স্বরোদয় শাস্ত্র পরিচিতি
"স্বরোদয় শাস্ত্র" হলো প্রাচীন ভারতীয় বিজ্ঞান, যা শ্বাস-প্রশ্বাস বা স্বরের মাধ্যমে শরীর, মন এবং আত্মার মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে। এটি তন্ত্র শাস্ত্র এবং যোগ শাস্ত্রের অংশবিশেষ। এই শাস্ত্র মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ, স্বাস্থ্য বজায় রাখা, এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
স্বরোদয় শাস্ত্র তন্ত্র ও যোগের মধ্যে একীভূত একটি শাস্ত্র। এটি শিব এবং শক্তির (পার্বতী) মধ্যে হওয়া কথোপকথনের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে। "শিব স্বরোদয়" হলো এই শাস্ত্রের প্রধান গ্রন্থ, যেখানে শিব দেবী পার্বতীকে স্বরের জ্ঞান প্রদান করেছেন।
স্বরোদয় শাস্ত্রের মূল তত্ত্ব
১. শ্বাসের তিনটি প্রকার (স্বরা):
ইডা নাড়ি (বাম নাসিকা):
ইডা নাড়ি বা চন্দ্রস্বরা ঠাণ্ডা, শান্তিপূর্ণ এবং চিন্তাশীল শক্তির প্রতীক। এটি মন এবং মানসিক কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে।
সময়: রাতের সময় বা ঠাণ্ডা পরিবেশে সক্রিয়।
কার্যক্রম: আরাম, ধ্যান, পরিকল্পনা।
পিঙ্গলা নাড়ি (ডান নাসিকা):
পিঙ্গলা নাড়ি বা সূর্যস্বরা উষ্ণ, সক্রিয় এবং গতিশীল শক্তির প্রতীক। এটি শরীরের কর্মক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।
সময়: দিনের সময় বা উষ্ণ পরিবেশে সক্রিয়।
কার্যক্রম: শারীরিক পরিশ্রম, যুদ্ধ, বাণিজ্য।
সুষুম্না নাড়ি (উভয় নাসিকা):
সুষুম্না নাড়ি হলো উভয় নাসিকা থেকে প্রবাহিত শ্বাস, যা আধ্যাত্মিক জাগরণের প্রতীক। এটি শুধুমাত্র ধ্যান এবং আধ্যাত্মিক অনুশীলনের সময় সক্রিয় হয়।
২. শ্বাসপ্রশ্বাস ও সময়জ্ঞান:
স্বরোদয় শাস্ত্র মতে, শ্বাসের প্রবাহ নির্ধারণ করে কোনো কাজের সফলতা। সঠিক সময়ে সঠিক স্বরের সক্রিয়তা মানুষের সাফল্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৩. পঞ্চভূতের প্রভাব:
এই শাস্ত্র পঞ্চভূত (মাটি, জল, অগ্নি, বায়ু, আকাশ) এবং শ্বাসের সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা করে। শ্বাসের প্রবাহের মাধ্যমে এই মৌলিক উপাদানগুলোর কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
প্রয়োগক্ষেত্র :
১. দৈনন্দিন জীবনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ:
স্বরোদয় শাস্ত্র অনুযায়ী, কোনো কাজ করার আগে শ্বাসের প্রবাহ পরীক্ষা করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ:
ইডা নাড়ি সক্রিয় থাকলে: নতুন কাজ শুরু করা উচিত নয়; ধ্যান বা আরামকর কাজ করা উপযুক্ত।
পিঙ্গলা নাড়ি সক্রিয় থাকলে: সক্রিয় বা চ্যালেঞ্জিং কাজের জন্য এটি উপযুক্ত।
২. স্বাস্থ্য রক্ষা:
শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৩. আধ্যাত্মিক উন্নতি:
সুষুম্না নাড়ি সক্রিয় থাকা আধ্যাত্মিক জাগরণ এবং কুণ্ডলিনী শক্তি জাগ্রত করার লক্ষণ। এটি ধ্যান এবং যোগের মাধ্যমে অর্জন করা যায়।
৪. ভবিষ্যদ্বাণী বা জ্যোতিষ:
স্বরের প্রবাহ ও দিক দেখে অনেক ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ ঘটনাগুলো অনুমান করা যায়।
উপকারিতা :
★শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্য রক্ষা করা।
★সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি।
★আধ্যাত্মিক চেতনা এবং কুণ্ডলিনী শক্তি জাগরণ।
★জীবনধারার উন্নতি এবং সুস্থতা।
স্বরোদয় শাস্ত্র হলো এক গভীর বিজ্ঞান, যা শ্বাসের প্রবাহ ও জীবনের বিভিন্ন দিককে সংযুক্ত করে। এটি শুধুমাত্র শারীরিক স্বাস্থ্য নয়, বরং মানসিক এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্যও অত্যন্ত কার্যকর। আধুনিক জীবনে এই প্রাচীন জ্ঞান মানুষের জীবনের গতি ও ভারসাম্য আনতে সাহায্য করতে পারে।
✍️ ব্যাখ্যাঃ রতন কর্মকার (whatsapp: +8801811760600)
0 Comments