ঈশ্বর শক্তি জোগান, পথ দেখান, কিন্তু শত্রুর মোকাবিলা আমাদেরই করতে হবে
অনেকেই ভাবে, ঈশ্বরের উপর ভরসা মানেই সবকিছু তাঁর হাতে ছেড়ে দেওয়া। কিন্তু এটিই প্রকৃত আত্মসমর্পণ নয়। এটি অনেক সময় নিজের দায়িত্ব এড়ানোর একটা মানসিক অজুহাত হয়ে দাঁড়ায়। আত্মসমর্পণ মানে নিজের সাধ্যমত চেষ্টা করে, তারপর ঈশ্বরের উপর ফলের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া।
যদি কেউ আমাদের ক্ষতি করে এবং আমরা বারবার সহ্য করে যাই এই ভেবে যে “ঈশ্বর বিচার করবেন,” তাহলে সেটি ঈশ্বরের উপদেশ নয়, বরং আমাদের কর্মহীনতা।
*#শ্রীকৃষ্ণ ও পান্ডবদের শিক্ষা:
“ধর্মযুদ্ধ তোমাকেই করতে হবে।”
শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং পরমেশ্বর, তবু তিনি কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধ করেননি। তিনি ছিলেন সারথি—নেতৃত্ব দিয়েছেন, উপদেশ দিয়েছেন, কিন্তু অস্ত্র ধরেননি। কেন?
কারণ, এটি ছিল অর্জুনদের যুদ্ধ। যাঁর সমস্যা, যাঁর উপর অন্যায়, তিনিই প্রধানভাবে তার প্রতিকারের দায়িত্ব বহন করেন। শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকা ছিল—তাঁদের চেতনাকে জাগানো, তাঁদের মধ্যে ভীতি দূর করা, এবং প্রকৃত ধর্মের উপলব্ধি এনে দেওয়া।
গীতার মূল মন্ত্রঃ
“কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচনঃ।”
(তোমার কাজ শুধুই কর্ম করা—ফল ঈশ্বরের হাতে।) কিন্তু “কর্ম” করতে হবে। অন্যায় সহ্য করা ধর্ম নয়, বরং অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোই ধর্ম।
*#শত্রু মোকাবিলায় 'ধর্মীয় আত্মরক্ষা' এক অনিবার্য কর্তব্য:
শাস্ত্রে বলা আছে:
"অধর্মের সঙ্গে সহবাস করলে ধর্মও দূষিত হয়।"
যদি কেউ বারবার তোমার ক্ষতি করে, আর তুমি তাতে কিছু না বলো, তাহলে তুমি শুধু নিজেকে নয়, অন্যায়ের সামনে নীরব থেকে সমাজেরও ক্ষতি করছো।
শত্রু যদি তোমার জীবন, মন, পরিবার বা সম্মান নষ্ট করে, তবে প্রতিরোধই ধর্ম। এতে প্রতিহিংসার কিছু নেই—এটি আত্মরক্ষা, যা ধর্মীয়ভাবে ন্যায্য।
*#ঈশ্বরের ভূমিকা: শক্তিদান ও চেতনার উদ্দীপন:
শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন:
“আমি ধর্মের প্রতিষ্ঠার জন্য যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।”;
কিন্তু সেই ধর্ম প্রতিষ্ঠা মানুষ দিয়েই করান।
ভগবান রামচন্দ্রও স্বয়ং রাবণকে বধ করেন রাজধর্ম রক্ষার্থে।
শ্রীকৃষ্ণ নিজে শাস্ত্র ব্যবহার না করে পান্ডবদের অস্ত্র তুলে নিতে বললেন।
বুদ্ধ ও মহাবীর অহিংসার কথা বললেও, আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে চুপ থাকতে বলেননি।
*#অতিরিক্ত সহিষ্ণুতা কখনো কখনো আত্মঘাতী:
ধর্ম মানে “সহ্য করো” নয়। “ধর্ম” মানে, যা ধরে রাখে, তা হলো ন্যায়।
যদি অন্যায় বারবার চলতে থাকে, আর আপনি কিছু না বলেন, তবে আপনি সেই অন্যায়কে প্রশ্রয় দিচ্ছেন।
তাই মনে রাখতে হবে—
“ক্ষমাশীল হও, কিন্তু নিরীহ নও।
উদার হও, কিন্তু দুর্বল নও।
বিশ্বাস করো, কিন্তু বোকা নও।”
নিজেই লড়ো, ঈশ্বর শক্তি দেবেন। আপনার জীবনযুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপনাকেই দাঁড়াতে হবে।
ঈশ্বর থাকবেন আপনার পাশে, পথ দেখাবেন, প্রেরণা দেবেন।
কিন্তু কাজ—করতে হবে আপনাকেই।
গীতা আবার মনে করিয়ে দেয়:
“উত্তিষ্ঠ, জাগ্রত!”
— উঠো, জাগো, তোমার ধর্ম তোমাকেই রক্ষা করতে হবে।
✍️ রতন কর্মকার, ঢাকা, বাংলাদেশ।
(whatsapp: +8801811760600)

0 Comments