Recent Posts

6/recent/ticker-posts

শুদ্ধ জপ বনাম তথাকথিত জপ

 



 শুদ্ধ জপ বনাম তথাকথিত জপ

"জপ" শব্দটিকে শুধুমাত্র শব্দাবলীর আবৃত্তি বা স্মরণ হিসেবে নয়, বরং একটি উচ্চতর আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া। 


*#প্রচলিত জপ সাধারণত মন্ত্র উচ্চারণ বা স্মরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এটি একটি বাহ্যিক প্রক্রিয়া, যা মনকে স্থির করার একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।


কিন্তু *#শুদ্ধ জপ ভগবানের প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ ও নিবেদন। এটি তখনই সম্ভব, যখন জপ ব্যক্তি থেকে "হয়ে যায়", অর্থাৎ এটি স্বতঃসিদ্ধ একটি আধ্যাত্মিক অভ্যাস হয়ে ওঠে।


জপ হওয়া মানে একমুখী মনোযোগ দিয়ে ভগবানের নাম বা রূপের সঙ্গে একাত্ম হওয়া। এখানে "জপ" শব্দটি একটি অন্তর্দৃষ্টির অভ্যাস হিসেবে চিহ্নিত, যেখানে ব্যক্তি শ্রোতা হয়ে ওঠে এবং ভগবানের ডাক শোনার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে।


সাধারণত আমরা মনে করি ভগবানকে ডাকলে তিনি আমাদের কাছে আসেন। কিন্তু ভগবানের ডাক শোনা আরও গুরুত্বপূর্ণ। এটি বুঝতে হবে যে ভগবান সর্বদা ডাক দিচ্ছেন। তাঁর কৃপা সর্বত্র বিরাজমান। আমাদের মন যতক্ষণ অশান্ত এবং অস্থির, ততক্ষণ আমরা তাঁর ডাক শুনতে পারি না। জপের মাধ্যমে আমাদের মন শান্ত ও নিবদ্ধ হয়, যা আমাদের ভগবানের ডাক শুনতে পায়।

বিষয়টি গীতার শিক্ষার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ, যেখানে বলা হয়েছে কর্ম করতে হবে কিন্তু তার ফলের আশা করা যাবে না।


নিষ্কাম কর্ম এমন এক প্রক্রিয়া, যেখানে কর্মফলের প্রতি আকাঙ্ক্ষা বা আসক্তি নেই। এটি আধ্যাত্মিক সাধনার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।

জপকেও নিষ্কাম কর্ম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, কারণ এখানে ব্যক্তির কোনও ব্যক্তিগত স্বার্থ বা ইচ্ছা থাকে না। এটি সম্পূর্ণভাবে ভগবানের উদ্দেশ্যে নিবেদিত। নিষ্কাম কর্ম আমাদের ভগবানের প্রতি নিবেদিত হতে সাহায্য করে এবং অহংকার বা ব্যক্তিগত চাহিদার উর্ধ্বে উঠতে শেখায়।


*#সৎ হতে সাধুসঙ্গ অপরিহার্য। সাধুসঙ্গ এমন পরিবেশ তৈরি করে, যেখানে আধ্যাত্মিক শক্তি ও সদগুণের প্রভাব ব্যক্তি অনুভব করতে পারে। সাধুসঙ্গ মানে শুধু সাধুর উপস্থিতি নয়, বরং সত্য, পবিত্রতা এবং ভগবানমুখী পরিবেশ। এটি জপ এবং অন্য আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়াগুলিকে সহজতর করে।


*#ক্রিয়াযোগে জপ মানে শুধুমাত্র মন্ত্র আবৃত্তি নয়, বরং দেহ ও চেতনার এমন এক অবস্থায় পৌঁছানো, যেখানে ভগবানের নাম বা অনুভূতি স্বতঃসিদ্ধ হয়ে ওঠে। এটি মনকে কেন্দ্রাভিমুখী করে তোলে এবং ইন্দ্রিয় ও বিক্ষিপ্ত মনকে শুদ্ধ করে। ক্রিয়াযোগের জপে শ্বাস-প্রশ্বাস, মন্ত্র, এবং মনোযোগ একত্রিত হয়, যা ব্যক্তি এবং ভগবানের মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করে।


*#জপ শুদ্ধ হলে, নিম্নলিখিত আধ্যাত্মিক স্তরগুলি দ্রুত বিকশিত হয়:


*#প্রত‍্যাহার: ইন্দ্রিয়গুলি বাইরের বস্তু থেকে সরে যায় এবং মন অভ্যন্তরীণ হয়ে ওঠে। এটি মনোসংযোগের প্রথম ধাপ।


*#ধারণা: মন একমুখী হয়ে ভগবানের উপর কেন্দ্রীভূত হয়।


*#ধ্যান: গভীর ধ্যান বা ভগবানের সঙ্গে একাগ্রচিত্তে সংযোগ স্থাপন।


*#সমাধি: চূড়ান্ত আত্মিক মুক্তি, যেখানে ব্যক্তির আত্মা ভগবানের সঙ্গে এক হয়ে যায়।


এই ধাপগুলি ক্রিয়াযোগের মাধ্যমে দ্রুত অর্জন করা যায়, কারণ এটি মন, দেহ, এবং আত্মার পূর্ণ সমন্বয় সাধন করে।


আমরা ভগবানকে ডাকতে থাকি, কিন্তু বুঝতে পারি না যে তিনি সর্বদা আমাদের ডাক দিচ্ছেন।

ভগবানের ডাক শোনা মানে তাঁর উপস্থিতি ও কৃপা অনুভব করা। এটি তখনই সম্ভব, যখন আমাদের মন স্থির, শান্ত এবং গভীর চেতনায় থাকে। জপের মাধ্যমে আমরা মনকে সেই অবস্থায় নিয়ে যেতে পারি, যেখানে ভগবানের ডাক উপলব্ধি করা যায়। এটি আধ্যাত্মিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর, কারণ এটি ভগবানের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের পথ তৈরি করে।


অতএব, জপ শুধুমাত্র একটি আচার নয়, এটি একটি গভীর আধ্যাত্মিক অভ্যাস। নিষ্কাম কর্মের মাধ্যমে আমরা আমাদের আত্মাকে শুদ্ধ করে ভগবানের প্রতি নিবেদিত হতে পারি।

ক্রিয়াযোগের জপ আমাদের ভগবানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে সাহায্য করে। প্রত‍্যাহার, ধারণা, ধ‍্যান এবং সমাধি একে অপরের উপর নির্ভরশীল এবং ক্রিয়াযোগের মাধ্যমে এগুলি দ্রুত বিকশিত হয়।


ভগবানের ডাক শুনতে পারাই আধ্যাত্মিক জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য। এটি তখনই সম্ভব, যখন আমরা নিজের সমস্ত ইচ্ছা, কামনা, এবং অহংকার ত্যাগ করে সম্পূর্ণ ভগবানের প্রতি নিবেদিত হই।


*#আধ্যাত্মিক জীবনের জন্য বাহ্যিক আচার নয়, বরং অভ্যন্তরীণ শুদ্ধি, জপের গভীর উপলব্ধি, এবং নিষ্কাম কর্মের প্রয়োজন। এই পথ অনুসরণ করলে ভগবানের সঙ্গে একাত্ম হওয়া সম্ভব।


✍️ রতন কর্মকার

ক্রিয়াযোগ সম্পর্কে জানতে :

https://youtube.com/channel/UCXMnf7gKAl5SXQ1kivkaY6g?si=I7SFAvm_nvp1QBCE

Post a Comment

0 Comments