Recent Posts

6/recent/ticker-posts

যোগতত্ত্বে "দেবী লক্ষ্মী'র" আধ্যাত্মিক তাৎপর্য

 





যোগতত্ত্বে "দেবী লক্ষ্মী'র" আধ্যাত্মিক তাৎপর্য

*#হিন্দু শাস্ত্রে দেবী লক্ষ্মী শুধুমাত্র ধন ও ঐশ্বর্যের দেবী নন, তিনি সৌভাগ্য, কল্যাণ ও ধার্মিক জীবনযাত্রারও প্রতীক। তাঁর উপাসনা শুধুমাত্র পার্থিব সম্পদলাভের জন্যই নয়, বরং আধ্যাত্মিক উন্নতির ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যোগতত্ত্বের আলোকে লক্ষ্মীর মহিমা বোঝার জন্য, তাঁর রূপ, গুণ, বাহন এবং দর্শন নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ প্রয়োজন।


*#যোগতত্ত্ব অনুসারে, বিশ্ব তিনটি প্রধান গুণের দ্বারা পরিচালিত – সত্ত্বগুণ, রজোগুণ ও তমোগুণ। দেবী লক্ষ্মী রজোগুণের প্রতীক, যা সৃষ্টির বিকাশ ও সংরক্ষণের শক্তি। শ্রী বিষ্ণুর সহধর্মিণী হিসেবে তিনি জগতের পালনকর্ত্রী, যেখানে তাঁর শক্তি জীবজগতের জীবনযাত্রার গতি ও পুষ্টির জন্য অপরিহার্য।


*#রজোগুণ মানে শুধু কামনা-বাসনা নয়, বরং তা হল গৃহস্থ জীবন ও দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি। তাই যে ব্যক্তি নিজেকে পরিশ্রমের মাধ্যমে উন্নত করে, সৎপথে ধন উপার্জন করে এবং সৎভাবে সেই ধনের সঠিক ব্যবহার করে, তাকেই দেবী লক্ষ্মী কৃপা করেন। কিন্তু এই রজোগুণ যদি অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায়, তাহলে তা মানুষকে লোভ ও ভোগবিলাসের দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাই দেবী লক্ষ্মী "চঞ্চলা" – তিনি অনিয়ন্ত্রিত, ভোগপরায়ণ মানুষের কাছে স্থায়ী হন না।


*#দেবী লক্ষ্মীর আশীর্বাদ মানেই শুধুমাত্র ধনসম্পত্তি নয়। তিনি ১৬ প্রকার সম্পদের অধিষ্ঠাত্রী, যার মধ্যে অন্যতম:


জ্ঞান ও বিবেক – শুধুমাত্র পার্থিব ধন নয়, প্রকৃত ধন হল আত্মজ্ঞান।


সাহস ও শক্তি – জীবনের সংগ্রামে টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য।


নৈতিকতা ও উচ্চ ভাবনা – ধর্মের পথে চলার জন্য প্রয়োজনীয়।


সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবন – আত্মউন্নতির জন্য অত্যন্ত জরুরি।


এই সকল গুণ যে ব্যক্তি অর্জন করেন এবং তা মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেন, তিনিই প্রকৃত লক্ষ্মীপ্রাপ্ত হন। অর্থাৎ, লক্ষ্মী কেবল ধনলাভের প্রতীক নন, বরং মানবজীবনে নৈতিকতা ও কল্যাণের প্রতীক।


*#দেবী লক্ষ্মীর বাহন পেঁচক সাধারণত যমের দূত হিসেবে পরিচিত। এখানে যম অর্থাৎ ধর্ম ও সংযমের ইঙ্গিত বহন করে। অর্থ উপার্জনের পর তা যদি সংযম ও ধর্মের পথে ব্যবহার না করা হয়, তবে সেই ধন শাপ হয়ে ওঠে।


পেঁচকের আচরণ যোগী ও সাধকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়:


নিশাচর প্রকৃতি – গভীর রাতে যোগসাধনার জন্য উপযুক্ত সময়।


গোপনচারী স্বভাব – আসল সাধনা প্রকাশ্যে নয়, ব্যক্তিগত ও অভ্যন্তরীণ হতে হয়।


দিবসে নির্জনবাসী – সাধনার জন্য নিরিবিলি পরিবেশ প্রয়োজন।


এর মাধ্যমে বোঝা যায়, যারা সত্যিকারের ধনী হতে চায়, তাদের সংযম, গোপন সাধনা, নিয়মানুবর্তিতা এবং ধর্মীয় চেতনা থাকা জরুরি। দেবী লক্ষ্মীর বাহন পেঁচক এই গুণগুলোর প্রতীক।


*#শাস্ত্রে বলা হয়, "শুদ্ধচিত্তে লক্ষ্মী স্থায়ী হন।" অর্থাৎ, শুধুমাত্র বাহ্যিক সম্পদ অর্জন করলেই মা লক্ষ্মীর কৃপা পাওয়া যায় না, বরং শুদ্ধ আচরণ, নৈতিক জীবন ও সৎ কর্মের মাধ্যমেই প্রকৃত লক্ষ্মী লাভ সম্ভব। যারা অর্থ উপার্জনের পরেও ধর্ম ও সততার পথ থেকে বিচ্যুত হয় না, মানুষের কল্যাণে ধন ব্যয় করে, তারাই প্রকৃত ধনবান। এমন মানুষের জন্যই মা লক্ষ্মী সত্যিকারের আশীর্বাদ হয়ে ওঠেন।


*#দেবী লক্ষ্মীর উপাসনার মূল উদ্দেশ্য শুধুমাত্র ধন লাভ নয়, বরং শুদ্ধ জীবন, সৎকর্ম, সংযম ও ধর্মীয় চেতনার উন্নতি। যারা শুধু বাহ্যিক সম্পদের জন্য লক্ষ্মী পূজা করে, কিন্তু সততার পথে চলে না, তাদের কাছে তিনি স্থায়ী হন না। তাই লক্ষ্মী সাধনার প্রকৃত লক্ষ্য হওয়া উচিত আত্মশুদ্ধি, সংযম, পরিশ্রম ও মানুষের কল্যাণ।

যোগতত্ত্ব অনুসারে, দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা মানে হল—অর্থ নয়, বরং এক সুন্দর, সংযমী, ধর্মময় জীবন লাভের প্রচেষ্টা।

ক্রিয়াযোগ সম্পর্কে জানতে :

https://youtube.com/channel/UCXMnf7gKAl5SXQ1kivkaY6g?si=I7SFAvm_nvp1QBCE


✍️ ব্যাখ্যাঃ রতন কর্মকার (whatsapp: +8801811760600)

Post a Comment

0 Comments