সাধনের ক্ষেত্রে যে চিতা অসংস্কৃত অর্থাৎ মড়া পোড়ানোর পর যে চিতা জল ঢেলে ধোয়া হয়না, সেই চিতাই বেশী গ্রহণীয়। আরো বেশী ভালো হয় যদি চন্ডালাদির চিতা হয়। সেটি শীঘ্র ফলপ্রদ।


এরপর বীর সাধনকারী ব্যাক্তি যথাবিহিত নিয়মে উপবেশন করে আচমন, অর্ঘ্য স্থাপন, স্বস্তিবাচন, সংকল্প ইত্যাদি করে গুরু, গনেশ, বটুক, যোগিনী ও মাতৃকাগণের পূজা করবে। এরপর শ্মশানাধিপতি, কালভৈরব, মহাকাল ভৈরব ইত্যাদি পূজা করে বলি প্রদান করতে হবে। এরপর কালিকার পূজা, ভূতনাথ, সমস্ত গণাদির পূজা করতে হবে। এমন সময় সাধকের ভয়ের উদ্রেক হতে পারে। শ্মশান জেগে উঠলে সেদিকে কিঞ্চিৎ দৃষ্টাপাত না করে পূজা করে যেতে হবে। পূজা অসম্পূর্ণ রেখে আসন ত্যাগ করা যাবেনা। তবে পিশাচাদি বা শ্মশানাধিপতি বা গণেরা সাধকের প্রাণনাশ ও করতে পারে। এরপর ও যদি সাধক ভয়ে বিহ্বল হয়ে যায় তবে কোন কাপড় দ্বারা চোখ ও কান কষে বেঁধে দিতে হয়। যাতে কোন কিছু দেখতে বা পিশাচাদির শব্দ কানে না পৌঁছায়। এর পর তা স্তব্ধ হলে কর্পূর মিশ্রিত শ্বেত আকন্দ ও শ্বেত বেড়েলার তুলা দিয়ে বাতি তৈরী করে প্রদীপ জ্বালাতে হবে। এরপর সাধক অস্ত্রাদির পূজা করে ওই প্রদীপ নিজের অধোমুখে পুঁতে দিতে হবে। ঐ প্রদীপ যদি তার মধ্যে নিভে যায় তবে সাধকের বিঘ্ন ঘটতে পারে।


*#তন্ত্রসারে বলা আছে- "হতে তস্মিন্ মহাদীপে বিঘ্ন পরিভূয়তে"

তাই সাধককে সদা সতর্ক থাকতে হবে। এরপর নিজ ইষ্ট পূজা শেষ করে নিজ নিজ দেবতার বীজ জপ করবে। যদি অর্ধরাত্রি পর্যন্ত জপ করে সাধক কিছু দেখতে না পায় তবে জয়দুর্গা মন্ত্রে সরিষা দ্বারা রক্ষণি দিয়ে, কালো তিল চারিদিকে নিক্ষেপ করতে হয়। এরপর সাত পা যথাবিহিত বিধানে গিয়ে আবার উপবেশন করে ইষ্টদেবতা পূজা ও ধ্যান করতে হবে। এরপর সামনে কেউ উপস্থিত হয়ে "বর গ্রহণ কর" বললে সেই দেবীর নিকট আজ্ঞাবহ হয়ে মনোমতো বর চাইতে হবে ও সেই দেবীর চিরকাল অনুগ্রহ লাভের প্রতিশ্রুতি করিয়ে নিতে হবে। এরপর দেবী বলি চাইলে তক্ষুণি বলি প্রদান করতে হবে।

দেবী যদি অন্য কোন বলি চায় তবে, দিনান্তে বলিদান করিব দেবী। এই বলে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। এরপর সেই দেবীর কৃপায় সাধক মহাবলশালী হবে ও গৃহে এসে পরদিন উপযুক্ত নিয়মে গুরুপূজা ও ইষ্ট পূজা পূর্বক দেবীর কাম্য বলিদান দিতে হবে।


*#এই হল বীর সাধন। এর বেশী সবিস্তার নিয়ম বা মন্ত্র আমি আপনাদের এখানে পোষ্টে বলতে পারবনা।


*#যুগে যুগে বহু সাধক ও সাধিকাগণ এইভাবে বীরসাধন করে নিজ নিজ ইষ্টদেবতার কৃপালব্ধ হয়েছেন। উল্লেখ্য তারাপীঠ ভৈরব শ্মশানে সাধনা করে মা তারার দর্শন লাভ করেছিলেন বামা ঠাকুর। শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেব শবসাধনা করে জগজ্জননী মহাবিদ্যা কালিকার দর্শন লাভ করেছিলেন, নিগমানন্দ ঠাকুর, তারাক্ষ্যাপা বাবা, শঙ্করক্ষ্যাপা বাবা, জ্ঞানবাবা, চন্দ্রচূড় বাবা, কৃপালুনাথ অঘোরী বাবা, রুদ্রাণী মা, ভৈরবী মা আরো অনেক অনেক সাধক সিদ্ধিলাভ করেছেন।

***#মন্ত্র_পুরশ্চরণ 


*#আধুনিক জড়-বিজ্ঞানীর চোখে 'মন্ত্রপুরশ্চরণ হচ্ছে....

'"জপাৎ জপাৎ জপাৎ সিদ্ধি" বা  অটোসাজেশন ।


*#বারবার উচ্চারিত ইতিবাচক শব্দের প্রভাব সম্পর্কে সনাতনী সাধু মানুষেরা সচেতন ছিলেন আদিকাল থেকেই। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রথম সারির বেশ কয়েকজন চিকিৎসকের এ বিষয়ের গবেষণা ও প্রয়োগ প্রক্রিয়া তাক লাগিয়ে দেয় পুরো বিশ্বকে। এমনই একজন ফরাসী মনোবিজ্ঞানী ডা. এমিল কোয়ে। ১৯১০ সাল থেকে তিনি শুরু করলেন নিরাময়ের ক্ষেত্রে অটোসাজেশন চর্চার গুরুত্ব নিয়ে গবেষণা। কোনো প্রকার ওষুধ ছাড়াই শুরু করেন বিভিন্ন ধরনের মনোদৈহিক রোগের চিকিৎসা। তার ক্লিনিকে আসা রোগীদেরকে সকাল-বিকাল একাগ্র মনোযোগ দিয়ে একটি অটোসাজেশন বলতে হতো, ডে বাই ডে ইন এভরি ওয়ে আই এম গেটিং বেটার এন্ড বেটার’.......... এভাবেই সকাল-বিকাল বিশ বার চর্চা করে হাজার হাজার রোগী মাইগ্রেন, মাথাব্যাথা, বাতব্যাথা, প্যারালাইসিস, তোতলামি, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, অনিদ্রা এমনকি টিউমার পর্যন্ত ভালো হয়ে গেল। কিন্তু  প্রশ্ন ওঠে --  ইতিবাচক এ অটোসাজেশনের শক্তির মূল রহস্য কোথায়?


*#মনোবিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে আমাদের মন বাস্তবতা ও কল্পনার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। তাই নাটক বা সিনেমায় কোনো হাসির জিনিস দেখলে যেমন চোখে মুখে হাসির রেশ ফুটে ওঠে, তেমনি কোনো বিরহ বা বিচ্ছেদের ঘটনা দেখলে মন খারাপ হয়ে যায়। অথচ আমরা জানি এর পুরোটাই অভিনয়। তার পরেও উত্তেজনা ও বিষাদের রেশ আমাদের মনের ভেতর অনেকক্ষণ থাকে। বাস্তবেও যখন আমরা কখনো এরকম কোনো ইতিবাচক বা নেতিবাচক শব্দ উচ্চারণ করি তার প্রভাব আমাদের দেহে মনে অনুভব করি। কারণ বারবার ভালো থাকার একই বাণী উচ্চারণ করার ফলে মস্তিষ্কে ভালো থাকার তরঙ্গ তৈরি হয়। ভালো থাকার বিশ্বাস মনে ভালো থাকার আকুতি সৃষ্টি করে। নিউরো সাইন্টিস্টরা দীর্ঘ গবেষণা করে দেখেছেন, মস্তিষ্কে যখন কোনো নতুন তথ্য যায়, তখন একটি নিউরোন থেকে আরেকটি নিউরোনে নতুন সংযোগ পথ তৈরি হয় এবং মস্তিষ্কের কর্ম কাঠামো বদলে যায়। তখন নতুন বাস্তবতা সৃষ্টিতে মস্তিষ্ক কাজে লেগে যায়। সচেতন মনে বা অবচেতন মনে আমরা যা চিন্তা করি বা মস্তিষ্কে কমান্ড করি তারই বাস্তবতা আমাদের চারপাশে সৃষ্টি হয়। যে কারণে পারিপার্শ্বিক পরিবেশে নিজেরাই নিজেকে অযোগ্য করে তুলি। সারাদিন পোড়া কপাল ভাবলে বা নিজেকে অবহেলিত ও অযোগ্য ভাবলে যার কাছে গেলে অবহেলিত হবেন মূল্যায়িত হবেন না, অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন তার কাছেই পৌঁছাতে মস্তিষ্ক কাজ শুরু করে দেবে। নিজেকে সফল সুস্থ ও প্রশান্ত রাখার জন্য তাই অটোসাজেসন হচ্ছে এক অব্যর্থ প্রক্রিয়া। যখন আপনি মস্তিষ্কে ভালো থাকার প্রোগ্রাম দেবেন, মস্তিষ্কই তখন আপনাকে আইডিয়া দেবে কিভাবে কাজ করলে আপনি সফল হবেন বা প্রশান্ত থাকতে পারবেন ও সুখী হবেন। মনোবিজ্ঞানীরা এই সূত্রটিকেই ব্যবহার করেছেন কখনো অটোসাজেশনে আবার কখনো মন-ছবিতে। শুধু রোগ-ব্যাধি নয়, জীবনের এমন কোনো দিক নেই যেখানে অটোসাজেশন চর্চায় বদলের হাওয়া লাগে নি।


*#আসুন দেখে নিই এই সেল্ফহিপ্নোটিক অটোসাজেশান বা স্বম্মোহন পুরশ্চরণ কি ব্যাপার আর কিভাবে এই বিদ্যা আমাদের কাজে আসতে পারে -----


১. ঘুম ভাঙতেই বলবো,  হে গোবিন্দ ধন্যবাদ! একটি নতুন দিনের জন্যে।

২. আমি জানি, "রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন"। রাগ নিয়ন্ত্রণে রেখে আমি সবসময় গুরু সহায়ে জয়ী হবো।

৩. বিশ্বাস শক্তির আকর। আমি বিশ্বাসী, বিশ্বাসের শক্তি আমার সাফল্যকে গুরু সহায়ে নিশ্চিত করবে।

৪. অন্যের দোষ সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়, কিন্তু নিজের দোষ খুঁজে পাওয়াটা খুবই কষ্টকর। আমি এই কষ্টকর কাজটিই গুরু সহায়ে আজ করবো।

৫. আমি সবসময় হাসিমুখে কথা বলবো। যে যা-ই বলুক- গুরু সহায়ে সবসময় প্রো-অ্যাকটিভ থাকবো।

৬. কর্ম ছাড়া প্রার্থনা পূরণ হয় না। তাই প্রার্থনার পাশাপাশি আমি গুরু সহায়ে কাজের প্রতি ভীষণ গুরুত্ব দেবো।

৭. জন্ম বা বংশ নয়, কর্মই মানুষকে মহান করে। গুরু সহায়ে সৎকর্মে নিবেদিত হয়ে আমিও মহান হবো।

৮. সভ্যতার সবকিছু ঈশ্বরের সৃষ্টি। আমিও মানুষ। আমারও রয়েছে বিশাল সম্ভাবনা। আমি গুরু সহায়ে প্রতিটি সম্ভাবনাকে কাজে লাগাবো।

৯. দুঃখ পাওয়ার প্রধান রাজপথ আলস্য। তাই আমি গুরু সহায়ে পরিকল্পিত কর্মব্যস্ত জীবনযাপন করবো।

১০. সুস্থ দেহ, প্রশান্ত মন, কর্মব্যস্ত, সুখী-জীবনই আমার কাম্য, আমি সনাতনী হিন্দু সংস্কৃতি অনুযায়ী গুরু নির্দেশিত পথে চলবো।

১১. সব সময় মনে মনে বীজ মন্ত্র জপ করবেন। হাতে নাতে প্রমান পাবেন, এটি কি মহাশক্তি বহন করে।


সংযোগেঃ 

রতন কর্মকার

*#নমস্কার_বা_প্রনাম কাকে ও কিভাবে করবেন। আমরা প্রণাম নিবেদনের সময় ভগবানকে নিজের বামে রেখে প্রণাম করি কেন❓


*#সনাতন ধর্মমতে কিভাবে প্রনাম করতে হয় ও  প্রণামের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রণাম নিবেদন ভক্তিময় সেবা চর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আমরা অনেকেই এই বিষয়টি ভালোভাবে জানিনা। চলুন, আজকে পুরো বিষয়টিকে ভালোভাবে জেনে নিই। 


*#প্রনাম নিবেদনের মাধ্যমে ভক্ত তাঁর আত্মসমর্পণের মনােভাবকে প্রকাশ করেন। বস্তুত প্রনামের প্রকৃত উদ্দেশ্য বা পাত্র হচ্ছেনপরমেশ্বর ভগবান এবং তার দেবদেবী ও ভক্তগণ।

 

🔵প্রনামের পদ্ধতি - 


প্রণাম দুইপ্রকার, যথা #পঞ্চাঙ্গ ও #অষ্টাঙ্গ।


🔵পঞ্চাঙ্গ প্রণাম বিষয়ে শ্রী হরি ভক্তি বিলাসে (৮/১৬৩) নং শ্লোকে বলা হয়েছে,


জানুভ্যাঞ্চৈব বাহুভ্যাং শিরসা বচসা ধিয়া।পঞ্চাঙ্গকঃপ্রণামঃ স্যাৎপূজাসু প্রবরাবিমৌ।।


অনুবাদ - জানুযুগল, বাহুযুগল, শিরোদেশ, বচন ও বুদ্ধি এই পঞ্চাঙ্গ দ্বারা প্রণতিকে পঞ্চাঙ্গ প্রণাম বলা হয়।


🔵অষ্টাঙ্গ প্রণাম বিষয়ে 

 হঃ ভঃ বিঃ( ৮/১৬২) নং শ্লোকে বলাহচ্ছে-


দোর্ভ্যাং পদ্ভ্যাঞ্চজানুভ্যামুরসা শিরসা দৃশা।

মনসা বচসা চেতি প্রণামোহষ্টাঙ্গ ঈরিতঃ।।


*#অনুবাদ- বাহুযুগল, চরণযুগল, জানুযুগল, বক্ষ, মস্তক, বচন, মন ও দৃষ্টি এ অষ্টাঙ্গ দ্বারা প্রণতিকেঅষ্টাঙ্গ প্রণাম বলে।


🌼🌿পুরুষেরা অষ্টাঙ্গ ও পঞ্চাঙ্গ উভয় বিধিতে প্রণাম করতে পারেন।


🔴কিন্তু মহিলারা শুধু পঞ্চাঙ্গবিধিতে প্রণাম করবেন অষ্টাঙ্গ বিধিতে নয়।


👉🏽🌿প্রণাম করার সময়ে নিজের দুই হস্ত দ্বারা ভগবানের দুই চরণ ধারণ করে আছি এই রকম চিন্তাকরে প্রণাম নিবেদন করতে হবে।


🌼এই বিষয়ে প্রমান স্বরূপ ।

হঃ ভঃ বিঃ(৮/৬১) শ্লোক উদ্ধৃত করা যায়। 

👉🏽যথা- 🌿

শিরো মৎ পাদয়োঃ কৃত্বা 

বাহুভ্যাঞ্চ পরস্পরম্।।


🌼প্রশ্ন হচ্ছে কাকে কিভাবে প্রণাম করব?


🌸স্মৃতি বচনে বলা হচ্ছে- 🌿


স্ববামে প্রণমেদ্বিষ্ণুং দক্ষিণে শক্তিশংকরৌ।প্রণমেচ্চগুরোরগ্রে চান্যথা নিষ্ফলং ভবেৎ।।


👉🏽🌿অনুবাদ- বিষ্ণুতত্ত্বকে নিজের বামে, শিবশক্তিকে  নিজের ডানে ( সমস্ত দেবতারা ভগবানেরশক্তি তাই তাদেরও ডানে রেখে প্রণাম করতে হয়।)   গুরুদেবকে অগ্রে রেখে প্রণাম করতে হবে।

👉🏽🍂এর ব্যতিক্রম হলে প্রণাম নিষ্ফল হয়।🙏


🔵যেমন, এই বিষয়ে হঃ ভঃ বিঃ (৮/১৬৪) নং শ্লোকে প্রমান স্বরুপ আরো বলা হচ্ছে- 


গরুড়ং দক্ষিণে কৃত্বা কুর্য্যাত্তৎপৃষ্ঠতো বুধঃ।


👉🏽🌿অনুবাদ- গরুড় পক্ষীকে নিজের ডানে রেখে ও ভগবানকে নিজের বামে রেখে প্রণাম নিবেদন করতে হয়।


🌸🍂পূজা বা যজ্ঞ করার সময় পূজারী আসনে বসা অবস্থায় হাত জোড় করে প্রণাম নিবেদন করতে পারেন।


🌸 প্রণাম বিষয়ে কিছু সতর্কবাণী- কেউ কেউ একহাতে প্রণাম নিবেদন করে থাকেন, যা দেখতে প্রায় সালাম দেওয়ার মতো।


🔵যেমন,  হঃ ভঃ বিঃ( ৮/১৭৯) শ্লোকে বিষ্ণুস্মৃতি থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হচ্ছে- 


জন্মপ্রভৃতি যৎকিঞ্চিৎ পুমান্বৈ ধর্মমাচরেৎ।

সর্বং তন্নিষ্ফলং যাতি একহস্তাভিবাদনাৎ।


👉🏽 অনুবাদ- একহস্তে ভগবানকে প্রণাম করলে আজন্ম সঞ্চিত যাবতীয় ধর্মাচরণ বিফল হয়ে যায়।তাই কখনো একহস্তে প্রণাম করা যাবে না।


👉🏽 কেউ কেউ গর্ভ মন্দিরে প্রণাম করতে চায়।কিন্তু এ বিষয়টি  মোটেও সঠিক নয়।


 🔵প্রমাণ স্বরূপ হঃভঃ বিঃ( ৮/১৭৯) শ্লোকে বলছে- 


অগ্রে পৃষ্ঠে তথা বামে সমীপে গর্ভমন্দিরে।

জপ হোম নমস্কারান্ন কুর্যাৎ কেশবালয়ে।।


👉🏽 অনুবাদ- ভগবানকে অতিরিক্ত  সামনে রেখে,ভগবানের পিছনে, ভগবানের অতি নিকটে ও গর্ভমন্দিরে জপ, হোম বা নমস্কার করতে নেই। 


👉🏽 প্রথমে গুরুবর্গের উদ্দেশ্যে প্রণাম নিবেদন করে তারপর ভগবানের উদ্দেশ্যে প্রণাম নিবেদন করতে হয়। প্রণাম মন্ত্র জানা থাকলে অবশ্যই তা সুস্পষ্টভাবে উচ্চারণ করা উচিৎ।


#বিভিন্ন প্রণাম মন্ত্র।


🔵🌿শ্রীবৈষ্ণব প্রণাম মন্ত্র।


বাঞ্ছাকল্পতরুভ্যশ্চ কৃপাসিন্ধুভ্য এব চ । 

পতিতানাং পাবনেভ্যো বৈষ্ণবেভ্যো নমাে নমঃ ॥ 


👉🏽🍂অনুবাদ- সমস্ত বৈষ্ণব ভক্তবৃন্দ, যাঁরা বাঞ্ছাকল্পতরুর মতাে সকলের মনােবাঞ্ছা পূর্ণ করতেপারেন, যাঁরা কৃপার সাগর এবং পতিত পাবন, তাদের চরণকমলে আমি আমার সশ্রদ্ধ প্রণতিনিবেদন করি।


🔵🌿মাতৃ প্রনাম মন্ত্র।


ভূমেগরীয়সী মাতা স্বাগৎ উচ্চতর পিতা জননী জন্মভূমিশ্চ স্বাদগি গরিয়সী । 

গর্ভ ধারণ্যং পােষ্যভাং পিতৃমাতা বিশ্বস্তে।সর্বদেব সরুপায় স্তন্মৈমাএ নমঃ নমঃ ।। 


🔵🌿পিতৃ প্রনাম মন্ত্র। 

পিতাস্বর্গঃ পিতা ধর্মঃ পিতাহিপরমংতপঃ ।। পিতরি প্রতিমাপন্নে প্রীয়ন্তে সর্বদেবতা নমঃ পিতৃচরনেভ্য নমঃ ।। 


♥️🌿শ্রীকৃষ্ণ প্রনাম মন্ত্র ।


হে কৃষ্ণ করুণা সিন্ধু দীনবন্ধু জগৎপতে 

 গােপেশ গােপীকাকান্ত রাধাকান্ত নমহস্তুতে। 


 নম ব্ৰহ্মণ্যদেবায় গাে ব্ৰহ্মণ্য হিতায় চ। জগদ্ধিতায় কৃষ্ণায় গােবিন্দায় বাসুদেবায় নমাে নমঃ ।।


♥️🌿রাধারানী প্রণাম মন্ত্র । 


তপ্ত কাঞ্চন গৌরাঙ্গীং রাধে বৃন্দাবনেশ্বরী। 

বৃষভানু সূতে দেবী তাং প্রণমামি হরি প্রিয়ে।। 


♥️🌿দেহ শুচীর মন্ত্র । 


ওঁ অপবিত্র পবিত্রোবা সর্বাবস্থাং গতহপিবা 

যৎ স্মরেৎ পুন্ডরিকাক্ষং স বাহ্য অভ্যান্তরে শুচি ।। 


🔵🌿সূর্য প্রণাম মন্ত্র।


ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্ । ধ্বান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতােহম্মি দিবাকরম্ । 


       🌼🌿।। হরে কৃষ্ণ ।

*#শ্রীশ্রী_বিশ্বকর্মা_ঠাকুর


এসে গেল বছরের সেই সময় যখন ঘুড়িতে ঘুড়িতে ছেয়ে উঠেছে আকাশ। প্রতিবছর এই সময় আসেন বিশ্বকর্মা আর ছড়িয়ে দিয়ে যান একমুঠো দুর্গাপুজোর গন্ধ, একরাশ ভাললাগা।


*#বিশ্বকর্মা স্বর্গের কারিগর -


শিল্পী ও নির্মাতাদের দেবতা বিশ্বকর্মা। ব্রহ্মাপুত্র বিশ্বকর্মাই গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নকশা তৈরি করেন। ঈশ্বরের প্রাসাদের নির্মাতাও বিশ্বকর্মা। দেবতাদের রথ ও অস্ত্রও তৈরি করেছিলেন এই বিশ্বকর্মাই। 


মহাভারত অনুযায়ী বিশ্বকর্মা হলের শিল্পকলার দেবতা, সকল দেবতার প্রাসাদ, সকল প্রকার অলঙ্কারের নির্মাতা। বিবরণ অনুযায়ী তাঁর চার বাহু, মাথায় রাজার মুকুট, হাতে জলের কলস, বই, দড়ির ফাঁস ও অপর হাতে একটি যন্ত্র।


ভগবান বিশ্বকর্মাকে নিয়ে নানা অজানা গল্প জেনে নিন একনজরে

ওঁ দংশপালঃ মহাবীরঃ সুচিত্রঃ কর্মকারকঃ।


বিশ্বকৃৎ বিশ্বধৃকতঞ্চ বাসনামানো দণ্ডধৃক।।


ওঁ বিশ্বকর্মণে নমঃ।


ধ্যান ও প্রনাম মন্ত্র অনুসারে দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার যে চিত্র পাওয়া যায়- তাতে তিনি একাধারে মহাবীর ও দয়াদি অষ্টগুন যুক্ত । তিনি সৃষ্টির নির্মাতা ও ধাতা । তিনি মান দণ্ড ধারী মহাশিল্পী। আবার তিনি মহাযোদ্ধা। 


ঋক্ বেদের দশম মণ্ডলের দুটি সুক্তে ( ৮১, ৮২) বিশ্বকর্মার স্তুতি পাওয়া যায়। সেই ভাবার্থ অনুসারে - দ্যুলোক ও ভূলোক উভয়ই প্রথমে জলাকার ও সম্মিলিত ছিল। ক্রমে উভয়েরই চতুঃসীমা যতই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় তারা পরস্পর দূরবর্তী হতে হতে ক্রমে সম্পূর্ণ পৃথক হয়ে যায় । সুধীর বিশ্বকর্মা মনে মনে চিন্তা ও উত্তম রূপে নিরীক্ষণ করে এই বিরাট সৃষ্টি চক্র প্রবর্তন করেন। এই বিশ্ব তাঁরই কর্ম বলে তিনি বিশ্বকর্মা।


বেদে যিনি মুখ্যতঃ বিশ্বস্রষ্টা , পুরানে তাঁকে দেখি দেবশিল্পী হিসাবে। তিনি "কর্তা শিল্প সহস্রাণাম" অর্থাৎ তিনি সহস্র শিল্পের অধিকর্তা।

তিনি "দেবানাং কার্য্যসাধকঃ" অর্থাৎ দেবতাদের শিল্পের কার্য্য সাধক। বিশ্বকর্মার জন্ম বিষয়ে পুরানে নানা আখ্যানের অবতারনা করা হয়। কোনো পুরান মতে তাঁর জন্ম অষ্টবসুর অন্যতম প্রভাসের ঔরসে দেবগুরু বৃহস্পতির ভগিনী বরবর্ণিনীর গর্ভে। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান মতে প্রজাপতি ব্রহ্মার নাভিদেশ থেকে বিশ্বকর্মার উৎপত্তি বলে লেখা আছে। বেদে এই বিশ্বকর্মাকে অজাত পুরুষ বা সনাতন পুরুষ রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। বিশ্বকর্মা নানান শিল্প রচনা করেন। কুবেরের মহল, স্বর্গের দেবসভা, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা পুরী, জগন্নাথের বিগ্রহ, রাবনের স্বর্ণ লঙ্কা, ভগবান শিবের ধনুক, ত্রিশূল- সব এঁনার সৃষ্টি। এছাড়া মার্কণ্ড পুরানে দেখতে পাই ইনি দেবীকে অভেদ্য কবচ, পরশু ও নানান অস্ত্র প্রদান করেছিলেন। বিশ্বকর্মার হস্তে দাঁড়িপাল্লা থাকে। দাঁড়িপাল্লার দুটি পাল্লা জ্ঞান ও কর্মের প্রতীক। উভয়ের সমতা বজায় রেখেছেন তিনি। এছাড়া তিনি হাতুরী ধারন করেন- যা শিল্পের সাথে জড়িত। তিনি যে শিল্পের দেবতা।


*#হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী বিশ্বকর্মা দেবতাদের শিল্পী। তিনি দেবশিল্পী নামে পরিচিত। বৃহস্পতির ভগিনী যোগসিদ্ধা তাঁর মাতা এবং অষ্টম বসু প্রভাস তাঁর পিতা। বিশ্বকর্মার বাহন হাতি।


বিশ্বকর্মা বৈদিক দেবতা, ঋগবেদের ১০ম মণ্ডলে ৮১ এবং ৮২ সূক্তদ্বয়ে বিশ্বকর্মার উল্লেখ আছে। ঋগবেদ অনুসারে তিনি সর্বদর্শী এবং সর্বজ্ঞ। তাঁর চক্ষু, মুখমণ্ডল, বাহু ও পদ সবদিকে পরিব্যাপ্ত। তিনি বাচস্পতি, মনোজব, বদান্য, কল্যাণকর্মা ও বিধাতা অভিধায় ভূষিত। তিনি ধাতা, বিশ্বদ্রষ্টা ও প্রজাপতি।


*#বিশ্বকর্মার কিছু অমর সৃষ্টি -


হিন্দু পুরাণ জুড়ে রয়েছে বিশ্বকর্মার বিভিন্ন নির্মাণ। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর, কলি-চার যুগ ধরে ছড়িয়ে রয়েছে বিশ্বকর্মার অমর কীর্তিরা। সত্যযুগে বিশ্বকর্মা তৈরি করেছিলেন স্বর্গলোক। এই প্রাসাদ থেকেই দেবরাজ ইন্দ্রের মর্ত্যলোক শাসন করতেন। ত্রেতা যুগে বিশ্বকর্মা সৃষ্টি করেন সোনার লঙ্কা। দ্বাপর যুগে সৃষ্টি করেন দ্বারকা। কলিযুগে বিশ্বকর্মার অমর সৃষ্টি হস্তিনাপুর ও ইন্দ্রপ্রস্থ।


*#সোনার লঙ্কা -


হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী ত্রেতা যুগে রাবণ রাজার রাজধানী ছিল সোনার লঙ্কা। পার্বতীর সঙ্গে বিয়ের পর মহাদেব প্রাসাদ নির্মাণের ভার দেন বিশ্বকর্মাকে। স্বর্ণপ্রাসাদ নির্মাণ করেন বিশ্বকর্মা। গৃহপ্রবেশের পুজোর জন্য রাবণ রাজাকে আমন্ত্রণ জানান মহাদেব। পুজোর পর দক্ষিণা স্বরূপ মহাদেবের কাছে স্বর্ণলঙ্কা চান রাবণ। রাবণের হাতে স্বর্ণলঙ্কা তুলে দেন মহাদেব। সেই থেকেই রাবণের রাজধানী স্বর্ণলঙ্কা।


*#দ্বারকা -


দ্বাপর যুগে শ্রীকৃষ্ণের রাজধানী দ্বারকা বিশ্বকর্মার অমর সৃষ্টি। মহাভারতে দ্বারকাই কৃষ্ণের কর্মভূমি হিসেবে উল্লিখিত। হিন্দুদের অন্যতম দর্শনীয় ও পূজনীয় শহর দ্বারকা।


*#হস্তিনাপুর -


কলিযুগে কৌরব ও পাণ্ডবদের রাজধানী হস্তিনাপুর ও ইন্দ্রপ্রস্থও নির্মাণ করেন বিশ্বকর্মা। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরকে হস্তিনাপুরে অভিষিক্ত করেন কৃষ্ণ।


*#ইন্দ্রপ্রস্থ -


পাণ্ডবদের শহর ইন্দ্রপ্রস্থও নির্মাণ করেছিলেন এই বিশ্বকর্মাই। পাণ্ডবদের থাকার জন্য এক টুকরো জমি দিয়েছিলেন ধৃতরাষ্ট্র। সেই খাণ্ডবপ্রস্থে ভাইদের সঙ্গে থাকতেন যুধিষ্ঠির। পরে খাণ্ডবপ্রস্থে রাজধানী নির্মাণের জন্য বিশ্বকর্মাকে আমন্ত্রণ জানান কৃষ্ণ। তৈরি হয় ইন্দ্রপ্রস্থ। এই ইন্দ্রপ্রস্থ ছিল মায়ানগরী। প্রাসাদের মাটি দেখলে মনে হত যেন স্বচ্ছ্ব জল টলটল করছে। পুকুরের স্বচ্ছ্ব জলের মধ্যে দিয়ে আয়নার মতো চকচক করতো মাটি। প্রাসাদ তৈরির পর পাণ্ডবদের নিমন্ত্রণ রক্ষায় ইন্দ্রপ্রস্থে যান কৌরবরা। মায়ানগরীর মায়া বুঝতে না পেরে পুকুরের জলে পড়ে যান দুর্যোধন। তাকে পড়ে যেতে দেখে হেসে উঠেছিলেন দ্রৌপদী। অন্ধ বাবার অন্ধ ছেলে বলে দুর্যোধনকে অপমান করেন দ্রৌপদী। এই ঘটনা থেকেই সূত্রপাত কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের।


বিশ্বকর্মা বিশ্বভুবন নির্মাণ করেন। বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, শিব এর ত্রিশূল, কুবের এর অস্ত্র, ইন্দ্রের বজ্র, কার্তিকেয়র শক্তি প্রভৃতি তিনি তৈরি করেছেন। শ্রীক্ষেত্রর প্রসিদ্ধ জগন্নাথ মূর্তিও তিনি নির্মাণ করেছেন।


বিশ্বকর্মা পূজা হিন্দুদের একটি ধর্মীয় উৎসব। দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার আশিস কামনায় এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বকর্মা চতুর্ভুজ ও গজারূঢ়। তাঁর আকৃতি অনেকটা কার্তিকের মতো।


*#ভাদ্রমাসের সংক্রান্তির দিন বিশ্বকর্মার পূজা করা হয়। কলকারখানায় বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে বিশ্বকর্মার পূজা অনুষ্ঠিত হয়। অন্যান্য দেব-দেবীর মতোই মূর্তি গড়ে অথবা ঘটে-পটে বিশ্বকর্মার পূজা করা হয়। সূতার-মিস্ত্রিদের মধ্যে এঁর পূজার প্রচলন সর্বাধিক। তবে বাংলাদেশে স্বর্ণকার, কর্মকার এবং দারুশিল্প, স্থাপত্যশিল্প, মৃৎশিল্প প্রভৃতি শিল্পকর্মে নিযুক্ত ব্যক্তিগণও নিজ নিজ কর্মে দক্ষতা অর্জনের জন্য বিশ্বকর্মার পূজা করে থাকেন। এ সময় প্রত্যেকের ঘরে বিশেষ খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা হয় এবং কোথাও কোথাও পূজার পরে ঘুড়ি ওড়ানো হয়।


সমগ্র ভারতবর্ষে নয়, বিশ্বকর্মা পুজো মূলত অসম, পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড (দেরাদুন)-এর কিছু কিছু অঞ্চলে পালিত হয়। ভারতবর্ষের বিশ্বকর্মা একটি দলিত সম্প্রদায়ের নাম, বিশ্বকর্মা সেই সম্প্রদায়ের আদিম-সভ্য পুরুষ।। বিশ্বকর্মা পিছিয়ে-পড়া এক জনজাতির ঐতিহাসিক এবং অপ্রতিরোধ্য প্রতিভার বিরল দৃষ্টান্তবিশেষ।


বিশ্বকর্মা যে শুধু কর্মে সুদক্ষ তা নয়, তিনি বেশ কিছু গ্রন্থও লিখে রেখে গেছেন উত্তরসূরীদের জন্য। এবার আলোচনা করব বিশ্বকর্মার লেখক-প্রতিভা এবং লেখালেখি বিষয়ে।


*#বিশ্বকর্মার রচিত স্থাপত্যশিল্প বিষয়ক গ্রন্থটির নাম "বাস্তুশাস্ত্রম"। "মানসার" এবং "ময়মতম" গ্রন্থে বস্তু ও বাস্তু শব্দদুটিকে সমার্থক হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। 'বস্তু' শব্দ থেকে 'বাস্তু' কথাটা এসেছে। 'বাস্তু' শব্দের অর্থ পৃথিবী। ব্যাপক অর্থে সমস্ত প্রাণীর আবাসস্থলই বাস্তু। অর্থাৎ, স্রষ্টার যে-কোনো সৃষ্টিই বাস্তু। কাজেই শুধু পরিকল্পিত মনুষ্যগৃহই নয়, দেবতা থেকে শুরু করে পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর আবাসকেই বাস্তু বলে। বাস্তুশাস্ত্রে বাস্তু শব্দের অর্থ ব্যাপক। এই শিল্পকে নির্মাণ শিল্পকে না-বুঝিয়ে পরিকল্পনা, নির্মাণ, চিত্র, অলংকরণ, স্বর্ণ-চর্ম-বয়নশিল্প, অস্ত্রশিল্প, পোতনির্মাণ, মূর্তিনির্মাণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে পরিব্যাপ্ত আছে।


পুরাণে উল্লেখ আছে, চারটি বেদের মতো চারটি উপবেদও আছে। উপবেদগুলি হল আয়ুর্বেদ, ধনুর্বেদ, গান্ধর্ববেদ এবং স্থাপত্যবেদ। এই উপবেদ স্থাপত্যবিদ্যা বা বাস্তুবিদ্যার রচয়িতা হলেন বিশ্বকর্মা। বলা হয় তিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রধান বাস্তুকার। তাঁর রচিত অন্তত দশখানি পুথি এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে।


*#অন্যদিকে মৎস্যপুরাণের ২৪২ থেকে ২৪৭ অধ্যায়, অগ্নিপুরাণের ১০৪ থেকে ১০৬ অধ্যায়, গরুড়পুরাণের ৪৬ থেকে ৪৭ অধ্যায়, ভবিষ্যপুরাণ, বিষ্ণুধর্মোত্তর পুরাণের তৃতীয় খণ্ড, বিভিন্ন আগম, শুক্রনীতিসারের চতুর্থ অধ্যায়, বৃহসংহিতা, গৃহ্যসূত্র, অর্থশাস্ত্র প্রভৃতিতে বাস্তুশাস্ত্রের আলোচনা পাই। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে মহামহোপাধ্যায় গণপতিশাস্ত্রী বাস্তুবিদ্যা বা বাস্তুশাস্ত্রম গ্রন্থটি আবিষ্কার করে মুদ্রিত করেন। বিশ্বকর্মার নামে প্রচলিত বাস্তুশাস্ত্রটির নাম "বিশ্বকর্মাবাস্তুশাস্ত্রম"।


আর্যাবর্তের শিল্পধারা বিশ্বকর্মার দ্বারা প্রবর্তিত বলে মনে করা হয়। বিশ্বকর্মার "বাস্তুশাস্ত্রম"-এর প্রথমেই বলা হয়েছে, জগতের কল্যাণ কামনায় এই শাস্ত্র প্রচার করছেন - "বাস্তুশাস্ত্রং প্রবক্ষ্যামি লোকানাং হিতকাম্যয়া"। বিশ্বকর্মার নামে এরকম গ্রন্থ অন্ততপক্ষে দশটি পাওয়া গেছে।


*#কী আছে "বাস্তুশাস্ত্রম" গ্রন্থটিতে?


সুপরিকল্পিতভাবে গৃহনির্মাণ, গ্রাম ও নগরের পত্তনের নিয়মাবলি এবং বিধিনিষেধ তাঁর গ্রন্থটিতে পাওয়া যায়।


বিশ্বকর্মা রচিত এই গ্রন্থে গৃহ, মন্দির, গ্রাম, নগর, যন্ত্র প্রভৃতির বর্ণনা দেখতে পাওয়া যায়। এই গ্রন্থের প্রধান আলোচ্য বিষয় হল -


(১) সর্বপ্রথম গৃহারম্ভের কাল পরীক্ষা, উপকরণ সংগ্রহ, জমি পরীক্ষা, বিভিন্ন দিক নির্ণয়, ভবন লক্ষণ প্রভৃতি বিভিন্ন পরিচ্ছেদে আলোচিত হয়েছে।


(২) বাসযোগ্য গৃহ ছাড়াও বিদ্যালয়, চিকিৎসালয়, সর্বসাধারণের ব্যবহার্য গৃহ, পাকশালা, শৌচাগার, পুষ্করিণী, উদ্যান প্রভৃতি কোনদিকে থাকবে, আলো-বাতাস প্রবেশের কীরকম হবে, সবই সুন্দরভাবে আলোচিত হয়েছে।


(৩) বিশ্বকর্মার খ্যাতি পুরাণাদিতে দেবশিল্পী হিসাবে পাওয়া যায়। বিভিন্ন মন্দির ও তার উপকরণ প্রভৃতির বিস্তৃত আলোচিত হয়েছে। মন্দিরের কাজে ব্যবহারের জন্য আট প্রকার কাঠ এবং সাধারণ গৃহস্থদের গৃহনির্মাণের জন্য তেইশ প্রকারের কাঠের ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। কাঠগুলি কাটার পর পনেরো দিন জলের মধ্যে ভিজিয়ে রাখলে তাতে পোকা ধরবে না। এই প্রসঙ্গে বিশ্বকর্মা লিখেছেন - "কাষ্ঠং নো ভক্ষ্যতে কীটের্যদি পক্ষং ধৃতং জলে"।


(৪) দেওয়ালের প্রস্থ ও উচ্চতা, ভিতের গভীরতা, দরজা ও জানালার পৃথক পৃথক মাপের বর্ণনাও এই গ্রন্থটিতে পাওয়া যায়।


*#ভারতীয় স্থাপত্যশিল্পের ইতিহাসে বিশ্বকর্মার "বাস্তুশাস্ত্রম" গ্রন্থটির অবদানকে অস্বীকার করা যায় না। ইতিহাসের উপাদান হিসাবে "বাস্তুশাস্ত্রম" এক অমূল্য সম্পদ।


হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মশাস্ত্র বেদে মাত্র তেত্রিশটি দেবতার উল্লেখ থাকলেও হিন্দুরা বিশ্বাস করেন তাদের দেবতা তেত্রিশ কোটি। অবশ্য বেশির ভাগ দেবতা স্বর্গে বাস করলেও বেশ কিছু দেবতা এই ধরাধামেই বসবাস করতেন বলে কেউ কেউ মনে করেন। এদেরই একজন দলিত গোষ্ঠীভুক্ত দেবতা বিশ্বকর্মা তথা বিশ্বকর্মা ঠাকুর। ইনার জন্য সারা বছরে একদিন মাত্র নির্ধারণ করেছেন শ্রমজীবী ভক্তেরা। ইনি নিরুপদ্রব দেবতা। ইনি ক্রোধী নন, বদমেজাজি নন।ইনি পুজো পাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষকে টার্গেট করে বাঁশ নিয়ে দৌড়ে বেড়াননি। ইনাকে ভয় পেয়ে সাধারণ মানুষ তটস্থ হয়ে থাকেন না। ইনিও কার্তিক ঠাকুরের মতো ঘরের ছেলে। ভাদ্র মাসের ৩১ তারিখে ইনি পূজিত হন। আগের আষাঢ়-শ্রাবণ মাসটা তুমূল বর্যাকাল।এ সময় কোনো কার্য নির্মাণ করা যায় না। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে সমস্ত মানুষের হাতে প্রচুর টাকাপয়সা আসে, সেইসঙ্গে বৃষ্টি-বাদলার উৎপাতও নেই। অতএব নির্মাণশিল্পের স্রষ্টা তথা গুরু বিশ্বকর্মাকে স্মরণ করে ঝাঁপিয়ে পড়ো কর্মযজ্ঞে।


হস্তীকে দেবশিল্পীর বাহন বলা হয় । বিশ্বকর্মার মন্ত্রে দেবশিল্পীকে "মহাবীর" বলা হয় । হস্তীর মহাবলের কথা সর্বজন সুবিদিত। এই দিকে থেকে হস্তী বাহন হিসাবে যথা উপযুক্ত । এছাড়া হাতী দিয়ে কাজ করানোর কথা অতি প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে । কর্ম- কর্মের ফলে শিল্পের বিকাশ । আর বিশ্বকর্মা হলেন শিল্পের দেবতা। তাই কর্মঠ হস্তী তাঁর বাহন ।


*#আসুন দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার চরণে প্রার্থনা জানিয়ে বলি-


ওঁ দেবশিল্পি মহাভাগ দেবানাং কার্য্যসাধক।


বিশ্বকর্মন্নমস্তূভ্যং সর্বাভীষ্টপ্রদায়ক।


🌺🙏🌺🙏🌺🙏


"যোগ সাধনায় পরমাত্মা প্রাপ্তি" এই গ্রুপের নিত্য-নতুন আধ্যাত্মিক লেখায় আপনাকে সুস্বাগতম জানাচ্ছি। 

https://www.facebook.com/groups/353473076140599/?ref=share

Continue-26

🌺🌺।। মা ধূমাবতী ।।🌺🌺

=================

*#দশমহাবিদ্যার অন্যতমা এক তান্ত্রিক হিন্দু দেবী। তিনি মহাশক্তির একটি ভীষণা রূপ। ধূমাবতী বৃদ্ধা, কুৎসিত বিধবার বেশে সজ্জিতা, এবং কাক ও চতুর্মাস ইত্যাদি হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী অমঙ্গলজনক বিষয়গুলির সঙ্গে সম্পর্কিতা। ধূমাবতীর প্রচলিত মূর্তিকল্পে তাঁকে অশ্ববিহীন রথ বা কাকপৃষ্ঠে আরূঢ়া অবস্থায় এবং সাধারণত শ্মশানচারিণীরূপে কল্পনা করা হয়।


*#ধূমাবতী প্রলয়ের প্রতীক। তিনিই সৃষ্টির পূর্বে ও প্রলয়ের পরে বিদ্যমান "মহাশূন্যের" মূর্তিস্বরূপ। ধূমাবতী সাধারণত অমঙ্গলকর বিষয়গুলির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। যদিও তাঁর সহস্রনাম স্তোত্রে তাঁর কয়েকটি সদগুণেরও বর্ণনা করেছে। তিনি কোমলস্বভাবা ও বরদাত্রী। ধূমাবতী মহাগুরু; তিনি কল্যাণ ও অকল্যাণের বহু ঊর্ধ্বে স্থিত জগৎ চরাচর সম্পর্কে সর্বোচ্চ জ্ঞান প্রদান করেন। তাঁর কুৎসিত রূপটি প্রকৃতপক্ষে একটি রূপক; এই রূপ সাধককে বাইরের নকল সৌন্দর্যের পরিবর্তে জীবনের অন্তর্নিহিত সত্যটি অনুসন্ধান করতে ও জানতে শেখায়।


*#হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, ধূমাবতী সিদ্ধি বা অলৌকিক ক্ষমতা প্রদান করেন; তিনি সকল বিপদ থেকে ভক্তকে উদ্ধার করেন এবং জ্ঞান ও মোক্ষফল সহ সকল অভীষ্ট বস্তু প্রদান করেন। শত্রুনাশের উদ্দেশ্যে তাঁর পূজা করা হয়। ধূমাবতীর পূজা আইবড়, বিধবা বা সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীদের পক্ষেই প্রশস্ত বলে মনে করা হয়। বারাণসীতে অবস্থিত ধূমাবতী মন্দিরে দেবী অমঙ্গলসূচক বিষয়গুলির ঊর্ধ্বে স্থানীয় রক্ষাকর্ত্রীর মর্যাদা লাভ করেছেন। এখানে বিবাহিত যুগলেও তাঁর পূজা দিয়ে থাকেন। যদিও ধূমাবতীর মন্দিরের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম, তা সত্ত্বেও শ্মশান বা বনাঞ্চলে তান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাঁর নিয়মিত পূজা হয়ে থাকে।


*#উৎসঃ

=================

কুলো হাতে অশ্বহীন রথে কুৎসিত বৃদ্ধার বেশে ধূমাবতীর প্রচলিত মূর্তি দশমহাবিদ্যার বাইরে ধূমাবতীর বিশেষ কোনো অস্তিত্ব নেই। মহাবিদ্যায় অন্তর্ভুক্তির পূর্বে তাঁর কোনো ঐতিহাসিক উল্লেখও পাওয়া যায় না। দারিদ্র্য, বিষন্নতা ও দুঃখকষ্টের দেবী রূপে ধূমাবতীর সঙ্গে মারী ও দুঃখের দেবী নির্ঋতি এবং মন্দভাগ্য ও দারিদ্র্যের দেবী অলক্ষ্মীর মিল পাওয়া যায়।কিনসলে দেবী জ্যেষ্ঠার সঙ্গেও ধূমাবতীর মিল খুঁজে পেয়েছেন।


*#বৈদিক দেবী নির্ঋতি মৃত্যু, জরা বা ক্ষয়, মন্দভাগ্য, ক্রোধ ও চাহিদার দেবী। তাঁকে দূরে রাখার জন্য তাঁর স্তুতি করা হত। নির্ঋতির মতো ধূমাবতীও অমঙ্গলসূচক বিষয় ও কঠোরতার দেবী। প্রাচীন হিন্দু দেবী জ্যেষ্ঠার মূর্তিকল্পটিও ধূমাবতীর অনুরূপ। ধূমাবতীর মতো তিনিও কৃষ্ণবর্ণা, কুৎসিত ও কাকবাহিনী। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, জ্যেষ্ঠা মঙ্গলসূচক কিছুই সহ্য করতে পারেন না। ধূমাবতীর মতো তিনিও ঝগড়া, কুস্থানে বাস করেন এবং কোপনস্বভাবা দেবী।সারদাতিলক তন্ত্র গ্রন্থের টীকাকার লক্ষ্মণ দেসিকা ধূমাবতীকে জ্যেষ্ঠার অপর রূপ বলে উল্লেখ করেছেন।দেবী অলক্ষ্মী ঐশ্বর্য, সৌভাগ্য ও সৌন্দর্যের দেবী লক্ষ্মী বা শ্রীর ভগিনী ও বিপরীত শক্তি। অলক্ষ্মী ও ধূমাবতী দুজনেই সম্মার্জনী বা ঝাঁটা ধরে থাকেন এবং তাঁদের পতাকায় কাকের ছবি থাকে। দুজনেই ক্ষুধা, তৃষ্ণা, চাহিদা ও দারিদ্র্যের দেবী।


*#ধূমাবতীর সঙ্গে অপর তিন দেবীর কিছু মিল থাকলেও, কিছু অমিলও আছে। যেমন, তাঁরা কেউই ধূমাবতীর মতো বিধবার বেশে কল্পিত হন না বা তাঁদের কুৎসিত রূপকল্পের কোনো শাস্ত্রব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। আবার উক্ত তিন দেবীর নামও ধূমাবতীর নামস্তোত্রে অমিল। এছাড়া তাঁদের মধ্যে ধূমাবতীর যোদ্ধৃবেশ বা মহাবিদ্যারূপে তাঁর সদগুণগুলিও দেখা যায় না। ডেভিড কিনসলে মনে করেন, উক্ত তিন দেবী ধূমাবতীর পূর্বসূরি হলেও, তাঁরা ধূমাবতীর ঠিক "সমরূপীয়" নন। উল্লেখ্য, কিনসলের মতে, মহাবিদ্যার ধারণাটি দ্বাদশ শতাব্দীর আগে প্রচলিত ছিল না।


*#কিংবদন্তিঃ

==================

ধূমাবতী হলেন সপ্তম মহাবিদ্যা। গুহ্যাতিগুহ্য তন্ত্র গ্রন্থে দশ মহাবিদ্যাকে বিষ্ণুর দশ অবতারের উৎস বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই গ্রন্থ মতে মৎস্য অবতারের উৎস হলেন ধূমাবতী। মুণ্ডমালা গ্রন্থেও একটি অনুরূপ তালিকা রয়েছে; তবে উক্ত গ্রন্থ মতে বামন অবতারের উৎস হলেন ধূমাবতী।


শাক্ত মহাভাগবত পুরাণে দশমহাবিদ্যার উৎপত্তির কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। এই কাহিনি অনুযায়ী, দক্ষের যজ্ঞে নিমন্ত্রিত না হয়ে দক্ষকন্যা তথা শিবের প্রথমা স্ত্রী সতী অপমানিতা হন। তিনি বিনা আমন্ত্রণেই যজ্ঞে উপস্থিত থাকতে চাইলে, শিব বারণ করেন। সতী অনুনয়বিনয় করে শিবকে রাজি করানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু সফল হন না। তখন ক্রুদ্ধ হয়ে সতী দশমহাবিদ্যার রূপ ধারণ করে দশ দিক দিয়ে ঘিরে ধরেন। এই সময় ধূমাবতী দক্ষিণপূর্ব দিকে দণ্ডায়মান ছিলেন। অপর একটি কিংবদন্তিতেও অনুরূপ কাহিনি পাওয়া যায়; তবে এই মতে সতীর স্থলে প্রধান মহাবিদ্যা ও অপরাপর মহাবিদ্যাগণের উৎস কালীকে স্থাপন করা হয়েছে।দেবীভাগবত পুরাণ অনুযায়ী, দশমহাবিদ্যা হলেন শাকম্ভরীর রূপভেদ ও সহযোদ্ধা।


*#শক্তিসংগম তন্ত্র গ্রন্থে উল্লিখিত কাহিনি অনুযায়ী, সতী দক্ষের যজ্ঞকুণ্ডে আত্মবলিদানের উদ্দেশ্যে ঝাঁপ দিলে সতীর দগ্ধ দেহের কালো ধোঁয়া থেকে ধূমাবতী উত্থিতা হন। তিনি হলেন "সতীর দেহাবশেষ" এবং তাঁর অপমানিতা অবতার।প্রাণতোষিণী তন্ত্র গ্রন্থে ধূমাবতীর বিধবা বেশের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। একদা সতী শিবের কাছে অন্ন প্রার্থনা করেন। শিব তাঁকে অন্ন দিতে অস্বীকার করলে, সতী তাঁর প্রচণ্ড ক্ষুধার নিবৃত্তির জন্য শিবকেই ভক্ষণ করেন। শিব যখন তাঁকে নিষ্কৃতি দিতে অনুরোধ করেন, তখন সতী শিবকে পুনরায় উগরে দেন। এরপর শিব তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং বিধবার বেশ ধারণ করার অভিশাপ দেন। আর একটি লোকপ্রচলিত জনশ্রুতি অনুযায়ী, দুর্গা শুম্ভ ও নিশুম্ভ অসুরদ্বয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য ধূমাবতীকে সৃষ্টি করেন। ধূমাবতী প্রাণঘাতী ধূমের সাহায্যে দৈত্যনাশ করেন।


প্রাণতোষিণী তন্ত্র ধূমাবতীর ধ্বংসাত্মিকা শক্তি ও প্রচণ্ড ক্ষুধার উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে। উল্লেখ্য, বিশ্ববিধাতা শিবই তাঁর ক্ষুণ্ণিবৃত্তি করতে সক্ষম। এটি ধূমাবতীর বিধবাবেশী অমঙ্গলসূচক রূপ এবং তাঁর স্বামীভক্ষণকারী সত্ত্বার প্রতীক।


***#মূর্তিকল্পঃ

================

*#ধূমাবতী তন্ত্র গ্রন্থে তাঁকে বৃদ্ধা ও কুৎসিত বিধবার রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি শীর্ণকায়া, দীর্ঘাকার, রোগগ্রস্থা ও পাণ্ডুরবর্ণা। তিনি অশান্ত ও কুটিল হৃদয়। তাঁর দেহে অলংকারাদি নেই। তিনি পুরনো মলিন বস্ত্র পরিধান করে থাকেন। তিনি মুক্তকেশী। তাঁর চক্ষুদুটি ভয়ংকর, নাসিকা দীর্ঘ ও বক্র, তাঁর তীক্ষ্ণ দাঁতের কয়েকটি পড়ে গেছে, হাসলে তাঁকে ফোকলা মনে হয়। তাঁর কর্ণদ্বয় কুৎসিত ও অসম আকারবিশিষ্ট। তাঁর স্তন লম্বমান এবং তিনি এক হাতে একটি কুলো ধরে থাকেন এবং অপর হাতে বরমুদ্রা বা চিন্মুদ্রা দেখান। তিনি অশ্ববিহীন রথে আরূঢ়া এবং তাঁর পতাকায় কাকের ছবি থাকে। ধূমাবতী চতুরা। তিনি সর্বদা ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত অবস্থায় থাকেন। তিনি কলহের কারণ ও ভয় প্রদানকারিনী।


প্রপঞ্চসারাসার সমগ্র অনুযায়ী, ধূমাবতী কৃষ্ণবর্ণা ও নাগ অলংকারে ভূষিতা। তাঁর বস্ত্র শ্মশানক্ষেত্র থেকে সংগৃহীত ছিন্ন বস্ত্রখণ্ডে নির্মিত। তিনি দ্বিভূজা, শূল ও নরকপালধারিনী।কোনো কোনো মূর্তিকল্পে শূলের জায়গায় তরবারি থাকে। একই গ্রন্থের অপর একটি বর্ণনা অনুযায়ী, ধূমাবতী বৃদ্ধা, তাঁর চর্ম কুঞ্চিত, তিনি ক্রুদ্ধমুখ এবং মেঘশ্যামবর্ণা। তাঁর নাসিকা, চক্ষু ও কণ্ঠ কাকের ন্যায়। তিনি ঝাঁটা, কুলো, মশাল ও গদা ধারণ করে থাকেন। তিনি নিষ্ঠুরা ও তাঁর ভ্রু কুঞ্চিত। ধূমাবতী এলোকেশী ও তিনি ভিক্ষুকের বস্ত্রপরিহিতা। তাঁর স্তনযুগল শুষ্ক।তাঁর চুল পাকা, দাঁত ভাঙা ভাঙা ও বস্ত্র জীর্ণ ও ছিন্ন।


*#কোনো কোনো ক্ষেত্রে ধূমাবতী কাকবাহিনী ও ত্রিশূলধারিনী রূপে কল্পিত হন।তিনি মুণ্ডমালাধারিণী, তাঁর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ রক্তবর্ণা, এবং তাঁর মাথার চুলা আলুলায়িত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিনি মৃত্যুর দেবতা যমের মহিষশৃঙ্গ ধারণ করে। এটি মৃত্যুর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের প্রতীক।


ধূমাবতী ভয়ংকরী, তাঁর বেশ যোদ্ধার বেশ। শাক্তপ্রমোদ অনুযায়ী, তিনি ভয়ংকর শব্দ করে হাড় চিবিয়ে খান। তাছাড়াও তিনি রণভেরী বাজিয়ে ভয়ংকর শব্দ করেন। তিনি নরকপালের মালা পরে থাকেন, চণ্ড ও মুণ্ডের হাড় চিবিয়ে ভক্ষণ করেন এবং রক্তের সঙ্গে মদ মিশিয়ে খান।


অবশ্য ধূমাবতীর রূপকল্পের কয়েকটি ব্যতিক্রমও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, অষ্টাদশ শতাব্দীতে মোলারাম অঙ্কিত একটি চিত্রে দেবীকে দুটি শিকারী পক্ষীর দ্বারা বাহিত রথে আরূঢ়া মূর্তিতে দেখা যায়। এই মূর্তিতে তাঁর এক হাতে কুলো ও অপর হাতে বরদা মুদ্রা থাকলেও, তিনি যৌবনবতী, সুডৌলস্তনযুক্তা এবং স্বর্ণালঙ্কারভূষিতা।; যা তাঁর প্রচলিত মূর্তিকল্পের একেবারের বিপরীতধর্মী। বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে বারাণসীতে অঙ্কিত একটি চিত্রে দেবী ধূমাবতী কাকবাহনা, চতুর্ভূজা, ত্রিশূল, তরবারি, কুলো ও পাত্রহস্তা, কৃষ্ণবর্ণা, লম্বিতস্তনযুক্তা, শ্বেতবস্ত্রপরিহিতা ও শ্মশানচারিণী। এই ছবিতেও তিনি স্বর্ণালঙ্কারভূষিতা ও তাঁর নিম্নবস্ত্রে সোনার পাড়; যা বিধবার বেশের সঙ্গে বেমানান। অষ্টাদশ শতাব্দীর একটি নেপালি পুথিচিত্রে আবার ধূমাবতীর সম্পূর্ণ অপরিচিত একটি মূর্তি দেখা যায়। দেবী এখানে সম্পূর্ণ নগ্না, উন্নতস্তনযুক্তা, মুক্তাহার ও মুকুট পরিহিতা, পদযুগল দুপাশে দিয়ে ময়ূরের উপর দণ্ডায়মানা, এবং একটি দর্পণে স্বীয় মুখমণ্ডল দর্শনরতা। তাঁর চতুর্পার্শ্বে অগ্নিবলয়, যা সম্ভবত শ্মশানচিতাগ্নির প্রতীক।


*#প্রতীকতত্ত্বঃ

=================

বেদ বিশারদ গণপতি মুনি নিম্নলিখিত ভাষায় দেবীর বর্ণনা দিয়েছেন:

                 “ তিনি শূন্যরূপে প্রকীর্তিতা এবং চৈতন্যের বিলীন রূপ। সকল সত্ত্বা ব্রহ্মে লীন হলে সমগ্র জগৎ চরাচরকে গ্রাস করেন তিনি। তখন দার্শনিক-কবিরা তাঁকে মহাগরিমাসম্পন্না জ্যেষ্ঠা ধূমাবতী নামে অভিহিত করেন। তাঁর নিবাস নিদ্রা, স্মৃতিভ্রষ্টতা, মায়া ও মায়ায় আবদ্ধ জীবের মধ্যে। কিন্তু যোগীগণের মধ্যে তিনি সকল চিন্তা ধ্বংসকারিণী শক্তি এবং স্বয়ং সমাধি স্বরূপিণী। ”


— গণপতি মুনি, উমা সহস্রম্ ৩৮ , পৃ. ১৩—১৪, [১৯]

ধূমাবতী সর্বক্ষেত্রেই বিধবা রূপে কল্পিতা হন। তাই তিনিই একমাত্র মহাবিদ্যা, যাঁর স্বামী নেই। যদিও তিনি শিবেরই স্ত্রী ছিলেন; কিন্তু শিবকে তিনি ভক্ষণ করে ফেলেন এবং পরে শিব কর্তৃক পরিত্যক্তা হন।এই রূপে তিনি মহাবিশ্বের পুরুষকে ধ্বংস করে শূন্যের সঙ্গে বিরাজমান হন; কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁর মহাশক্তি সত্ত্বাটি ক্ষুণ্ণ হয় না। অনেক গ্রন্থেই ধূমাবতীর সদাঅতৃপ্ত ক্ষুধা ও তৃষ্ণার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এটি তাঁর অতৃপ্ত কামনাবাসনার প্রতীক।


*#দেবীর অশ্ববিহীন রথারূঢ়া বিধবার বেশটি সমাজ ও জীবন থেকে নির্বাসিতা নারীর প্রতীক। তিনি "সকল দুর্ভাগ্য, অনাকর্ষণীয় ও অমঙ্গলের প্রতীক"। তিনি দরিদ্র, ভিখারিণী ও কুষ্ঠরোগাক্রান্তা। তিনি বাস করেন "জগতের ক্ষত", মরুভূমি, ভাঙা বাড়ি, দারিদ্র, ছেঁড়া কাঁথা, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, কলহ, সন্তানশোক, বন ও অন্যান্য বর্বর অধ্যুষিত অঞ্চলে।সাধারণত বিধবাদের অমঙ্গলজনক, বিপজ্জনক ও অশুভক্ষমতার অধিকারিণী বলে সন্দেহ করা হয়। তাই দিব্যবিধবা ধূমাবতীকেও সকলে ভয় করেন।ধূমাবতীকে কুটিল বৃদ্ধা বা ডাইনি বলে বর্ণনা করা হয়। তিনি চতুর ও কলহপ্রিয়া। এটি জীবনের ভয়ংকর দুঃখগুলির প্রতীক।


 তাঁর সহস্রনাম স্তোত্রে বলা হয়েছে যে, তিনি আনন্দপ্রদায়িনী, সর্বসুন্দরী ও মাল্য, অলংকার ও বস্ত্রভূষিতা। এই স্তোত্র অনুযায়ী, তিনি যৌনতার দেবী; রতি তাঁর রূপভেদ। উল্লেখ্য, রতি শব্দের আক্ষরিক অর্থ "যৌনসংগম" এবং এটি হিন্দু প্রেমের দেবীরও নাম। তিনি যৌনসংগম উপভোগ করেন; যেখানে যৌনক্রিয়া চলে, সেখানে উপস্থিত থাকেন এবং স্বয়ং যৌনাচারে অংশ নেন। তিনি মদ্যপান করতে ভালবাসেন এবং উন্মত্তা অবস্থায় থাকেন। এই কারণে মদ্যপেরা তাঁর পূজা করে। পঞ্চমকার সহযোগে তন্ত্রসাধনার সঙ্গেও তিনি সম্পৃক্তা থাকেন।


*#ধূমাবতী নারীর সমাজবিরোধী ও অমঙ্গলময় সত্ত্বার প্রতীক। তিনি লক্ষ্মীর বিপরীত শক্তি।অলক্ষ্মীর মতো ধূমাবতীও বর্ষাকালের চার মাসে (চতুর্মাস্য) পূজিতা হন। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, এই সময় অশুভ জলশক্তি সূর্যালোককে আচ্ছন্ন করে রাখে এবং এই সময় বিষ্ণু নিদ্রা যান। এই সময় অন্ধকার রাজত্ব করে এবং আত্মা তাঁর নিজস্ব ঔজ্জ্বল্য হারায়। এই সময়টিকে অশুভ মনে করা হয় এবং বিবাহাদি কোনো শুভ কাজ এই সময় হয় না।


দেবীর মূর্তিকল্পে মৃত্যুর বাহক কাকের উপস্থিতি এবং বিভিন্ন গ্রন্থাবলিতে উল্লিখিত তাঁর কাকের ন্যায় বৈশিষ্ট্যগুলি মৃত্যু ও অমঙ্গলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের প্রতীক। তাঁর মূর্তিকল্পে মৃত্যুর আর একটি প্রতীক হল শ্মশানক্ষেত্র ও চিতাগ্নির উপস্থিতি। সহস্রনাম স্তোত্র অনুযায়ী, ধূমাবতী শ্মশানবাসিনী, শবারূঢ়া, ভষ্মমণ্ডিতা ও শ্মশানচারীদের আশীর্বাদকারিণী। প্রপঞ্চসারাসার সমগ্র অনুযায়ী তিনি মৃতদেহের শরীর থেকে বস্ত্র সংগ্রহ করে তা পরিধান করেন।ধূমাবতী তমোগুণের প্রতীক, যা অজ্ঞতা ও অন্ধকারের সঙ্গে যুক্ত। তিনি মাংস ও মদ্য পছন্দ করেন, তামসিক প্রকৃতির।


*#নাম ও রূপের বাইরে, মানবীয় বর্গবিভাজনের বাইরে, একাকী ও অদ্বিতীয়া, প্রলয়রূপিণী তিনি (ধূমাবতী) সর্বোচ্চ জ্ঞান প্রকাশ করেন, যা আকারবিহীন, শুভাশুভ, শুদ্ধাশুদ্ধ ও মঙ্গল-অমঙ্গল-বিভেদরহিত।

কথিত আছে, ধূমাবতী মহাপ্রলয়ের সময় উপস্থিত হন। প্রলয়কালে উত্থিত প্রকাণ্ড কৃষ্ণ মেঘ তাঁর স্বরূপ। এই কারণে সহস্রনাম স্তোত্রে তাঁকে "প্রলয়রূপিণী", "প্রলয়মত্তা", "প্রলয়কারণস্বরূপিণী" ও "প্রলয়চারিণী" বলা হয়। অন্যমতে, তিনি মহাকালরূপী শিবের বিলোপের পরেও বিদ্যমান থাকেন। তাই তিনি "কালশক্তিস্বরূপিণী" এবং কালের বৃত্তের বাইরে অবস্থানকারিণী।ধূমাবতী মহাপ্রলয় বা শেষ প্রলয়ের এবং বিশ্ববিনাশের পর উত্থিত ধোঁয়ার প্রতীক।


"ধূমাবতী" নামটির অর্থ "ধূম্রময়ী"। কথিত আছে, পোড়ালে ধোঁয়া হয় না, এমন কিছু উৎসর্গ না করলে তিনি খুশি হন না। তিনি ধূপ ও চিতার ধোঁয়া পছন্দ করেন, যা ধ্বংসের প্রতীক। তিনি ধোঁয়ার আকারে বিহার করেন এবং যেখানে খুশি সেখানে যান।


ধূমাবতী সাধারণত অমঙ্গলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হলেও সহস্রনাম স্তোত্রে তাঁর কয়েকটি সদগুণেরও উল্লেখ রয়েছে।তিনি বরদাত্রী ও কোমলহৃদয়া। তাঁর স্তোত্রে বলা হয়েছে, তিনি নারীগণের মধ্যে বাস করেন এবং তাঁদের দ্বারা পূজিতা হন। এই স্তোত্রে তাঁকে সন্তানদাত্রীও বলা হয়েছে।


*#পূর্বপুরুষ বা পিতামহী সত্ত্বায় ধূমাবতী মহাগুরু ও পথনির্দেশকারিণী। তিনি জীবন ও মৃত্যু-সংক্রান্ত চরম সত্য জ্ঞান প্রদান করেন। যা অবশ্যম্ভাবী তা আচ্ছাদিত করে তাঁর ধোঁয়া। কিন্তু এর ফলে প্রকাশিত হয় "অজানা ও অরূপের" গুপ্ত সত্য। ফ্রলে বলেছেন, তাঁর বাইরের দরিদ্রবেশটি একটি মায়া-আচ্ছাদনমাত্র, যা তাঁর অন্তর্নিহিত সত্য রূপটিকে ঢেকে রাখে। তিনি প্রতীক সেই "সৌভাগ্যের যা দুর্ভাগ্যে ছদ্মবেশে আমাদের সম্মুখে উপস্থিত হয়।"ধূমাবতী "যন্ত্রণার শক্তির" মূর্তরূপ। ধূমাবতীর দোষগুলি আসলে ধৈর্য, সহনশীলতা, ক্ষমাশীলতা ও বৈরাগ্যের মতো গুণগুলির জন্মদাতা। জীবনের দোষগুলি প্রকাশ না পেলে, সেই দোষের উত্তরণ ঘটে না এবং সত্যও মায়ার ধূম্রাচ্ছাদনের আড়ালেই থেকে যায়।


ধূমাবতীর বাইরের অমঙ্গলময় সত্ত্বা ও তাঁর ভয়ংকরী মূর্তিটি কামনাবাসনার নিবৃত্তিকে চরমপ্রাপ্তি মনে করার বিপদটি উদ্ঘাটন করে। কুলো শস্য বাছাইয়ের কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি বাইরের মায়া থেকে অন্তরের বাস্তবকে বেছে নেওয়ার প্রতীক। তাঁর কুৎসিত রূপ ভক্তকে এই শিক্ষাই দেয় যে, বাইরের চাকচিক্যময় রূপের বদলে অন্তর্নিহিত সত্যই মূল বস্তু ।


*#ধূমাবতী সেই আদি অন্ধকার ও অজ্ঞানের মূর্তরূপ, যা থেকে মায়ার সংসারের সৃষ্টি। তিনি সৃষ্টির পূর্বে ও ধ্বংসের পরে এই অন্ধকার ও অজ্ঞানতার প্রতীক। এই অজ্ঞানতা, যা সর্বোচ্চ সত্যকে ঢেকে রাখে, তাও প্রয়োজনীয়। কারণ এই অজ্ঞানতার উপলব্ধি না থাকলে, সত্য জ্ঞান লাভ করা সম্ভবপর নয়। ধূমাবতী চৈতন্যের প্রাক-সৃষ্টি রূপ যোগনিদ্রা এবং যে আদি নিদ্রা বা মহাশূন্যে সকল সৃষ্টি মিলিত হয়ে ব্রহ্মে বিলীন হয়, তারও প্রতীক। এই মহাশূন্য শুদ্ধ চৈতন্য, চিত্তচাঞ্চল্যরোধকারী এবং নৈঃশব্দ। এমনকি ধূমাবতীর রোগসৃষ্টিকারী সত্ত্বাটিরও একটি ভাল দিক রয়েছে। রোগের মাধ্যমে তিনি দুষ্টকে শাস্তি দেন এবং জগৎ সংসারের স্থিতি বজায় রাখেন। ধূমাবতী হৃদপিণ্ড বা শরীরের মধ্যভাগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।


কোনো কোনো মতে, ধূমাবতী কালীর বৃদ্ধা রূপ। এই রূপ কালীর কালোত্তীর্ণা সত্ত্বা ও অরূপ জীবনীশক্তির প্রতীক।অন্য এক মতে, ধূমাবতী হলেন শ্মশানকালীর অন্য রূপ।কালীকুল ঐতিহ্যে ধূমাবতী মহাশক্তির এক ভয়ংকরী রূপ হিসেবে কল্পিত হন।ধূমাবতীর নাম স্তোত্রে তাঁকে পার্বতী ও সতীর অংশ বলা হয়েছে এবং তাঁকে দানবদলনী রূপে বন্দনা করা হয়েছে।


Continue-27

***#পূজাঃ

===============

দেবীর পূজায় ব্যবহৃত ধূমাবতী যন্ত্র ধূমাবতীকে অমঙ্গলের দেবী মনে করে সাধারণ ক্ষেত্রে এড়িয়ে চলা হলেও, তাঁকে কোমলহৃদয়া এবং ভক্তের মনোবাঞ্ছাপূর্ণকারী বরদাত্রী রূপে বর্ণনাও করা হয়ে থাকে। অনেক স্থানেই ধূমাবতীকে সিদ্ধি বা অলৌকিক ক্ষমতার প্রদানকারিণী, বিপদ থেকে উদ্ধারকারিণী, সকল কামনা পূর্ণকারিণী এবং মোক্ষদাত্রীরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। ধূমাবতী যে সকল অমঙ্গলজনক বিষয়গুলির দেবী, সেগুলি ঠেকাতে এবং সত্যের ধূম্রাচ্ছাদন উন্মোচন করতে তাঁর পূজা করা হয়।তিনি অপবিত্রতা, অমঙ্গলের প্রতীক ও সমাজবহির্ভূত বলে তাঁর পূজা করলে পূজক সমাজের নিত্যনৈমিত্তিক দ্বন্দ্বের বাইরে দৃষ্টিপাত করার শক্তি অর্জন করেন এবং সত্য জ্ঞান লাভ করতে সমর্থ হন।


যদিও বিবাহিত ব্যক্তিদের ধূমাবতীর পূজা করতে বারণ করা হয়। কথিত আছে, ধূমাবতীর পূজা করলে হৃদয়ে নির্জনতার পিপাসা বৃদ্ধি পায় এবং জাগতিক বিষয়ে বিতৃষ্ণা জাগে, যা আধ্যাত্মিক সাধনার সর্বোচ্চ বৈশিষ্ট্য। এই কারণে ধূমাবতীর পূজা সর্বত্যাগী ও পরিব্রাজক সন্ন্যাসীদের পক্ষে সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত। ধূমাবতীকে একাকী ব্যক্তিদের, বিশেষত বিধবাদের প্রতি পক্ষপাতী বলে বর্ণনা করা হয়। বিধবারাই একমাত্র তাঁর শক্তি সহ্য করতে পারেন বলে মনে করা হয়।


*#ধূমাবতীর মন্ত্রটি হল "ধূঁ ধূঁ ধূমাবতী স্বাহা"। এই মন্ত্রে তাঁর "ধূঁ" বীজমন্ত্রটিও অন্তর্ভুক্ত। এই মন্ত্রেই তাঁর পূজা হয়। কখনও কখনও যন্ত্রেও তাঁর পূজা করা হয়। ভক্তেরা অমঙ্গল ও মৃত্যুর হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে ধূমাবতীর পূজা করেন।ধূমাবতীর পূজায় পূজককে মন থেকে সকল চিন্তা মুছে ফেলে অচিন্ত্য অরূপের ধ্যান করতে হয়, এই মহাশূন্যরূপী অরূপেরই প্রতীক হলেন ধূমাবতী।


শক্তিসংগম তন্ত্র মতে, কোনো ব্যক্তিকে "উচাটন" বা নির্মূল করতে ধূমাবতীর পূজা করা যায়। পূজককে সেক্ষেত্রে জগত ও দেবীর মন্ত্রটিকে ধূসর রূপে কল্পনা করতে হবে। তাঁকে দাঁতে কালো রং করতে হবে, কালো পোষাক পরতে হবে, এবং অল্পাহার, ভূমিশয্যা ও ইন্দ্রিয়দমনের মতো কয়েকটি নিয়ম পালন করতে হবে। এই পদ্ধতিটির "কাককর্ম"; অর্থাৎ, অপরের ক্ষতি করতে হলে তাঁকে "তাঁর মনকে কাকের ন্যায় করে তুলতে হবে"। অন্য একটি তন্ত্রগ্রন্থের মতে, পূজককে ধূমাবতীয় মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে শ্মশানক্ষেত্রে একটি কাক দগ্ধ করে শত্রুর ঘরে ছড়িয়ে দিতে হবে, তবেই সে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।এই গ্রন্থে আরও বলা হয়েছে যে, ধূমাবতীকে কেবলমাত্র দক্ষিণমার্গেই পূজা করতে হবে।কালরুদ্র তন্ত্র গ্রন্থে, ধূমাবতীকে ধ্বংসের উদ্দেশ্যে পূজা করার কথা বলে হলেও শাক্তপ্রমোদ গ্রন্থে সিদ্ধি অর্জন ও শত্রু বিনাশের জন্য তাঁর পূজার উল্লেখ রয়েছে।


*#রাত্রিকালে শ্মশানক্ষেত্রে ধূমাবতীর পূজা করা হয়। পূজককে নগ্নগাত্রে কেবলমাত্র কৌপিন পরিধান করে তাঁর পূজা করতে হয়। কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থী তিথি ধূমাবতীর পূজার পক্ষে প্রশস্ত। পূজককে পূজার দিন সারাদিন-সারারাত উপবাস করে মৌনী থাকতে হয়। এছাড়া তাঁদের শ্মশান, বন বা কোনো নির্জন স্থানে ভিজে কাপড়ে পাগড়ি মাথায় দিয়ে ধূমাবতীর মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে হোম করতে হয়।


*#ধূমাবতীর মন্দিরের সংখ্যা অত্যন্ত অল্প। বারাণসীর একটি মন্দিরে ধূমাবতী হলেন প্রধান দেবতা। ঝাড়খণ্ডের রাঁচি ও গুয়াহাটির নিকটবর্তী কামাখ্যা মন্দিরের কাছে ধূমাবতীর ছোটো মন্দির রয়েছে।বারাণসীর মন্দিরটিকে শক্তিপীঠ বলে দাবি করা হয়। এই মন্দিরে দেবী রথারূঢ়া ও চতুর্ভূজা, তাঁর চার হাতে কুলো, ঝাঁটা, পাত্র ও অভয়মুদ্রা। এখানে ফল ও ফুল দিয়ে দেবীর পূজা করা হলেও মদ, ভাঙ, সিগারেট, মাংস, এমনকি রক্ত দিয়েও পূজা করা হয়ে থাকে।সন্ন্যাসী ও তান্ত্রিকরা এই মন্দিরে ধূমাবতীর পূজা করেন। দেবীর অমঙ্গলজনক সত্ত্বাটির জন্য কেবলমাত্র তান্ত্রিক বীরাচারেই দেবীর পূজা করা হয়।তবে এই মন্দিরে দেবী গ্রামদেবতা বা স্থানীয়দের রক্ষাকর্ত্রীরূপেও পূজিতা হন। এখানে বিবাহিত যুগলেও পূজা উৎসর্গ করে থাকে।

*#দেবী_কমলা


শ্রীমদভাগবতার অষ্টম স্কন্ধের অষ্টম অধ্যায়ে কমলার উদ্ভবের বিস্তৃত বর্ণনা আছে। দেবতা ও অসুরদের দ্বারা অমৃত লাভের উদ্দেশ্যে সমুদ্র মন্থনের ফলস্বরূপ তার আবির্ভাব। ভগবান বিষ্ণুকে ইনি পতিত্বে বরণ করেছিলেন।


*#মহাবিদ্যাদের মধ্যে ইনি দশম স্থানাধিকারিণী। ভগবতী কমলা হলেন বৈষবী শক্তি আবার

ভগবান বিষ্ণুর লীলাসহচরী; তাই এঁর পূজা জগতাধার-শক্তির পূজা। ইনি একরূপে সমস্ত ভৌতিক ও প্রাকৃতিক সম্পদের অধিষ্ঠাত্রী দেবী আবার আর এক রূপে সচ্চিদানন্দময়ী লক্ষ্মী — যিনি ভগবান বিষ্ণুর থেকে

অভিন্ন।


*#দেবতা, মানব ও দানব — সকলেই এর কৃপা ছাড়া পঙ্গু। এইজন্য আগম ও নিগম দুই শাস্ত্রেই এর পূজা সমরূপে বর্ণিত। সমস্ত দেবতা, রাক্ষস, মানুষ, সিদ্ধ ও গন্ধর্ব এর কৃপা প্রসাদ পাওয়ার জন্য উদগ্রীব থাকে।


*#মহাবিদ্যা কমলার ধ্যানমন্ত্রে বলা আছে যে ইনি সুবর্ণকান্তি। হিমালয় সদৃশ শ্বেতবর্ণ চারটা হাতি তাদের শুড়ে চারটে সুবর্ণ কলস নিয়ে এঁকে স্নান করাচ্ছে। তার দুই হাতে বর ও অভয় মুদ্রা এবং অন্য দুইটা হাতে দুটি পদ্মফুল নিয়ে আছেন। এঁর মাথায় সুন্দর মুকুট এবং পরিধানে রেশমীবস্ত্র সুশােভিত। ইনি কমলাসনে আসীনা।


*#সমৃদ্ধির প্রতীক মহাবিদ্যা কমলার পূজা স্থিরলক্ষ্মী প্রাপ্তি ও স্ত্রীপুত্রাদি সুখের জন্য করা হয়। কমলাকে লক্ষ্মী এবং ষােড়শীও বলা হয়। ভাগবদের দ্বারা পূজিত হওয়ার জন্য এর আর এক নাম ভাগবী।


*#এঁর কৃপায় সসাগরা ধরনীর আধিপত্য ও পুরুষােত্তম-ভাব এই দুইয়ের প্রাপ্তি হয়। ভগবান আদি

শঙ্করাচার্য বিরচিত কনকধারাস্তোত্র ও শ্রীসূক্তের পাঠ, পদ্মবীজের মালায় শ্রীমন্ত্রের জপ, বিল্বপত্র ও বিশ্বফলের দ্বারা যজ্ঞ করলে কমলার বিশেষ কৃপা লাভ হয়। স্বতন্ত্রতন্ত্রে কোলাসুরকে বধের উদ্দেশ্যে এর আবির্ভাব হয় বলে বলা হয়েছে। বারাহীতন্ত্রমতে পুরাকালে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর দ্বারা পূজিত হওয়াতে কমলার এক নাম ত্রিপুরারূপেও প্রসিদ্ধ। কালিকাপুরাণে বলা হয়েছে যে ত্রিপুৱশিবের পত্নী হওয়াতে এঁকে ত্রিপুরা বলা হয়। শিব স্বেচ্ছায় ত্রিধাবিভক্ত হয়ে যান। তার উৰ্দ্ধভাগ গৌরবর্ণ, চার হাত, চতুর্মুখ ব্রহ্মরূপে পরিচিত। মধ্যভাগ নীলবর্ণ একমুখ ও চতুর্ভুজ। তাকে বিষ্ণু বলা হয়। আর অধােভাগ ম্যাটিক বর্ণ, পঞ্চমুখ ও চতুর্ভুজ — এঁকে শিব বলা হয়। এই তিন দেহে যুক্ত হয়ে শিব হলেন ত্রিপুর আর তার শক্তি হলেন ত্রিপুরা এরকম বলা হয়েছে। চিন্তামনি গৃহে এঁর নিবাস। 


*#ভৈরব্যামল তথা শক্তিলহরীতে এর রূপ ও পূজাপদ্ধতির বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। এঁর পূজায় সমস্ত রকম সিদ্ধি

সহজে লাভ করা যায়। পুরুষসূক্তে ‘ শ্রীশ্চ তে লক্ষ্মী পত্না ’ বলে কমলাকে পরম পুরুষ ভগবান বিষ্ণুর পত্নীরূপে উল্লেখ করা

হয়েছে। অশ্ব, রথ, হস্তীর সাথে তার সম্বন্ধ রাজ্য-বৈভবের সূচক, পদ্মাসীনা ও পদ্মাবর্ণা হওয়ার কথাও শ্রুতিতে আছে।


*#ভগবৎ শক্তি কমলার পাঁচটী কর্ম — তিরােভাব, সৃষ্টি, স্থিতি, সংহার ও অনুগ্রহ। ভগবতী

কমলা নিজে বলেছেন যে নিত্য নির্দোষ পরমাত্মা নারায়নের সব কাজ আমি নিজে করি। এইভাবে কালী থেকে কমলা পর্যন্ত দশমহাবিদ্যা সৃষ্টি ও ব্যষ্টি, গতি, স্থিতি, বিস্তার, ভরণ-পােষণ,

নিয়ন্ত্রণ, জন্ম-মরণ, উন্নতি-অবনতি, বন্ধন ও মােক্ষ অবস্থার প্রতীক। এরা বিভিন্ন রূপে দেখা গেলেও বস্তুতঃ পরমাত্মার একই শক্তি।


*#আরতি_ও_হিন্দু_জাগরন


“আ” অর্থে ব্যাপ্তি; “রতি” অর্থে প্রেম, ভালাবাসা ও অনুরাগ। যে মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শ্রীভগবানের নিজের প্রীতি বর্ধিত হয় অর্থাৎ তিনি ভক্তের প্রতি প্রসন্ন বা সন্তুষ্ট হন এবং ভগবানের প্রতিও ভক্তের প্রেম, প্রীতি, ভালবাসা, ভক্তি ও অনুরাগ বৃদ্ধি পায় তাকে আরতি বলে।

অতএব আরতি ভগবানের প্রতি ভক্তের অন্তরের গভীর ভাবভক্তি পূর্ণ একটি মহা মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান। ভগবানের প্রতি ভক্তের অন্তরের ভাব ও ভক্তির মাধ্যমে, আকুলতা-ব্যাকুলতা প্রকাশের মাধ্যমে ও সম্পূর্ণ আত্মনিবেদনের মাধ্যমে, আরতির অনুষ্ঠান হয় সার্থক ও সুন্দর।


*#ভাব ও ভক্তি শূন্য আরতি তাই কেবল নাচানাচি বা অঙ্গবিক্ষেপ ছাড়া অন্য কিছু নয়। আর ওরকম আরতির মাধ্যমে ভগবানের আশীর্বাদ পাওয়া যায় না কিছুই। ইদানিং সমাজকে ডিজিটাল করার উদ্দেশ্যে অশালীন ভঙ্গিমায় নৃত্যের প্রদর্শন হয়। বিদেশী টাকায় পরিচালিত কিছু মন্দির নিজেদের মনগড়া মতামত সমাজে চাপিয়ে দেয়ার জন্য যুবসমজকে এরকম অশ্লীল সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। তারা কীর্তনের নামে ডিজে মিউজিক বাজিয়ে নাচানাচি করে ও কীর্তন শেষে পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে সবাইকে ভাব-কান্নার অভিনয়ে জড়িয়ে ধরে। ইউটিউবে সার্স দিলে এর প্রমান পেয়ে যাবেন। এটা হিন্দুধর্মকে ডোবানোর অপচেষ্টা ছাড়া কিছু নয়।


*#আপনাকে প্রথমেই মনে রাখতে হবে আপনি কোন ডিজে পার্টিতে যোগ দেননি। সর্বপ্রথম আপনি মন্দির আঙ্গিনায়। দ্বিতীয়ত, ভগবানের সামনে। আর আপনার আরতি শুধু মাত্র ভগবানকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে। সামনেই দুর্গা পূজা আসছে। "আরতি" নামের ড্যান্স পার্টির স্বপ্নে এখন থেকেই বিভোর অনেকেই । অনেকেই এখন থেকেই নেশা জাতীয় দ্রব্য সংগ্রহের চেস্টায় মগ্ন। কারণ একটাই, সামনেই পূজা। আর পূজাতে নেশা না করে নৃত্য করলে বেশিক্ষণ নৃত্য করা যাবে না বা নৃত্যের ভাবমুর্তির উদয় হবে না। আর এর ফলে উৎসবটাই মাঠি হয়ে যাবে। এমন চিন্তা ভাবনায় শুধু ছেলেরাই নয়, সাথে আছে মেয়েরাও। এই আরতি শুধু মাত্র ভগবানকে সন্তুষ্টি করার জন্য। আরতিতে আরতির ভঙ্গিমায় নৃত্য করা উচিত। দুর্গা পূজায় মন্দির প্রাঙ্গণে নৃত্য করার সময় মনে রাখবেন, আপনি মায়ের সামনে নৃত্য করছেন। মা'কে খুশি করার জন্যই এই আরতি বা নৃত্য। আর মায়ের সামনে কিভাবে নৃত্য করতে হয় সেটা আশা করি বলে দিতে হবে না। হ্যাঁ, নৃত্য ছেলে মেয়ে উভয়েই করবেন। তবে অবশ্যই শালীনতা বজায় রেখে। মেয়েদের উদ্দেশ্যে বলি, আরতির সময় এমন কোন নৃত্যের প্রদর্শন করবেন না যাতে দর্শকগন আপনাকে নিয়ে স্বপ্নপুরিতে চলে যেতে বাধ্য হয়ে যায়। নিজের সম্মানবোধের কথা চিন্তায় রেখে নৃত্য করবেন।


*#অন্যধর্মের কেউ এসে আরতিতে খুব একটা অংশগ্রহণ করে না। তাই বুঝতেই পারছেন, হিন্দুরাই হিন্দুধর্মকে ডোবাচ্ছে। হাজার বছর ধরে বহুজাতির নির্জাতন-নিপীড়নের স্বীকার হয়ে হিন্দুদের নিজের ভালো বুঝতে না পারা একটা জেনেটিক সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। আর যারা বুঝতে পারছে কিন্তু নিজেরদের আখের গোছাতে ব্যস্ত তাদের পাপের শাস্তি আজ হিন্দু সমাজ ভোগ করছে।


*#তাই ভক্তির জন্য প্রকৃত ভক্তের প্রয়োজন আর প্রয়োজন সদগুরুর। আমাদের ঘরের শত্রুদের আগে চিনতে হবে। এটা শুনতে খারাপ লাগলেও সত্যি যে, হিন্দুরাই হিন্দুদের প্রধান শত্রু। আমার এক হিন্দু কলিগ আছে, যার পূজ্য তার বস। মন্দিরের কথা বললে বলে, আমার পূজার দরকার পরে না। আমার এলাকার এক কোটিপতি হিন্দুর বাড়ির টয়লেটের উপরের কুঠুরিতে পূজার আসন বর্জ্য হিসেবে ফেলে রেখেছে। অথচ সমাজে সে সাম্মানিত ব্যক্তি ; কারন তার টাকা আছে।


*#ব্রাক্ষ্মনরা পয়সার জন্য বাড়ি বাড়ি পূজার নামে আজ বামুনে পরিনত হয়েছে। ব্রাক্ষ্মন পরিবারে জন্মালেই ব্রাক্ষ্মন হওয়া যায় না। যার ব্রক্ষ্মজ্ঞান হয়েছে সেই ব্রাক্ষ্মন। খুঁজে দেখুন, আপনার শহরে একজন ব্রক্ষ্মজ্ঞানী পান কি না। দুটো পয়সার জন্য যে আপনার বাড়ি পূজা করতে আসে তার পূজা গ্রহন করতে ঈশ্বরের বয়েই গেছে।


*#দুঃখিত, আরতির প্রসঙ্গে অনেক অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে ফেললাম। একটা প্রশ্ন করে শেষ করছি, আর কবে ঘুম ভাঙ্গবে হিন্দুদের???

*#শ্রী_শ্রী_মা_মনসা_দেবীর_জন্ম_কথা_ও_পূজার_ইতিহাস


***#মা মনসা হিন্দুধর্মের লৌকিক সর্পদেবী। মধ্যযুগের লোককাহিনীবিষয়ক মনসামঙ্গল কাব্যের প্রধান চরিত্র।  সর্পদেবী হিসেবে মনসার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অথর্ববেদে। পুরাণে তাঁকে ঋষি কাশ্যপ ও নাগ-জননী কদ্রুর কন্যা বলা হয়েছে। খ্রিস্টীয় ১৪শ শতাব্দী নাগাদ মনসা প্রজনন ও বিবাহের দেবী হিসেবে চিহ্নিত হন এবং শিবের আত্মীয় হিসেবে শৈব দেবমণ্ডলীর অন্তর্ভুক্ত হন। কিংবদন্তি অনুযায়ী, শিব বিষপান করলে মনসা তাঁকে রক্ষা করেন সেই থেকে তিনি বিষহরি নামে পরিচিতা হন। তাঁর জনপ্রিয়তা দক্ষিণ ভারত পর্যন্ত প্রসারিত হয়। মনসার পূজকেরা শৈবধর্মের প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেও অবতীর্ণ হন। শিবের কন্যারূপে মনসার জন্মকাহিনি এরই ফলস্রুতি। এর পরেই হিন্দুধর্মের ব্রাহ্মণ্যবাদী মূলধারায় মনসা দেবীরূপে স্বীকৃতিলাভ করেন। ভক্তদের কাছে মা মনসা বিষহরি (বিষনাশকারিণী), জগৎগৌরী, নিত্যা (চিরন্তনী) ও পদ্মাবতী নামেও পরিচিতা। তাঁর পূজা প্রধানত বাংলা ও উত্তর ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে প্রচলিত। বর্ষার প্রকোপে এ সময় সাপের বিচরণ বেড়ে যায়, তাই  সর্পদংশন প্রতিরোধ ও সাপের বিষের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে তাঁর পূজা করা হয়। এছাড়া ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্তুতির জন্য মা মনসার পূজা করা হয়। মনসা মূলত একজন আদিবাসী দেবতা। নিম্নবর্ণীয় হিন্দুদের মধ্যে তাঁর পূজা প্রচলিত ছিল। পরবর্তীকালে উচ্চবর্ণীয় হিন্দুসমাজেও মনসা পূজা প্রচলন লাভ করে। বর্তমানে মনসা আর আদিবাসী দেবতা নন, বরং তিনি একজন হিন্দু দেবীতে রূপান্তরিত হয়েছেন। হিন্দু দেবী হিসেবে তাঁকে নাগ বা সর্পজাতির পিতা কশ্যপ ও মাতা কদ্রুর সন্তান রূপে কল্পনা করা হয়েছে।


*#মা_মনসার_মূর্তিতত্ত্ব


মনসা সর্বাঙ্গে সর্পাভরণভূষিতা এবং পদ্ম অথবা নাগপৃষ্ঠে আসীনা। তাঁর মাথার উপর সপ্তফণাযুক্ত নাগছত্র দেখা যায়। কখনো কখনো তাঁর কোলে একটি শিশুকেও দেখা যায়। মনে করা হয় এটি তাঁর পুত্র আস্তিক। মনসাকে “একচক্ষু কানা” (চাঁদ সদাগরের বিখ্যাত উক্তি অনুযায়ী, “চেঙমুড়ী কানী”) দেবীও বলা হয়। কারণ তাঁর একটি চোখ সৎ-মা চণ্ডী কর্তৃক দগ্ধ হয়েছিল।


*#মহাভারতে_মা_মনসা


মহাভারতে মনসার বিবাহের কাহিনিটি রয়েছে। ঋষি জগৎকারু এক প্রচণ্ড তপস্যায় রত ছিলেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে বিবাহ করবেন না। একদা তিনি দেখতে পান যে একদল লোককে গাছে উলটো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এঁরা ছিলেন তাঁরই পূর্বপুরুষ। তাঁদের সন্তানেরা তাঁদের শ্রাদ্ধাদি সম্পূর্ণ না করায় তাঁদের এই দুঃখজনক অবস্থা হয়েছিল। তাঁরা জগৎকারুকে বিবাহ করার উপদেশ দিয়ে বলেন যে তাঁর পুত্রই শ্রাদ্ধাদি সম্পূর্ণ করে তাঁদের দুঃখ থেকে মুক্তি দিতে পারবে। বাসুকী জগৎকারুর সঙ্গে নিজ ভগিনী মনসার বিবাহ দেন। আস্তিক নামে তাঁদের একটি পুত্রসন্তান হয়। আস্তিক তাঁর পূর্বপুরুষদের মুক্তি দেন। রাজা জনমেজয় সর্পজাতির বিনাশার্থে সর্পনিধন যজ্ঞ শুরু করলে আস্তিকই নাগদের রক্ষা করেন।


*#পুরাণে_মা_মনসা


মনসার জন্মকাহিনি প্রথম উল্লিখিত হয়েছে পুরাণগ্রন্থেই। মঙ্গলকাব্যে তাঁকে শিবের কন্যা বলা হলেও, পুরাণ অনুসারে তিনি ঋষি কশ্যপের কন্যা। একদা সর্প ও সরীসৃপগণ পৃথিবীতে কলহ শুরু করলে কশ্যপ তাঁর মন থেকে মনসার জন্ম দেন। ব্রহ্মা তাঁকে সর্প ও সরীসৃপদের দেবী করে দেন। মনসা মন্ত্রবলে বিশ্বের উপর নিজ কর্তৃত্ব স্থাপন করেন। এরপর মনসা শিবের সঙ্গে সন্ধিস্থাপন করেন। শিব তাঁকে কৃষ্ণ-আরাধনার উপদেশ দেন। মনসা কৃষ্ণের আরাধনা করলে কৃষ্ণ তুষ্ট হয়ে তাঁকে সিদ্ধি প্রদান করেন এবং প্রথামতে তাঁর পূজা করে মর্ত্যলোকে তাঁর দেবীত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।


কশ্যপ জরুৎকারুর সঙ্গে মনসার বিবাহ দেন। মনসা তাঁর অবাধ্যতা করলে, তিনি মনসাকে ত্যাগ করবেন – এই শর্তে জরুৎকারু মনসাকে বিবাহ করেন। একদা মনসা দেরি করে তাঁর নিদ্রাভঙ্গ করলে তাঁর পূজায় বিঘ্ন ঘটে। এই অপরাধে জরুৎকারু মনসাকে ত্যাগ করেন। পরে দেবতাদের অনুরোধে তিনি মনসার কাছে ফিরে আসেন এবং আস্তিক নামে তাঁদের একটি পুত্রসন্তান জন্মায়।


*#মঙ্গলকাব্যে_মা_মনসা


মঙ্গলকাব্য হল খ্রিষ্টীয় ত্রয়োদশ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে বাংলায় রচিত মনসা ও অন্যান্য স্থানীয় দেবদেবীর মাহাত্ম্যসূচক গাথাকাব্য। বিজয়গুপ্তের মনসামঙ্গল ও বিপ্রদাস পিপলাইয়ের মনসাবিজয় কাব্যে মনসার জন্ম ও অন্যান্য উপাখ্যানগুলি সম্পূর্ণ বর্ণিত হয়েছে।

মনসাবিজয় কাব্য থেকে জানা যায়, বাসুকীর মা একটি ছোটো মেয়ের মূর্তি নির্মাণ করেছিলেন। শিবের বীর্য এই মূর্তি স্পর্শ করলে মনসার জন্ম হয়। বাসুকী তাঁকে নিজ ভগিনীরূপে গ্রহণ করেন। বাসুকী তার কাছে গচ্ছিত শিবের ১৪ তোলা বিষ মনসাকে দেন। রাজা পৃথু পৃথিবীকে গাভীর ন্যায় দোহন করলে উদগত বিষের দায়িত্বও বাসুকী মনসাকে দেন। শিব মনসাকে দেখে কামার্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু মনসা প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে তিনি শিবেরই কন্যা। আবদার করে কৈলাসে বাপের বাড়ি যাবার। শিব তার স্ত্রী পার্বতীর ভয়ে কন্যাকে নিতে চান না। পরে মন্দিরে ফুলের ডালিতে লুকিয়ে রাখেন। কিন্তু পার্বতী মনসাকে দেখে ফেলে। শিবের পত্নী চণ্ডী মনসাকে শিবের উপপত্নী মনে করেন। তিনি মনসাকে অপমান করেন এবং ক্রোধবশত তাঁর একটি চোখ দগ্ধ করেন। পরে শিব একদা বিষের জ্বালায় কাতর হলে মনসা তাঁকে রক্ষা করেন। একবার চণ্ডী তাঁকে পদাঘাত করলে তিনি তাঁর বিষদৃষ্টি হেনে চণ্ডীকে অজ্ঞান করে দেন। শেষে মনসা ও চণ্ডীর কলহে হতাশ হয়ে শিব মনসাকে পরিত্যাগ করেন।এবং মনসাকে বনবাসে দেয়া হয়। দুঃখে শিবের চোখ থেকে যে জল পড়ে সেই জলে জন্ম হয় মনসার সহচরী নেতার।


পরে জরৎকারুর সঙ্গে মনসার বিবাহ হয়। কিন্তু চণ্ডী মনসার ফুলশয্যার রাতটিকে ব্যর্থ করে দেন। তিনি মনসাকে উপদেশ দিয়েছিলেন সাপের অলঙ্কার পরতে আর বাসরঘরে ব্যাঙ ছেড়ে রাখতে যাতে সাপেরা আকর্ষিত হয়ে তাঁর বাসরঘরে উপস্থিত হয়। এর ফলে, ভয় পেয়ে জরৎকারু পালিয়ে যান। পরে তিনি ফিরে আসেন এবং তাঁদের পুত্র আস্তিকের জন্ম হয়।


এরপর মনসা তাঁর সহচরী নেতার সঙ্গে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন মানব ভক্ত সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে। প্রথম দিকে লোকেরা তাঁকে ব্যঙ্গ করে। কিন্তু যারা তাকে পূজা করতে অস্বীকার করে, তাদের চরম দুরবস্থা সৃষ্টি করে তাদের পূজা আদায় করেন মনসা। তিনি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের পূজা লাভে সক্ষম হন। এমনকি মুসলমান শাসক হাসানও তাঁর পূজা করেন।কিন্তু শিব ও চণ্ডীর পরমভক্ত চাঁদ সদাগর তাঁর পূজা করতে অস্বীকার করেন।


শিব বলেন, যদি চাঁদ সওদাগর মনসার পূজা দিতে রাজী হয়, তবে দুনিয়ায় মনসার পূজার প্রচলন হবে। শিব ভক্ত চাঁদ সওদাগর তুচ্ছ নারীকে পূজা দিতে রাজী হন না। উল্টা মনসাকে লাঠি নিয়ে তাড়া করে। যেকারণে মনসার রোষে চাঁদের চম্পকনগরে সাপের উপদ্রুব শুরু হয়। একে একে চাঁদের ছয় সন্তান মারা যায়। বাণিজ্যের নৌকা ডুবে গেলে চাঁদ সব হারিয়ে সর্বশান্ত হয়। তারপরও মনসার পূজাতে রাজী হয় না সে। অন্যদিকে চাঁদের বউ সনকা মনসার ভক্ত। মনসার বরে সে এক পুত্র জন্ম দেয়। নাম লখিন্দর। যদি চাঁদ মনসার পূজা না দেয় তবে লখিন্দর বাসর ঘরে সাপের কামড়ে মারা যাবে। এসব জেনেও চাঁদ লখিন্দরের সাথে উজানীনগরে বেহুলার বিয়ে ঠিক করে। চাঁদ সওদাগর অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে এমন বাসর ঘর তৈরি করেন যা সাপের পক্ষে ছিদ্র করা সম্ভব নয়।


কিন্তু সকল সাবধানতা স্বত্ত্বেও মনসা তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সমর্থ হয়। তার পাঠানো একটি সাপ লক্ষিন্দরকে হত্যা করে। প্রচলিত প্রথা অনুসারে যারা সাপের দংশনে নিহত হত তাদের স‌ৎকার প্রচলিত পদ্ধতিতে না করে তাদের মৃতদেহ ভেলায় করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হত এ আশায় যে ব্যক্তিটি হয়ত কোন অলৌকিক পদ্ধতিতে ফিরে আসবে। বেহুলা সবার বাঁধা অগ্রাহ্য করে তার মৃত স্বামীর সাথে ভেলায় চড়ে বসে। তারা ছয় মাস ধরে যাত্রা করে এবং গ্রামের পর গ্রাম পাড়ি দিতে থাকে। এই অবস্থায় মৃতদেহ পঁচে যেতে শুরু করে এবং গ্রামবাসীরা তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন মনে করতে থাকে। বেহুলা মনসার কাছে প্রার্থনা অব্যাহত রাখে। তবে মনসা ভেলাটিকেই কেবল ভাসিয়ে রাখতে সাহায্য করে।


ভাসতে ভাসতে ভেলা এসে পৌছালো এক ঘাটে, যেখানে প্রতিদিন স্বর্গের ধোপানি কাপড় ধোয়। বেহুলা সেখানে এক অবাক কাণ্ড দেখলো। ধোপানি কাপড় ধুতে এসেছে একটি ছোট শিশুকে নিয়ে। শিশুটি দুরন্ত, সারাক্ষণ দুষ্টুমি করে। ধোপানি এক সময় শিশুটিকে একটি আঘাত ক’রে মেরে ফেললো। পরে যখন কাপড় কাচা হয়ে গেলো, তখন আবার সে তাকে বাঁচিয়ে নিয়ে চ’লে গেলো। বেহুলা বুঝতে পারলো, এ মানুষ বাঁচাতে জানে। পরদিন বেহুলা গিয়ে তার পদতলে পড়লো। তার স্বামীকে বাঁচিয়ে দিতে অনুরোধ করলো। ওই ধোপানির নাম নেতাই। সে বললো, “একে আমি বাঁচাতে পারবো না, একে মেরেছে মনসা। তুমি স্বর্গে যাও, দেবতাদের সামনে উপস্থিত হও। দেবতারা ভালোবাসে নাচ দেখতে। তুমি যদি তোমার নাচ দেখিয়ে তাদের মুগ্ধ করতে পারো, তাহলে তারা তোমার স্বামীকে বাঁচিয়ে দেবে।”


আশার মোম জ্বলে উঠলো বেহুলার চোখে, মনে, সারা চেতনায়। সে স্বর্গে গেলো। দেবতারা ব’সে আছে  তাদের সামনে বেজে উঠলো বেহুলা, বেজে উঠলো তার পায়ের নূপুর। বেহুলার নাচে চঞ্চল হয়ে উঠলো চারদিক, তার নূপুরের ধ্বনিতে ভ’রে গেলো স্বর্গলোক। বেহুলার নৃত্যে এক অসাধারণ ছন্দ। মুগ্ধ হল দেবতারা। তারা বেহুলাকে বর প্রার্থনা করতে বললো। সে তার স্বামীর প্রাণ ভিক্ষা করলো। মহাদেব রাজি হলো তাতে।


মনসা এসে বললো, আমি লখিন্দরকে ফিরিয়ে দিতে পারি, যদি চাঁদ আমার পুজো করে।’ বেহুলা তাতে রাজি হল, এবং বললো, তাহলে তোমাকে ফিরিয়ে দিতে হবে আমার শ্বশুরের সব কিছু। ফিরিয়ে দিতে হবে তাঁর পুত্রদের, তাঁর সমস্ত বাণিজ্যতরী। রাজি হলো মনসা।


মনসা সব ফিরিয়ে দিলো, বেঁচে উঠলো লখিন্দর, ভেসে উঠলো চোদ্দ ডিঙ্গা। চাঁদ পাগলের মত ছুটে এলো বেহুলার কাছে। কিন্তু এসে যেই শুনলো যে তাকে মনসার পুজো করতে হবে, তখন তার সকল আনন্দ নিভে গেলো, সে দৌড়ে স’রে গেলো সবকিছুর থেকে। বেহুলা গিয়ে কেঁদে পড়লো চাঁদের পায়ে। যে- চাঁদ মনসাকে চিরদিন অপমান করেছে, যে কোনদিন পরাজিত হতে চায় নি, সে- চাঁদ বেহুলার অশ্রুর কাছে পরাজিত হলো। বেহুলা বললো, ‘তুমি শুধু বাঁ হাতে একটি ফুল দাও, তাহলেই খুশি হবে মনসা।’ চাঁদ বললো, ‘আমি অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে বাঁ হাতে ফুল দেবো।’ তাই হলো। মুখ ফিরিয়ে বাঁ হাতে একটি ফুল হেলাভরে ছুঁড়ে দিল চাঁদ। মনসা তারপরও খুশি। আর পৃথিবীতে প্রচারিত হলো মনসার পুজো।


এই হল মনসা-মঙ্গল কাব্যের কাহিনীর সার। এরমধ্যে নানা কবির লেখনীতে কিছু কিছু পার্থক্য আছে। তবে মূল কাহিনীর খুবই কম জায়গাতেই এই ফারাক।


মনসামঙ্গলে বলা হয়েছে, পূর্বজন্মে চাঁদকে মনসা একটি অভিশাপ দিয়েছিলেন। তার পাল্টা অভিশাপে মনসার ভক্ত সংগ্রহে অসুবিধা হতে থাকে। কারণ এই শাপে বলা হয়েছিল, চাঁদ মনসার পূজা না করলে মর্ত্যে মনসার পূজা প্রচলন লাভ করবে না।


*#মা_মনসা_পূজা


অধিকাংশ ক্ষেত্রে, প্রতিমায় মনসা পূজা করা হয় না। মনসা পূজিতা হন স্নুহী বা সীজ বৃক্ষের ডালে অথবা বিশেষভাবে সর্পচিত্রিত ঘট বা ঝাঁপিতে। যদিও কোথাও কোথাও মনসা মূর্তিরও পূজা হয়। বাংলায় মনসা পূজা বহুল প্রচলিত। এই অঞ্চলে মনসার মন্দিরও দেখা যায়। বর্ষাকালে সাপেদের প্রাদুর্ভাব বেশি থাকে বলে এই সময়ই মনসা পূজা প্রচলিত। শ্রাবণ মাসে নাগপঞ্চমীতেও মনসার পূজা করা হয়। বাঙালি মেয়েরা এই দিন উপবাস ব্রত করে সাপের গর্তে দুধ ঢালেন।


*#জয়_মা_মনসা🙏🙏🙏

*#পঞ্চাকাশে_স্থিত_মা_তারা 


প্রতি দুই চক্রের মধ্যবর্তী স্থানকে আকাশ বলে ।


*#মূলাধার- স্বাধিষ্ঠানের মধ্যবর্তী আকাশ ভূলােকস্থিত আকাশ ।


*#স্বাধিষ্ঠান- মণিপুরের মধ্যবর্তী আকাশ- ভূগােলকস্থিত আকাশ– মহাকাশ ।


*#মণিপুর- অনাহতের মধ্যবর্তী আকাশ- স্বঃ লােকস্থিত আকাশ- তত্ত্বাকাশ ।


*#অনাহত- বিশুদ্ধের মধ্যবর্তী আকাশ- পরাকাশ ।


*#বিশুদ্ধ- আজ্ঞার মধ্যবর্তী আকাশ-- সূর্যাকাশ। 


প্রতিটি আকাশে মা তারা অবস্থান করেন । বলা হয়েছে-

“খব্বাং লম্বোদরীং ভীমাং ব্রহ্মাণ্ডভাণ্ডোদরী লম্বােদরী তারা।”


*#টীকা :


আত্মা অঙ্গুষ্ঠ পরিমাণ তাই খৰ্ব্বাং। 


লম্বােধরীং : স্থূল অর্থে মা গর্ভবতী , বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সবকিছুই এই শক্তির গর্ভে ।


ভীমাং : ভয়ঙ্করী , সংসার যন্ত্রণা ভয়ঙ্কর বিশেষ । 


   ***#জয়_মা_তারা


      🌺🙏🌺🙏🌺🙏

***#যােগ 


*#আক্ষরিক অর্থে যোগ হচ্ছে — আত্ম উপলব্ধির জন্য বৈজ্ঞানিক পন্থার সাহায্যে মানুষের সাথে সৃষ্টিকর্তার সংযোগ  পদ্ধতি । যােগের তিনটি প্রধান পথ হল জ্ঞান যােগ , ভক্তি যােগ ও রাজ যােগ । ( ক্রিয়া যােগ রাজযােগের অন্তর্গত ।


***#যােগী


*#যিনি যােগ অভ্যাস করেন । যােগির সন্ন্যাসী হওয়ার প্রয়ােজন হয় না । যােগির একমাত্র করণীয় হল প্রত্যেক দিন বিশ্বস্ততার সংগে ঈশ্বর -উপলব্ধির জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করা ।


Post a Comment

0 Comments