শ্বাসের গতি কমানোর মাধ্যমে লাভ
সাধারণত প্রতি মিনিটে নির্দিষ্ট সংখ্যক শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করা হয়। কিন্তু যদি কেউ সচেতনভাবে শ্বাসের গতি কমিয়ে নির্দিষ্ট হারে আনতে পারে, তাহলে আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভ করা সম্ভব হয়।
শ্বাসের গতি কমানোর মাধ্যমে লাভ:
*#প্রাণশক্তি সংরক্ষণ: দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করলে শরীরের শক্তি দ্রুত ক্ষয় হয়, কিন্তু ধীর ও গভীর শ্বাস গ্রহণ করলে প্রাণশক্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়।
*#মানসিক স্থিরতা: ধীর শ্বাস মানসিক স্থিরতা ও ধৈর্য বৃদ্ধি করে, যা ধ্যান ও যোগসাধনার জন্য অপরিহার্য।
*#আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা: যারা শ্বাসের গতি ১২, ৮, ৬, ৩ বা ২-এ নামিয়ে আনতে পারেন, তারা ধীরে ধীরে গভীর ধ্যানের স্তরে পৌঁছান এবং বিভিন্ন যোগসিদ্ধি লাভ করতে পারেন।
*#সংখ্যাগুলোর তাৎপর্য:
লেখায় উল্লিখিত সংখ্যাগুলো— ১২, ৮, ৬, ৩, ২ — বিভিন্ন যোগপদ্ধতির শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের নির্দিষ্ট ধাপ নির্দেশ করে।
১২-৮ শ্বাস: এটি সাধারণত ধ্যান ও হালকা যোগাভ্যাসের সময়কার স্বাভাবিক শ্বাসের হার।
৬-৩ শ্বাস: এটি গভীর ধ্যানের স্তর যেখানে মন ও শরীরের মধ্যে সমন্বয় ঘটে।
২ শ্বাস: এটি একধরনের উচ্চতর যোগঅভ্যাস, যেখানে শ্বাস এত ধীর হয়ে যায় যে সাধক প্রায় নিস্তব্ধ অবস্থায় থাকেন, যা গভীর আত্মসংশ্লেষের ইঙ্গিত দেয়।
*#আধ্যাত্মিক লাভ:
যে কেউ যদি প্রাণায়ামের সাহায্যে শ্বাসের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তবে সে ধীরে ধীরে শরীর ও মনের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ লাভ করে এবং বিভিন্ন আধ্যাত্মিক সিদ্ধি অর্জন করতে পারে। এই প্রক্রিয়া ধ্যান, একাগ্রতা, এবং চেতনার উচ্চতর স্তর অর্জনে সাহায্য করে।
*#হিন্দু ও বৌদ্ধ যোগতত্ত্ব অনুযায়ী শ্বাসের গতি:
সাধারণ মানুষ প্রতি মিনিটে ১৫-২০ বার শ্বাস নেয়।
ধ্যান অভ্যাসীরা ৮-১২ বার শ্বাস নেয়।
যোগী ও সিদ্ধ পুরুষরা ৬-৩ বার শ্বাস নেয়।
গভীর ধ্যানে ২ বার বা তারও কম শ্বাস নেয়া সম্ভব হয়।
যখন কেউ প্রতি মিনিটে ৩-২ শ্বাস নিতে সক্ষম হয়, তখন তার শরীরে ও মনের মধ্যে গভীর পরিবর্তন আসে। এই অবস্থায় সাধক বহু যোগসিদ্ধি লাভ করতে পারেন, যেমন—
*#প্রাকৃতিবিজ্ঞান (সিদ্ধি) –
প্রকৃতির নিয়ন্ত্রণশক্তি অর্জন।
*#কায়াকল্প (শরীরের পরিবর্তন) –
দীর্ঘায়ু ও রোগমুক্ত শরীর
*#তেজোপর্যন্ত (আধ্যাত্মিক জাগরণ) – ৷ মহাশক্তির উদয়
---
৫. বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ
প্রাণায়াম ও শ্বাসনিয়ন্ত্রণের আধ্যাত্মিক দিক ছাড়াও বৈজ্ঞানিকভাবে এর অনেক উপকারিতা রয়েছে:
শরীরের অক্সিজেন গ্রহণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। নাড়ী (Nadi) শুদ্ধি ঘটে, যা শারীরিক ও মানসিক স্থিরতা দেয়। স্ট্রেস, উদ্বেগ, ও মানসিক চাপ কমায়। স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, যা ধ্যান ও মনঃসংযোগে সহায়তা করে।
*#অতএব, প্রাণায়ামের মাধ্যমে শ্বাসের গতি নিয়ন্ত্রণ করে ধীরে ধীরে আধ্যাত্মিক উচ্চতর স্তরে পৌঁছানো সম্ভব। শাস্ত্রীয় ও বৈজ্ঞানিক উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই এটি গুরুত্বপূর্ণ। যারা ধ্যান, যোগ, এবং সাধনায় আগ্রহী, তাদের জন্য শ্বাসনিয়ন্ত্রণই প্রকৃত সিদ্ধিলাভের পথ।
✍️ তাৎপর্য ব্যাখ্যা : রতন কর্মকার
0 Comments