Recent Posts

6/recent/ticker-posts

দেবী সরস্বতী ও কুণ্ডলিনী শক্তি

 



দেবী সরস্বতী ও কুণ্ডলিনী শক্তি

*#কুণ্ডলিনীর মূলাধার চক্রে সুপ্ত অবস্থায় থাকে এবং সুষুম্না নাড়ি দিয়ে উত্থান ঘটে। এই শক্তিকে সরস্বতীর শক্তি বলা হয়েছে, কারণ এটি জীবনের জাগরণ এবং চেতনার মূল উৎস।

কুণ্ডলিনী জাগরণ হলে ব্যক্তি ধীরে ধীরে আধ্যাত্মিক জ্ঞানের শীর্ষে পৌঁছায়। চক্রগুলো সক্রিয় হওয়ার মাধ্যমে দেহে বিভিন্ন বর্ণ এবং শক্তি প্রকাশ পায়, যা সরস্বতীর দীপ্তির সঙ্গে তুলনীয়। কুণ্ডলিনী শক্তি কেবল মানবদেহে নয়, সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে উপস্থিত। এটি বোঝায়, সরস্বতীর মতোই এই শক্তি বিশ্বজগতের প্রতিটি কোণে বিদ্যমান এবং সৃষ্টির চক্রকে চালিত করে।


কুণ্ডলিনীর শক্তি যখন সুষুম্না নাড়ি দিয়ে উপরে উঠে যায়, তখন দেহের সাতটি চক্র সক্রিয় হয়। প্রতিটি চক্রের নিজস্ব রং, শক্তি এবং আধ্যাত্মিক তাৎপর্য আছে:


*#মূলাধার_চক্র (লাল রং)


এটি জীবনের ভিত্তি এবং স্থিতিশীলতার প্রতীক। কুণ্ডলিনী এখানে সুপ্ত অবস্থায় থাকে এবং সরস্বতীর শক্তির মাধ্যমে এটি জাগ্রত হয়।


*#স্বাধিষ্ঠান_চক্র (কমলা রং)


এটি সৃষ্টিশীলতা এবং যৌনশক্তির কেন্দ্র। এই চক্রে সরস্বতীর সৃজনশীল শক্তি সক্রিয় হয়।


*#মণিপুর_চক্র (হলুদ রং)


এটি শক্তি এবং আত্মবিশ্বাসের কেন্দ্র। কুণ্ডলিনী এখানে পৌঁছালে ব্যক্তি নিজের পরিচয় এবং শক্তি সম্পর্কে সচেতন হয়।


*#অনাহত_চক্র (সবুজ রং)


এটি হৃদয়ের চক্র, যা প্রেম, দয়া এবং করুণার প্রতীক। সরস্বতীর শক্তি এখানে পৌঁছালে ব্যক্তির হৃদয় আধ্যাত্মিক প্রেম এবং শান্তিতে পূর্ণ হয়।


*#বিশুদ্ধ_চক্র (নীল রং)


এটি গলার চক্র, যা যোগাযোগ এবং সত্য প্রকাশের কেন্দ্র। সরস্বতীর শক্তি এখানে সক্রিয় হলে ব্যক্তি সঠিক কথা বলতে এবং নিজের চিন্তাকে প্রকাশ করতে সক্ষম হয়।


*#আজ্ঞা_চক্র (বেগুনি রং)


এটি তৃতীয় চোখের চক্র, যা আধ্যাত্মিক দৃষ্টি এবং অন্তর্দৃষ্টির কেন্দ্র। কুণ্ডলিনী এখানে পৌঁছালে ব্যক্তি আধ্যাত্মিকভাবে আলোকিত হয়।


*#সাহস্রার_চক্র (সাদা রং)


এটি মাথার মুকুট চক্র, যা সর্বোচ্চ চেতনার প্রতীক। কুণ্ডলিনী এখানে পৌঁছালে ব্যক্তি সর্বোচ্চ জ্ঞান এবং ব্রহ্মাণ্ডের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করে।


কুণ্ডলিনী দ্বারাই সমস্ত প্রাণশক্তি প্রবাহিত হয়। এটি বোঝায়: সরস্বতী জীবনের মৌলিক শক্তি, যা প্রতিটি জীব এবং সৃষ্টিকে সক্রিয় রাখে।

এই শক্তি কেবল শারীরিক নয়, বরং মানসিক এবং আধ্যাত্মিক স্তরে কাজ করে। কুণ্ডলিনী শক্তি ব্যক্তি ও বিশ্বজগতের মধ্যে একটি যোগসূত্র স্থাপন করে। সরস্বতীর শক্তি বোঝায় যে ব্যক্তির আধ্যাত্মিক জাগরণ বিশ্বচেতনাকে প্রভাবিত করতে পারে।


সরস্বতী দেবীকে কেবল জ্ঞান এবং সৃষ্টিশীলতার দেবী হিসেবে নয়, বরং কুণ্ডলিনী শক্তির প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি মনের অন্ধকার দূর করে জ্ঞানের আলো প্রজ্জ্বলিত করেন এবং ব্যক্তি ও বিশ্বজগতের মধ্যে একটি গভীর সংযোগ স্থাপন করেন। সুষুম্না নাড়ি, চক্রসমূহ এবং কুণ্ডলিনী শক্তির মাধ্যমে তিনি জীবন ও চেতনার প্রতিটি স্তরকে প্রভাবিত করেন। সরস্বতী কেবল দেহের নয়, সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের চেতনার প্রতীক, যা জ্ঞান, শক্তি, এবং সৃষ্টির ধারাকে বহমান রাখে।


✍️ রতন কর্মকার

Post a Comment

0 Comments