Recent Posts

6/recent/ticker-posts

গণেশ তত্ত্বের গভীর আধ্যাত্মিক বিশ্লেষণ

 



গণেশ তত্ত্বের গভীর আধ্যাত্মিক বিশ্লেষণ

*#গণেশ কেবল বিঘ্ননাশকারী নন, তিনি প্রকৃত জ্ঞানের প্রতীক। "জনগণের প্রজ্ঞাস্বরূপ ঈশ্বর" কথাটি বোঝায় যে, গণেশ হলেন সর্বজনীন চেতনার প্রতিভূ। কোনো মানুষ চরম প্রজ্ঞালাভ না করলে তার শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের পূর্ণ বিকাশ ঘটে না।


শাস্ত্র মতে, গণেশ হচ্ছেন স্থিতপ্রজ্ঞার প্রতিমূর্তি। অর্থাৎ, তাঁর চেতনা সর্বদা স্থির ও সমাহিত।

ভগবতী দুর্গা যখন স্থিতপ্রজ্ঞ অবস্থায় দীর্ঘকাল ছিলেন, তখন তাঁর অন্তর্নিহিত জ্ঞান ও চেতনাই গণেশরূপে প্রকাশিত হয়। এটি বোঝায় যে, যে কেউ যদি ধ্যান ও যোগের মাধ্যমে স্থিতপ্রজ্ঞ অবস্থায় পৌঁছাতে পারে, তাহলে তার মধ্যেও গণেশতত্ত্ব জাগ্রত হবে।


"ক্ষিতিতত্ত্বই গণেশতত্ত্ব।" অর্থাৎ, গণেশ হলেন পৃথিবী তত্ত্বের প্রতীক। ক্ষিতির মধ্যে জল, অগ্নি, পবন ও আকাশ—সব উপাদানই বিদ্যমান।

পৃথিবী থেকে গন্ধ জন্মায়, যা আমরা নাসা (নাক) দ্বারা অনুভব করি। গণেশের শুঁড়ের প্রতীকী অর্থ এখানেই লুকিয়ে আছে।


*#শ্বাসবায়ু নিয়ন্ত্রণ ছাড়া আধ্যাত্মিক উন্নতি সম্ভব নয়। হাতির শুঁড় লম্বা, ফলে হাতি ধীর শ্বাস নেয় (প্রতি মিনিটে ৪-৬ বার), তাই তার আয়ু দীর্ঘ (১৫০ বছর)। কচ্ছপ ধীর শ্বাস নেয় (প্রতি মিনিটে ২-৩ বার), তাই তার আয়ু ২০০ বছর।অর্থাৎ, শ্বাস যত সংযত হবে, আয়ু তত দীর্ঘ হবে এবং চেতনা তত উচ্চ হবে। এই কারণে যোগশাস্ত্রে প্রাণায়ামকে সিদ্ধিলাভের পথ বলা হয়েছে।


*#গণেশ তাঁর নাসিকাকে ইচ্ছামতো চতুর্দিকে ঘোরাতে পারেন। এর অর্থ, একজন সিদ্ধপুরুষ শ্বাসবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে ইচ্ছামতো শরীর ও মনকে পরিচালিত করতে পারেন। যোগের ভাষায় এটি খেচরী, ভ্রামরী ও বিচরণী মুদ্রার প্রতীক। এই নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে একজন সাধক নিজের ভেতর সর্বদা ভগবৎসাক্ষাৎ করতে পারেন।


"প্রাণায়াম সাধনই প্রকৃত সিদ্ধিদাতা গণেশের পূজা"। গণেশ পূজা মানে শ্বাসবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করা। শ্বাস নিয়ন্ত্রণ ছাড়া মন, বুদ্ধি, অহংকার ও চিত্ত সংযত করা সম্ভব নয়।


*#প্রাণায়াম বৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করে (চঞ্চল মনকে স্থির করে)। শ্বাসনিয়ন্ত্রণ মানে সংসার ও মোক্ষের মধ্যে সাম্যাবস্থা তৈরি করা। যোগশাস্ত্রে বলা হয়: "শ্বাস নিয়ন্ত্রণ মানেই মনের উপর নিয়ন্ত্রণ"।


*#শ্বাসহীন অবস্থাই প্রকৃত অমরত্ব। গভীর ধ্যানে গেলে শ্বাস অত্যন্ত ক্ষীণ হয়। সমাধিস্থ যোগীদের মধ্যে শ্বাস একেবারে বন্ধ হয়ে যায়, যা পরমসিদ্ধি লাভের লক্ষণ। এটাই বোঝায় যে, গণেশ পূজা মানে শুধু বাহ্যিক পূজা নয়, বরং শ্বাস ও চেতনার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ।


গণেশের প্রতিটি দেহাংশ গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য বহন করে—


*#একদন্ত:


একাগ্রতাই সিদ্ধির মূলমন্ত্র।


*#লম্বোদর:


সহ্যশক্তির প্রতীক, একজন যোগী সবকিছু আত্মস্থ করতে পারেন।


*#গজানন (হাতিমুখ):


হাতি যেমন স্থির ও প্রজ্ঞাবান, তেমনই গণেশও প্রজ্ঞার প্রতীক।


*#রক্তবর্ণ মূর্তি:


ব্রহ্মতেজ ও জীবনীশক্তির প্রতীক।


*#পুষ্টি মানে পরিপূর্ণতা ও ব্রহ্মজ্ঞান। অকামকামী সিদ্ধপুরুষের পত্নীও অকামকামী, অর্থাৎ তিনি সংসারের মোহ থেকে মুক্ত। গণেশ সর্বদা ব্রহ্মচিন্তায় মগ্ন, তাই তিনিই প্রথম পূজিত হন।


*#মূষিক হচ্ছে ধর্মের প্রতীক। এর বুদ্ধি ও গতি তীক্ষ্ণ, যা বোঝায় একনিষ্ঠতা ও ধ্যান। মূষিকের গতি দ্রুত, এটি দেখায় যে, ধর্মপথে অগ্রসর হওয়ার জন্য বুদ্ধি ও একাগ্রতা জরুরি।গণেশ মূষিকবাহন হয়ে বিশ্ব পরিক্রমা করেছেন, যা প্রতীকী অর্থ বহন করে— সাধক যদি তার মন ও শ্বাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তবে সে সমগ্র বিশ্বচরাচর উপলব্ধি করতে পারে।


*#কার্তিক যুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বজয় করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু গণেশ তা করলেন অধ্যাত্ম উপায়ে। গণেশ তাঁর শ্বাসবায়ুকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন, তাই তিনি মানসিকভাবে বিশ্বপরিক্রমা করতে সক্ষম হন। এটি বোঝায় যে, শ্বাস নিয়ন্ত্রণই প্রকৃত শক্তি, বাহ্যিক বল নয়। যোগীরা শ্বাসের দ্বারা শরীর, মন ও আত্মার উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ লাভ করেন।


*#গণেশের বাহ্যিক পূজা নয়, বরং যোগ ও শ্বাসনিয়ন্ত্রণই প্রকৃত পূজা। সিদ্ধিলাভের জন্য চিত্ত ও শ্বাসের সাম্য অবস্থা জরুরি।গণেশ পূজা মানে আত্মনিয়ন্ত্রণ ও প্রকৃত প্রজ্ঞা অর্জন করা।


শ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মনের স্থিতি ও জ্ঞানের বিকাশ ঘটে। যে ব্যক্তি শ্বাসের ভারসাম্য আনতে পারে, সে সংসার ও মোক্ষের মাঝে সাম্যতা বজায় রেখে জীবিত অবস্থায় মুক্তিলাভ করতে পারে। এই সাম্য অবস্থায় পৌঁছানোই প্রকৃত গণেশ পূজা।


*#সুতরাং, প্রকৃত গণেশ পূজা মানে শ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে আত্মার মুক্তির পথে এগিয়ে যাওয়া।

✍️ ব্যাখ্যাঃ রতন কর্মকার (whatsapp: +8801811760600)

Post a Comment

0 Comments