Recent Posts

6/recent/ticker-posts

কুটস্থে মন রাখা কেন কঠিন?

 



কুটস্থে মন রাখা কেন কঠিন?

"কুটস্থ" শব্দটির অর্থ হলো "অপরিবর্তনীয়" বা "স্থিত প্রজ্ঞা"—যা কোনো অবস্থাতেই প্রভাবিত হয় না। কুটস্থে মন রাখা মানে হলো নিজের মনকে এমন একটি স্থির এবং নিরপেক্ষ অবস্থায় স্থাপন করা, যেখানে বাইরের ঘটনা, আবেগ, বা পরিস্থিতি তাকে বিচলিত করতে পারে না। এটি এক গভীর আধ্যাত্মিক অবস্থা, যেখানে ব্যক্তি নিজের প্রকৃত স্বরূপ, অর্থাৎ আত্মা বা চৈতন্য, উপলব্ধি করে।


*#কুটস্থ মানে হলো মন এমন অবস্থায় স্থির রাখা, যেখানে সুখ, দুঃখ, সাফল্য, ব্যর্থতা বা অন্য কোনো প্রভাব তার স্থিতি নষ্ট করতে পারে না। এটি হলো চিরন্তন আত্মার সঙ্গে সংযুক্ত থাকা, যা পরিবর্তনশীল জগতের ঊর্ধ্বে। কুটস্থ অবস্থায় মন বাইরের জগতের ঘটনার প্রতি নিরপেক্ষ থাকে। আপনি "আমি দেহ বা মন নই, আমি শুধু একজন পর্যবেক্ষক"—এই উপলব্ধি নিয়ে চলবেন।


মন যখন কোনো আকাঙ্ক্ষা বা বিরক্তি থেকে মুক্ত হয় এবং নিরাসক্ত থাকে, তখন তা কুটস্থ অবস্থায় থাকে। এটি ফলের প্রতি আকাঙ্ক্ষা ছাড়াই কাজ করার অবস্থা। কুটস্থ মন মানে হলো এমন একটি মন, যা আবেগ নয়, বরং বুদ্ধি ও জ্ঞানের মাধ্যমে কাজ করে। এটি কোনো পরিস্থিতিতে প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগে গভীর ভাবে বিচার করে।


*#ভগবদ্গীতায় কুটস্থ অবস্থার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। "স্থিতপ্রজ্ঞ" ব্যক্তি সেই ব্যক্তি, যার মন এবং বুদ্ধি সব পরিস্থিতিতে সমান থাকে। সুখ-দুঃখ, লাভ-ক্ষতি, প্রশংসা-নিন্দা—সবকিছুকে সমান দৃষ্টিতে গ্রহণ করে।


গীতার শ্লোক:

"দুঃখেষ্বনুদ্বিগ্নমনাঃ সুখেষু বিগতস্পৃহঃ।

বীতরাগভয়ক্রোধঃ স্থিতধীর মুনিরুচ্যতে।।"

(গীতা ২.৫৬)


এর অর্থ হলো, যার মন দুঃখে বিচলিত হয় না এবং সুখে মোহিত হয় না, এবং যে ব্যক্তি রাগ, ভয় এবং আসক্তি থেকে মুক্ত, সেই ব্যক্তিই কুটস্থ বা স্থিতপ্রজ্ঞ।


*#উপনিষদ বলে, আত্মা কুটস্থ, কারণ এটি অপরিবর্তনশীল। কুটস্থে মন রাখা মানে নিজের সত্য আত্মার সঙ্গে সংযুক্ত থাকা এবং বাইরের জগতের পরিবর্তনকে কেবলমাত্র "লীলার" অংশ হিসেবে দেখা।


কুটস্থে মন রাখার ব্যাখ্যা সহজ করতে:


পরিবর্তনশীল জগত থেকে নিজেকে আলাদা করুন:

জগতের সমস্ত কিছু পরিবর্তনশীল। গৃহ, পরিবার, কাজ, সম্পর্ক—সবকিছু একদিন চলে যাবে। কিন্তু আপনি, অর্থাৎ আত্মা, চিরন্তন। এই সত্য বারবার স্মরণ করুন।


মন ও বুদ্ধির উপর নিয়ন্ত্রণ আনুন:

মন যখন কোনো বস্তু বা আবেগের প্রতি আকর্ষিত হয়, তখন নিজেকে স্মরণ করান যে, "আমি এই জগতের অংশ নই, আমি কেবল এক সাক্ষী।"


বর্তমানে থাকুন:

অতীত নিয়ে অনুশোচনা বা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা না করে বর্তমান মুহূর্তে পুরোপুরি স্থিত থাকুন।


যথাসম্ভব নির্লিপ্ত থাকুন:

বাইরের প্রশংসা বা অপমান, সাফল্য বা ব্যর্থতা—কোনোটিতেই মনকে আসক্ত হতে দেবেন না।


*#কুটস্থে মন রাখা কেন কঠিন?


★ মন স্বাভাবিকভাবেই চঞ্চল এবং বাইরের জগতে আবদ্ধ।

★ ইন্দ্রিয়ের আকর্ষণ এবং প্রত্যাবর্তনশীল চিন্তাগুলি মনকে অস্থির করে।

★ "আমি দেহ" বা "আমি মন" এই ভ্রান্ত ধারণা আমাদের প্রকৃত স্বরূপ থেকে বিচ্যুত করে।


এর সমাধান কী?


অভ্যাস: কুটস্থে মন রাখা একটি অভ্যাস, যা ধীরে ধীরে তৈরি হয়। প্রতিদিন মনকে নিরপেক্ষ এবং স্থির রাখতে ছোট ছোট পদক্ষেপ নিন।


আত্মস্মরণ: নিজেকে বারবার স্মরণ করান যে, আপনি আত্মা, যা কখনো পরিবর্তিত হয় না।


সংসারকে লীলা হিসেবে দেখুন: সংসার একটি খেলা মাত্র। আপনি এর খেলোয়াড় নন, কেবলমাত্র একজন দর্শক।


*#কুটস্থে মন রাখা মানে হলো নিজের প্রকৃত আত্মস্বরূপে স্থিত থাকা এবং বাইরের পরিবর্তনশীল পৃথিবীর কোনো প্রভাবকে মন পর্যন্ত পৌঁছতে না দেওয়া। এটি এক গভীর অভ্যাসের ফল, যা ধ্যান, জ্ঞান এবং আত্ম-অনুশীলনের মাধ্যমে অর্জিত হয়। যতই আপনি এই উপলব্ধিতে নিজেকে স্থাপন করবেন, ততই এটি সহজ হয়ে উঠবে।


✍️ ব্যাখ্যাঃ রতন কর্মকার (whatsapp: +8801811760600)

Post a Comment

0 Comments