Recent Posts

6/recent/ticker-posts

কুন্ডলিনী ও রাধা কৃষ্ণ তত্ত্ব M P 3

 



কুন্ডলিনী ও রাধা কৃষ্ণ তত্ত্ব


*#কুলকুণ্ডলিনী শক্তি ভালোভাবে বুঝতে গেলে রাধা - কৃষ্ণ তত্ত্বের যৌগিক ব্যাখ্যা জানা প্রয়োজন ।


*#আমরা শ্বাস প্রশ্বাস নিই , বহির্জগতের উত্তরায়ন এবং দক্ষিণায়ন আমাদের দেহের যথাক্রমে শ্বাস গ্রহণ এবং শ্বাস ত্যাগ । আয়ন শব্দ নপুংসক । মেরুদণ্ডের মধ্যস্থিত সুষুম্না নাড়ী আছে , যার একদিকে ইড়া এবং অপরদিকে পিঙ্গলা , যাদের মাধ্যমে শ্বাস - প্রশ্বাস ক্রিয়া চালিত হয়,  সুষুম্না নাড়ীর মধ্যে দিয়ে কুলকুণ্ডলিনী শক্তির যাতায়াতের পথ । এই কুণ্ডলিনী শক্তিই বৈষ্ণব শাস্ত্রের শ্রীরাধা । প্রতিটি চক্রই হচ্ছে বন । এক একটি বন পার হয়ে শ্রীমতি রাধা অর্থাৎ কুন্ডলিনী শক্তি চলেন কুঞ্জবনে ( সহস্রারে ) শ্রীকৃষ্ণের ( পরমাত্মা ) সাথে মিলনের জন্য ।


*#মহাশূন্যের মহানাদ ধ্বনি হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের বংশীধ্বনি । এই নাদধ্বনি যখন সাধক শুনতে পাবেন তখন তিনি তাঁর কুণ্ডলিনী শক্তি জাগ্রত হওয়ার অবস্থায় এসেছেন। পঞ্চচক্রের বা বনের সাথে জীবাত্মা এবং কুণ্ডলিনীর এক অভেদ্য সম্পর্ক । তাই পঞ্চাকাশ থেকে উথিত শব্দই বা ঘােষই রাধার স্বামী আয়ান ঘােষ ।


*#কূটস্থের নীচে ( আজ্ঞাচক্র ) প্রকৃতি অর্থাৎ খণ্ডকাল এবং কূটস্থের উপরে মহাকাল । মহাকালের অধিষ্ঠাত্রী দেবী কালী । তাই খন্ডকালের জীবদেহে প্রাণায়াম করে শ্বাস - প্রশ্বাস ক্রিয়ার উর্ধ্বে  অবস্থানই আয়ান ঘোষের কালী সাধনা । তাহলে আমরা পাচ্ছি জটিল এনং কুটিল মন সমম্বিত দেহ ( জটিলা মা ও ননদী কুটিলা ) , পঞ্চচক্রের রূপ , রস , গন্ধ , শব্দ , রুপ জ্ঞানের প্রবাহ আত্মস্থ করে ( আয়ান ঘোষ ) এবং পঞ্চবন অতিক্রম করে ( পঞ্চচক্র ) বংশীধ্বনি ( মহানাদ ) অনুসরণ করে কুঞ্জবনে শ্রীকৃষ্ণের ( পরমাত্মার ) সাথে মিলিত হচ্ছেন কুন্ডলিনী রাধা। 


*#এই দেহেই সর্বদেবদেবী , সবরকম অসুরাদি , সমস্ত তীর্থ এবং যজ্ঞকুন্ডাদি রয়েছে ।

মূলাধারের ব্রহ্মতীর্থে স্নান করে সাধক পৌছাবেন স্বাধিষ্ঠানের দেবদেবীদের স্থানে। এর পর মণিপুরে উচ্চস্তরের দেবদেবীদের স্থান দেবতীর্থে স্নান করে সাধক তার সকল কামনা বাসনা নাশ করবেন। এরপর অনাহতের নাদতীর্থ অতিক্রম করে পৌঁছে যাবেন শিবের দুয়ার হরিদ্বারে । হরিদ্বারে স্নান শেষে সাধন যাবেন মুক্তত্রিবেনী মানস তীর্থে অর্থাৎ বিন্দুসরোবর তীর্থে। বিন্দুসরোবরে স্নান করলেই সাধকের নির্বান লাভ হবে।

****#দশানন_রাবন


*#রাবন কুলকুণ্ডলিনী সাধনা করে দশমাত্রিক শক্তির অধীশ্বর হয়েছিলেন । অসুরেরা যে শক্তি আরাধনা করতেন একথা সর্বজন বিদিত । যােগবলে কুণ্ডলিনী শক্তির অধিকারী হতে পারলে অপূর্ব মায়াশক্তির অধিকারী হওয়া সম্ভব । এই রাক্ষসদের প্রত্যেককেই মায়াবী বলা হত এই কারণে যে , এরা যে কোন সময় লােকদৃষ্টি থেকে আড়ালে চলে যেতে পারতেন ।


*#দেহের মৌল শক্তিকে ( কুলকে ) যদি দশমাত্রিক অবস্থায় উত্তোলন করা যায় , তাহলে যে কোন লােক যে কোন মুহূর্তে অপরের দৃষ্টির কাছ থেকে উধাও হয়ে যেতে পারে । সাধারণ দৃষ্টিতে আর তাদের দেখা যায় না । এই ধরনের দশমাত্রিক ব্যক্তিও দশানন হিসেবে চিহ্নিত হতে পারেন ।


(রতন কর্মকার)

*ক্রিয়ায় যোগনিদ্রা


অবচেতনে সচেতন থাকাই যোগনিদ্রা।  যোগনিদ্রা আপনাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে পরিপূর্ণ  প্রশান্তি দেবে। যখন আপনি যোগ নিদ্রা অভ্যেস করবেন, তখন দেখে মনে হবে যেন আপনি ঘুমোচ্ছেন, আসলে কিন্তু সক্রিয় থাকবে আপনার অবচেতন মন।


যােগনিদ্রা ক্রিয়ার পরাবস্থায় যােগীরা জেগে থাকেন তা স্বপ্নং , যথা নিদ্রা। তা বিষয় ব্যাপার শূন্য বলে নিদ্রার মতই সাধারনের নিকট উপেক্ষিত। কিন্তু সাধারণ নিদ্রাতে স্বপ্নই হয়, তা একেবারে, ব্যাপার শূন্য নয়। যােগীদের যােগ নিদ্রায় এসব ব্যাপার কিছুই থাকে না। যােগসমাধিমগ্ন যােগী তাকিয়ে আছেন, তাঁর সামনে কত কান্ড হয়ে যায়, কিন্তু কিছুতেই তার মনকে চঞ্চল করে না। তিনি কাছের মানুষের বিপদ চোখে দেখছেন, অথচ মন তার নিষ্কম্প। যােগীদের এই অবস্থা যেমন সাধারণের নিকট রাত্রির মত, অর্থাৎ সাধারন মানুষ এর রহস্য কিছুই বুঝতে পারে না।  সাধারণ লােকে যখন তাদের গৃহকর্ম নিয়ে ব্যস্ত হয়, সে অবস্থাগুলােতেও যােগীরা উদাসীনের মত দেখেন মাত্র। আবার গভীর সমাধির মধ্যে তাও টের পান না।


উপনিষদে আছে—

“ যখন সম্যক দৃষ্টির প্রভাবে সমস্ত আত্মময় হয়ে যায়, তখন তিনি কাকেই বা দেখবেন এবং কিরূপেই বা দেখবেন। ক্রিয়া করে মন যখন নিশ্চল হয়ে যায়, তখন মনের মনন না থাকায়, আত্মদর্শনের বাধা কেটে যায়, তখন এমন এক আত্মমগ্ন অবস্থা ছাড়া অন্য অবস্থার উদয় হয় না।"


ক্রিয়ার পরাবস্থার প্রাথমিক অবস্থা তরলভাবাপন্ন, সুষুপ্তির তরলাবস্থা স্বপ্নের মত। এই অবস্থায় জড়াদি দৃশ্য না থাকলেও সূক্ষ্ম দৃশ্য থাকে। তাতে অনেক দর্শন শ্রবনাদি হয়। ক্রিয়ার পরাবস্থা গভীরতর হলে তা সুষুপ্তির মত। সুষুপ্তিতে যেমন মনের মনন থাকে না, সব অনুভব আচ্ছন্ন হয়ে যায়, তেমন ক্রিয়ার পরাবস্থা গভীর, গভীরতর ও গভীরতম, এই তিন প্রকারের হয়, এতেও মনের মনন থাকে না, তবে তা তমসাচ্ছন্ন নয়, জ্ঞানাচ্ছন্ন অবস্থা তাতে দৃশ্যাদি কিছুই থাকে না, কিন্তু আত্মার অনুভব থাকে,  পরে তাও থাকে না।  প্রথমটি সবিকল্প ও দ্বিতীয়টি নির্বিকল্প সমাধি। যােগী যােগনিদ্রায় জেগে থাকেন, তখন তার জাগ্রত অবস্থায় বিষয়গুলিকে স্বপ্নদৃষ্ট বস্তুর মত বােধ হয়। তার কিছু পরে যখন আমরা স্বপ্নের কথা ভুলে যাই। তারাও এই জগৎ ব্যাপারকে তেমনি ভুলে যান। সাংসারিক লাভালাভ প্রিয়ায়ি স্থিতপ্রজ্ঞের কাছে স্বপ্ন ব্যাপারের ন্যায় অলীক, সেইজন্য তাতে তিনি উদাসিন থাকেন। আর সাধারণ মানুষ যেখানে সমাধিনিদ্রাকে জড়বৎ বলে উপেক্ষা করেন, তখন কিন্তু স্থিতপ্রজ্ঞ পুরুষ সমাধি প্রজ্ঞাজনিত পরমানন্দে মগ্ন থাকেন।


যতক্ষন যােগনিদ্রা বা সমাধি না আসে ততক্ষণ খেচরী অভ্যাস করতে করতে যােগনিদ্রারূপ সমাধি উপস্থিত হবে। যােগনিদ্ৰাপ্রাপ্ত যােগীর কখনও  মৃত্যু হয় না।

*#বৃন্দাবন_লীলা


*#জীবাত্মা বহু আর*#পরমাত্মা এক । জীবাত্মা স্বরূপ গােপীগণ ( ভক্তগণ ) ও পরমাত্মা স্বরূপ স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ ভগবান । জীবাত্মা ও পরমাত্মা , ভক্ত ও ভগবানের যে স্থানে মিলন হয় সেই সন্ধিস্থানকেই শ্রীবৃন্দাবন বলা হয় । এখানে বিশুদ্ধ ও নিষ্কাম প্রেমানন্দের মেলা বা প্রাণে প্রাণে মেলা ।


***#হে জীবরূপী গােপীগণ ( ভক্তগণ ) তােমরা সদ্গুরুর কৃপায় চৈতন্যরূপ কৃষ্ণকে লাভ করে পরমানন্দ স্বরূপ ব্রহ্মানন্দে শ্রীবৃন্দাবন লীলা উপভােগ কর ।

Continue-28

*#রাধার_মানভঞ্জন 


***#রাধা পরা - প্রকৃতি অর্থাৎ ‘ শ্বাসের বহির্ভাগে আগম নিগমের কাৰ্য্য ’ - ইনিই রাধা পদবাচ্য ।


এই রাধা ’ ( বহিঃ প্রাণায়াম রূপ চঞ্চল প্রাণ ) স্থির প্রাণের অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের অধীন । রাধার সম্বর্ধনার দ্বারা অর্থাৎ  প্রাণের ( বহিঃ প্রাণায়ামের ) বৃদ্ধিকরণ রূপ অন্তর্মুখী প্রাণায়াম দ্বারা নিৰ্বাণ  প্রাপ্তি হয় , অর্থাৎ শরই ( চঞ্চলপ্রাণ ) বাণ ; বাণলিঙ্গ আত্মা ; চঞ্চল প্ৰাণবায়ু যা বাইরে চলে , তা স্থির প্রাণে অর্থাৎ ব্রহ্মযােনিতে মিলিত হয় । এটিই ‘ নিৰ্ব্বাণ ’ অর্থাৎ বাণ থাকে না ।


***#বাইরের প্রাণের আগম নিগম রহিত হয় , রাধিকার পদদ্বয় ( অর্থাৎ ইড়া পিঙ্গলা ) স্থির প্রাণরূপী শ্রীকৃষ্ণই ধারণ করেন । এটিই “ শ্রীরাধিকার মানভঞ্জন ” ।

*#শ্রীচৈতন্য_মহাপ্রভুর_অন্তর্ধানরহস্য


১৫৩৩ সালের ২৯ জুন গান গাইতে গাইতে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য ঢুকে ছিলেন পুরীর মন্দিরে৷ তারপর…… তারপর আর নেই ৷ এরপর আর কেউ নাকি মহাপ্রভুর দেখা পাননি ৷ তিনি বিলীন হলেন কোথায়? গৌরাঙ্গকে ঘিরে সেটাই তো রহস্য ৷


*#অনেকের ধারণা, ওই দিনই মাত্র ৪৮ বছর বয়েসে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর ৷ কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন, ওই দিনটিতেই কি তিনি খুন হন? আবার অনেকে তাঁর মৃত্যুর বদলে ‘অন্তর্ধান’ শব্দটাই ব্যবহার করতে চান, কারণ মহাপ্রভু তো সেই দিনটির পর থেকেই হারিয়ে গিয়েছিলেন৷ কেউ তো তাঁকে আর কখনও দেখতে পায়নি ৷ সেক্ষেত্রে তাঁর মৃত্যু অথবা অন্তর্ধান ঘিরে একটা অজানা ‘রহস্য’ বা ‘মিথ’, যাই বলি না কেন কাজ করেছে ৷ আশ্চর্যের কথা, ওই সময় থেকে সাড়ে চারশো বছর পরে সেই রহস্যই ভেদ করতে গিয়ে “কঁহা গেলে তোমা পাই” নামক চৈতন্য অনুসন্ধানী গ্রন্থের লেখক জয়দেব মুখোপাধ্যায়ও ১৯৯৫ সালের ১৭ এপ্রিল অস্বাভাবিকভাবে মারা যান ৷ অনেকে বলছে, জয়দেববাবুও নিহত হন। শ্রীচৈতন্য এবং জয়দেব মুখোপাধ্যায় দুই জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুই আসলে খুন বলে দাবি করছে দু’টি প্রবন্ধ ৷ একটি সম্প্রতি লেখা, অন্যটি বেশ কয়েক বছর আগের ৷ 


*#সম্প্রতি সপ্তডিঙা-জুন ২০১৬ সংখ্যায় তমাল দাশগুপ্ত লিখেছেন ‘চৈতন্য হত্যার অনুসন্ধানে’ নামে প্রবন্ধটি৷ অন্যটি বেশ কয়েক বছর আগের ৷ শারদীয়া আজকালে ‘চৈতন্য খুনের কিনারা করতে গিয়ে খুন’ শীর্ষক বিশেষ নিবন্ধ লিখেছিলেন অরূপ বসু ৷ শ্রীচৈতন্যেকে ঘিরে মিথ অনেক রকম ৷ যেমন, বর্তমানে পুরীর নীলাচল নামে যে অঞ্চল পরিচিত সেখানেই কৃষ্ণনাম জপতে জপতে সমুদ্রের দিকে হেঁটে চলে যান আর সেই পথেই বিলীন হন মহাপ্রভু । তারপর থেকেই ওই অঞ্চলের নাম নীলাচল। আবার শোনা যায় চৈতন্যদেব নাকি জগন্নাথের মূর্তিতে লীন হয়েছিলেন৷ আবার কেউ কেউ বলেন, নগর সংকীর্তনে বের হয়ে পথে তাঁর পায়ে ইটের আঘাত লেগেছিল৷ তার থেকেই সেপটিসিমিয়া, এবং মৃত্যু ৷ যদিও মন্তান্তরে বলা হয়ে থাকে ইটের টুকরো নয়, পায়ে কাঠি ঢুকে যাওয়াতেই সেপটিসিমিয়া, আর তার জেরে মৃত্যু ৷ কৃষ্ণের সঙ্গে মহাপ্রভুকে মিলিয়ে দিতে দুজনের মৃত্যুতেও মিল টানার একটা অভিপ্রায় রয়েছে এমন মিথ্যের পেছনে ৷ কারণ মহাভারতে ব্যাধের ছোঁড়া তীর লেগেছিল কৃষ্ণের পায়ে আর তার থেকেই মৃত্যু হয়েছিল যশোদা-নন্দনের ৷ 


*#কিন্তু উপরোক্ত দুটি প্রবন্ধই ইঙ্গিত দিয়েছে, শ্রীচৈতন্যদেবকে হত্যা করা হয়েছিল এবং সেটা পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের তৎকালীন পাণ্ডারা করেছিল৷ প্রবন্ধকারদ্বয়ের যুক্তি, ঈর্ষাবশত পুরীর পাণ্ডারা চৈতন্যকে হত্যা করেন গুণ্ডিচা মন্দিরের গরুড় স্তম্ভের তলায়। তারপর তাঁর নশ্বর দেহ মন্দিরেই পুঁতে দেওয়া হয় ৷ আর এই সত্য জানতে পারায় পরবর্তীকালে গবেষক জয়দেব মুখোপাধ্যায়কেও হত্যা করা হয়। প্রসঙ্গত স্বর্গদ্বারে এখন যে চৈতন্যমূর্তিটি দেখতে পাওয়া যায়, সেটাও জয়দেববাবুর উদ্যোগেই বসানো হয়েছিল ৷ শ্রীচৈতন্যের সংস্পর্শে কলিঙ্গের সেই সময়কার রাজা প্রতাপরুদ্র এতটাই আবিষ্ট হয়ে যান যে, তাঁর ওপর পুরীর পাণ্ডাদের প্রভাব কমে আসে ৷ মহাপ্রভুর মহিমায় রাজা ক্রমশ যুদ্ধবিরোধী হয়ে পড়ায় যুদ্ধবাজ এবং যুদ্ধের সরঞ্জাম বিক্রেতারাও অসুবিধায় পড়েছিল৷ তাছাড়া কালকূটের (সমরেশ বসু) ‘জ্যোতির্ময় শ্রীচৈতন্য’ উপন্যাসেও চৈতন্য হত্যার প্রসঙ্গ এসেছে বলে উল্লেখ করেছেন তমালবাবু ৷ 


*#তিনি প্রবন্ধটিতে আরও মনে করিয়ে দিয়েছেন, চৈতন্য হত্যা নিয়ে মালীবুড়ো (যুধিষ্ঠির জানা) “চৈতন্য অন্তর্ধান রহস্য” নামে একটা বই লিখেছেন৷ তাছাড়া আর বেশ কিছু গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দিতে দেখা গিয়েছে নিজ যুক্তির সমর্থনে ৷ অন্যদিকে, অরূপ বসুর প্রবন্ধটিতে প্রশ্ন তোলা হয়, জয়দেব মুখোপাধ্যায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু কেন আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হল? তাঁর অন্তর্তদন্তে ইঙ্গিত, ওই গবেষক পুরীতে খুনই হয়েছিলেন ৷ সেক্ষেত্রে তড়িঘড়ি ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে পুরো কেসটাই ধামাচাপা দিয়ে দেয় ওড়িশা পুলিশ ৷ 


*#আরও প্রশ্ন উঠছে এ কারণেই যে, প্রথমে সংবাদ মাধ্যমে গবেষক জয়দেব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর খবর বের হলেও পরবর্তী সময়ে সেই খবরের কোনও ফলো-আপ দেখা গেল না কেন? “কঁহা গেলে তোমা পাই” গ্রন্থটির প্রথম খণ্ড বের হলেও দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশের আগেই মারা যান জয়দেববাবু ৷ যদিও দ্বিতীয় খণ্ডের রসদ জোগাড় হয়ে গিয়েছিল তাঁর ৷ অরূপবাবুর প্রবন্ধ থেকেই জানা যায়, ১৯৭৬ সালের ৫ আগস্ট চৈতন্য গবেষক জয়দেব মুখোপাধ্যায়কে পাঠানো একটি চিঠিতে ডঃ নীহাররঞ্জন রায় লিখেছিলেন, “চৈতন্যদেবকে গুম খুন করা হয়েছিল পুরীতেই এবং চৈতন্যদেবের দেহের কোনও অবশেষের চিহ্নও রাখা হয়নি কোথাও। এবং তা হয়নি বলেই তিনটি কিংবদন্তী প্রচারের প্রয়োজন হয়েছিল।


*#এই বয়সে শহীদ হওয়ার ইচ্ছে নেই বলেই বলতে পারবো না, ঠিক কোথায় চৈতন্যকে খুন করা হয়েছিল।” আর নীহাররঞ্জন রায় যেটা বলতে চাননি, সেটা হল– জগন্নাথধামের মন্দিরের ভেতরেই চৈতন্যদেবকে হত্যা করা হয়েছিল এবং খুন করেছিল উড়ে পাণ্ডারাই। খোলাখুলি এমন বার্তাই দিয়েছিলেন সাহসী দুই প্রাবন্ধিক।

*#ভীষ্মের_শরশয্যার_ইতিহাস_ও_যৌগিক_ব্যাখ্যা


***#মহাভারতের যুদ্ধের শেষ ভাগে ভীষ্ম শরশয্যায় দীর্ঘদিন শায়িত ছিলেন । শ্রীকৃষ্ণের পরামর্শেই অর্জুন যুদ্ধের দশমদিনে সূর্যাস্তের কিছু পূর্বে শিখণ্ডীকে রথের সামনে বসিয়ে ভীষ্মের সম্মুখে আসেন

এবং শরনিক্ষেপে ভীষ্মের পতন ঘটান।


*#অর্জুনের শর নিক্ষেপের ক্ষিপ্রতা এতই তীব্র ছিল যে- ভীষ্মের শরীরের এক

ইঞ্চি পরিমাণ জায়গাও অবিদ্ধ ছিল না। দিনের শেষে ভীষ্ম রথ থেকে পড়ে যান। কিন্তু অসংখ্য শরবিদ্ধ থাকার কারণে ভীষ্মর শরীর মাটি স্পর্শ করলো না।

ফলে ইনি শরশয্যায় থেকে গেলেন।


*#এর আটদিন পর যুদ্ধের শেষ হলে-যুধিষ্ঠির রাজ্যলাভ করে অভিষিক্ত হলেন। এই সময় কৃষ্ণের পরামর্শে যুধিষ্ঠির শরশয্যায় শায়িত ভীষ্মের কাছে আসেন। সেখানে কৃষ্ণের অনুরোধে ভীষ্ম যুধিষ্ঠিরকে বিবিধ পরামর্শ দেন।


*#শ্ৰীকৃষ্ণকে দেখে ভীষ্ম বললেন, " হে জনার্দন, আমি পূর্ব জন্মে এমন কি পাপ করেছিলাম যে এই জন্মে এত বড় শাস্তি এত কষ্ট আমাকে ভোগ করতে হচ্ছে ?" 


ভগবান বললেন, " আপনি তো নিজেই পূর্ব জন্মের কথা স্মরন করতে পারেন, তাহলে আপনি নিজেই দেখুন না আপনি পূর্ব জন্মে কি পাপ করেছিলেন?" ভীষ্ম বললেন, " আমি তো দেখতে দেখতে গত ১০০ জনমের কর্ম দেখে ফেলেছি, কিন্তু এই ১০০ জনমের মধ্যে আমি এমন কোনো কর্ম করিনি যেটাতে আমি এত বড় শাস্তি পেতে পারি । " 


*#ভগবান বললেন, " আপনি কৃপা করে এই ১০০ জনমের ঠিক একটি জনম আগে দেখুন (অর্থাৎ ১০১ নং জনম), উওর আপনি পেয়ে যাবেন।" তখন পিতামহ ভীষ্ম চোখ বন্ধ করে ধ্যান পূর্বক দেখতে লাগলেন- ঐ জনমে তিনি একজন খুবই ধার্মিক রাজা ছিলেন। একদিন তিনি বিশাল সৈন্যদল নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। পথের মাঝে একটি সাপ এসে তাদের যাত্রায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।এক সৈনিক এসে বললো, " মহারাজ, একটি সাপ রাস্তার মাঝে বসে আছে, কি করবো? " রাজা বললেন, " তুমি সাপটিকে একটি লাকড়িতে বেঁধে পাশের জঙ্গলে ফেলে দাও।" সৈনিক তাই করলো, কিন্তু সাপটি জঙ্গলে একটি বিশাল কাঁটার ঝোপের মধ্যে আটকে গিয়ে প্রচন্ড যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে অবশেষে পাঁচদিন পর মারা গেল। 


*#পিতামহ ভীষ্ম তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে বললেন, দেখলাম আমার পাপ কর্ম, কিন্তু আমিতো সাপটিকে বাঁচানোর জন্য জঙ্গলে ফেলেদিয়েছিলাম, নাহলে তো সাপটি আমার রথের চাকার নীচে চাপা পরেই মারা যেতো।" ভগবান বললেন, " কিন্তু আপনিতো ঐ সাপটির কি পরিনতি হলো তা একবারও ফিরে দেখলেন না বা ঐ সাপটিকে বাঁচানোর চেষ্টাও করেন নি, তাই আজ আপনার এই পরিনাম। অথচ আপনার পুন্য কর্ম এত বেশী ছিল যে গত ১০০ জনমেও আপনি কোন পাপের ফল ভোগ করেন নি। " 


*#শরশয্যায় মোট আটান্ন দিন থাকার পর ভীষ্ম মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের অষ্টমী তিথিতে যোগযুক্ত হয়ে ইচ্ছামৃত্যু গ্রহণ করেন। 


এই শরশয্যা আসলে সংসার শরশয্যা । সংসার তাে প্রতিনিয়তই আমাদের বিদ্ধ করছে ।

ভীষ্ম দক্ষিণায়ণে শরবিদ্ধ হয়েছিলেন কিন্তু উত্তরায়ণ না  হলে প্রাণত্যাগ করবেন না বলে অপেক্ষা করতে লাগলেন । অর্থাৎ তার বক্তব্য এই যে , শীতকালে মৃত্যু হলে স্বর্গপ্রাপ্তি ঘটবে না । গ্রীষ্মকালে মৃত্যু হলে স্বর্গ প্রাপ্তি ঘটবে । তা হলে পৃথিবীতে কোন সাধকের কি শীতকালে মৃত্যু হয়নি? যদি হয়ে থাকে তবে  কি তাঁরা নরকে গিয়েছেন? 

এই সঙ্গত প্রশ্ন অনেকের মনেই আসতে পারে। দক্ষিণায়ণে থাকা কালে নিশ্চয়ই বহু সাধকের মৃত্যু হয়েছে । সুতরাং তারা নরকে গেছেন এমন হতে পারে না । আসলে এ গল্পও একটি রূপক গল্প । দক্ষিণায়ণ অর্থ অবতরণ। মানুষের সহস্রারের ব্রক্ষ্মরন্ধ্র

থেকে মূলাধারে অবতরণ।  অর্থাৎ এটি হল সংসার জীবন যাপনের পথে মােক্ষের বিপরীত দিকের পথ অর্থাৎ অবতরণের পথ । হিন্দুদের ক্ষেত্রে এই অবতরণের পথ মূলত চতুরাশ্রমের  গার্হস্থ্যশ্রমের পথ। ব্রহ্মচর্যাশ্রমে জীবনকে সংসার এবং মােক্ষ দুইয়ের জন্যই তৈরি করা হয় । গার্হস্থ্যশ্রমের সংসার জীবন যাপন করা হয় । বানপ্রস্থাশ্রমে ধীরে ধীরে সংসার ত্যাগের প্রস্তুতি হয় । সন্নাসাশ্রমে সংসার থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি দেওয়া হয় ।


*#কুলকুণ্ডলিনীর অবতরণের পথ সংসারের পথ । উত্তরণের পথ অর্থাৎ ব্রহ্মমুখী হবার পথ, মােক্ষের পথ । ভীষ্ম উত্তরায়ণে মৃত্যুর ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন এই অর্থে যে , সংসার জীবনের চতুর্থাশ্রম যথাযথ পালনের পর তবে তিনি দেহ রক্ষা করবেন । অর্থাৎ কুলকুণ্ডলিনীকে ব্রক্ষ্মরন্ধ্রে নিয়ে গিয়ে প্রাণত্যাগ করবেন । এই দক্ষিণায়ণ ও উত্তরায়ণ হিন্দুদের চতুরাশ্রমের অঙ্গীভূত অর্থাৎ সংসার জীবনের কাল ও মােক্ষলাভের কাল । সূর্যের দক্ষিণায়ন বা উত্তরায়ণের সঙ্গে তার কোন যােগ নেই । কুলকুণ্ডলিনীর বিপরীত চলনই  উত্তরায়ণ । মানুষের মস্তিষ্ক হল দেহের উত্তর দিক । কুলকুণ্ডলিনীর তেজই সূর্য । 


*#উত্তরায়ণের যে সুর্যের কথা ভীষ্ম বলেছিলেন তা প্রাণসূর্য অর্থাৎ  কুলকুণ্ডলিনী । সংসারের পথে এর  বিপরীত গতিই উওরায়ণ অর্থাৎ সংসারের উল্টোপথে  প্রাণশক্তিকে প্রবাহিত করা ।


কলমে-

রতন কর্মকার

Continue-29

***#হোম_যজ্ঞের_সুফল


*#হোম যজ্ঞ করলে মানুষের বুদ্ধি ও প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখে।

তাই ৩৩ প্রকারের দেবতার মধ্যে সর্ব শ্রেষ্ঠ দেবতা অগ্নি।

অগ্নি দেবতার মাধ্যমে ৩৩ কোটি দেবতার পূজা ও উপাসনা করা হয়।

*#কোটি কথার অর্থ বিভিন্ন প্রকার , দেবতা দুই প্রকার চেতন দেবতা ও জর দেবতা।

পিতা মাতা আচার্য ঋষি মহর্ষি এই তিন প্রকার চেতন দেবতা।


বাকি সব জর দেবতা। বেদ মন্ত্রে ৩৩ প্রকারের দেবতার উল্লেখ আছে ।

*#দেবতা তাদের কে বলা হয়, যাদের দেওয়ায় একমাত্র ব্রত বিনিময়ে কিছু নেয়না ।

৩৩ প্রকারের দেবতার নাম , ৮ বসু + ১১রুদ্র+১২মাস+এক ঈশ্বর+এক হোম বা যজ্ঞ ।


*#বসু কাকে বলা হয়, যার মধ্যে কিছু না কিছু অনু পরমানু বা জীবাণু বাস করে সেই স্থান কে বসু বলা হয়।

৮বসুর নাম , অগ্নি, আকাশ, বায়ু,জল, মাটি, সূর্য,চন্দ্র, নক্ষত্র।

১১ রুদ্র কাহাকে বলা হয়, যাহার দ্বারা রোদন হয়,

শুখ ও দূংখ্য , শান্তি ও অশান্তি , জন্ম ও মৃত্যু ঘটায়,  দুই ঐ অনুভব হয়, তাহাই রুদ্র মানেই মানবশরীরের ইন্দ্রিয় গুলো কে রুদ্র বলা হয়।

৫ প্রকার জ্ঞান ইন্দ্রিয়+ ৫প্রকার কর্ম ইন্দ্রিয়+ এক মন।

জ্ঞান ইন্দ্রিয় নাম, চোখ,কান, নাক, জিহ্বা,ও ত্বক।

কর্ম ইন্দ্রিয় নাম , হাত,পা,পেট, লিঙ্গ,ও পায়ুছিদ্র।

আর এক হচ্ছে মন, যে মানবশরীরের চালক ।


*#আর বছরের ১২মাস সবার দেবতা প্রতি মাসের নাম তো সবার জানায় আছে।

আমরা প্রতিদিন প্রতি মাসে শুখ, দুঃখ অনুভব করি, তাই প্রকৃতির ১২ মাস আমাদের দেবতা।


*#একই দেবতা ওম্ ঈশ্বর , সচ্চিদানন্দস্বরুপ, নিরাকার, সর্বশক্তিমান, ন্যায়কারী, দয়ালু, অজন্মা, অনন্ত, নির্বিকার, অনাদি, অনুপম, সর্বাধার, সর্বেশ্বর, সর্বব্যাপক, সর্বান্তর্যামী, অজর, অমর, অভয়, নিত্য, পবিত্র, ও যিনি এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টিকর্তা যে সমস্ত কিছু সৃষ্টি ও জগৎ সংসার রচনা করেছেন। সেই পরমপিতা পরমেঈশ্বরের নিজ নাম ও৩ম্ দেবতা।


*#আর এক দেবতা ব্রহ্ম যজ্ঞ , বা অগ্নি হ্রোত বা হোম বা হবন।

তা হলে হয়ে গেল ৩৩কোটি দেবতার নাম ও কর্ম উল্লেখ।

আপনি আগুন বা তাপের মাধ্যমে যেমন খুশি আপনার বুদ্ধি দিয়ে খাদ্য খাবার ব্যবহারিক জিনিস পত্র তৈরি ও নির্মাণ এবং ধংস করতে বা ধর্ম কর্ম করতে পারবেন।

তাই কর্ম যজ্ঞ যেমন কর্ম তেমনি ফল। তাই প্রত্যেক টি  জীব মাত্রই সবাই আপন আপন কর্মফল ভোগ করছে।

তাই মানুষ আমিই আত্মা শরীর ত্যাগ করলেই শরীর হয়  জ্বর পদার্থ , পঞ্চ ভৌতিক দ্বারা প্রকৃতিতে নিরাকার হয়ে যায় । 

তাই শরীর প্রকৃতি মায়ের থেকে উৎপত্তি আবার সেখানেই বিলিন হয়ে যায়।

মানব জীবাত্মা তার কর্ম অনুযায়ী চৌরাশি লক্ষ যোনি ভেদ করতেই হবে।

*#চৌরাশি লক্ষ যোনি কথার অর্থ , চতুর দিকে রাশ করা জন্ম স্থান , লক্ষ কথার অর্থ দৃষ্টি বা নিশানা,

কর্ম দ্বারা ঐ লক্ষ স্থান কে প্রাপ্তি করা কে ভেদ বা ভ্রমণ করা বলে।


*#চার বেদ ঈশ্বরীয় জ্ঞান বিজ্ঞান বিদ্যা বুদ্ধি বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সমস্তকিছুর সৃষ্টির সংবিধান মানব মাত্রই পৃথিবীতে এই ধর্মবিধান দেওয়া আছে বেদে।

তাই মহর্ষি বলেছেন , তর্ক ময় জীবন , বুদ্ধি দিয়ে জ্ঞান গুণ সাগর তর্ক মন্থন করে সত্যার্থ প্রকাশ জ্ঞান অমৃত সনজ্ঞিবনী মহা ঔষধ পাওয়া যায়।

🙏🙏🙏

***#দিব্য_দৃষ্টি 


*#মানুষের আজ্ঞা চক্র জাগরিত হলে দিব্য দৃষ্টি নামক সিদ্ধিটি জাগরিত হয়। দিব্য দৃষ্টি পেলে সেই যোগী মানুষের মনের কথা জানতে পারেন, মানুষ কে দেখেই তার অতীত ,বর্তমান,ভবিষ্যৎ, এর কথা জানতে পারেন। যোগী ঘরে বসেই স্পষ্ট দেখতে পান যে আমেরিকাতে কি হচ্ছে, স্বর্গ লোক, নরক লোক, বিভিন্ন লোক গুলি কেমন তা সবই জানতে পারেন , স্পষ্ট দেখতে পান।


*#আমরা সাধারণ মানুষ ভেবে থাকি যে এইগুলো বিরাট কোনো চমৎকার, কিন্তু এগুলো যোগী দের জন্য সাধারণ ব্যাপার। রামকৃষ্ণ, সাধক বামাক্ষেপা, উড়িয়া বাবা, ভূতনাথ বাবা, ওনারা সবাই বিভিন্ন প্রকার সিদ্ধি পেয়েছেন। তবে যোগীরা সিদ্ধি পাবার লোভ নিয়ে যোগ সাধনা করেনা, তারা নিষ্কাম নিঃস্বার্থ কর্মযোগ পালন করেন। যোগী দের ধর্ম আর কর্তব্য হলো যোগ সাধনা করা, আর তারা তাদের কর্ম করে।


*#কিন্তু কিছু কিছু যোগী সিদ্ধি লাভ করে অহঙ্কারী হয়ে ওঠে, কিংবা নিজের সিদ্ধির অপপ্রয়োগ করে,কারণ সবাই সমান হয় না।তাই সেই সব যোগীরা তাদের পাপের প্রভাবে অধ:গতি প্রাপ্ত হয়।

*#কাজী_নজরুল_ইসলামের_কালী_সাধনা_ও_শ্যামাসঙ্গীত


***#বিংশ শতাব্দীর প্রাক্কালে এক নতুন ধারার শাক্ত সঙ্গীত বাংলায় নিয়ে এলেন কাজী নজরুল ইসলাম। শ্যামাকে কাজী নজরুল ইসলাম আত্মসচেতন, নিরহংকারিণী, শুভ-চিন্তার উদ্রেককারিণী , অশুভনাশিনী, আমিত্ববিনাশিনী ইত্যাদি গুণধারিণী হিসেবে দেখিয়েছেন। কখনো তিনি সর্বধর্মে সমন্বয় ঘটান, শ্যামারূপে প্রতিফলিত হয় শ্যামল দেশ, কখনো বা তিনি আসেন সমাজতন্ত্রের রূপকার হয়ে। নজরুল বাংলাগানের সমৃদ্ধ পটভূমিতে শ্যামাকে বিশেষভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন কালোরূপে বিশ্বরূপা রূপে, তাঁর পায়ের তলায় আলোর নাচন দেখিয়েছেন, যে আলোর ঝলকে রুদ্র শিবও পরাস্ত যাঁর হাতে আছে বিশ্বের মরণ-বাঁচন।


*#শ্বেতাঙ্গ_শাসকদের বিনাশিনীরূপে অবতীর্ণা মহাকালীর বীরত্বের কাছে হার মানার প্রতীক হিসেবে বাংলার শোষিত জনগণের বীরত্ব ও আন্দোলনকে নির্দেশ করেছেন নজরুল। মায়ের দিগবসনা হওয়ার ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন এক নতুন ভাবে-


"সিন্ধুতে মা'র বিন্দুখানিক, ঠিকরে পড়ে রূপের মাণিক,

বিশ্বে মায়ের রূপ ধরেনা, মা আমার তাই দিগবসন।"


১৯২৬ সালে ম্যালেরিয়া প্রাদুর্ভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বিদ্রোহী কবি। সেই সময় আর্থিক সঙ্কটেও ভুগছিলেন তিনি। সে কথা জানতে পেরে তাঁকে হুগলি থেকে কৃষ্ণনগরে এনে নিজের বাড়িতে রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন নদিয়ার তৎকালীন এমএলসি (লেজিসলেটিভ কাউন্সিল সদস্য) ও বিশিষ্ট বিপ্লবী হেমন্ত সরকার। কৃষ্ণনগর শহরের উত্তর প্রান্তে গোলাপটিতে নিজেদের বাড়িতে কবিকে সপরিবারে থাকতে দিয়েছিলেন তিনি। আর সেখানে থাকার সময়েই কাজী নজরুল ইসলাম ওই বছর কালী পুজো করেছিলেন। হেমন্ত সরকারের ভাইপো নদিয়া জেলার প্রাক্তন বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) ও বর্তমানে ৮৮ বছরের বৃদ্ধ গৌরীশঙ্কর সরকার কয়েক বছর ধরেই স্থানীয় পত্র পত্রিকায় বিভিন্ন স্মৃতিকথা শোনাতে গিয়ে এ পুজোর কথাও একাধিক বার লিখেছেন। কিন্তু এত দিন গৌরীশঙ্করের সে লেখায় নেটিজেনদের চোখ সে ভাবে না পড়লেও এ বার সে তথ্যের সত্যতা খুঁজতে মাঠে নেমেছেন অনেকেই।


*#গৌরীশঙ্কর বলেনন, 'ন'কাকা হেমন্ত সরকার আমাদের গোলাপটির চন্দ্রনাথ ঘোষ লেনের বাড়িতে কবিকে এনে রেখেছিলেন। ওই বছর কোনও এক অমাবস্যায় বাড়িতে কালীপুজো আয়োজন করেছিলেন কবি। লালগোলার যোগাচার্য বরদাকান্ত মজুমদারকে দিয়ে পুজো করিয়েছিলেন। সে পুজোয় লুচি-ফুলকপি, বেগুন ভাজার ভোগ হয়েছিল। পংক্তিভোজনে সেই সময়ের স্বদেশী ভাবনার বিশিষ্ট মানুষেরা প্রসাদ পেয়েছিলেন। যার মধ্যে দুই প্রাক্তন মন্ত্রী তথা দুই বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী স্মরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অমৃতেন্দু মুখোপাধ্যায়ও ছিলেন।' বর্ষীয়ান গৌরীশঙ্কর এমন স্মৃতিকথা স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় একাধিকবার লিখেছেন। তিনি বলেন, 'স্বাধীনতা সংগ্রামী ও প্রাক্তন মন্ত্রী স্মরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আরেক স্বাধীনতা সংগ্রামী অনিল চক্রবর্তীর কাছে আমি কবির কালীপুজোর গল্প অনেকবার শুনেছি। আমার জন্ম ১৯৩২ সালে হলেও বিভিন্ন সময়ে আমার মেজদিদি সাবিত্রী ও মা মৃণালিনী দেবীর কাছেও ১৯২৬ সালের সে পুজোর গল্প অনেকবার শুনেছি।'


*#অজিত দাসের লেখা 'কাজী নজরুল ইসলাম: এক অজ্ঞাত পর্ব' বইয়েও কবির এমন পুজো করার প্রসঙ্গ উল্লেখ আছে। তাঁর এ বইয়েও উল্লেখ আছে, স্বাধীনতা সংগ্রামী অনিল চক্রবর্তী কবির কালীপুজোর প্রসাদ পেয়েছিলেন বলে লেখককে তথ্য দিয়েছিলেন। 


ড. বাগচীর অসুস্থ নজরুল সম্পর্কের কথা এখানে তার ভাষায় হুবহু তুলে ধরা হলো। ‘‘নজরুলের অসুস্থতার লক্ষণ যখন প্রথম প্রকাশ পায় তখন বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়া হয় নাই। বিশেষ করে তার স্ত্রী প্রমিলা নজরুল যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন (১৯৩৭ইং) তখন দেখা যায় নজরুল হঠাৎ ‘কালী সাধনা' শুরু করেছেন। অনেকেই এটাকে ধরে নেন তার মানসিক বৈকল্য হিসাবে। গেরুয়া পোশাক আর মাথায় গেরুয়া টুপি ছিল তার তখনকার পরিধেয় বস্ত্র।সেই সময় তিনি মাঝে মাঝে গ্রামোফোন কোম্পানিতে গান গাওয়ার সময় একটু আধটু বেসুরো হতে থাকেন। অবশ্য ধরিয়ে দিলে ভুল বোঝেন এবং সংশোধনের চেষ্টাও করেন। কিন্তু পুরোপুরি অসুস্থ হবার পর (১৯৪২ইং) তিনি সব কিছুর বাইরে চলে যান। কোনো কিছুই আর ঠিকমত ধরে রাখতে পারেন না। এরূপ লক্ষণ তার সে সময় প্রকাশ পায়। ড. অশোক বাগচী আরো বলেছেন, বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম অসুস্থ ও বাকশক্তি রুদ্ধ হবার পর হতে কোনো চশমাধারী লোককে কখনই সহ্য করতে পারতেন না। চমশাধারী লোক তার সম্মুখে উপস্থিত হলে তৎক্ষণাৎ উত্তেজিত ও অস্বস্তি বোধ করতেন। ড. অশোক বাগচীর ধারণা নিশ্চয়ই কোনো চশমাধারী লোকই সে সময় তার বড় ধরনের ক্ষতি করে দিয়েছিল। যা তার মস্তিষ্কের মধ্যে স্থায়ীভাবে দাগ কেটে দেয়। ড. বাগচী নজরুলের অসুস্থতার অন্য সমস্ত কারণকে অস্বীকার করে একথা বলেছেন যে, কবির ‘স্নায়ুবিক বৈকল্য' সম্পর্কে ডা. বিধান চন্দ্র রায়ের চিকিৎসার মতামতটাই যথার্থ ছিলো বলে তিনি মনে করেন। তখন তাকে ভারতের রাচী ও বিহারের মধুপুরে পাঠানো এবং অন্যান্য মানসিক চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রয়োগ তার অসুস্থতাকে বাড়তেই সাহায্য করেছে বলে তিনি মনে করেন।


*#রাজশাহী জেলার সীমান্ত থেকে বেশি দূরে নয়, পদ্মার অপর পারে মুর্শিদাবাদ জেলায় নিমতিতা নামে একটি গ্রাম আছে। এখানে নজরুল, জানি না ঠিক কিভাবে, বরদাচরণ মজুমদার (বিখ্যাত ক্রিয়াযোগী) নামে এক ব্যক্তির সাথে পরিচিত হন। এই বরদাচরণ ছিলেন কালী সাধক। বরদাচরণ নজরুলকে বলেন, তিনি যদি তার কথা মতো কালী সাধনা করেন, তবে তিনি তার রোগ থেকে মুক্ত হবেন। নজরুল বরদাচরণ মজুমদারের পদ্ধতি অনুসারে কালী সাধনা শুরু করেন।  রোগটি চিকিৎসার জন্য তখন একটি ওষুধ ছিল, যাকে ইংরেজিতে বলা হতো, ৬০৬। তখনো কোনো অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কৃত হয়নি। কিন্তু নজরুল ধরেই নেন চিকিৎসকরা তার অসুখ সারাতে পারবেন না। রোগ সারবে অধ্যাত্ম পদ্ধতিতে। আর বরদাচরণ জানেন সেই পদ্ধতি। নজরুল কেবল কালী সাধনায় প্রমত্ত হন না, রচনা করেন অনেক শ্যামাসঙ্গীত। 

লেখেন,


"শ্যামা তোর নাম যার জপমালা

তার কি মা ভয় ভাবনা আছে।

দুঃখ অভাব রোগ শোক জরা

লুটায় তাহার পায়ের কাছে॥"


*#নজরুলের এই আধ্যাত্মিক বিবর্তন অনেককেই বিস্মিত করেছিল। কেননা যে কবি একদিন লিখতে পেরেছিলেন,


"বল বীর

বল উন্নত মম শির

শির নেহারি আমারি, নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রির!

বল বীর-

বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি

চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি

ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া,

খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া

উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব-

বিধাত্রীর!"


*#নজরুলের একটি গানেই হয়ত কালীকে বিভিন্নরূপে তিনি দেখছেন :


'আজই না হয় কালই তোরে কালী কালী বলবে লোকে।

(তুই) কালি দিয়ে লিখলি হিসাব কেতাব পুঁথি, শিখলি পড়া,

তোর মাঠে ফসল ফুল ফোটালো কালো মেঘের কালি-ঝরা।

তোর চোখে জ্বলে কালির কালো, তাই জগতে দেখিস আলো

(কালী)-প্রসাদ গুণে সেই আলো তুই হূদ-পদ্মে দেখবি কবে?'


এই গানে 'কালী' শব্দটিকে গুরুত্ব প্রদান করে দেশপ্রেমের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন কবি। কালি অর্থে বিদ্যার আধার কলমের কালি, কালী অর্থে দেবী মহামায়া, ভূমি ও স্বদেশ আবার কালি অর্থে জল- জীবন ও জীবিকার উপাদান। 


*#নজরুল দ্রুত জনপ্রিয় হয়েছিলেন হিন্দু-মুসলিমে বিভাজিত সে সময়কার ভারতীয় সমাজে। মুসলিম হওয়ার কারণে হিন্দুদের একটা শ্রেণী নজরুলকে বিজাতি মনে করত। ঠিক একইভাবে একশ্রেণীর মুসলমান নজরুলকে বিজাতি ঘোষণা করেছিল, কারণ ছিল হিন্দু ধর্মের প্রতি নজরুলের আগ্রহ। কিন্তু এত বিরোধিতার মধ্যেও দিগভ্রষ্ট না হয়ে তিনি ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রেখেছেন, মনেপ্রাণে থেকেছেন শুধু 'মানুষ' হয়ে। তৎকালীন ভারতবর্ষের অবস্থা উত্তাল, একদিকে বিশ্বযুদ্ধ আর অন্যদিকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রস্তুতি। বিশ্বময় পুঁজিবাদী দেশগুলোর আগ্রাসন শুরু হয়েছিল। এমন উত্তাল সময়ে প্রতিবাদই ছিল নজরুলের একমাত্র ভাষা। সে সময় 'শাক্তদর্শন' ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল নজরুলকে। কিন্তু নজরুলের কবিতা ও গানে মা এলেন শ্বেতাঙ্গ অসুর-রাজের বিরুদ্ধে ভারতের যুব-রক্ত টগবগিয়ে ফুটিয়ে তুলতে, শক্তিদায়িনী, ত্রাণকর্ত্রী-রূপে। ধুমকেতুর পত্রিকায় সন্তানবৎসলা শ্যামা মাকে তিনি আবাহন করলেন নতুন রূপে, নব-ভূমিকায়-


"আর কতকাল রইবি বেটি, মাটির ঢেলার মূর্তি-আড়াল?

স্বর্গকে আজ জয় করেছে অত্যাচারী শক্তি চাঁড়াল।

দেব-শিশুদের মারছে চাবুক, বীর যুবাদের দিচ্ছে ফাঁসি-

ভূ-ভারত আজ কসাইখানা, আসবি কখন সর্বনাশী?”


*#বলা বাহুল্য, এই আস্ফালন অত্যাচারী শাসকদের সহ্য হয়নি। ধূমকেতুর প্রকাশ রাজ আদেশে বন্ধ হল, প্রেপ্তার হলেন নজরুল। তবে নজরুলের শক্তিসাধনা এখানেই থেমে থাকল না। তাঁর আকুল আহ্বান এবার ‘পূজা-বিলাসে’র বিরুদ্ধে। তাঁর সাধনা চিন্ময়ী মায়ের জন্যে তিনি লিখেছিলেন,


"হৃদয়ে তুমি মা ভক্তি, বাহুতে তুমি মা শক্তি,

তোমারি প্রতিমা গড়ি মন্দিরে মন্দিরে।”


নজরুল আগমনী লিখলেন নতুন ভাবধারায়-


"মাগো চিন্ময়ী রূপ ধরে আয়।

তোর মৃন্ময়ী রূপ পূজেছি মা দুর্গা, তাই

দুর্গতি আর ঘুচল না হায়......

মন্দিরে দুর্গে রহে না যে বন্দী,

সেই দুর্গারে এই দেশ চায়।।


আমাদের দ্বিভূজে দশভুজা শক্তি

দে ব্রহ্মরূপময়ি!

এই শক্তিপূজার ফল ভক্তি কি পাবই শুধু-

হবনা কি বিশ্বজয়ী?”


এই চিন্ময়ী দেবীর উদ্দেশে তিনি আরো লিখলেন-


"এবার নবীন মন্ত্রে হবে জননী তোর উদ্বোধন।

নিত্যা হয়ে রইবি ঘরে হবে না তোর বিসর্জন!

...(মোরা) এক জননীর সন্তান সব জানি

ভাঙব দেয়াল ভুলব হানাহানি।

দীন-দরিদ্র রইবে না কেউ, সমান হবে সর্বজন।

বিশ্ব হবে মহাভারত নিত্য প্রেমের বৃন্দাবন।”


*#নজরুলের শ্যামা যে নিছক মৃন্ময়ী নন, তিনি মূর্তিমতী চিদ্‌শক্তির আধার। তাই বিজয়ার গানে কবি গাইলেন-


"যাসনে মা ফিরে যাসনে জননী, ধরি দুটি রাঙা পায়,

শরণাগত দীন সন্তানে ফেলে রাখি ধরার ধুলায়।

......আজও মরেনি অসুর, মরেনি দানব,

ধরণীর বুকে করে তাণ্ডব।

সংহার নাহি করি সে অসুরে কেন যাস বিজয়ায়?”


*#হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী মতে, চণ্ডী বা দুর্গাদেবীরই একটি বিশেষ রূপ হল ‘কালী’ বা শ্যামা। বৌদ্ধ বজ্রযান তন্ত্রসাধনায় হয়ত এর ডাকিনী-যোগিনী রূপ ছিল, চণ্ডীতে মুণ্ডমালিনী দিগ্‌বসনা যুদ্ধরতা ‘শ্যামা মা’ রূপে যাঁর রূপের আলংকারিক ব্যাখ্যা নজরুল তাঁকে এক অনন্য ভাবে এঁকেছেন-


"......মা গো, তোমাকে না পেয়ে লোকে লোকে

যে অশ্রু ঝরেছে মোর চোখে,

সেই আঁখিজল জবাফুল হয়ে শোভা পেতে ওই চরণে চায়।।

মা গো, কত অপরাধ করেছিনু বুঝি, সংহার করি সে অপরাধ,

বল লীলাময়ি মিটেছে কি তোর মুণ্ডমালিকা পরার সাধ?

যে ভক্তি পায়নি চরণতল, আজ কি তা হল গঙ্গাজল!

মোর মুক্তির আশা মুক্তকেশী গো

এলোকেশ হয়ে পায়ে লুটায়।।"


*#নজরুলের শ্যামাসঙ্গীত জনপ্রিয় হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল, আবেগের গভীরতা। কেউ কেউ মনে করেন, নজরুল হৃদয়ের গভীর থেকে শ্যামার প্রতি ভক্তি নিবেদন করেছিলেন। আর সে ভক্তি সাকার হয়েছিল তার গানের ভাষাতে। তিনি লিখেছিলেন-


"ভক্তি, আমার ধুপের মত,

ঊর্ধ্বে উঠে অবিরত।

শিবলোকের দেব দেউলে,

মা’র শ্রীচরণ পরশিতে।”


*#শ্যামাসংগীতে নজরুলের অবদান সম্পর্কে ডক্টর করুণাময় গোস্বামী লেখেন, 'শ্যামাসংগীত রচয়িতারূপে রামপ্রসাদ সেন বা কমলাকান্ত ভট্টাচার্য সাংগীতিক নান্দনিকতায় যে স্তরে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন, নজরুল তদপেক্ষা উচ্চস্তরে পৌঁছেছিলেন। কেননা, কবি ও সুরস্রষ্টারূপে তিনি পূর্ববতী সংগীতরচয়িতাদের চেয়ে মহৎ প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। সে পরিচয় তিনি অত্যন্ত গভীরভাবে রেখেছেন তাঁর গানে।’


*#নজরুলের হাতে শ্যামাসঙ্গীতের ভাণ্ডার পূর্ণ হয়েছে। শক্তির দেবী কালীকে একদিকে যেমন তিনি লোলরসনা রণরঙ্গিনী মূর্তিতে আহবান করেছেন, অন্যদিকে তাঁকেই কখনো স্নেহময়ী জননী আবার কখনও বা দুরন্ত উচ্ছলা কন্যারূপে কল্পনা করেছেন।


"এক হাতে মোর পূজার থালা ভক্তি শতদল,

আরেক হাতে ক্ষীর-নবনী কী নিবি তুই বল?”


অন্যত্র স্নেহভরে লিখেছেন-


"আমার কালো মেয়ে রাগ করেছে, তারে কে দিয়েছে গালি?

রাগ করে সে সারা মুখে মেখেছে আজ কালি।।”


*#কবি নজরুল কালী আর রাসবিহারী কৃষ্ণে কোনো তফাৎ দেখেননি। রাম-রহিমকে একভাবে দেখা সমদর্শী এই সাধক যে শ্যাম আর শ্যামার মধ্যে ভেদ করবেন না তা বলাই বাহুল্য।


"শ্যামা মায়ের কোলে চড়ে জপি আমি শ্যামের নাম।

মা হলেন মোর মন্ত্রগুরু, ঠাকুর হলেন রাধা-শ্যাম।।

আমার মনের দোতারাতে শ্যাম ও শ্যামা দুটি তার,

সেই দোতারায় ঝঙ্কার দেয় ওঙ্কার রব অনিবার।।”


*#নামজপ এবং সহজিয়া সাধনাকে যে নজরুল অবহেলা করেননি তার উল্লেখ অন্তত: একটি গানে যার মধ্যে তাঁর সূক্ষ্ম রসবোধের পরিচয় পাওয়া যায়. এখানে ভক্ত যেন শিশুর সারল্যে মায়ের অঙ্কে (কোলে) বসে অঙ্ক, অর্থাৎ গণিত নিয়ে খেলা করছে.


"আমার আর কোনো গুণ নেই মা

তোমার নামের নামতা গোনা ছাড়া

কোনো অঙ্ক শেখাওনিকো

তোমার অঙ্ক বিনা তারা

জানি শুধু সাধনযোগ

শেখাও হতে রিপু বিয়োগ

আমি গুণ শিখেছি নাম গুণগান

শেখাও হতে সৃষ্টিছাড়া" 


শ্মশানকালী প্রসঙ্গে নজরুল এই কথাই অন্যভাবে আরো সহজ-ভঙ্গীতে বললেন-


"মৃতের মাঝে মোর জননী বিলায় মৃতসঞ্জীবনী,

পায়না ধ্যানে যোগীন্দ্র সে যোগমায়ায়।

মা যে আমার শবের মাঝে শিব জাগায়।।”


*#পরিশেষে বলি, শ্মশানকালীর তাৎপর্য এত সুন্দর অথচ সরল করে কোন তান্ত্রিক, যোগী, সাধক বা কবি লিখে গেছেন বলে আমার জানা নেইঃ


"শ্মশানে জাগিছে শ্যামা

অন্তিমে সন্তানে নিতে কোলে।

জননী শান্তিময়ী বসিয়া আছে ঐ

চিতার আগুন ঢেকে স্নেহ-আঁচলে।।


সন্তানে দিতে কোল ছাড়ি সুখ-কৈলাস,

বরাভয়া রূপে মা শ্মশানে করেন বাস,

কী ভয় শ্মশানে শান্তিতে যেখানে

ঘুমাবি জননীর চরণ-তলে।।


জ্বলিয়া মরিলি কে সংসার জ্বালায়-

তাহারে ডাকিছে মা ‘কোলে আয় কোলে আয়’,

জীবনে শ্রান্ত ওরে ঘুম পাড়াইতে তোরে-

কোলে তুলে নেয় মা মরণেরই ছলে।।"


*#এই যে এককালের প্রবলপ্রতাপান্বিতা দশ-মহাবিদ্যাস্বরূপিনী শ্যামাকে নিতান্ত ঘরোয়াভাবে পাওয়ার সহজিয়া সাধনা, তার সূচনা হয়েছিল রামপ্রসাদের হাতে, তাকে সত্যিকারের সাধনায় প্রতিফলিত করেন পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ আর কাব্যে-গীতিতে অপূর্ব সুষমায় বিকশিত করে অনন্য মর্যাদায় রূপদান করেন নজরুল। তাঁর হাতে শোভিত খড়্গ, গলার মুণ্ডমালা যেন অবাধ্য সন্তানকে ভয় দেখাবার জন্যে মায়ের ছলনা-


"কেন আমায় দেখাস মা ভয়, খড়্গ হাতে মুণ্ড নিয়ে,

আমি কি তোর সেই সন্তান, ভোলাবি মা ভয় দেখিয়ে?”


*#কালী মৃত্যুময়ী মাতা। আবার তিনিই অনন্ত জীবনের প্রতীক। "মৃত্যুরূপা মাতা” কবিতায় (বাংলা অনুবাদ- সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত) স্বামী বিবেকানন্দ শ্যামার এই রূপেরই বর্ণনা করেন-


"করালি! করাল তোর নাম, মৃত্যু তোর নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে

তোর ভীম চরণ-নিক্ষেপ প্রতিপদে ব্রহ্মাণ্ড বিনাশে!

কালি, তুই প্রলয়রূপিণী, আয় মা গো আয় মোর পাশে।

সাহসে যে দুঃখ দৈন্য চায়, মৃত্যুরে যে বাঁধে বাহুপাশে,

কাল-নৃত্য করে উপভোগ, মাতৃরূপা তারি কাছে আসে।।”


কিন্তু শ্মশানকালী প্রসঙ্গে নজরুল এই কথাই অন্যভাবে আরো সহজ-ভঙ্গীতে বললেন,


"মৃতের মাঝে মোর জননী বিলায় মৃতসঞ্জীবনী,

পায়না ধ্যানে যোগীন্দ্র সে যোগমায়ায়।

মা যে আমার শবের মাঝে শিব জাগায়।।”


*#বাংলার আধ্যাত্ম জগতে মাতৃ সাধক কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন যোগ ও তন্ত্রে সমান পারদর্শী ছিলেন। অধ্যাত্ম জগতে তার এই দিব্য বিচরণ তার কয়েকজন অন্তরঙ্গ সুহৃদ বর্গ ছাড়া আর কেউই বিশেষ জানতেন না !  তিনি যে কত বড় মাতৃ সাধক তার নিদর্শন তার দিব্য গভীর  ভাব মন্ডিত অজস্র শ্যামা সংগীত  সকল, নজরুল ইসলামের শ্রীগুরুদেব তৎকালীন বিখ্যাত ক্রিয়া যোগী, শ্রী বড়দাচরণ  মজুমদার! 


*#একবার কাজী সাহেব  দমদমের এক শ্মশানে মহানিশায় তন্ত্র মতে, তন্ত্রের সর্বোচ্চ সাধনা ভয়ঙ্কর *#শব_সাধন শুরু করেন,সেই সময় নানান বিভীষিকা শুরু হয় ! কিন্তু নজরুল নির্ভীক.. ওই সময় এক বিরাট *#প্রেত_মূর্তি তাকে সে নিষেধ করে ওই তন্ত্রোক্ত কঠিন শব সাধনা করতে, সেই বীভৎস মূর্তি  নজরুল কে বলেন, মা তোমাকে লেখা ও গান করবার শক্তি দিয়েছেন, তার মধ্য দিয়েই তোমার দর্শন ও মুক্তি মিলবে তুমি গান লেখো আর প্রাণ ভরে মাকে শোনাও - এসব তান্ত্রিক সাধন ক্রিয়া তোমার ভোগ দেহে সহ্য হবে না ! বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে 

নজরুল তা শুনে অগ্রাহ্য করলেন ,উল্টে বললেন কে তুমি কি চাও?

সে বিরাট মূর্তি বলল, আমি এই শ্মশান ভৈরব, শ্মশান রক্ষা করি, উত্তর সাধক ছাড়া এখানে সিদ্ধিলাভ হয় না, তোমাকে যা বললাম তুমি তাই করো, তোমার এসবের প্রয়োজন নেই.....


*#নজরুলের_শেষ_পরিনতি_আমরা_সবাই_জানি।

Continue-30

***#কেন_মহাসাধকেরও_পতন_হয়?


***#সাধকের সাধন জীবনের শেষ পরীক্ষা নেবেন মহামায়া নিজে তারপর মুক্তি বা ছাড়পত্র মিলবে । ব্রহ্মচর্য ঠিক ঠিক ভাবে পালন করে এগিয়ে গেলেও জোর করে সংসার পরিত্যাগী বা বিবাগী সাধক মহামায়াকে পরীক্ষা দিতে বাধ্য ।


***#আমাদের শরীরে ৭২ হাজার চক্র আছে তার মধ্যে ১০ টি প্রধান । এই ৭২ হাজার চক্রকে ভেদ করে যাওয়া খুব দুস্কর তা সকলে পারেও না কিন্তু দশটিকে অতিক্রম করতেই হবে । নাম করতে করতে এক একটি চক্র ভেদ হবে এবং ঐ চক্রে পদ্ম প্রকাশিত হবে । পদ্মের ভেতরে একটি কুটির আছে সেই কুটিরে সাধককে প্রবেশ করতে হবে কিন্তু ঐ কুটির দ্বারে বসে আছে পরম রূপলাবণ্যময়ী এক একটি দেবী, তারা পথ আটকায় এবং সাধককে বলবে ছল করে যে, 'তুমি আমার সঙ্গে রমন কর' , তারা ছলাকলাও শুরু করবে যাতে সাধক প্রলুব্ধ হন । যদি কেউ সেখানেই থেমে যায় তাহলে তার পতন শুরু হবে আর বলিষ্ঠ সাধক একমাত্র গুরু বলে ঐ দেবীকে বলবেন, 'মা আমাকে আপনি ছেড়ে দিন , আমি আপনার সন্তান।' দুর্বল সাধকেরা এটা করতে পারে না তাই তাদের পতন হয় ।


***#সাধককে মনে রাখতে হবে মাতৃযােনি থেকে সে সৃষ্টি হয়েছে তেমনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ঠিক ঐ রকম যােনিদ্বার । সাধকেরা তাই মাতৃযােনি ধ্যানযােগে পূজা করেন ব্রহ্মদ্বার রূপে । বলিষ্ট সাধক জানেন মাতৃদ্বার থেকে তিনি সৃষ্ট হয়েছেন তাই কখনও সে ঐ দ্বারে ভুল করেও দৃষ্টিপাত করবে না । ঠাকুর রামকৃষ্ণ তাই মা সারদাকে বিবাহের রাত্রে মাতৃদ্বারে পূজা করেছিলেন । সাধকের কুমারী পূজা ঐ জ্ঞানে অনুষ্ঠিত হয় । 


***#সাধক বামাক্ষেপার সময়ে তারাপীঠ মহাশ্মশানে দুটি কুকুর ছিলো। তারা বিগত জন্মে মহাসাধক সাধিকা ছিলেন । বামদেবের বলেন, খুব উচ্চ পর্যায়ে তাদের পতন হয় । বামদেবের চরণ তলে থেকে তারা প্রায়শ্চিত করে , মা তারার মন্দিরেও তারা থাকতাে । শ্বেতফুলি বা কালাে কখনও এঁটো কাটা বা মাংস স্পর্শ করতাে না । শ্বেতফুলি কোনদিন সহবাস করেনি কালােও তাই । কালাে বামদেবের সঙ্গে ঐ একই সমাধিতে সমাধিস্থ হয়।


***#তাই সাধককে সবসময় খুব সাবধান থাকতে হয়। কারন, সাধনায় উন্নতি করা যত কঠিন, সেই উন্নতির পর্যায় ধরে রাখা ততটাই কঠিন। তাই উপরের ছবির মতো, সাধককে পার্থিব ফল গ্রহনের প্রলোভন থাকবেই। সেই প্রলোভন এড়িয়ে তাকে সাধনার প্রকৃত ফল লাভের প্রচেষ্টায় সদা-সতর্ক থাকতে হবে।


কলমে-

রতন কর্মকার

*#অলৌকিক_জ্ঞানগঞ্জ_ও

#নেতাজী

(১ম পর্ব)


***#ভারতবর্ষ হল দেবভূমি, আধ্যাত্মিকতায় পরিপূর্ণ। আর আধ্যাত্মিকতা মানেই রহস্য। ভারতের প্রত্যেকটি ধূলিকণা রহস্যে ঢাকা। আমরা সাধারণ মানুষ ,এই রহস্যময়তাকে কত টুকুই বা বুঝেছি। সেইরকমই এক রহস্য হলো জ্ঞানগঞ্জ , যা সাধারণ মানুষের কাছে এক ধাঁধার মতো। সাধন জগতের সাথে যারা যুক্ত আছেন তাদের অনেকেরই হয়তো জ্ঞানগঞ্জের ব্যাপারে  একটা সম্যক ধারণা আছে কিন্তু বেশির ভাগ মানুষেরই কাছে 'জ্ঞানগঞ্জের' ব্যাপারে ন্যূনতম কোনো ধারণাই নেই ।


***#হিমালয়ের মানস সরোবরের উত্তর-পূর্ব দিকে এবং ভারত ও তিব্বতের সংযোগবর্তী অঞ্চলের অনেক উঁচুতে বরফাবৃত প্রদেশের এক নিগূঢ় স্থানে এই জ্ঞানগঞ্জের অবস্থান। এই জ্ঞানগঞ্জ একটি রহস্যময়ী প্রদেশ  যা  চোখে দেখা যায়না অর্থাৎ এটি একটি অদৃশ্য প্রদেশ। কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে এই দুরূহ স্থানের খোঁজ পাওয়া আজ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। একমাত্র উচ্চকোটির আধ্যাত্মিক সাধক ছাড়া সেখানে কারো পক্ষে পৌঁছানো অসম্ভব, 'দিব্য' তথা 'কারণ ' দেহ ছাড়া সেখানে প্রবেশ করা যায়না। এমনকি আধুনিক যুগের অতি উন্নত Navigation System এবং Radar-এর দ্বারাও এই দুর্গম প্রদেশের খোঁজ পাওয়া সম্ভব হয়নি। চীন বহু চেষ্টা করেও এই গুপ্ত স্থানের খোঁজ আজও পায়নি। তারা (চীন) আজও মরিয়া হয়ে এই গুপ্তস্থানের খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু "জ্ঞানগঞ্জের" রহস্য আজও তাদের কাছে অধরা। চীন ভালো মতোই জানে এই স্থানের খোঁজ না পেলে তাদের বিশ্বগুরু হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।। 


***#ভারতের অধ্যাত্ম জগতের মর্মকেন্দ্র হলো জ্ঞানগঞ্জ। জ্ঞানগঞ্জ হিমালয়ের একটি গুপ্ত সাধনপীঠ ,যেখানে  সুপ্রাচীনকাল থেকে ঈশ্বরকোটির যোগীরা যথাক্রমে স্থুল,সূক্ষ্ম ও কারণদেহে সাধনা করেন এবং ঈশ্বরের বিধান অনুযায়ী নেপথ্যে থেকে পৃথিবীর সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন সৃষ্টিকে যথাযথভাবে চালনা করার জন্য।জ্ঞানগঞ্জের মহাত্মারা' পরমাত্মার দূত রূপে জ্ঞানগঞ্জ থেকেই এই পৃথিবীর সকল কিছু কর্ম কান্ড নিয়ন্ত্রণ করেন। এই মহাত্মাগণ পৃথিবীর জাগতিক সমস্ত কাজই প্রতক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন আপন তপোবলে। অর্থাৎ পৃথিবীর জাগতিক কাজ পরিচালনার "হেড কোয়ার্টার " বলা যেতে পারে এই জ্ঞানগঞ্জ কে। বৈদিক কালের আবিষ্কার এই জ্ঞানগঞ্জ।জ্ঞানগঞ্জ থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয় পৃথিবীর যাবতীয় কর্মধারার স্রোত।  বিধাতা সৃষ্ট এ এক অভিনব সিদ্ধলোক।মাকড়সার জালের মতো এই রাজ্য স্বতঃ প্রসারণশীল। ২১ কিলোমিটারের পরিধি বিশিষ্ট এই রহস্যময়ী অঞ্চল সময় সময় বৃহৎ বিস্তার লাভ করে আবার সময়ে সময়ে হয় সংকোচনশীল। অর্থাৎ সময়ে সময়ে এর আয়তন এক কিলোমিটারেরও কম হয়।জ্ঞানগঞ্জের অভ্র-ভেদী পাষান প্রাচীরের ভেতর থেকে ক্রমাগত শোনা যায় মৃদু স্বরে ওঁ শব্দের অনুররণ।। 


***#যোগের সুউচ্চ পর্যায়ে যারা উন্নীত 'তাঁরাই একমাত্র এই দুর্গম ঘাঁটিতে প্রবেশের ছাড়পত্র পায়।জ্ঞানগঞ্জে মৃত আত্মার কোনো স্থান নেই, একমাত্র পবিত্র, শুদ্ধ  ও সাধনসিক্ত দিব্য আত্মা ছাড়া সেখানে প্রবেশের অধিকার কারোর নেই। এই পরম অধ্যাত্ম ক্ষেত্রে বায়ুবিজ্ঞান, সূর্যবিজ্ঞান ,

চন্দ্রবিজ্ঞান , নক্ষত্র বিজ্ঞান, জলবিজ্ঞান,ভূমিবিজ্ঞান নামক বিজ্ঞানে সিদ্ধ মহাসাধক ও মহাসাধিকাগন লোককল্যানের জন্য নিরন্তর সাধনা করে চলেছেন  আজো। জাগতিক পৃথিবী বিজ্ঞান বলতে বোঝে পদার্থ বিজ্ঞান,রসায়ন বিজ্ঞান ও জীবনবিজ্ঞান।  মহাজাগতিক পৃথিবীতে এই তিনটি তথাকথিত বিজ্ঞান শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞান ছাড়া আর কিছুই নয়। আসলে জাগতিক পৃথিবী একটি সাধারণ গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ বলেই এসব সাধারণ জ্ঞানকে বিজ্ঞান বলে আখ্যা দিয়ে থাকে। কিন্তু এই বিজ্ঞান অনেক বিরাট ও ব্যাপক 'এককথায় বলা যায় বৃহত্তর বিশিষ্ট জ্ঞান যার মাধ্যমে সৃষ্টি,স্থিতি ও প্রলয়ের খেলা খেলছেন পরমব্রহ্ম।। 


***#এই_জ্ঞানগঞ্জে ১০ হাজার বছরেরও বেশী পুরানো সিদ্ধ সাধকরা রয়েছেন ,অর্থাৎ সেইসব মহাত্মারাও রয়েছেন যাঁরা  সেই সত্য যুগ থেকে ওখানে সাধনরত আছেন। মূলতঃ এঁদের যোগশক্তির দ্বারাই সমগ্র পৃথিবীর অধ্যাত্ম জগৎ নিয়ন্ত্রিত হয়। নিত্য মহামায়ার আহ্বান করে তাঁর শক্তিতে বলীয়ান হয়ে এঁরা জগৎ ও জীবের আধ্যাত্মিক উন্নতির কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত থাকেন। আর পৃথিবীতে যে সমস্ত সাধকদের মধ্যে স্বত্বগুনের আধিক্য দেখতে পান তাঁদের সাধনপথে সিদ্ধি ত্বরান্বিত করার জন্য এঁরাই পৃথিবীতে যে সকল মহাত্মারা রয়েছেন ' তাঁদের নির্দেশ পাঠান।। 


***#স্বাভাবিক ভাবেই  প্রশ্ন জাগবে, একজন  মানুষের পক্ষে কিভাবে এতদিন বেঁচে থাকা সম্ভব ? আসলে জ্ঞানগঞ্জ ভূ-মন্ডলের চতুর্থ আয়ামে অবস্থান করছে ,এখানে সাধকের বয়সের কোনো পরিবর্তন হয়না , সাধক যে বয়সে জ্ঞানগঞ্জে প্রবেশ করে ' সেখান থেকে বেরোবার সময়ও তার বয়স একই থাকে। ধরাযাক একজন সাধক ৩৫ বছর বয়সে জ্ঞানগঞ্জে প্রবেশ করলো' ১৫ বছর তপস্যা করার পর যখন সে মূল-ভূখণ্ডে ফিরবে তখন তার বয়স হওয়া উচিত ৫০ বছর।  কিন্তু এক্ষেত্রে তার বয়স ৩৫-ই থাকবে।এখানে দিন-রাত্রি বলে কিছু নেই ,সর্বদাই ঊষার স্নিগ্ধ আলোয় ভরা এক দিব্য অলৌকিক পরিবেশ বিরাজ করছে।। 


***#বহু মনীষির রচনায় ও সিদ্ধ সাধকের জবানীতে এই দিব্য ঘাঁটির পরিচয় পাওয়া যায়। গৃহী সাধক মহামহোপাধ্যায় গোপীনাথ কবিরাজ জ্ঞানগঞ্জ প্রসঙ্গে লিখেছেন-" উহা এমন গুপ্ত যে বিশিষ্ট শক্তির বিকাশ না হইলে এবং ঐ স্থানের অধিষ্ঠাতার আজ্ঞা না হইলে মর্তজীবের এই স্থান দৃষ্টিগোচর হয়না।যে সকল জীব ঐ স্থান হইতে ঐ স্থান হইতে কোনোপ্রকার শক্তির অনুকূল্য প্রাপ্ত না হয়.তাহাদের পক্ষে উহার দুর্ভেদ্য রহস্য ভেদ করা অসম্ভব। ঐ স্থান সাধারণ ভৌগোলিক স্থানের ন্যায় নহে.ইহা যদিও গুপ্তভাবে ভূ-পৃষ্ঠে বিদ্যমান আছে ,তথাপি ইহার প্রকৃত স্বরূপ বহুদূরে। প্রকৃত যোগী ভিন্ন এই স্থানের সন্ধান কেহ পাইতে পারেনা। স্থানটি যোগী নির্মিত। জ্ঞানগঞ্জ  যোগী বিশেষের তীব্রতম যোগসাধনার প্রভাবে বিশ্বকল্যানের মহা-লক্ষ্য পূর্ণ করিবার উদ্দেশ্যে রচিত হইয়াছে"। লোকনাথ ব্রহ্মচারী, স্বামী বিশুদ্ধানন্দ পরমহংস, রামঠাকুর প্রভৃতি মহাত্মাগণ বিভিন্ন সময় এই জ্ঞানগঞ্জে গিয়েছিলেন, স্বনামধন্য লেখকদের লেখা থেকে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়।


***#এখানে মানব থেকে "মহামানব বা দিব্যমানবের" রূপান্তর ঘটে । যাঁরা দিব্য দেহ প্রাপ্ত তাঁরাই লোক-লোকান্তরে দৃশ্য বা অদৃশ্যরূপে গমনাগমন করেন। এখানে উল্লেখ্য , ভারতের কিছু বিশিষ্ট মহাত্মাগনের বিভিন্ন সময়ের কথা এবং লেখা  থেকে জানা গেছে  ভারতবাসীর হৃদয়ের সম্রাট "নেতাজি" আজও জীবিত আছেন এবং তিনি এই জ্ঞানগঞ্জেই গভীর সাধনায় নিমগ্ন রয়েছেন।এখানে অনেকে প্রশ্ন তুলবেন ১২৫ বছর বয়সে কি করে একজন মানুষের বেঁচে থাকা সম্ভব , তাদের প্রশ্নের উত্তরে বলছি ,যেখানে সাধারণ মানুষের চিন্তা-ভাবনার পরিধি শেষ হয় সেখান থেকেই আধ্যাত্মিকতার শুরু হয়। যারা সাধন জগতের সঙ্গে যুক্ত তারা জানেন, নেতাজি  ক্রিয়াযোগে দীক্ষিত ছিলেন এবং তিনি নিয়মিত যোগসাধনা করতেন আর একজন ক্রিয়াযোগীর পক্ষে ১২৫ বছরটা কোনো বয়সই না' এটা শুধু একটা সংখ্যা মাত্র।।


***#নেতাজীর জীবিত থাকার সপক্ষে ; রণজিৎ কুমার মজুমদার রচিত "অমরকণ্টকের বরফানী দাদাজি মহারাজ" নামক বই থেকে যোগীরাজ  শ্রী বরফানী দাদাজী মহারাজের কিছূ বক্তব্য  ও ভবিষৎবাণী এখানে তুলে ধরলাম। প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি , বরফানী দাদাজী মহারাজ একজন সু-উচ্চ পর্যায়ের আধ্যাত্বিক পুরুষ ছিলে;মাস খানেক আগে তিনি তাঁর নশ্বর দেহ রেখেছেন। পার্থিব শরীর ত্যাগের আগে তাঁর এই দেহের বয়স হয়েছিল প্রায় ২৩০ বছর। জীবদ্দসায় তিনি  জ্ঞানগঞ্জের উচ্চ স্তরের সাধকদের সাথে  নিবীড় যোগাযোগ রেখে চলতেন। তাঁর ভক্তদের বিশ্বাস স্থূল দেহ ত্যাগের পরও সূক্ষ্ম দেহে তিনি আজও বিরাজমান এবং জ্ঞানগঞ্জ থেকেই ভারত তথা সমগ্র বিশ্বের প্রকান্ড কর্মযজ্ঞ পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অংশগ্রহণ করেছেন। অমরকণ্টকে নর্মদা তীরে যোগিরাজের একটি আশ্রমও আছে, জীবদ্দশায় বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে তিনি ঐ আশ্রমে আসতেন এবং ভক্তদের সঙ্গে তিনি দেখাও করতেন। এ হেন বরফানী দাদাজী  মহারাজ দৃঢ় কণ্ঠে বলে গিয়েছেন "নেতাজি" আজও জীবিত।। 


চলবে.....

*#অলৌকিক_জ্ঞানগঞ্জ

ও *#নেতাজী (২য় পর্ব)

 

*#বরফানী মহারাজ বলেছিলেন, প্রয়োজনে নেতাজী জ্ঞানগঞ্জ থেকে লোকালয়ে নেমে আসেন ,ছদ্মনামে ,ছদ্মরূপে। যাঁরা চিনতে পারেন তাঁরা তাঁর কাছে যান,যোগাযোগ রাখেন। যেমন ক্যাপ্টেন অমর বাহাদুর সিংহ  (আই.এন.এর  ক্যাপ্টেন) ১৯৯৬ সাল থেকে তাঁর সাথে যোগাযোগ রেখে চলেছেন।ফৈজাবাদের 'রামভবন'-এ যেখানে নেতাজি গুমনামী বাবা নাম ধরে গুরচরণ সিংহ-এর বাড়িতে ছিলেন ১৯৮৪-৮৫ সাল পর্যন্ত সেখানেও আই.এন.এ-র বহূ প্রাক্তন উচ্চপদাধিকারীরা গোপনে যাতায়াত শুরু করেছিলেন।। 


*#এর বহু আগে ১৯৫০ এবং ১৯৫৬ সালে ফরওয়ার্ড ব্লকের সর্বভারতীয় নেতা মথুরালিঙ্গম থেবর চীনে গিয়ে নেতাজীর সাথে দেখা করেন এবং বেশ কিছুদিন তাঁর সাথে একত্রে থাকেন। তখন নেতাজী লিউ.পো.চেঙ ছদ্মনামে চীনে ছিলেন। মথুরালিঙ্গম থেবর ভারতে ফিরে এসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুকে দীপ্তকণ্ঠে জানিয়েছিলেন ,নেতাজি তদন্ত কমিশন মিথ্যা।তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজীর মৃত্যু হয়নি।। 


*#বরফানী মহারাজ আরও বলেছিলেন ,অন্তঃ এবং বহির্শত্রূর গুপ্ত হানায় ক্ষত-বিক্ষত দুর্দশাগ্রস্ত ভারতকে রক্ষা করবার জন্য পরিত্রাতা রূপে নেতাজির আত্মপ্রকাশ ঘটবে। ভারতবর্ষ আবার সাধুসন্তদের দ্বারা পরিচালিত হবে। ২০০৮ সালের ফেব্রূয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ের এই ভবিষৎবাণী। আর ২০০৩ সালের নভেম্বর মাসে মুঝেহানা আশ্রমের মৌনীবাবা (নেতাজী) দৃঢতার সঙ্গে জানিয়েছিলেন। ." জাল বিছানো হয়েছে ,তাতে ছোট বড় সব কুচক্রীরাই ফাঁসবেই। তবেই তো সাচ্চা পরিবর্তন হবে, তখনই এই 'ধরতি মা' স্বর্গ হবে। সন্ত রাজ্য স্থাপন করা আমার মহান লক্ষ্য।তোমরা একে সুভাষ ক্রান্তি বলতে পারো।। 


*#বরফানী মহারাজ বলেছিলেন, গুরুর কৃপায় অতীন্দ্রিয় জগৎরহস্য যিনি ভেদ করতে পারবেন,তাঁর কাছে পার্থিব জগতে কোনো কাজই আর অসম্ভব নয়. সাধক তখন ঈশ্বরবৎ হয়ে যান ,ইচ্ছা করলে একই সময়ে নানারূপে তিনি বিচরণ করতে পারেন, আবার ইচ্ছা করলে দেহটাকে খন্ড-বিক্ষত করে বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে দিতে পারেন। বরফানী মহারাজের কথানুযায়ী ,নেতাজী জ্ঞানগঞ্জে কঠোর সাধনায় নিজেকে লিপ্ত রেখেছেন। তাঁর মতো সাধককেও মানস-সরোবরের গুপ্তস্থানেও সাধনা করে পরাশক্তিকে আরও শক্তিশালী করতে হয়েছে।তাই তাঁর মত একজন অখণ্ড অধ্যাত্মতত্ত্ববেত্তা ,অপরিমেয় যোগৈশ্বর্যসম্পন্ন সাধকের কাছে মৃত্যু তো তুচ্ছ এক কর্ম"।। 


*#নেতাজী সত্যিই জীবিত কিনা তা যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে , কিন্তু নেতাজিপ্রেমীদের  অবচেতন মন বলছে তিনি আজও জীবিত। আর বরফানী মহারাজের মতো একজন সিদ্ধ যোগী যখন দীপ্ত কণ্ঠে বলছেন, নেতাজি আজও জীবিত; তখন সেই দাবি সরাসরি খারিজ করা যায়ই  বা কি করে। স্বামীজীও তো বলেছিলেন," ভারতবর্ষ আবার জেগে উঠবে আধ্যাত্বিক শক্তির দ্বারা " --স্বামীজীর প্রত্যেকটি বাণীই আমাদের কাছে গীতা স্বরূপ , তাই তাঁর বাণী মিথ্যা হওয়ার নয়। নেতাজী কতটা বিবেকানন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন সেটা আমরা সবাই জানি। মুঝেহানা আশ্রমের মৌনীবাবার (নেতাজী) কণ্ঠেও তো স্বামীজীর সেই কথার প্রতিধ্বনি , তিনিও তো বলেছেন  "সন্ত রাজ্য স্থাপন করা আমার মহান লক্ষ্য"।। 


*#তাহলে কী সেই মহান লক্ষ্য পূরণের জন্যই তিনি জ্ঞানগঞ্জে গভীর তপস্যায় রত ? সাধারণ মানুষের কাছে এটা গাঁজাখুরি গল্প মনে হলেও আধ্যাত্মিক জগতের বহূ উচ্চমার্গের সাধক বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভবিষৎ বাণী করেছেন। তাঁদের প্রত্যেকের ভবিষৎ বাণীর মধ্যেই একটা মিল পাওয়া গেছে ,"নেতাজি এখনও জীবিত এবং ভারতের এক "

"অমরকণ্টকের বরফানী দাদাজী মহারাজ " বই-এর  লেখক তেমনই এক মহাত্মার কথা বইয়ের শেষের দিকে উল্লেখ করেছেন , সেটাই এখন ছোট করে লেখার চেষ্টা করলাম।


২০১০ সালের  সেপ্টেম্বর মাসে লেখক এই মহাত্মার সাথে কথা বলেছিলেন।  লেখকের কথায়, "উড়িষ্যার বালেশ্বর জেলা থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে এক প্রত্যন্ত গ্রামে তাঁর আশ্রম (লেখক এখানে ঐ সাধু মহাত্মার নাম উল্লেখ করেননি) ।ব্রহ্মর্ষির বর্তমান বয়স ১১৫ বছর (২০১০ সালে ওনার বয়স ছিল ১১৫ বছর) বেশকিছুদিন আগে পড়ে গিয়ে বাঁ পায়ের হাড় ভেঙে যাওয়ার জন্য এখন আর একা একা চলাফেরা করতে পারেন না। ওয়াকারের সাহায্যে কোন মতে চলা ফেরা করেন। আমাদের আগমনবার্তা শুনে দুজন শিষ্যা ধরাধরি করে এনে গায়ত্রী মন্দির প্রাঙ্গনে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলেন। এ হেন দৈবজ্ঞ মহাপুরুষের কাছে নেতাজি সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাই। যেমন ; তিনি এখনো বেঁচে আছেন কিনা, বেঁচে থাকলে কোথায় কী অবস্থায় আছেন। আদৌ আত্মপ্রকাশ করবেন কি বা যদিওবা করেন তবে কবে করবেন ইত্যাদি প্রশ্ন যা আমি বরফানী মহারাজকেও করেছিলাম। মহাতপার উত্তর শুনে আমি অবাক হয়ে যাই। মহর্ষি জানান, নেতাজি এখনও বেঁচে আছেন।আধ্যাত্বিক জগতের খুবই উচ্চমার্গে বিচরণ করছেন। বৈদেশিক আক্রমণে এবং অভ্যন্তরিন গোলযোগ যখন চরম অবস্থায় পৌঁছাবে তখনই ওঁনার আবির্ভাব ঘটবে দেশ এবং দেশবাসীকে রক্ষা করবার জন্য।" অর্থাৎ এই ব্রহ্মর্ষি এবং দাদাজী মহারাজের কথা একদম হুবহু মিলে যাচ্ছে।


*#বর্তমান ভারতের প্রেক্ষাপটের দিকে একবার লক্ষ্য করে দেখুন , বৈদেশিক আক্রমণ ও অভ্যন্তরীন গোলযোগে ভারত ক্রমশঃ অশান্ত হয়ে উঠছে। ঐ মহর্ষিও তো ঠিক এই সময়টার-ই উল্লেখ করেছেন , তাহলে কি ওই মহাত্মার ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে , সত্যিই কি আপামোর ভারতবাসীর নয়নের মণি নেতাজী-র আত্মপ্রকাশের সময় আসন্ন। সময়ই বলবে সেকথা , ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।।

***#সন্ন্যাসী  


*#সম( সম্যক ভাবে বা সম্পূর্ণ রূপে ) ।


*#ন্যাস - গচ্ছিত বস্তু ( যে জিনিষ কারাে কাছে জমা দেওয়া হয়েছে ) ।


*#সন্ন্যাসী - সন্ন্যাস হয়েছে যার তিনি সন্ন্যাসী অর্থাৎ যিনি সংসারের কামনা বাসনা অপরের কাছে গচ্ছিত রেখে মুক্ত হয়ে সংসার থেকে বেরিয়ে এসেছেন তিনি সন্ন্যাসী । যিনি এষণা মুক্ত ( ইচ্ছা ) । ধন , পুত্র , লােক এই তিন ইচ্ছা বা এষণা থেকে মুক্ত যিনি তিনিই সন্ন্যাসী ।


*#ত্রিবিধৈষণা  বিমুক্ত হন ( তিনটি এষণা ) । এ জগতে সাধু কে ? -সতে ( সৎ ) যিনি বিশ্বাসী , যাঁর আচরণ সৎ তিনি সাধু । যিনি সৎ কর্ম করেন । তিনি সাধু , যিনি সৎ চিন্তা করেন তিনিই সাধু । যার সকল সাধ নাশ হয়েছে তিনিই সাধু।

Continue-31

*#জপ_কাকে_বলে ?


*#শাস্ত্রে আছে " জপাত: সিদ্ধি " - অর্থাৎ জপ দ্বারা সিদ্ধিলাভ হয় l ভগবানের কোনো নাম মন্ত্র বা গুরু মন্ত্র অনবরত বিভিন্ন ভাবে বা বিভিন্ন পদ্ধতিতে করার নাম জপ l


*#জপ_কত_প্রকার_কি_কি ? 


*#শাস্ত্রানুসারে জপ 11 প্রকারের পদ্ধতি দ্বারা করা যায়। 

1.কায়িক জপ 

2. বাচিক জপ 

3. উপাংশু জপ 

4. প্রাণীক জপ

5. হার্দিক জপ

6. মানসিক জপ

7. ক্রিয়া জপ 

8. সুষুম্না জপ 

9. চক্র জপ 

10. অজপা জপ 

11 পশান্তি জপ 


*#প্রতিটি জপ পদ্ধতি পরস্পরের থেকে উন্নত।  যেমন - কায়িক থেকে বাচিক , আবার বাচিক থেকে উপাংশু উন্নত - এই ভাবে প্রতিটি জপ পদ্ধতি পরস্পরের থেকে উন্নত।  পশান্তি জপ পদ্ধতি পর্যন্ত একবার করতে পারলে জপ সাধনায় পূর্ণ সিদ্ধিলাভ হয় এবং শাস্ত্রের " জপাত: সিদ্ধি " কথাটি পূর্ণত্ব প্রাপ্ত হয়। 


*#কায়িক_জপঃ

কায়িক জপ শব্দের অর্থ হলো - শারীরিক পরিশ্রম এর দ্বারা যে জপ করা হয় তাকে কায়িক জপ বলে l যেমন:- খোল-করতাল নিয়ে নাচতে নাচতে বা হেলে দুলে যে ভগবানের অনবরত নাম করা রুপি জপ করাকে কায়িক জপ বলে। 


*#বাচিক_জপঃ

বাচিক জপ শব্দের অর্থ হলো- এক জায়গায় স্থির ভাবে বসে বসে অনবরত উচ্চারণ করে যে জপ করা হয় তাকে বাচিক জপ বলে। 


*#উপাংশু_জপঃ

 উপাংশু জপ শব্দের অর্থ হলো- এক জায়গায় স্থির ভাবে বসে শুধু নিজে শুনতে পাবে কিন্তু পশে বসে থাকলেও ওপরে কেও শুনতে পাবে না , এই রকম ভাবে অনবরত উচ্চারণ করে যে জপ করা হয় তাকে উপাংশু জপ বলে।

 

*#প্রাণীক_জপঃ

 প্রাণীক জপ শব্দের অর্থ হলো - শাস্ত্রে কোনো কোনো জায়গায় শ্বাস কে প্রাণ বলা হয়েছে l এক জায়গায় স্থির ভাবে বসে জিভকে পূর্ণ রূপে স্থির রেখে শুধু শ্বাস- প্রশ্বাস এর দ্বারা জপ করাকে প্রাণীক জপ বলে ।


*#হার্দিক_জপঃ

 হার্দিক জপ শব্দের অর্থ হলো - এক জায়গায় স্থির ভাবে বসে জিভকে পূর্ণ রূপে স্থির রেখে শুধু , নিজের হৃদ-স্পন্দন শুনে ( কোনো প্রকারের যন্ত্রের সাহায্য না নিয়ে ), সেই নিজের হৃদ-স্পন্দন এর গতিতে যে জপ করা হয় তাকে হার্দিক জপ বলে। 


*#মানসিক_জপঃ

মানসিক জপ শব্দের অর্থ হলো- এক জায়গায় স্থির ভাবে বসে শরীর ও জিভকে পূর্ণ রূপে স্থির রেখে শুধু নিজের স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে যে গতিমান মন ( কোনো প্রকারের যন্ত্রের সাহায্য না নিয়ে ) -সেই মনের গতির সংগে জপ করাকে মানসিক জপ বলে ।


*#ক্রিয়া_জপঃ

ক্রিয়া জপ শব্দের অর্থ হলো - এক জায়গায় স্থির ভাবে বসে জিভকে কপালকুহরে পূর্ণ রূপে স্থির রেখে গুরুমুখী বিদ্যা রুপি ক্রিয়া এর দ্বারা জপ করাকে ক্রিয়া জপ বলে। 


*#সুষুম্না_জপঃ

 সুষুম্না জপ শব্দের অর্থ হলো - এক জায়গায় স্থির ভাবে বসে জিভকে কপালকুহরে পূর্ণ রূপে স্থির রেখে গুরুমুখী বিদ্ধ্যা রুপি ক্রিয়া এর দ্বারা জপ করতে করতে সুষুম্নাতে প্রবেশ করে তারপর জপ করাকে সুষুম্না জপ বলে। 


*#চক্র_জপঃ

 চক্র জপ শব্দের অর্থ হলো - এক জায়গায় স্থির ভাবে বসে জিভকে রাজিকাতে পূর্ণ রূপে স্থির রেখে গুরুমুখী বিদ্ধ্যা রুপি ক্রিয়া এর দ্বারা জপ করতে করতে সুষুম্নাতে প্রবেশ করে তারপর সুষুম্নাতে প্রবেশ অবস্থায় থেকে প্রতিটি চক্রএ জপ করার নাম চক্র জপ ।


*#অজপা_জপঃ

অজপা জপ শব্দের অর্থ হলো - এক জায়গায় স্থির ভাবে বসে জিভকে রাজিকাতে পূর্ণ রূপে স্থির রেখে গুরুমুখী বিদ্ধ্যা রুপি ক্রিয়া এর দ্বারা জপ করতে করতে সুষুম্নাতে প্রবেশ করে তারপর সুষুম্নাতে প্রবেশ অবস্থায় থেকে প্রতিটি চক্রএ জপ করতে করতে কেবলি কুম্ভক এর দ্বারা অনাহত দিব্য ধ্বনির প্রকাশ হয় গুরুমন্ত্র আপনা আপনি সেই অনাহত দিব্য ধ্বনির সঙ্গে সঙ্গে জপ হতে থাকে -তাকেই অজপা জপ বলে। 


*#পশান্তি_জপঃ

পশান্তি জপ শব্দের অর্থ হলো - এক জায়গায় স্থির ভাবে বসে জিভকে রাজিকাতে পূর্ণ রূপে স্থির রেখে গুরুমুখী বিদ্ধ্যা রুপি ক্রিয়া এর দ্বারা জপ করতে করতে সুষুম্নাতে প্রবেশ করে তারপর সুষুম্নাতে প্রবেশ অবস্থায় থেকে প্রতিটি চক্রএ জপ করতে করতে কেবলি কুম্ভক এর দ্বারা অনাহত দিব্য ধ্বনির প্রকাশ হয় গুরুমন্ত্র আপনা আপনি সেই অনাহত দিব্য ধ্বনির সঙ্গে সঙ্গে অজপা জপ এর মন্ত্র ধ্বনি শুনতে শুনতে সাধক সমাধি অবস্থায় উপনীত হয় -আর তখনি পশান্তি দিব্য ধ্বনির মধ্যে ব্রহ্ম জ্যোতির প্রকাশ হয় - আর সেই ব্রহ্ম জ্যোতির মধ্যে মন্ত্রের অর্থ-গায়িত্রীর দর্শন হয় আর সেই সঙ্গে সেই গুরু মন্ত্র রুপি ইষ্টদেব এর সাক্ষাৎ দর্শন হয়ে সাধক পূর্ণ মন্ত্র সিদ্ধি লাভ করে - ইহাকেই শাস্ত্রে পশান্তি জপ বলেছে,ইহা সিদ্ধ হইলে বলা হয় যে- জপের দ্বারা পূর্ণ সিদ্ধিলাভ -ইহাই " জপাত: সিদ্ধি " অবস্থা l

*#শিক্ষিত হওয়ার চেয়ে দীক্ষিত হওয়া বেশি জরুরী কারণ, শিক্ষা জানায় দীক্ষা দেখায়। 


*#শিক্ষাকে-যে জাতির মেরুদন্ড বলা হয়, সে মেরুদন্ডটি আসলে আক্ষরিক অর্থে দন্ড নয়। এটি কতগুলো কশেরুকার যোজনা। শিক্ষাও সে রকম, ধাপে ধাপে একটা পরিক্রমার মাধ্যমে শিক্ষার প্রতিটি বিষয়কে অনুপুঙ্খ দীক্ষার সূতোয় গাঁথতে হয় আর তখন সেই দ্বিত্বের নাম হয় শিক্ষা-দীক্ষা। এরা দুজনেই সতীর্থ বা সহোদর অথবা স্বজন ও সখা।


*#এদের যুগলবন্দিতে মর্ত্যে স্বর্গ রচিত হয় কিন্তু এদের বিচ্ছদ-বিরহে মর্ত্য হয় মরুভূমি। দীক্ষা ছাড়া শিক্ষা পথহারা পথিক। আবার শিক্ষা ছাড়া দীক্ষা প্রগতির অন্তরায় হতে পারে। শিক্ষা যদি দীক্ষার সহচর হয়, সত্যাশ্রয়ী অভিযাত্রী হয়, তাহলেই আমরা বলতে পারি ----

‘তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা,

এ' সুমদ্রে আর কভূ হব নাকো পথহারা।’


গুরুদীক্ষা নিন ও আধ্যাত্মিক জীবনের রসাস্বাদন করুন।

জয় গুরু।

*#ভূত_প্রেতাত্মা_কি_সত্যি_রয়েছে? 


'ভূত' কথাটা মানুষ ব্যবহার করে কিন্তু যে অর্থে ব্যবহার করা হয় সেটি প্রয়োগগত ভাবে ভুল ! ভারতীয় শাস্ত্রে রয়েছে পঞ্চভূতের কথা – ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম ৷ আবার 'ভূত' মানে অতীত ৷      

'প্রেতাত্মা' কথাটাও ব্যবহার করা হয়, এটিও ঠিক নয় । আত্মার জন্ম-মৃত্যু হয় না । তাই প্রেত-আত্মা কথাটি ভুল ।


*#কেউ কেউ বলে অশরীরী, এটাও - বলা উচিত নয়, কারণ শরীর রয়েছে তো ! স্থূল শরীর নাই কিন্তু সূক্ষ্ম শরীর রয়েছে । যাকে 'প্রেতযোনী' বলা যায় ৷ আর প্রেতযোনী প্রাপ্তরা রয়েছে তো ! স্থুলদেহের মৃত্যুর পরেও, অতৃপ্ত বাসনা নিয়ে এই ধরনের সুক্ষ্ণদেহীরা প্রচন্ড জাগতিক আকর্ষনে স্থুলদেহীদের কাছাকাছি থেকে যায়। কোনো কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ, এদের অস্তিত্ব টের পেতে পারে! তবে উচ্চ কোটির সাধকেরা এদেরকে মুক্তিও দিতে পারে ।।

***#স্বামী_শ্রী_যুক্তেশ্বর_গিরি মহারাজ (জন্ম ১০ই মে ১৮৫৫ - মহাসমাধি ৯ই মার্চ ১৯৩৬) একজন ভারতীয় সন্ন্যাসী এবং যোগী এবং পরমহংস যোগানন্দ এবং স্বামী সত্যানন্দ গিরির গুরু। পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুরে জন্মগ্রহণ করা, শ্রী যুক্তেশ্বর ছিলেন ক্রিয়া যোগী, জ্যোতিষ (বৈদিক জ্যোতিষ), ভগবদ গীতা এবং উপনিষদের একজন পন্ডিত, একজন শিক্ষাবিদ, লেখক এবং জ্যোতির্বিদ।


*#তিনি ক্রিয়াযোগী সাধক শ্রী শ্রী শ্যামাচরণ লাহিড়ী মহাশয়ের শিষ্য ছিলেন। গুরু হিসাবে তাঁর দুটি আশ্রম ছিল, একটি শ্রীরামপুরে এবং অপরটি ওড়িশার পুরীতে, যার মধ্যে তিনি শিষ্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় বছরজুড়ে তাঁর আবাসস্থল পরিবর্তন করতেন।

একজন গুরু হিসাবে তিনি তাঁর গভীর অন্তর্দৃষ্টি, কঠোর স্বভাব এবং কঠোর নিয়মানুবর্তিতা প্রশিক্ষণের পদ্ধতিগুলির জন্য খ্যাতিমান ছিলেন, যেমন তাঁর শিষ্য শ্রী যোগানন্দ তাঁর আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন।


*#তাঁর প্রশিক্ষণের কঠোর প্রকৃতি অবশেষে তাঁর শিষ্যদের যেমন সত্যানন্দ এবং যোগানন্দকে যথাক্রমে ভারত ও আমেরিকায় তাদের সামাজিক কাজের জন্য প্রস্তুত করেছিল। তাঁর উচ্চ আদর্শ ও অন্তর্দৃষ্টির জন্য তাঁর সুযোগ্য শিষ্য শ্রী যোগানন্দ তাঁকে "জ্ঞানের অবতার" হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন।


*#Swami_Sri_Yukteswar Giri Maharaj (born 10th May 1855 - Mahasamadhi 9th March 1936) was an Indian monk and yogi and the guru of Paramahansa Yogananda and Swami Satyananda Giri. Born in Srirampur, West Bengal, Sri Yukteshwar was a Kriya Yogi, an astrologer (Vedic astrologer), a scholar of the Bhagavad Gita and the Upanishads, an educator, writer and astronomer.


*#He was a disciple of the active devotee Sri Sri Shyamacharan Lahiri Mahasaya. As a guru he had two ashrams, one at Srirampur and the other at Puri in Orissa, in which he changed his residence throughout the year while training his disciples.

As a guru, he was known for his deep insight, strict disposition and methods of training strict discipline, as his disciple Shri Yogananda mentioned in his autobiography.


*#The rigorous nature of his training eventually prepared his disciples such as Satyananda and Yogananda for their social work in India and America respectively. For his high ideals and insights, his worthy disciple Shri Yogananda considered him as the "Gyan Avatar".

Continue-32

*#শাক্ত_এবং_বৈষ্ণব


শিব ও রামে কোন ভেদ নেই , তাঁরা একাত্ম এবং অভেদ ; তবে যত ভেদভাব, যত মারামারি , কাটাকাটি শিবানুচর ভূত প্রেত , আর রামানুচর বানর গণের মধ্যে ।


*#আমাদেরও সেই দশা হয়েছে , মূলে বা সাধনার উচ্চাবস্থায় কোনও ভেদ নেই , কিন্তু নিম্নস্তরেই যত গােলমাল যত ভেদভাব । শাস্ত্রে আছে যারা হরি , ঈশা , কৃষ্ণ  এবং দুর্গাতে ভেদবুদ্ধি করেন , তারা নরকগামী হন । ঐক্যজ্ঞান অর্থাৎ বিষয়ের সম্বন্ধে পূর্ণ অভেদ ভাব ব্যতীত কিরূপে সিদ্ধিলাভ হবে ?


*#কেউ কেউ শাক্ত ও বৈষ্ণব কে সাধনার পরপর দুইটি অবস্থা বা স্তর রূপেও ব্যাখ্যা করে থাকেন । তাঁদের মতে যতদিন মানবগণ মন ও ইন্দ্রিয়কে বশীভূত করতে না পারে , যতদিন তাদের অধীন হয়ে পরিচালিত হয় , ততদিন তারা শাক্ত । যতদিন পর্যন্ত ঐ সব ইন্দ্রিয়াদিকে জয় করবার জন্য চেষ্টা বা সাধনা করা হয় ততদিন তারা শাক্ত । আর যখন মন ও ইন্দ্রিয়াদি জয় হয়ে মানবগণ জিতেন্দ্রিয় ও জীবন্মুক্ত অবস্থা লাভ করেন , তখন তাঁরা বৈষ্ণব পদবাচ্য ।


*#এ বিষয়ে শিব ও দাক্ষায়নী সতীর দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা যায় । শিব আপন শক্তিকে বশে রাখতে পারেন নাই - সতী শিববাক্য অগ্রাহ্য করে দক্ষ যজ্ঞে গমন করে এবং শিবনিন্দা শুনতে শুনতে প্রাণত্যাগ করলেন । সতীর জন্য শিব উন্মত্ত প্রায় হলেন , সতীকে কাঁধে নিয়ে নানা স্থানে ঘুরতে লাগলেন পরিশেষে বিষ্ণুচক্র দ্বারা সতীর দেহ খন্ডিত হলে তিনি যােগাসনে বসে গভীর ধ্যানে মগ্ন হলেন ।


*#এদিকে সতী  মেনকা গর্ভে পুনরায় জন্মগ্রহণ করলেন কিন্তু শিবের ধ্যান আর কিছুতেই ভঙ্গ হয় না । তখন সকলে পরামর্শ করে মদন দ্বারা শিবের ধ্যান ভঙ্গের চেষ্টা করল। শিবকোপে মদন ভস্মীভূত হল ; তখন গৌরীরূপা প্রকৃতি শিবের দাসীরূপে আত্ম সমর্পণ করলেন।


*#অর্থাৎ যতদিন শিব শক্তির বশীভূত  ছিলেন , ততদিন তিনি শাক্ত । কিন্তু যখন মদন ভস্ম হল ( জিতেন্দ্রিয় হলেন ) আর প্রকৃতি আত্মসমর্পণ করলেন ( অর্থাৎ শক্তি জ্ঞান লাভ হল ) তখনই শিব পরম বৈষ্ণব হলেন । এতেই বোঝা যায় শাক্ত এবং বৈষ্ণবের মধ্যে কোন প্রভেদ নাই ।


*#Please_Join_this_Group:

"যোগ সাধনায় পরমাত্মা প্রাপ্তি"

https://www.facebook.com/groups/353473076140599/?ref=share

#প্রাচীন_দেবী_কেশাইখাতী


***#সকল দেবদেবীই যে যােগীদের দর্শনজাত ছিলেন তা নয় , এদের মধ্যে অনেকেই আদি জনগােষ্ঠীর চিন্তা থেকে জন্ম নিয়েছিলেন । কামাখ্যা জনগোষ্ঠীয় মধ্যেও সেই আদি  চিন্তার ছাপ অত্যন্ত স্পষ্ট । এই অঞ্চলে আদি নরগােষ্ঠীর আর এক দেবী কেশাইখাতি। অসমের ছতিয়াদের আরাধ্যা দেবীর নামই কেশাইখাতি ।


***#কেশাইখাতী অর্থ , কাঁচামাংসভক্ষিণী আসলে কাচা নৱমাংসভােজিনী । স্থানীয় লোককথা অনুযায়ী, সন্ধার পর এক নারীর কাপড় দেবীর গায়ে লেগে যায়। এতে দেবী রেগে উক্ত নারীকে কাঁচাই গিলে ফেলেন। তখন থেকেই এক দেবীর নাম হয় কাঁচাখাকী বা কেশাইখাকী।


***#এই দেবীর পূজারীদের বলে 'দেওরি' । এরা উপজাতীয় স্তর থেকেই এসেছে । দেবীর পূজার যেসব তিথি - নক্ষত্র ছিল , তাতে রীতিমতাে বলি সহকারে তার পূজা হত । কলেরা বসস্তাদি রােগ দেখা দিলে বিশেষভাবে তাঁর পূজা হত । অনাবৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও লােকে তাঁর পূজা দিত ।


***#অহমরা ( যাদের নাম থেকেই ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার নাম হয় অসম ) ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা জয় করার পরও ছতিয়াদের এই নিষ্ঠুর বলিদান করতে দেওয়া হত । নরবলিও দিতে দেওয়া হত । তবে সবাইকে নয় । যাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে , এমন অপরাধীদেরই বলি দিতে দেওয়া হত । অর্থাৎ এটি অপরাধীদের মৃত্যুদন্ড কার্যকরী করার  একধরনের প্রক্রিয়া।  যখন মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞা ব্যক্তি পাওয়া না যেত , তখন বিশেষ একটি গোষ্ঠী বলি দেবার মানুষ সরবরাহ করত । এই গােষ্ঠী ছিল ছতিয়াদের মধ্যেই । বিনিময়ে সমাজে বিশেষ কিছু সুবিধা দেওয়া হত এদেব , যেমন — যে লােকটি বলিদানের জন্য নির্দিষ্ট হত , তাকে বিশেষ রকম যত্নে পালন করা হত । রাজকীয় ভােজ দেওয়া হত যাতে স্বাস্থ্যের বিশেষ রকম উন্নতি হয়। 


***#যেভাবে বলির মানুষ ঠিক করা হত , তাও অদ্ভুত । কোনাে রমণী গর্ভবতী হলে গণৎকার ডেকে জানতে চাওয়া হত যে , পুত্র না কন্যাসন্তান জন্মাবে । যদি বলা হত যে , পুত্রসন্তান জন্মাবে , তাহলে গর্ভবতী মাকে বিশেষ রকম যত্ন - আত্তি করা হত । সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার সঙ্গে সঙ্গে তাকে বলির জন্য অভিষিক্ত করা হত। স্বেচ্ছায় বলি হতে চায় , এমন লােকও পাওয়া যেত। কিছুদিন তাকে মন্দিরে রেখে ছতিয়ারা প্রতিপালন করত । খাইয়ে - দাইয়ে নধরকান্তি করা হত। সোনা রুপার গহনা দিয়ে সাজিয়ে দিত । তারপর মায়ের মূর্তির সামনে নিয়ে যাওয়া হত । বলিদানোচ্ছু ব্যক্তি নিজেই বলি যাবার জন্য মায়ের কাছে প্রণিপাত করত । সেই মুহূর্তে বড় দেওরি তাকে বলি দিত । মুশুটি বেদীর সামনে একটি স্তূপীকৃত নরমুণ্ডের ঢাঁইয়ের কাছে রাখা হত । বলির জনা লােক ঠিক করা হত তরুণদের মধ্য থেকে । তবে বিকলাঙ্গ বা দেহে আঁচড় জাতীয় সামান্য খুঁত থাকলেও সে ব্যক্তিকে বলির জন্য বিবেচনা করা হত না ।


***#ভক্তদের আত্মিক উন্নতির জন্যই যে এই বলি দেওয়া হত তা নয় , বলি দেওয়া হত দেবীর বিষনজর এড়াবার জন্য । অসমের কামরুপ অঞ্চলে দেবী 

‘ অই ' বা  ' আই ' দেবীর কাছেও অনুরূপভাবে নরবলি দেওয়া হত । এখানেও দেবীর কাছে বলি যাবার জন্য স্বেচ্ছা বলিদান প্রার্থী পাওয়া যেত । এদের বলা হত ভােগী । এই ' অই ' দেবী বাস করতেন পাহাড়ের গুহায় । ভােগীরা বলি যাবার জন্য তার ডাক শুনতে পেত । যে এই ডাক শুনত , সে - ই বলি যাবার জন্য নির্দিষ্ট হয়ে যেত । সমাজে তখন তার বিশেষ সম্মান হত । সে যা খুশি তাই করতে পারত ।


***#শুধু চুটিয়া নয় , ত্রিপুরা , কোচ , কাছারী , জয়ন্তী সব উপজাতির লােকেরাই মায়ের কাছে একদিন নরবলি দিত । হিসেব করলে দেখা যাবে যে , সারা পৃথিবীতেই একসময় দেবদেবীদের খুশি করার জন্য নরবলি দেওয়া হত । প্রাচীন মেসােপটেমিয়াতেও একদিন নরবলি দেবার প্রথা ছিল । অনেকের ধারণা , বঙ্গদেশ থেকেই মেসােপটেমিয়াতে বা সুমেরীয় সভ্যতায় এই নরবলি প্রথা গিয়েছিল ।


***#এই কেশাইখাতি দেবী পৃথিবীর নানা প্রান্তেই একসময় ছড়িয়ে ছিলেন। ছতিয়াদের মতে , বিশ্বস্রষ্টা পরমপুরুষের নাম হল কুন্দী । এই কুন্দীর প্রকৃতি বা শক্তি হলেন মা  মহামায়া । এই মহামায়াই হলেন কেশাই খাতি । একে অনেকে তাশ্রেশ্বরীও বলেন । বড় কাছারী জাতের লােকেরা বলে রণচণ্ডী ।


***#এই অঞ্চলের অধিবাসীরা মারণ , উচাটন ইত্যাদি বিদ্যায় কৃতবিদ্য ছিল । জাদুবিদ্যার আদিস্থানই হল এই স্থান।

এই কারণেই বহু দেবদেবীর উদ্ভব হয়েছে আদিবাসীদের অতীন্দ্রিয় শক্তিকে বশ করার চেষ্টা থেকে । অতীন্দ্রিয় শক্তিকে বশ করার জন্য বিশেষ বিশেষ ধরনের অঙ্গভঙ্গী ও জাদুক্রিয়া ছিল অবশ্যকরণীয় ।


***#এই কেশাইখাতী দেবীই হচ্ছেন দেবী ভগবতী। কেশাইখাতী দেবীর আরাধনাকারীরা বর্তমানে অসমের গুয়াহাটি সহ বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করেন।


সংযোগেঃ

রতন কর্মকার

***#নটরাজের_মূর্তি


*#নটরাজের মূর্তি নৃত্যময় ভঙ্গীতে যে প্রতীক সৃষ্টি করেছে তা হচ্ছে- এই নৃত্যের মধ্যে শুধুমাত্র মহাজাগতিক বৃত্তায়িত চিত্র ও ধ্বংসের রূপ ফুটে ওঠেনি, প্রতিদিনকার জন্ম - মৃত্যুর ছন্দও ফুটে উঠেছে । এই মুর্তি এও ইঙ্গিত করছে যে , জগতের বিচিত্র রূপের সবটাই মায়া , কোনােটাই নিত্য নয়।  বিশ্বনৃত্যের শক্তিপ্রবাহে সকলই  নিত্য পরিবর্তনশীল । নটরাজের দেহ ও অঙ্গ -প্রত্যঙ্গের প্রত্যেকটির বিভিন্ন অর্থ আছে।


*#তাঁর সমগ্র ভঙ্গিমায় যে ভয়ঙ্কর ভাব ও প্রশান্তি ফুটে উঠেছে তাতে বিশ্বনিখিলের মায়া প্রকটিত হয়েছে । তাঁর তরঙ্গায়িত হাতের

ভঙ্গিমা ও পা এবং দেহের মধ্যভাগ বিশ্বব্রক্ষামান্ডের অক্লান্ত জন্ম--মৃত্যুর প্রবাহ ঘোষণা করছে। দুই হাতে রয়েছে জন্ম-মৃত্যুর সাম্যাবস্থা। অপর দুই হাতের এক হাতে ধ্বংস ও অপর হাতে সৃষ্টির ইঙ্গিত।


*#উর্ধ্ব ডান হাতে রয়েছে ডম্বৰু । এই ডম্বরু হল বিস্ফোরণের শব্দ । একেই “ওঁ" বলা হয়। যে শব্দ দ্বারাই জগতের সৃষ্টি হয়েছিলো। উর্ধ্বে  বাম হাতে যাতে লেলিহান অগ্নিশিখা ধৃত রয়েছে তা দ্বারা মৃত্যুর সূচনা হচ্ছে । এই দুই হাত এমনভাবে প্রসারিত যে , তাতে গতিময় ব্রহ্মাণ্ডের জন্ম ও মৃত্যুর সাম্যাবস্থা বোঝাচ্ছে। তার মধ্যস্থলে নটরাজের যে প্রশান্ত ও নিরাসক্ত মুখমণ্ডল দেখানাে হয়েছে , তা ইঙ্গিত করছে যে , জন্ম ও মৃত্যুকে অতিক্রম করে প্রশান্ত একটি উত্তরনীয় অবস্থাও আছে — যাতে মেরুপ্রান্তিক বৈপরিত্য তার সকল প্রকার পার্থক্য হারিয়ে ফেলে । দ্বিতীয় দক্ষিণ হাত এমন ভাবে উথিত হয়েছে যাতে ' ভয় পেয়ো না ' এইরকম একটি ভাবের সূচনা হয়েছে । এটি আরও বোঝাবার চেষ্টা করছে যে , এই হাত রক্ষা করবে ও শান্তি দান করবে । নিম্ন বাম হাত উথিত  বাম চরণের দিকে নির্দেশ করে এটাই বোঝাচ্ছে যে, মায়া হতে মুক্তি পাওয়া সম্ভব । দেখা যাচ্ছে নটরাজ একটি দৈত্যের পৃষ্ঠে নৃত্যরত । এই দৈত্য হল মানুষের অজ্ঞানতারুপ । মোক্ষের জন্য এই অজ্ঞানতাকে দূর করতে হবে ।


*#শক্তির প্রতীক নাগ, তাঁকে তিনপ্যাচে জড়িয়ে আছে; যা অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এই তিন কালকে নির্দেশ করছে। যে পদ্ম স্তম্ভের উপর নটরাজ দাঁড়িয়ে আছেন তা পুনজন্মের প্রতীক।


*#এই নটরাজের মূর্তি ব্রহ্মাণেরই নবরূপ মাত্র । তাঁর ক্রিয়াশীলতা বিশ্বের অসংখ্য বৈচিত্রের প্রতিফলন। শিবের নটরাজরূপী নৃত্য নিখিলবিশ্বের নৃত্যেরই প্রতিধ্বনি । এই নৃত্যের মধ্য দিয়েই অবিচ্ছিন্ন শক্তিপ্রবাহের ইঙ্গিত স্পষ্ট রূপে ফুটে উঠেছে ।


(রতন কর্মকার)


Post a Comment

0 Comments