Recent Posts

6/recent/ticker-posts

চিন্তার পরিধি পেরিয়ে ধ্যানের গভীরে

 



চিন্তার পরিধি পেরিয়ে ধ্যানের গভীরে

*#জ্ঞান_থেকে_ধ্যান

জ্ঞান আরম্ভ হয় অভিজ্ঞতা ও পঠন থেকে, কিন্তু তার পরিণতি ধ্যান। এই অভিযাত্রা শুধুমাত্র মস্তিষ্কের অনুশীলন নয়, এটি আত্মার জাগরণ। প্রথমে মানুষ জানতে চায়, তারপর বোঝে, তারপর উপলব্ধি করে—অবশেষে মিলিয়ে যায়।

পড়া হল বাইরের জগতের দরজা খুলে দেওয়া। এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করে শাস্ত্র, সাধুজনের অভিজ্ঞতা, দার্শনিক ভাবনা। পাঠের মধ্য দিয়ে আমরা শিখি, কিন্তু এই শেখা তখনই গভীরতর হয় যখন আমরা লিখতে শুরু করি। লেখা মানে কেবল মুখস্থ নয়, তা হলো যা পড়েছি তার সঙ্গে নিজের হৃদয় মিলিয়ে দেখা, নিজের ভাষায় প্রকাশ করার এক সাধন।

লিখতে লিখতে মানুষ চিন্তা করতে শেখে। কারণ নিজের কথাকে সাজাতে গেলে মনের ভিতরের কুয়াশা কাটাতে হয়। তখন চিন্তা গঠিত হয়। এই চিন্তা আর বাহ্যিক তথ্যের পুনরাবৃত্তি নয়, এটি এক অন্তর্দৃষ্টি। চিন্তার মধ্যে দিয়ে মানুষ নিজের সঙ্গে দেখা করে, নিজের অস্তিত্বকে প্রশ্ন করে।

আর এই প্রশ্নের গভীরে, যখন শব্দ ফুরিয়ে যায়, তখন আসে ধ্যান। ধ্যান কোনো কর্ম নয়, কোনো কৌশল নয়—এটি এক নিঃশব্দ উপস্থিতি। এই ধ্যানে পাঠ, লেখা, চিন্তা সব ছায়ার মতো লীন হয়ে যায়। এখানে কেবল থাকে এক অপার উপলব্ধি—আমি আছি, এবং সেই ‘আমি’ ঈশ্বরেরই অংশ।

ধ্যান যদি নিয়ম না হয়ে অবস্থায় পরিণত হয়, তবে জীবনেই শুরু হয় মোক্ষের আভাস। তখন প্রতিটি কাজ, প্রতিটি নিঃশ্বাস হয়ে ওঠে প্রার্থনা। তখন ঈশ্বর কেবল তীর্থস্থানে নয়, প্রতিদিনের জীবনের ভিতরেই অনুভূত হন। রান্নাঘরে, রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে, কোনো গাছের ছায়ায় বসে—তিনি অনুভবযোগ্য হয়ে ওঠেন। কারণ ঈশ্বর আনন্দের আধার, আর আমরা সেই আনন্দেরই সন্ধান করি।

তাই জ্ঞানচর্চা শুরু হলেও তা যেন চিন্তনে গাঢ় হয়, আর ধ্যানে বিশ্রাম পায়। কারণ ধ্যানই একমাত্র পথ যেখানে মনের গহ্বর ফুরিয়ে আসে, আর হৃদয় খুলে পড়ে ঈশ্বরের দিকে। তখন আর ঈশ্বরের খোঁজ করতে হয় না—তাঁর সঙ্গে থাকা হয়ে যায়।

এটাই আত্মজ্ঞান। এটাই পরমানন্দের পথ। নিঃশব্দে, নিরবধিতে, নিজের মধ্যেই ঈশ্বরের স্পর্শ অনুভব করা—এই সত্যকে উপলব্ধি করাই প্রজ্ঞার পরিণতি।

✍️ রতন কর্মকার

(+8801715982155)

Post a Comment

0 Comments