সমস্ত চেতনার কেন্দ্রবিন্দু একটিই—পরমাত্মা
আজ্ঞাচক্র হলো মস্তিষ্কের মধ্যভাগে অবস্থিত ষষ্ঠ চক্র, যা বেদান্ত মতে 'তৃতীয় নয়ন' বা অন্তর্দৃষ্টি। এটি যোগীর মনের সর্বোচ্চ স্থিতির প্রকাশ। কালো রঙ 'অজ্ঞতা' বা অন্ধকারের প্রতীক, আর স্বর্ণাভা চেতনার প্রভা। কালো বিন্দুর মাঝে এক চক্ষুর প্রকাশ হলো যোগীর অন্তর্জ্ঞান বা ব্রহ্মচক্ষুর উদয়। এটি সৃষ্টির কেন্দ্রীয় শক্তিকে নির্দেশ করে।
"কোটি সূর্যের আভা" হচ্ছে যোগীর অন্তর্জ্ঞাননে এমন একটি আলোকপ্রাপ্তি লাভ করে যা সকল অজ্ঞানতাকে দূর করে। সুদর্শন চক্র 'পাপরাশি ছেদন' করে, অর্থাৎ এটি সমস্ত অজ্ঞান, মায়া এবং কর্মফল থেকে মুক্তি দেয়। এই চক্রের দর্শন দ্বারা যোগী নিজের "আমি" বা অহংবোধকে হারিয়ে পরম সত্তার সাথে একাত্ম হয়। এখানেই হরি বা বিষ্ণুর অর্থ প্রকাশিত হয়: "হরি" মানে 'যিনি পাপের হরণকারী'।
*#ধ্রুব হলো চেতনাজাগরণের সেই চূড়ান্ত অবস্থান যেখানে মন স্থির এবং অচল। এটি যোগীর ধ্যানের মাধ্যমে অর্জিত অপরিবর্তনীয় জ্ঞান বা ধ্রুব সত্য। "গগনগুহা" হচ্ছে মনের শূন্যস্থান যেখানে ধ্রুবচেতনার উপলব্ধি ঘটে।
*#তারকনাথ অর্থাৎ 'তারা বিশিষ্ট নাথ' হলেন সেই পরম সত্তা যিনি জীবাত্মাকে মোক্ষের পথ দেখান। "মাঝে কৃষ্ণবর্ণ" হলো অনন্ত গহ্বর, যেখানে পরম সত্তা অবস্থান করে। যোগী যখন ধ্রুব অবস্থায় স্থিতি লাভ করেন, তখন তাঁর মোক্ষলাভ ঘটে এবং তিনি তারকা বা পরমাত্মার সঙ্গে যুক্ত হন।
*#ত্রিগুণ এবং ত্রিদেবতা :
**#রজোগুণ (ব্রহ্মা):
এটি ক্রিয়া বা সৃষ্টির শক্তি। রজোগুণ দ্বারা ব্রহ্মা নতুন সৃষ্টির সূচনা করেন। এর উদাহরণ: কর্ম, ইচ্ছা, এবং পরিবর্তনের প্রয়োজন।
*#সত্ত্বগুণ (বিষ্ণু):
এটি শুদ্ধতা, স্থিতি এবং ভারসাম্যের শক্তি।
সত্ত্বগুণ দ্বারা বিষ্ণু জগতের পালন করেন এবং এটি স্থিতিশীল রাখেন।
*#তমোগুণ (মহেশ্বর):
এটি ধ্বংস বা অবসানের শক্তি। তমোগুণ দ্বারা মহেশ্বর জগতের প্রলয় ঘটান।
এই ত্রিগুণ পরম চেতনার শক্তি বা প্রাণশক্তি দ্বারা পরিচালিত। ত্রিগুণ তখনই কার্যকর যখন প্রাণ বা চৈতন্য বিদ্যমান। ত্রিগুণ এবং ত্রিদেবতারা নিজেরা স্বাধীন নন; তাঁদের শক্তির উৎস হলো কূটস্থচৈতন্য বা পরমাত্মা।
তাই, পরমাত্মা সকল গুণ ও সৃষ্টির মূল পরিচালক।
*#সৃষ্টির সকল দৃশ্যমান জিনিস পরমাত্মার দ্বারা পরিচালিত। যোগীর অভিজ্ঞতায় এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে দৃশ্যমান জগত মায়াময় এবং পরম চেতনার প্রতিফলন। সৃষ্টির প্রতিটি অংশই পরম চেতনায় নির্ভরশীল, কিন্তু চেতনার মূল রহস্য সৃষ্টিকর্তাদের কাছেও অজানা।
"আত্মারাম" হলো সেই চেতনা যা নিজের সত্তায় বিরাজ করে এবং সমস্ত সৃষ্টিকে প্রাণশক্তি যোগায়। এটি কূটস্থচৈতন্যের অবস্থান, যা প্রত্যেক জীবের মধ্যে বিদ্যমান। জীব যখন এই আত্মাকে উপলব্ধি করে, তখন সে মোক্ষের দিকে এগিয়ে যায়।
যোগীর জন্য আধ্যাত্মিক পথ :
*#প্রথম ধাপ: ধ্যান ও প্রাণায়ামের মাধ্যমে সুদর্শন চক্রের দর্শন।
*#দ্বিতীয় ধাপ: ত্রিগুণ ও ত্রিদেবতার পরিচালনায় কূটস্থচৈতন্য উপলব্ধি।
*#তৃতীয় ধাপ: নিজের অহংবোধকে হারিয়ে সর্বব্যাপী চেতনার সঙ্গে একাত্ম হওয়া।
আত্মোপলব্ধি ও চেতনার উচ্চস্তরে পৌঁছানোর জন্য যোগীকে ধ্যান, তত্ত্বজ্ঞান, এবং আধ্যাত্মিক অনুশীলনের মাধ্যমে মায়া এবং কর্মফল থেকে মুক্ত হতে হবে। পরম চেতনা সর্বত্র বিরাজমান এবং এটি তিন গুণ ও তিন দেবতার মূল শক্তি।
যোগী যখন নিজের আত্মাকে "আমি"-বোধ থেকে মুক্ত করে পরমাত্মার সঙ্গে যুক্ত করেন, তখনই তিনি মোক্ষ লাভ করেন। এই অবস্থায় যোগী বুঝতে পারেন যে তিনিই সৃষ্টির দ্রষ্টা এবং দৃশ্য। এই দার্শনিক সত্য আত্মজাগরণের অনুপ্রেরণা দেয় এবং জানায় যে সমস্ত চেতনার কেন্দ্রবিন্দু একটিই—পরমাত্মা।
✍️ রতন কর্মকার
ক্রিয়াযোগ সম্পর্কে জানতে :
https://youtube.com/channel/UCXMnf7gKAl5SXQ1kivkaY6g?si=I7SFAvm_nvp1QBCE
.jpeg)
0 Comments