Recent Posts

6/recent/ticker-posts

শ্রী শ্রী রাম ঠাকুর এর বাণী ও এর তাৎপর্য বিশ্লেষণ

 

শ্রী শ্রী রাম ঠাকুর এর বাণী ও এর তাৎপর্য বিশ্লেষণ 


 

🌹বেদবাণী 🌹

" জীবগণ অনর্থক আশঙ্কার অধীনে যাইয়া চিন্তার তরঙ্গে কষ্ট পায়। সংসারে যতই অভাব ততই শান্তি পরিণামে উদয় হয়। যাহাতে সমস্ত ভার ভগবৎপদে ন্যস্ত করিতে পারা যায় তাহাই করিবেন। উপস্থিত সংসারের কর্ম্ম যথাসাধ্য শেষ করিতে চেষ্টা করিবেন। অন্য কোন চিন্তা না করিয়া যখন যেমনভাবে পারিবেন ভগবৎ চিন্তা করিবেন। অহঙ্কার বশতঃ কর্ত্তৃত্বাভিমান যত ত্যাগ করিয়া ভগবানের অভিমানে উঠিতে পারেন তাহাই করিবেন।" (বেদবাণী ১/৭১)


(শ্রীশ্রী রামঠাকুর)


*#তাৎপর্য :

শ্রীশ্রী রামঠাকুরের এই বাণী শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক অনুশীলনকারীদের জন্য নয়, বরং সাধারণ সংসারী মানুষদের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করে। এটি ঈশ্বরের প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ, সংসারের প্রকৃত স্বরূপ, এবং অন্তর আত্মার শান্তি লাভের বিষয়ে গভীর শিক্ষা দেয়।


★"জীবগণ অনর্থক আশঙ্কার অধীনে যাইয়া চিন্তার তরঙ্গে কষ্ট পায়।"


প্রথম লাইনেই ঠাকুর আমাদের জীবনের অন্যতম প্রধান সমস্যার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন— চিন্তার অতল গহ্বরে ডুবে থাকা। মানুষের প্রবৃত্তি হলো ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা, যা এক ধরণের মায়ার খেলা। এসব অনর্থক দুশ্চিন্তা আমাদের মনোজগতে প্রচণ্ড কষ্টের সৃষ্টি করে।


শাস্ত্রের দৃষ্টিকোণ: ভগবদ্গীতা (৬.৫) বলছে—

"উদ্ধরেদ্ আত্মনাত্মানং নাত্মানমবসাদয়েত্।"

অর্থাৎ, নিজের চিন্তা ও মানসিক অবস্থা নিজেকেই উন্নত করতে হবে, দুশ্চিন্তা ও হতাশার মধ্যে ডুবে থাকা উচিত নয়।


আমরা যখন কোনো কাজের ফলাফল সম্পর্কে অনিশ্চিত হয়ে উদ্বিগ্ন হই, তখন সেই দুশ্চিন্তা আমাদের শারীরিক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রেই কষ্ট দেয়। অথচ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই দুশ্চিন্তা অকারণ হয়। তাই ঠাকুর নির্দেশ দিচ্ছেন, দুশ্চিন্তা বাদ দিয়ে ভগবানের ওপর নির্ভর করো।


★"সংসারে যতই অভাব ততই শান্তি পরিণামে উদয় হয়।"


আমরা সাধারণত মনে করি, ধন-সম্পদ ও ভোগবিলাস বেশি থাকলে শান্তি আসবে। কিন্তু ঠাকুর বলছেন অভাবের মধ্যেই প্রকৃত শান্তি নিহিত আছে।


যত বেশি সম্পদ ও ভোগবিলাস, তত বেশি আসক্তি ও উদ্বেগ। বিপরীতে, সীমিত চাহিদা ও সংযমী জীবনযাপন করলে মনের উপর চাপ কমে যায় এবং সহজেই ঈশ্বরচিন্তায় মনোযোগ দেওয়া যায়।


পরম সন্তুষ্টির শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হল ভারতের ঋষিমুনিরা। তাঁরা অভাবের মধ্যে থেকেও পরম আনন্দ লাভ করতেন, কারণ তাঁদের চাহিদা সীমিত ছিল এবং তাঁরা ভগবৎস্মরণে মগ্ন থাকতেন।


শ্রীমদ্ভাগবতের শিক্ষা:

"যা কিছু অতিরিক্ত, তা ভগবান ছাড়া আর কিছুই নয়।"

অর্থাৎ, জাগতিক সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকলে মানুষ অহঙ্কার মুক্ত হয়ে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে পারে।


★"যাহাতে সমস্ত ভার ভগবৎপদে ন্যস্ত করিতে পারা যায় তাহাই করিবেন।"


এই উক্তি আমাদের শিখিয়ে দেয় যে, আমাদের সকল দুশ্চিন্তা ও দায়িত্ব ভগবানের হাতে সমর্পণ করাই মুক্তির পথ।


ভগবদ্গীতার শিক্ষা (১৮.৬৬):

"সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ।"

অর্থাৎ, সমস্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য ভগবানের হাতে অর্পণ করো, তিনিই সব সমস্যার সমাধান করবেন।


যদি আমরা প্রতিটি কাজে ভগবানের শরণ গ্রহণ করি, তাহলে উদ্বেগ আমাদের মনকে ভারাক্রান্ত করতে পারবে না। এজন্য—

✔️ কর্ম করো, কিন্তু ফলের চিন্তা করো না।

✔️ যা কিছু ঘটছে, তা ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই ঘটছে এই বিশ্বাস রাখো।


★"উপস্থিত সংসারের কর্ম্ম যথাসাধ্য শেষ করিতে চেষ্টা করিবেন।"


ঠাকুর আমাদের সংসারত্যাগের শিক্ষা দেননি, বরং সংসার ধর্ম যথাযথভাবে পালনের নির্দেশ দিয়েছেন।


শ্রীকৃষ্ণের কর্মযোগ দর্শন (গীতা ৩.১৯):

"তস্মাদসক্তঃ সত্যং কর্ম কুর্বন্ ন আপ্নোতি কিল্বিষম্।"

অর্থাৎ, আসক্তিহীনভাবে কর্তব্য পালন করলে কোনো পাপ লাগে না।


এই শিক্ষার গুরুত্ব:

✔️ কর্ম থেকে পালিয়ে যাওয়া নয়, বরং কর্মকে ঈশ্বরের সেবায় পরিণত করা উচিত।

✔️ পরিবার, সমাজ, এবং ব্যক্তিগত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা ঈশ্বরেরই ইচ্ছা।


★"অন্য কোন চিন্তা না করিয়া যখন যেমনভাবে পারিবেন ভগবৎ চিন্তা করিবেন।"


ঠাকুর এখানে বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে, জীবনযাত্রার যেকোনো পরিস্থিতিতেই ভগবানের নামস্মরণ করা উচিত।


নামস্মরণের শক্তি:

"কলিযুগে কেবল নাম সংকীর্তনেই মুক্তি।"

তাই জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে, কাজের ফাঁকে, চলার পথে, খাওয়ার সময়—এমনকি ঘুমানোর আগে— ভগবানের নাম জপ করলে চিত্ত শুদ্ধ হবে।


★"অহঙ্কার বশতঃ কর্ত্তৃত্বাভিমান যত ত্যাগ করিয়া ভগবানের অভিমানে উঠিতে পারেন তাহাই করিবেন।"


মানুষ মনে করে, "আমি কর্তা", কিন্তু এই ভাবনাই দুঃখের মূল কারণ। ঠাকুর বোঝাচ্ছেন যে, আমরা নই, বরং ভগবানই সমস্ত কর্মের কর্তা।


ভগবানের শরণ নেওয়ার গুরুত্ব:

✔️ নিজেকে কর্মের কর্তা ভাবা মানে অহঙ্কারের জন্ম দেওয়া।

✔️ ভগবানকে সর্বস্ব ভাবলে দুঃখ দূর হয়ে যায়।


ভক্তের চূড়ান্ত অবস্থান:

"আমি কিছুই করি না, যা করি সব ভগবান করাচ্ছেন।"

এই ভাব ধরে রাখলে আমাদের মন পবিত্র হবে এবং আমাদের সমস্ত দুঃখ দূর হয়ে যাবে।


এই বাণী আমাদের জীবনে কিভাবে প্রযোজ্য?


✅ দুশ্চিন্তা ও অনর্থক ভয় পরিহার করা।

✅ অভাবকে কষ্ট মনে না করে, বরং এটিকে ভগবদ্‌কৃপা ভাবা।

✅ ভগবানের ওপর নির্ভর করা এবং নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা।

✅ নামস্মরণ ও ভগবানচিন্তাকে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে ধরে রাখা।

✅ নিজেকে কর্মের কর্তা মনে না করে ভগবানের ওপর সমস্ত ভার সমর্পণ করা।


এই বাণী অনুসারে জীবনযাপন করতে পারলে শান্তি, মুক্তি এবং পরম সুখ লাভ করা সম্ভব।

✍️ ব্যাখ্যাঃ রতন কর্মকার +8801715982155 (whatsapp)

Post a Comment

0 Comments