Recent Posts

6/recent/ticker-posts

অনাহুত ভক্তের আর্তি: এক আত্মশুদ্ধির বিনয়গাথা

 



অনাহুত ভক্তের আর্তি: এক আত্মশুদ্ধির বিনয়গাথা”

ভক্তি শুধুমাত্র পূজার আচারে সীমাবদ্ধ নয়—এ এক অন্তরের কাতরতা, এক আত্মার আর্তি। ঈশ্বরের চরণে আসন পেতে হলে অনেকে শাস্ত্র পাঠ করেন, উপবাস রাখেন, দান করেন, মন্ত্র জপ করেন; কিন্তু কখনো কখনো এক বিনয়ী চোখের জলই ঈশ্বরকে স্পর্শ করে। এমনই এক অতল ভক্তির নিঃশব্দ ভাষা বহন করে একটি গান—

“আমায় একটু জায়গা দাও, মায়ের মন্দিরে বসি।

আমি অনাহুত একজন, অনেক দোষেতে দোষী।”

এই গান কেবল সুর ও শব্দের সমাহার নয়, এটি এক অপরাধবোধে ভরা, তবুও করুণায় ভেজা আত্মার মৌন আর্তনাদ।

“আমায় একটু জায়গা দাও”—এই বাক্যে আত্মবিশ্বাস নয়, আত্মসমর্পণ ফুটে ওঠে। এক ভক্ত তার অপরাধবোধ ও অতীতের পাপ স্বীকার করে মা'র চরণতলে একটু স্থান প্রার্থনা করছেন। তিনি জানেন, তিনি "অনাহুত", মানে কারোর নিমন্ত্রণে আসেননি। তবুও তাঁর আশা, মা তাঁকে উপেক্ষা করবেন না। ঈশ্বরের কাছে এইরূপ নম্রতা ও আত্মস্বীকৃতিই ভক্তির প্রকৃত রূপ।

“আমি সবার পিছনে থাকব, শুধু মনে মনে মাকে ডাকব”—এই পঙ্‌ক্তি সেই ভক্তের, যিনি নিজেকে উপযুক্ত মনে করেন না প্রথম সারির আসনে বসার। তাঁর অন্তরে লুকিয়ে থাকা অপরাধবোধ তাকে দীন করে তুলেছে, কিন্তু এই দীনতা তাকে দুর্বল নয়, বরং শুদ্ধ করেছে। পাপ থেকে মুক্তির প্রথম ধাপই হল, নিজের দোষকে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করা।

এই গান কোনো বাহ্যিক পূজার কথা বলে না। “দূর থেকে শুধু চোখের জলেতে, মায়ের রাঙা পা ধুয়ে দেবো”—এই এক লাইনেই উচ্চারিত হয়েছে সেই মনঃপূজার শক্তি, যা কোনো বিধি-নিষেধের আবরণে বাঁধা নয়। এ এক নির্মল, স্বতঃস্ফূর্ত আরাধনা, যেখানে চোখের জলই গঙ্গাজল, হৃদয়ই পুষ্প, এবং অপরাধবোধই দণ্ড।

“শুধু আরতি যখন করবে... আমাকে দেখতে দিও মায়ের একটু হাসি”—ভক্ত কিছুর জন্য আবদার করছেন না। তিনি চান কেবল মা'র মুখে একটু হাসি দেখতে। এই হাসি যেন ঈশ্বরের কৃপা, ক্ষমা, এবং দয়া একসঙ্গে। এরকম আকাঙ্ক্ষা সেই ভক্তের, যিনি ঈশ্বরকে পেতে চান না, বরং তাঁকে অনুভব করতে চান।

এই গানটি আমাদের শেখায়—ভক্তি মানে শুধু মন্ত্র, মালা, বা আচারের বাহার নয়। ভক্তি মানে কখনো কখনো নীরব কান্না, পাপের স্বীকারোক্তি, এবং একটু ক্ষমার আশায় ঈশ্বরের পায়ের কাছে বসে থাকার আকুতি।

এই গান এক আত্মার পবিত্র বিনয়গাথা, যেখানে অনাহুতের অন্তরে জন্ম নেয় সবচেয়ে বিশুদ্ধ আহ্বান। সেই অনাহুত আমি, তুমি, আমরা সকলেই—যখন হৃদয় থেকে বলি:

“আমায় একটু জায়গা দাও, মায়ের মন্দিরে বসি।”

✍️ তাৎপর্য ব্যাখ্যা : রতন কর্মকার

(২৩/০৫/২০২৫; সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, ঢাকা)

Post a Comment

0 Comments