Recent Posts

6/recent/ticker-posts

আমি মন্ত্র তন্ত্র কিছুই জানিনে মা.

 



আমি মন্ত্র তন্ত্র কিছুই জানিনে মা.......

"আমি মন্ত্র তন্ত্র কিছুই জানিনে মা

শুধু যা জেনেছি সে'টুক হলো এই

তোরে ডাকার মত ডাকতে যদি পারি

তবে আসবিনে তোর এমন সাধ্য নেই।"

বাহ্যিক জ্ঞান, আচার, মন্ত্র, তন্ত্র—সব ছাপিয়ে এখানে উঠে এসেছে একান্ত হৃদয়ভক্তির মহিমা। এই লাইন গুলোর প্রতিটি শব্দ যেন আত্মার গহীন গভীর থেকে উঠে আসা এক অনাবিল আকুতি।

বহু যুগ ধরে সনাতনি আধ্যাত্মিক পরম্পরায় মন্ত্র-তন্ত্র, জপ-তপ, যজ্ঞ-হোমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু সেই সবকিছুরও ওপরে যে এক সহজ সত্য আছে—তা হলো হৃদয় থেকে ডাকা, ভক্তির বিশুদ্ধতা।

যখন বলা হয়—“আমি মন্ত্র তন্ত্র কিছুই জানিনে মা”—তখন ভক্ত এক নির্মল আত্মসমর্পণের পথ বেছে নেয়। সে জানায়, আমার কিছু জানা নেই, কিছু দাবি নেই—শুধু তোর কাছে আসতে চাই, আমার হৃদয়ের আকুতিকে সমর্পণ করতে চাই।

এখানে ‘জানা’ বলতে যা বোঝানো হয়েছে তা কোনো শাস্ত্রীয় তথ্য বা তাত্ত্বিক বিদ্যা নয়, বরং এক অনুভব—যা উপলব্ধির মাধ্যমে আসে।

উপনিষদেও বলা হয়েছে—

“যস্য মাত্রং বিজানাতি তম ব্রহ্মেতি ন বিদ্যাতে।”

অর্থাৎ, যে ভাবে তুমি ব্রহ্মকে জানো বলে ভাবো, সেই জানা আসলে জানা নয়।

ভক্তের এই উপলব্ধি—সে কিছু জানে না, শুধু ডাকতে জানে—এই না-জানার মধ্যেই প্রকৃত জানার বীজ নিহিত। এখানে ডাক মানে শুধু শব্দ নয়, শব্দের ভিতরের আকুলতা। মা’কে ডাকার এই ‘মত’—মানে এমনভাবে, যে ডাকে ঈশ্বর বাধ্য হয়ে আসেন। এই ডাক আত্মার ধ্বনি। এই সেই ডাক যা কোন পদ্ধতির পরোয়া করে না, কেবল হৃদয় থেকে উঠে আসে—যা ভক্ত আর ভগবানের মাঝে এক ভালোবাসার সেতুবন্ধন করে দেয়।

“তবে আসবিনে তোর এমন সাধ্য নেই।” এই কথাটা বাহ্যিকভাবে একরকম দম্ভ বলে মনে হলেও, আধ্যাত্মিকভাবে এটি আত্মবিশ্বাসের ভাষা—যে আত্মবিশ্বাস জন্মায় বিশুদ্ধ প্রেম থেকে। ঈশ্বর সেখানে আর কোনো অলৌকিক শক্তি নয়, তিনি হয়ে ওঠেন মা—যিনি সন্তানের ডাক উপেক্ষা করতে পারেন না।

ভগবত গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেন:

“ভজতি মা এক ভক্তা, তস্যাহম ন প্রণশ্যতি।”

অর্থাৎ, যে আমাকে একনিষ্ঠভাবে ভালোবাসে, আমি তাকে কখনো ত্যাগ করি না।

ভক্তির সহজ পথ—প্রেম, সমর্পণ ও হৃদয়ের স্নিগ্ধতা। আধ্যাত্মিকতা মানে শুধু কঠোর অনুশীলন নয়, সেটি প্রেম ও সমর্পণের মধ্যেও প্রস্ফুটিত হয়। অনেক সময় কঠোর সাধনার মধ্যেও ভগবানের দেখা মেলে না, অথচ একটি হৃদয়ভরা সহজ ডাকেই তিনি সাড়া দেন।সাধনার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হৃদয়ের সরলতা, নির্মলতা, এবং আকুলতা।

আধ্যাত্মিক যাত্রা যত গভীরে যায়, তত সহজ হয়। এই গানটির চারটি পংক্তি যেন সেই সাধনার গভীরতর স্তর থেকে আসা সরল সত্যের প্রতিচ্ছবি। যেখানে ঈশ্বর আর দূরের কেউ নন—তিনি মা, যিনি হৃদয়ের ডাকে, ভালোবাসার টানে সাড়া দিতে বাধ্য।

ব্যাখ্যা: রতন কর্মকার

Post a Comment

0 Comments